একমাত্র কন্যা সন্তান
একমাত্র কন্যা সন্তান
মা, আমার টিফিন কোথায়?
নন্দু আমার ব্রেকফাস্টটা দাও, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
বৌমা, আমার ঔষধটা কোথায়?
সকালবেলা এইরকম হাজার প্রশ্নের ঝড় আসতে থাকে নন্দু ওরফে নন্দিনী বসুর দিকে। ছেলে -মেয়ের টিফিন, সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে, হাতের কাছে রাখাই এখন নন্দুর চিন্তা। একে একে স্বামী, সন্তান ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়েছে এখন অনেকটাই শান্তি। সকালবেলার এই সময়টুকু খুব দৌড় ঝাঁপ দিয়ে কাজগুলো সারতে হয় । এখন ঘর ফাঁকা , দুই মা কে নিয়ে নন্দিনী দেবী বসে পড়েছে ব্রেকফাস্ট টেবিলে। দুই মা বলতে তার নিজের মা ও শ্বাশুড়ি মা। নন্দিনী দেবী একজন গৃহবধূ, তাই ঘরের কাজের পাশাপাশি 'Family time' নামক ইউটিউব এ একটা চ্যানেল খুলেছেন। সারাদিনে পরিবারের সঙ্গে কাটানো কিছু ছোট ছোট সুন্দর মুহূর্তগুলো ইউটিউবে শেয়ার করেন। নন্দিনী দেবীর স্বামী চন্দন বাবুর পৈতৃক বাড়ি রয়েছে কাটোয়া জেলায়। যেহেতু তিনি আইটি সেক্টরে কাজ করেন সেই কারণে মা, স্ত্রী , সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। চন্দন বাবুর বাবা গত হয়েছেন অনেক বছর হলো। তিনি এখন কলকাতার বুকে একটা ফ্ল্যাট ও নিয়েছেন। এইদিকে নন্দিনী দেবী বাবা - মায়ের একমাত্র মেয়ে , বাবা মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে চলে আসেন ওনাদের ফ্ল্যাটে।বয়স্ক মা শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভালো করে চলাফেরা করতে পারেন না তাই মায়ের দেখাশোনা তিনি ও চন্দন বাবু করছেন। যেহেতু নন্দিনী দেবীর ইউটিউবে একটা চ্যানেল রয়েছে তাই সেখানে অজস্র কমেন্টেসের ঝড়ও আসে, সেখানে অনেকে চন্দন বাবুকে ঘরজামাই এর তকমা দিয়েছেন অনেকে আবার নন্দিনী দেবীর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কটূ কথা বলছেন। কিন্তু অনেক বন্ধুরা আবার নন্দিনী দেবীর মা ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে সুন্দরভাবে একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনাকে বাহবা দিয়েছেন। বাবা -মা ছোট থেকেই ছেলে হোক বা মেয়ে প্রতিটি সন্তানকে খুব যত্ন করে মানুষ করেন। কিন্তু বড়ো হয়ে সেই বয়স্ক বাবা -মাকে দেখার দায়িত্ব শুধু ছেলেদের কেন হয়? বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের কি কোন কর্তব্য থাকে না নিজের বাবা -মায়ের প্রতি। বিশেষভাবে যারা বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান, তাদের বয়স্ক বাবা -মা কি শেষ সময়টুকু বৃদ্ধাশ্রমে কাটাবে? সেটাই কি একমাত্র কন্যা সন্তানের বাবা - মায়ের প্রাপ্য ? প্রতিটা মেয়েই নন্দিনী দেবীর মতো শ্বশুর - শ্বাশুড়ির পাশাপাশি নিজের বাবা -মা কে দেখার দায়িত্ব রয়েছে। কিছু সংখ্যক নিচু মানসিকতার মানুষেরা কটূ কথা বলেই যাবে । তা গায়ে না মেখে নন্দিনী দেবীর মতো বিবাহিত মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির পাশাপাশি নিজের বৃদ্ধ বাবা -মাকে দেখতে হয় তা নিচু মানসিকতার মানুষদের নিজের কাজের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হয়।
কলমে-পৌলমী পাল