কলমে-পৌলমী পাল
কলমে-পৌলমী পাল
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে উঠে কোনরকম একটা সিট নিয়ে বসে পড়লাম। আমি প্রায় এক ঘন্টার যাত্রী তাই একটু আরাম করে বসে মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করি। আমার পাশের সিটে কয়েকটি মেয়ে বসেছিল , এই বয়স সতেরো কি আঠারো হবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্কুল -কলেজ ছাত্রী , কাঁধে সবারই ব্যাগ রয়েছে। ওদের গল্পগুলো আমার কানে আসছিলো তাই মোবাইলটা রেখে ওদের গল্প শুনায় মন দিলাম।ওরা আমাদের সামনে দাঁড়ানো এক জোড়া স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে গল্প করছে । মেয়েগুলো একে অপরের দিকে চোখে ইশারা করছে আর সঙ্গে হাসাহাসি চলছে।ছেলেটি বামন( বেঁটে লোক ), আর মেয়েটি স্বাভাবিক ধরনের। ওদের গল্পের বিষয়বস্তু হলো ছেলেটির নিশ্চয় মোটা টাকা রয়েছে যা দেখে মেয়েটি বিয়ে করেছে। না হলে এই স্বাভাবিক মেয়ে কখনোই ছেলেটিকে বিয়ে করতো না। এদের মধ্যে একজন আবার সবাইকে বলছে, দেখিস মেয়েটি নিশ্চয় দুশ্চরিত্রের হবে।এই নিয়ে এদের হাসাহাসি ,গল্প চলেই যাচ্ছে। ওইদিকে এই জুটি নেমে পড়েছে, কিন্তু ওদের সম্পর্কে করা গল্পের দাঁড়ি টানছে না মেয়েগুলো।অল্প পরে একটা স্টপেজ এক জোড়া ছেলে মেয়ে উঠেছে ট্রেনে, এই ছেলে মেয়ে গুলো বোধহয় প্রেমিক - প্রেমিকা হবে । ট্রেনে তখন প্রচন্ড ভীড় সেই কারণে ছেলেটি তার প্রেমিকাকে খুব আগ
লে রাখছে।এই মেয়েগুলো আবার হাসিহাসি করার সুযোগ পেয়ে গেল।কারণ প্রেমিকাটির গায়ের রং অনেকটাই চাপা আর অল্প মোটা,অন্যদিকে প্রেমিক সুদর্শন পুরুষ। মেয়েগুলো একে অপরকে বলছে দেখ, যা গায়ের রং ,তাতে আবার আগলে রাখার কি আছে বল? আমি ভালো করে লক্ষ্য করলাম এই মেয়েগুলোর মধ্যে কেউই কিন্তু দেখতে তেমন একটা সুন্দর নয়, কিন্তু অনবরত ওই প্রেমিকাটিকে নিয়ে হাসাহাসি করেই চলেছে। এইদিকে গল্পগুলো শুনতে শুনতে আমার গন্তব্যস্থল নৈহাটি জংশনে ট্রেন পৌঁছে যায়। তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলাম, আজকের এই যুগে থেকেও আমাদের কাছে রং, রূপ, উচ্চতা এগুলো খুব বড় বিষয় রয়েই গেছে।এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষের স্থান এত উন্নত হয়েও চিন্তার ধারার কোন বিকাশ ঘটেনি। মানুষ আজও অন্যজন সম্পর্কে কিছু না জেনে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিচার করতে দ্বিধা বোধ করে না। এই কলেজ পড়ুয়া নবপ্রজন্মের ছাত্রীগুলো এই দুই জোড়া জুটির মধ্যে "ভালোবাসা"নামক শব্দটি অনুভব করতে পারেনি।যদি কোনো মানুষের শারীরিক সমস্যা থাকে তবে সেই মানুষটার বন্ধুত্ব,ভালোবাসা, আত্মীয়তা করার কোন অধিকার নেই আমাদের সমাজে।না হলে আমাদের মতো কিছু সংখ্যক নিচু মানসিকতার মানুষের কাছে তারা হাসির খোরাক হয়ে উঠে।