কল্প নয় সত্য
কল্প নয় সত্য
সমর আর মেঘলার সুখী দাম্পত্যে - এখন পৌষের শৈত্য। অনেক পরিকল্পনা করে, পরস্পরের প্রতি অগাধ আস্থা রেখে, দুই পরিবারের সহমতে, গড়ে তুলেছিলো তারা তাদের দাম্পত্য জীবন।
কিন্তু, মানুষ যা ভাবে তা' কি আর সব সময় হয়ে ওঠে? দাম্পত্য কলহ না এলেও, সম্পর্কে শীতল দূরত্ব এসে গেলো তাদেরও। বিশেষত, তিন তিনবার গর্ভধারণের পরেই মেঘলার গর্ভপাত হওয়ার পরই, তাদের মধ্যে যেন দুম করে আবির্ভাব হয় এক অদৃশ্য দূরত্বের।
সন্তানলাভের ইচ্ছা - মেঘলার থেকে সমরের কিছুমাত্র কম ছিলো না, বরং বেশী। গর্ভপাতের যন্ত্রণা তাই, যেমন মেঘলার শরীরকে ভেঙে দিচ্ছিলো, তেমনই অবসাদগস্ত হয়ে পড়ছিলো সমরও। এখন কোথায় তারা - একে অপরের পাশে থেকে আস্থা ও ভরসাকে বাঁচাবে, তা' না করে পরস্পরের থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে, আরো অবসাদে নিমজ্জিত হচ্ছিলো দু'জনেই।
বিষয়টা প্রথম নজরে আসে সমরের মায়ের, তিনি আবার সেটা নজরে আনেন ওর বাবার এবং পরে তাঁদের বেয়াই বেয়ানেরও। কিন্তু তাদের দু'জন কেউই নিজেদের সম্পর্কের শীতলতার কথা স্বীকারই করে না। এটা তো সত্য যে, তাদের নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, ঝগড়াঝাটি বা ঐ জাতীয় কিছুই হয়নি কখনও। হয়তো সে'জন্যই নিজেরাও চিনতেই পারেনি, নিজেদের সম্পর্কের মাঝে গড়ে ওঠা - সেই দূরত্বের প্রাচীরটাকে।
এই অবস্থায়, বাবা মায়ের চাপে বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গে, পাহাড়ের ওপর এই 'জলসা বাংলো'য় বেড়াতে আসে তারা। আর এখানেই সমর যা পেলো, তা' সত্যিই কোনো কল্পনা নয়, গল্প নয়, বাস্তব, এক অভূতপূর্ব সত্য। মনুষ্যত্ব যে সবকিছুর উর্দ্ধে - তা অনুভব করলো সে। 'জলসা বাংলো'য় এসে দেখা হলো তরীর সাথে!
প্রায় বছর দশ বারো আগে, তখন সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছে সমর, বেড়াতে এসে, এখানেই - পরিচয় হয় তরীর সঙ্গে। সে নিজেও তখন তার কেরীয়ার গড়তে ব্যস্ত। দু'জনেরই, কোন অজানা কারণে, এক দেখাতেই দু'জনকে মনে ধরে যায় খুব। বেশ কিছুটা সময় তারা এখানেই একসাথে কাটিয়ে, যে যার বাড়ি ফিরে যায়।
যাবার আগে, তারা কথা দিয়েছিলো একে অপরকে - চিরদিন দু'জনের হাতে হাত রেখে চলবে, কখনও দূরে সরে যাবে না। কিন্তু, পরবর্তী কালে উদ্ভূত একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে, দু'জনের মনে জন্ম নেয় এক মিথ্যা অভিমান। তার প্রকোপে, সেই চির অপেক্ষারত দুই প্রেমিক প্রেমিকা, তাদের পৃথক পৃথক জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়!
আর, আজ এতদিন পর, হঠাৎ সেই একই জায়গা এই 'জলসা বাংলো'য়, আবার সেদিনের দুই মানব-মানবী সম্মুখীন হয়েছে নিজেদের - সম্পূর্ণ আলাদা দু'জন নর-নারী রূপে!
তারপর?
প্রথম দেখাটাও হলো বড় অদ্ভুত সমাপতনে। মেঘলার শরীর ভালো না বলে ঘরেই শুয়ে ঘুমাতে চাইলো, বাইরের প্রকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণ উপেক্ষা করে। আর তরীর স্বামীর আবার, উঁচু জায়গা থেকে নিচে তাকাতে ভয় করে - এক্রোফোবিয়া।
অগত্যা, একাই ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো - নিচে বহমান যুবতী তিস্তার বঙ্কিম গতিধারার সৌন্দর্য উপভোগ করতে, সমর আর তরী দু'জনেই।
আর বাইরে এসে দাঁড়াতেই, দু'জন দু'জনের মুখোমুখি হলো! বেশ কিছুক্ষণ একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে রইলো বিস্ময়ে! পুরানো প্রেমের আকর্ষণ যে কারোরই কারোর থেকে এতটুকু কমে নি সেটা বুঝলো দু'জনেই। তাই কথা না বাড়িয়ে পাশাপাশি হাঁটা শুরু করলো দু'জনে - বাংলো থেকে বেরিয়ে যাবার ঢালু রাস্তা ধরে।
তরী - কেমন আছো? তোমার বৌ কই, তাকে দেখছি না তো?
সমর - খুব ভালো আছি। তুমি? তোমার বরকেও তো দেখছি না!
তরী - এমন করে বলছো কেন - ভালো না থাকার কি আছে তোমার? নিজে পছন্দ করে সুন্দরী জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছো…
সমর - সে তো আমায় অপেক্ষায় রেখে, তুমিও নিজের মনের মত বর জুটিয়ে নিয়েছো, তার বেলা?
তরী - তোমায় অপেক্ষায় রেখে? তুমি তো সাত বছর আগে বিয়ে করেছো, আমরা তো সবে পাঁচ বছর…..
সমর - আমাদেরও তাই, পাঁচ বছরই। বরং তোমাদেরই সাত বছর হতে চললো!
তরী তার মোবাইলটা বের করে নিজের ফেসবুকের প্রোফাইলটা দেখালো তাকে - তাদের মালাবদলের ছবি, তার ওপরে প্রিন্টেড তারিখটাও দেখিয়ে, বললো - দেখো, এই আমাদের বিয়ের তারিখ।
সমরও একইভাবে নিজের অ্যানিভার্সারীর পোস্টগুলো দেখালো তাকে। তাদেরও বিয়ের সবে পাঁচ বছরই পূর্ণ হলো, তাহলে?
অন্যজন, সাত বছর আগেই, নিজের পছন্দে বিয়ে করে নিয়েছে, এই সংবাদটা মিথ্যা ছিল? তাদের মিলনের জন্য মূলত কৃতিত্ব যার ছিলো, এই ভুল খবরটাও তার থেকেই পেয়েছিলো তারা। তাই তাদের কেউই তার সত্যতা যাচাই করে নি।
সমরের কাছে তখন মোবাইল থাকলেও, তরীর কাছে ছিলো না। তরীর বিয়ের ঐ ভুল খবরটা যখন পায় সে, নিজের মোবাইল নম্বরটাও বদলে নিয়েছিলো ক্ষোভে। ঐ একই কারণে, তরীও সেই ভুল সংবাদের সত্যতা যাচাই করে উঠতে পারেনি! তারও দু'বছর পরে তারা বাড়ির পছন্দের পাত্র/পাত্রীকে জীবনসঙ্গীরূপে গ্রহণ করে!
পরস্পরের ওপর জমে থাকা তাদের সব অভিমান আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। জীবন তাদের সাথে যে রসিকতা করেছে - দূর্বিষহ লাগে দু'জনের। জনশূন্য পিচ রাস্তার ধারে, পাথরের ওপরে মুখোমুখি দু'জনে দু'জনের হাতদু'টো ধরে বসে পড়ে - দু'চোখ জলে ছলছল করে দু'জনেরই! একসাথেই তারা বলে ওঠে - কেন? কি অপরাধ ছিলো আমাদের?
এরপর শুরু হয়, একে অপরের বিরহের বেদনা - কে কিভাবে প্রশমিত করেছে, তার উন্মোচন। সমর তার চেন স্মোকার, বাউণ্ডুলেপ্রায় হয়ে ওঠা, তারপর আবার নিজেকে শুধরে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার কাহিনী শোনায়। তরী তো আরও এককাঠি ওপরে উঠে - রোজ নাকি ড্রিংক করাই শুরু করেছিলো! নিজের কেরীয়ার আর গড়ে তোলাই হয়ে ওঠেনি তার! ওর বর, মৃন্ময়, বিয়ের পর আস্তে আস্তে সেই বদভ্যাস কমিয়েছে, কিন্তু এখনও পুরোপুরি থামাতে পারেনি তাকে!
নিজেদের বর্তমান পরিচয় ভুলে সেদিন, সেই বারো বছর আগের প্রেমিক প্রেমিকা জুটি হয়ে ওঠে যেন তারা! কত না বলা কথা - অভিমানের পাহাড় ভেঙে, ফল্গুধারার মত বেরিয়ে আসতে থাকে দু'জনের। একে অপরের মধ্যে বিভোর হয়ে ডুবে যায় তারা। কতক্ষণ যে কেটে যায় তাদের কথার মাঝেই, বুঝতেই পারে না! আঁধার নামে, সেদিনের মত আলাপচারিতা থামিয়ে, বাংলোয় ফিরে আসে তারা।
সেদিন, দু'জনেই বিনিদ্র রাত্রিযাপন করে একে অন্যের কথা ভাবতে ভাবতে, পুরানো স্মৃতিতে তলিয়ে গিয়ে! পরদিন আলো না ফুটতেই, সমর আর মেঘলা বেড়াতে চলে গেলো - পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচের দিকে। অনেক দূর নামার পর, তিস্তার যেন বড্ড কাছে এসে গেছে মনে হতে লাগলো তাদের!
দূর থেকে, সবুজ বনানীর ওপর দিয়ে নজরে আসা, ক্ষীণকায়া দীর্ঘাঙ্গী তিস্তার দেহবল্লরীর সৌন্দর্য এক প্রকার। আর, কাছ থেকে দেখা ক্ষরস্রোতা তন্বী যুবতী তিস্তার দ্রুতগমনের ঝঙ্কার আর একরকম - প্রথমটিতে কাব্য করা সাজে, পরেরটি কিন্তু কোমল হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করে।
দু'জনের কেউই আর গভীরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলো না, কিন্তু তার থেকেও তাদের বিপত্তিকর হয়ে দাঁড়ালো - ফেরা। চরাই ভেঙে ওঠা, তাও মেঘলার ঐ আধাসুস্থ শরীরে সম্ভবই নয় কখনও, তাহলে? সেই পিচ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে তারা ভাবছিলো - কি করা যায় এখন?
এমন সময় দেখলো - নিচের গ্রাম থেকে একটা সুমো আসছে। চালকটিও তাদের চেনা - বাদিং, ওদের বাংলোর প্রায় সব আগন্তুকেরই সারথী সে। কিন্তু তার গাড়িতে করে, সে নিচে থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বাংলোয় ফিরছে - গাড়িতে দু'জনের বসার মত জায়গাও নেই!
তাই, মেঘলা একাই তার সাথে চলে গেলো বাংলোয়। সমর আস্তে আস্তে একাকীই ফেরার পথ ধরলো। বেশ লাগছিলো - সেই প্রকৃতির আঁচলে বাঁধা, নির্জন বীথি বেয়ে একা একা চলতে। কিন্তু সে একাকীত্বও তার দীর্ঘস্থায়ী হলো না! কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সহচরী হলো এসে তরী! বললো - বৌকে বাংলোয় পাঠিয়ে দিয়ে, একা একা ঘুরতে খুব মজা লাগছে বুঝি?
সমর - একা আর কোথায় সুন্দরী? এই তো সাথী পেয়ে গেছি!
তরী - আমি কি আর তোমার সাথী নাকি? মৃন্ময় আসে না বলে, পাহাড়ে এলে আমায় একাই ঘুরতে হয়। এই জলসা বাংলো, এই প্রকৃতি, গাছপালা, মাটির ভেজা গন্ধ আর….
সমর - আর প্রথম প্রেমের স্মৃতি তোমায় বুঝি বারবার টেনে নিয়ে আসে এখানে?
তরী - হ্যাঁ। জীবনের লাভক্ষতির হিসাব যদি কখনও কষি, তো এই বাংলোর ভূমিকা থাকবে সেখানে।
সমর - তাই? এখানে এসে তোমার আমার কারোরই তো লাভ কিছু হয়নি। প্রেম যেটা এসেছিলো, সেও তো 'লাভ' হয়ে আর উঠলো কই, 'লস' ই তো হলো। এখন তো আমাদের 'নো লাভ লস্ট', তাই না?
তরী - তা কেন? ভালোবাসলে তাকে বুঝি পেতেই হবে, না হলে আর ভালোবাসা থাকে না? যাকে ভালোবাসি তার দৈনন্দীন সাংসারিক জীবনে নাও আসতে পারি, কিন্তু মননে থাকার সুখটুকু তো আর কেউ কেড়ে নিতে পারেনা। তার ভালোটুকুর কামনায়, নিজের একটু ক্ষতিও যদি করে ফেলতে হয়, সে ব্যথাও তো সততই সুখের।
প্রকৃত প্রেম মানুষকে ছোট করে না মশাই, তাকে উদার করে - নিজের স্বকীয় বৃত্তটুকুর বাইরে এসে, সে সমস্ত কিছুকেই গ্রহণ করে, তার অঙ্গসজ্জা নয় আত্তীকরণ করে। তার মহত্ত্ব তার নিজের গ্রহণযোগ্যতায়, আর বাকি সকলকে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়েই, প্রকাশ করতে ব্যকুল হয় সে!
সমর - সে তো মুক্তির সাধনে ব্যপ্ত! 'বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি!' সে প্রেম আমার নয়। আমি যে বড় স্বার্থপর তরী, যাকে ভালোবাসি তাকে পেয়েই আমার প্রাপ্তির ভাঁড়ার পূর্ণ হয়। তোমায় হারানোর যন্ত্রণা, আমার বুকে আজও কাঁটার মত বেঁধে।
তবু সান্ত্বনা ছিলো - তুমিই ছেড়ে চলে গেছো ভেবে, তোমায় বিশ্বাসঘাতিকা বলে রোজ রোজ অজস্র গালাগাল দিয়ে, নিজের কষ্ট চাপা দিতাম। এখন, সেই অভিনয়টুকুও আর টিকবে না, যা ছিলো যবনিকার অবগুন্ঠনে, আঁধারে লুকানো, আজ সে যে প্রকাশ্য দিবালোকে দাঁড়িয়ে - তোমার আমার অস্তিত্বের মতই ভীষণ সুস্পষ্ট।
তরী - আমাদের জন্য প্রেমটুকুই ছিল, মিলনের আনন্দ হয়তো ছিলোনা! কিন্তু বিরহের বেদনাটুকু, এই শৈত্যের মাঝে সকালের ঝলমলে মিঠে রৌদ্রের মতই সুখকর কি নয়, বলো? এতগুলো বছর কেটে গেছে, এতদূরে চলে গেছি আমরা, তাও দেখো সম্পর্কের পবিত্রতাটা তো খোয়া যায় নি! অভিমানের চাদরে ঘেরা যতই থাক, দু'জনের মনে সুপ্ত ভালবাসাটার শ্বাসরুদ্ধ হয় নি - হ্যাঁ, শীতঘুমে সে গিয়েছিলো নিশ্চয়ই।
হয়তো আবার তাই যাবে, কতদিন, কত বছরের জন্য জানি না। আবার কোথাও কখনও এমনি করেই দেখা হবে তোমার আমার। তখন হয়তো, মিলনের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াবে - আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য, দায়, মনুষ্যত্ব আরও কত কি? তবুও দেখো, মনের কোণে নিভৃতে তার আনাগোণা চলতেই থাকবে - তাকে থামাতে না পারবে তুমি, না আমি। জানি না সেদিন কেমন হবে, তবে একটা কথা বলবো, রাখবে বলো?
সমর - তোমার কোন কথা আর আমি ফেলেছি, যে আজ এটা ফেলবো? বলো?
তরী - তুমি ফিরে যাও মেঘলার কাছে। যে মানসিক দূরত্ব, তোমাদের মাঝে এসে গেছে, তাকে চেনো। চাহিদা মানুষের অসীম, কারোর তা পূরণ হয়, কারো হয় না। তুমি চেয়েছো, কিন্তু সে দিতে পারেনি - তা'বলে তার প্রচেষ্টা, তার দেবার ইচ্ছাটুকুর অমর্যাদা করো না। এই সময়ে, তোমাদের একে অপরের পাশে থাকাটাই জরুরী।
তুমি জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে কি, তার নিত্য সত্যতাকে অস্বীকার করে? সে তোমার স্ত্রী, তুমি তাকে সেইরূপেই গ্রহণ করেছো। এখন, তার প্রতি তোমার দায়িত্ব কর্তব্য ভালোবাসার - কোনোটাই কম হওয়া কাম্য নয়।
আমি বলছি, তুমি যত ভালোবাসবে ওকে, যত পাশে থেকে কাছে টেনে নেবে, আপন করবে ওকে - জেনো, মন থেকে আমিও ততই আপন হলাম তোমার, আমার প্রেমকে সম্মান দিলে তুমি। তারপর, নাহয় তোমাদের সেই নবাগতের মধ্যেই খুঁজে নিও আমায়?
সমর - আমি সত্যিই বড় অভাগা, জানো? কোথায় গঙ্গাস্নান করে আমার জীবনযজ্ঞে বসার কথা, আর সেই আমি কিনা পুস্করিণীর পাঁকে দাঁড়িয়ে, হাঁটুজলে মাথা ডোবাবার চেষ্টা করছি। আমার সেই আরাধনা আর সার্থক হয় কি করে বলো?
তরী - আমাদের সমাজে প্রচলিত সংস্কার এই শেখায় যে, প্রতিষ্ঠা করা পুকুরের জল গঙ্গাজলসম পবিত্র। তার পবিত্রতা রক্ষা করাও সমাজের প্রতিটা মানুষের কর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তুমিও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলো না। তোমার পবিত্রতা তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, আর তোমার সাধনার ফলও অপূর্ণ থাকবে না, দেখো।
সমর - সত্যি কি জানো - জীবনে সত্যিই যদি এক মুহুর্তের জন্যও, পুণ্যের কিছু করে থাকি তা, তোমায় ভালোবাসতে পারা, তোমার ভালোবাসা পাওয়া। আমি সত্যিই তার জন্য সৌভাগ্যবান।
তোমার কোন কথা আজ অবধি ফেলিনি, এটাও রাখবো। তুমি দেখে নিও - আমি কথা দিচ্ছি, মেঘলার আদর্শ স্বামী হয়ে উঠে দেখাবো আমি। আমাদের মেয়ে পৃথিবীতে এলে, তার নাম রাখবো - তরী।
