কাটুম কুটুম
কাটুম কুটুম
কাটুম কুটুম শিল্প
ছবিগুলিতে পুতুলটা দেখে "কাটুম কুটুম শিল্পের" কথা মনে পড়লো। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম এই শিল্প রীতির প্রচলন করেন। অবিন্দ্রানাথ বাঁশের গাঁট থেকে উড়ন্ত পাখি, গাছের শাখা প্রশাখা থেকে চপ্পল হরিণ, এছাড়া গাছের বাকল, সুপারির খোসা, নারকেলের ছোবড়া, আমের আঁটি তালের আঁটি, নারকেলের মালাই পাথরের টুকরো, দড়ি ইতালি থেকে গিরগিটি, কুকুর, বেড়াল, মাছ, প্রজাপতি ইত্যাদি তৈরি করলেন এবং তাদের নাম করন করলেন "কাটুম কুটুম" পুতুল।।
মানুষের ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে যেমন-ফলের বীজ,গাছের শিকড় ছাল এসব কাজে লাগিয়ে শিল্পী তার আপন মনে ক্যানভাসে একটা ছবি তৈরি করে শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলেন। বীরভূমের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা শান্তিনিকেতনের এখনো এই শিল্প সংস্কৃতির বাহক ওরা যেন জন্মসূত্রেই এই পুতুল গুলো বানাতে জানে ,ওরা জানে গাছের শিকড় ছাল ফল ফলের বীজ সংগ্রহ করে কি করে এই সুন্দর শিল্প বানাতে।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল অন্য একটি শিল্পী গল্প।বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর এলাকার চূয়া মসিনা গ্রামের দরিদ্র উপজাতি সম্প্রদায়ে জন্ম পবন লোহারের। পড়ালেখার সঙ্গে ছিল ছবি আঁকার অদ্ভুত টান। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি চলে গেলেন বোলপুর ছবি আঁকা টানে । সেখ
ানেই কাটুম কুটুম শিল্পের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।ছবি আঁকা না হলেও এই শিল্প সাধনায় মগ্ন হয়ে যান তিনি।সামান্য গাছের শিকড় থেকে জন্তু-জানোয়ার বা মানুষের প্রতিকৃতি খুঁজে দেখার জন্য যে চোখ থাকার দরকার, সেটা তো একজন প্রকৃত শিল্পীরই থাকে। তবু হয়তো পাশ্চাত্য ঘরনায় এই শিল্প স্বীকৃতি পায়নি বলেই আমাদের দেশেও অনাদৃত।
এই শিল্প যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি তাই সম্পূর্ন Bio degradable। আপনার সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি যদি ওদের শিল্প রাখার জায়গা হয়,কিনবেন ওদের উৎসাহ দিয়ে, বাংলা ও বাঙালির শিল্প ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
সব শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি মনস্ক, সমস্ত বন্ধুদের অনুরোধ করবো, এই কাটুম কুটুম শিল্প কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আর শিল্পীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পুতুল সংগ্রহ করুন।
ছবিগুলিতে ক্ষুদে মিষ্টি মেয়েটিই শিল্পী । শহরের ছোট্ট এই শিল্পী হয়তো খেলার ছলেই নারকেল এর খোসা দিয়ে বানিয়েছে এই পুতুল টি, সে হয়তো জানেই না কাটুম কুটুম শিল্প টা কি তবু সে তৈরি করেছে এই পুতুল গুলো। হতে পারে আপনার ঘরের মেয়ে এরকম পুতুল তৈরি করতে পারে। তাদের অবশ্যই উৎসাহিত করুন। কারণ বাঙালি র শিল্প মনন বাঙালি র অহংকার।
শিল্পী : তপস্যা মণ্ডল
Manab Mondal