STORYMIRROR

Indrani Bhattacharyya

Romance Tragedy Classics

4.9  

Indrani Bhattacharyya

Romance Tragedy Classics

লাল বেলুন

লাল বেলুন

2 mins
339


সেই কখন থেকে রং মেখে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছে পূবালী। পায়ে ঝিঝি ধরে গেলো। কিন্তু উপায় নেই। এ লাইনে বসেছ কি কাজ খতম ! মালিক তো চায় পূবালী পারলে লাফাক, নাচুক। যত অঙ্গভঙ্গী করবে তত পার্টি খুশি থাকবে। পার্টি খুশি থাকলেই দু পয়সা এক্সট্রা ইনকাম হবে। পূবালী জানে সে সব। কিন্তু পুবালীর অবুঝ পেট! একে গতকাল ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারখানায় ছুটোছুটি করতে গিয়ে দাঁতে কুটোটিও সারাদিনে কাটা হয়নি। তার মধ্যে আজ এখানে দুপুরের খ্যাটন হাপিস হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এদিকে চারপাশে এত খাবার, এত গন্ধ ! এসবে কি আর খিদে বাগ মানে! 

পূবালী দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত পাড়ায় জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভাড়া নেওয়া একটি অনুষ্ঠান বাড়ির গেটের সামনে মিনি মাউস সেজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে - "এ তবু ভালো। আধপেটা খেয়ে মেদো মত্ত স্বামীর হাতে কিল ঘুষি খাবার থেকে এ বরং ঢের সুখের"। ভাবতে ভাবতে কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিল পূবালী। 

এর মধ্যেই দু- তিনটে বাচ্চা এসে হাজির হল। পূবালীর ছেলেরই মতন হবে বয়সে। এসেই পুবালীর স্কার্ট টেনে বলতে লাগলো - " গিভ আস দোজ রেড বেলুন "। পূবালী হাতে দিতেই দুটো বিচ্ছু আবার পিছনে গিয়ে জামার সাথে লাগানো লম্বা লেজটা ধরে টানাটানি করতে শুরু করলো। পূবালী লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নানা কসরত করে ওদের বাঁধা দিতে চাইলেও বিচ্ছুগুলো যেন বদ্ধপরিকর। কোনো কথাই শুনলো না তারা। লেজ ধরে টানাটানি করতেই লাগল। আর এতে

যা হবার তাই হল। ফ্যাঁস্ করে একসময় সস্তা স্কার্টের পিছন দিকের সেলাই খুলে বেশ কিছুটা অংশ লেজের সঙ্গে চলে এলো বিচ্ছুগুলোর হাতে। ব্যাস, এবার তারা মুক্তি দিল মিনি মাউসকে। মহানন্দে বিজয়গর্বে তারা মিনি মাউসের লেজ সকলকে দেখাতে দেখাতে ছুটতে লাগল অন্য দিকে।


সাথে সাথে চোখে জল এসে গেল পুবালির। কোনো মতে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সিকুরিটি গার্ডকে ডেকে বলল - " দাদা, কটা বাজে একটু বলবেন? " 

-"নটা পাঁচ।"

পূবালী যেন এবার একটু জোর পেল। তার মানে আর এক ঘন্টা পরেই ডিউটি শেষ।মনে মনে বললো,' তখনই বরং গিয়ে ধরাচুরো ছাড়বো। এখন গেট ছেড়ে নড়লে কেউ চুকলি করে দিলে বিপদ। দিনের খোরাকি থেকে তখন মালিক টাকা কেটে নিতে পারে। " পূবালী দাঁতে দাঁত চিপে মুখে একগাল নকল হাসি ঝুলিয়ে কোনো মতে ঢেকে ঢুকে দাঁড়িয়ে রইল। 

আরো জনা দশেক অতিথি অভ্যাগত ঢুকলো মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। তারপর ভিড়টা একটু হালকা হলে সিকুরিটি গার্ড এবার কাছে এগিয়ে এসে নিচু গলায় বলল - " আপনি চিন্তা করবেন না। এখানে আমার টুলে আপনি বসুন। উঠতে হবে না অত। গেস্ট এলে বেলুন লজেন্স দেবেন শুধু। তাহলেই হবে। বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।"

পূবালী মুখে কিছু বলতে পারলো না। তার চোখের কোণে জমে থাকা জলও চোখে পড়ল না সিকুরিটি গার্ডের। শুধু মিনি মাউস তার বিশাল পাঞ্জা বাড়িয়ে একটা লাল বেলুন এগিয়ে দিল সিকুরিটির দিকে।


Rate this content
Log in