STORYMIRROR

Pp Paul

Tragedy

4  

Pp Paul

Tragedy

পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না

পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না

3 mins
439


মাঘ মাসের ঠান্ডায় আশ্রমের উঠোনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম আর হঠাৎ একটা চেনা মুখ দেখে আমি চমকে গেলাম। আজকাল আর ভালো দেখতে পাই না তাই তাড়াতাড়ি করে চশমাটা পরে দেখলাম ,কোন মনোভ্রম নয় ,সেই চেনা মুখটাই দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর পর। আমাদের শেষ দেখা হয়েছিল সেই কোর্টে ।

আজ থেকে প্রায় চল্লিশ - বিয়াল্লিশ বছর আগে আমার মা- এর পছন্দ করা মেয়ে,মীনার সাথে আমার বিয়ে হয় । মীনা খুব শান্ত ও সুশীল ছিল। মীনাকে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি কারণ আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে। মীনা আমার থেকে প্রায় দশ -বারো বছরের ছোট ছিল তাই ওর সাথে আমার তেমন কোন কথা হয়নি । অবশ্য মায়ের জোরেই আমি মীনাকে বিয়ে করি। বিয়ের পর আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে ওঠে,আস্তে আস্তে আমরা একে ওপরের যেন পরিপূরক হয়ে ওঠি। বিয়ের দু - তিন বছর পর্যন্ত কোন সন্তান না হওয়ার কারণে আমরা ডাক্তারের পরামর্শে যাই এবং জানতে পারি মীনার শারীরিক সমস্যা রয়েছে, বলতে গেলে সন্তান প্রসবে অনেকটাই অক্ষম। কিন্তু আমার বংশধর চাই,এই চিন্তা নিয়ে আর দেরি না করে মীনার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ করি । তার এক বছরের মাথায় আমি সোহানীকে বিয়ে করি। সোহানী আমার কলিগ , আমরা দুজন এক সাথে অনেক বছর ধরে এক অফিসে কাজ করছি। কিন্তু আগে তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না মীনার সাথে বিচ্ছেদের পর সোহিনী আমার জীবনে আসে আর তারপরই বিয়ে। এখন আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে ,এক ছেলে ও মেয়ে । এভাবেই আমাদের চলতে থাকে। এই গত পাঁচ বছর হলো মেয়ের বিয়ে দেই এবং ঠিক বিয়ের কয়েকমাস পরই সোহানী যক্ষা রোগে মারা যায় । সদ্য মা হারা ছেলে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে আর দেরি না করে ছেলের বিয়ে দেলাম । তারপরই আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারি যে আমি ছেলের সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি।তাই আর কাউকে কিছু না জানিয়ে এই কদিন হলো আমি "আশ্রয়" নামক বৃদ্ধাশ্রমে এসে ঠাঁই নিয়েছি। 

হঠাৎ কারো ডাকে আমার ঘোর ভাঙ্গলো, তাকিয়ে দেখি মীনা আমার সামনে।পুরনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েছে বুঝতেই পারিনি, তাই তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছলাম। তারপর অনেক সময় বসে মীনার সাথে গল্প করলাম আর জানতে পারলাম মীনা আমার সাথে বিচ্ছেদের পর একটা অফিসে অনেক বছর কাজ করছে এবং অবসরের পর এই " আশ্রয়" এর সুপারভাইজারের কাজে যোগ দিয়েছে। এবং ও নিজের জীবনটাকে বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছে। অনেকক্ষন গল্প করার পর মীনা চলে যায়। এখন আমি উঠে এসে রুমে যাই, আমার বড্ড মনে পড়তে লাগলো মায়ের কথা,মীনার সাথে বিচ্ছেদ পর মা অনেক চাপা কষ্টে ভোগেছিলেন, এবং দ্বিতীয় বিয়ের পর আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে শেষ সময়টুকু বৃদ্ধাশ্রমে কাটিয়েছিলেন । হয়তো মা আমার ভবিষ্যৎ আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।দ্বিতীয় বৈবাহিক জীবন আমার তেমন কোন ভালো কাটেনি কিন্তু সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিলাম। যৌবনে আমি মা'র কষ্টটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এই বিরাশি বছরের বুড়ো প্রতিটা পদক্ষেপে আজ মা'র কষ্টো উপলব্ধি করতে পারছে।পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না, ঠিক সেই রকম মীনার সাথে করা পাপ আজও আমার পিছু ছাড়েনি। সেই সময় যদি আমি বংশধরের পিছু না ছুটতাম তাহলে হয়তো আজ আমার কারাগার জীবন ভোগ করতে হতো না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy