ক্যামেরা চলছে
ক্যামেরা চলছে


বেশ রাতের দিকে মেয়েটা দাঁড়িয়েছিল বাসের আশায়।
রাতের ব্যস্ত রাজপথ, একটু ফাঁকা হলেও যান চলাচল করছে।
চেনা নম্বরের বাসটা এসে দাঁড়াতেই উঠে পড়েছিল ক্লান্ত দেহে। লক্ষ্যই করেনি ছয়টি মানুষ রূপী হায়নার বারোটা জ্বলন্ত চোখের থেকে ঝরছে লালসার রস। রাজপথ ছেড়ে একটু অন্ধকার রাস্তায় ঢুকে গেছিল বাসটা, ট্র্যাফিক পুলিশটা খৈনি ডলতে ডলতে দেখেও দেখেনি।
একে একে ছয় জন আর ড্রাইভার নিজেদের জ্বলন্ত কামনার আগুনে দলিত মথিত করে ক্লান্ত রক্তাক্ত যোনীপথে গেঁথে দিয়েছিল লোহার রড। আবার প্রকাশ্য রাজ পথে বিবস্ত্র মেয়েটাকে ফেলে উল্লাসে ঠোঁট চাটতে চাটতে গাড়ি নিয়ে চলে গেছিল অন্যদিকে।
একের পর এক গাড়ির হেডলাইট ছুঁয়ে যাচ্ছে রক্তাক্ত বিবস্ত্র যন্ত্রণায় কাতর একটা আধ মরা লাশকে। দেখেও কেউ দেখছেনা যেন! দু তিনটে ট্রাফিক পুলিশ জড়ো হয়েছে, কিন্তু আলোচনায় ব্যস্ত। কিছু গাড়ি গতিবেগ কমিয়ে ফটো তুলে নিচ্ছে, কেউ ভিডিও করছে। কিন্তু কেউ এক টুকরো কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছে না অর্ধ মৃত দেহটাতে।
একটু জলের জন্য যেন চাতকের মতো ভিক্ষা করছে সে, কিন্তু কে দেবে জল! ও এখন একটা বিশেষ বিষয়। পুলিশগুলো আলোচনায় ব্যস্ত, শেষ মেশ কোথায় গড়ায় এ খেলা...
হঠাৎ ছুটে আসে ওধারের ফুটপাতের পাগলিটা, নিজের গায়ের ছেঁড়া এক খণ্ড কাপড়টা এক টানে খুলে ঢেকে দেয় মেয়েটাকে, নোংরা বোতলটা থেকে একটু জল দেয় মেয়েটার মুখে। ক্লান্তিতে চোখ বোজে মেয়েটা।
এবার ভিড় বাড়ছে। উলঙ্গ পাগলীটা মেয়েটার যোনী পথের রক্তাক্ত রডটা বার করে নেয় এক টানে। মাথার উপর ঘুরিয়ে চিৎকার করে ওঠে। পুলিশগুলো ভয়ে দু পা পিছিয়ে যায়।
ওবি ভ্যান এসে গেছে খবর পেয়ে, টিভি ক্যামেরা তাক করে চ্যানেলের ক্যামেরা ম্যান, লাইভ হচ্ছে পাগলীর পাগলামী। আজ টিআরপি বাড়বেই।
ওদিকে পাগলা গারদের গাড়িটা এসেছে পাগলীটাকে ধরতে... ভিড় বেড়েছে এবার।পাগলী এখনো রক্তাক্ত শরীরটা আগলে মাছি তাড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে রডটা হাতে ছুটে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে.... কী যেন বিড়বিড় করছে।
জনতা দেখছে বেশ মজার ঘটনা! মিডিয়ার লোকগুলো তুমুল আলোচনায় ব্যস্ত রক্তাক্ত লাশের নামকরণ নিয়ে.... অভয়া, সাহসিনী নাকি তেজস্বনী ? কাল পেপারের হেড লাইন ঠিক কি হবে?