লিফ্ট
লিফ্ট
সন্ধ্যে প্রায় তখন সাত টা।দুই বছরের ছেলের আবদারে তাকে নিয়ে একটু বেড়াতে বেরিয়েছি বাড়ির সামনের পার্কটায়।শহরতলীর এই জায়গাটায় পাশাপাশি অনেকগুলি হাউসিং কমপ্লেক্স, আর প্রতিটা বিল্ডিং ই ন'তলা উঁচু।ছেলের মূলত ইচ্ছে সে প্রতিটি বিল্ডিং এর লিফ্ট এ উঠে একবার করে ঘুরে নেমে আসবে।একা একা তাকে ভুলিয়ে রাখতে তার বেছে নেওয়া খেলাতেই সায় দিতে হলো অগত্যা।সামনের বিল্ডিং এর লিফ্ট এর ভেতর আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সে বোতাম টিপে দরজা বন্ধ করতে ইশারায় বললো আমাকে।যে কথা সেই কাজ।বেশিক্ষণ সময় কাটবে তাই নয়'তলার বোতাম টিপে লিফ্ট চালু করে দিলাম।
মুশকিল হলো ন' তলায় লিফ্ট গিয়ে থামার পর।দরজা আস্তে আস্তে খুলে গেল।সামনে চারটি ফ্ল্যাট এর দরজা চারদিকে।একটি বাচ্চাদের সাইকেল রাখা আছে আর একটি দরজার সামনে একজোড়া চটি খোলা।ছেলে আমার হাত ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে সামনের স্পেস টিতে পদার্পন করেছে আর আমাকে আসার জন্য বারবার ডাকছে।ভাবলাম তবে এক কাজ করা যাক ছাত থেকে ঘুরে আসি।শুনেছি ভিউ খুবই সুন্দর।কেন জানিনা একটা অদ্ভুত গা ছমছমে ভাব ঘিরে ধরেছিল কিছুক্ষণ থেকেই কিন্তু ছেলের বায়না কে উপেক্ষাও করতে পারছিলামনা।পায়ে পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে চললাম।পরের ফ্লোর এই ছাত।
ছাত এর দরজা খোলাই পেলাম।আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি ততক্ষনে গন্ডগোল টা কোথায়।এক ছায়ামূর্তি আমাদের পিছু নিয়েছে কিন্তু তখন আর আমার ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।যা আছে কপালে ধরে নিয়ে ছেলে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে এগিয়ে চললাম।আমি দু পা এগোই, তো সেই অবয়ব ও এগোয়।ছেলের কিন্তু কোনো খেয়াল নেই সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
জানিনা এভাবে কতক্ষন কেটে গেছে, হঠাৎ মনের যেটুকু জোর ছিল সব একত্র করে ছেলে কে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে এক ছুটে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম.....আট তলা.. সাত তলা.....পার হচ্ছি আর দর দর করে ঘামছি।পেছনে সেই অবয়ব।কোনো তলায় একজন ও জনমনুষ্য নেই।ও হ্যাঁ, ন'তলা দিয়ে নামার সময় সেই সাইকেল এর চাকা আর প্যাডেল কিকরে ঘুরছিল আমার জানা নেই।কোথাও কোনো হাওয়া বাতাস আসার জায়গা থাকার প্রশ্নই ছিলোনা যেখানে ওই বদ্ধ ফ্ল্যাট এর মধ্যে।ছেলে কে বুকে করে সোজা গ্রাউন্ড ফ্লোর পেরিয়ে বাইরে যেতে যাবো আর পাশের ফ্ল্যাট এর দিদির সঙ্গে ধাক্কা।পুরো ব্যাপারটাই বললাম।দিদি খুব অবাক হয়ে ছেলে কে আগে আমার কোল থেকে নিলো আর আমাকে নিয়ে গিয়ে পার্কের বেঞ্চ এ বসালো।জানা গেল ন'তলায় কোনো বাচ্ছা বা ফ্যামিলি এখন আর থাকেনা।দেড় বছর আগে থাকলেও সেই মহিলা ফ্ল্যাট এর ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।পুলিশ এসেছিল, তদন্ত হয়,কিন্তু বাকি গল্প চাপা পড়ে যায়।ছাত এ কেউ ওঠেনা আর চাবি দেয়াই থাকে আজ কেন চাবি খোলা ছিল সে বলতে পারলোনা।
ছেলের হাত ধরে বাড়ি ফিরে গেলাম।দিদি কে বললাম চলো চা খেয়ে যাবে একটু।লিফ্ট এ তো রোজ ই যাতায়াত করতে হবে তাই বেশি ভেবে লাভ কি?