Bidyut chakraborty

Classics Crime Fantasy

5.0  

Bidyut chakraborty

Classics Crime Fantasy

::কার নাম প্রেম::

::কার নাম প্রেম::

4 mins
895


দিনটা ভারী বিশ্রী।নিম্ন চাপের বৃষ্টি চলছে ক'দিন ধরে।এই একঘেয়েমি বৃষ্টি একদম ভালো লাগে না কুয়াশার।এখন যে বৃষ্টি পড়ছে তা নয়।তবে সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার।একটা কালো মেঘ যেন আকাশের বুকটাকে চেপে ধরেছে।তার উপর আজ আবার রবিবার।স্কুল নেই।তাই সকাল থেকেই মনটা ভালো লাগছে না কুয়াশার।প্রতিদিনের মতোই আজও সকালেই ঘুম ভেঙে গেছে।আজ স্কুল যাওয়ার কোনো তাড়া নেই।টিউশনি পড়তে যাওয়া নেই।সময় যেন কাটাতেই চাইছে না।পড়তে বসতেও আজ ইচ্ছা করছে না।কিন্তু মায়ের বকাবকির ভয়ে পড়ার টেবিলে বই খুলে বসল।কিন্তু বইয়ের পাতার লেখা গুলো কেমন হিজিবিজি মনে হচ্ছে।তাও জোর করে দু-এক লাইন পড়ল কিন্তু কী পড়ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।বাইরের আকাশের মতো ওর মনেও যেন অব‍্যক্ত একটা কালো মেঘ চেপে ধরেছে।আজ ওর কিছুই ভালো লাগছে না।হঠাৎ ওর লেখার ডায়রিটা টেনে নিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করল।


"প্রেম মানে কী শুধুই নারী পুরুষ

কেন নয় শুধুই পুরুষ বা শুধুই নারী ।"


এ সব কী লিখছে কুয়াশা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।কলকাতার নামকরা ইংলিশ মিডিয়ামের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে।পড়াশোনায় যথেষ্ট মনোযোগী এবং ভালো।প্রত‍্যেক বছর পরীক্ষায় ক্লাসে র‍্যাঙ্ক করে। কোয়েড স্কুলে পড়াশোনা করায় ছেলে বন্ধুও আছে কয়েকটা কিন্তু এখন আর ছেলেদের সহ‍্য করতে পারেনা কুয়াশা।ছেলে দেখলেই বা বন্ধুদের নাম শুনলেই ওর সারা শরীর যেন কেমন করে ওঠে।ওর সমবয়সী ছেলেদের নাম শুনলেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে কুয়াশার। মনে হচ্ছে খুব জোরে চিৎকার করতে।এখন ছেলেরা ওর দুচোখের বিষ।অথচ আগে নিজেই ছেলেদের মতো পোশাক পরত, চুল কাটত।তখন মেয়ে হয়ে ও নিজেই মেয়েদের নিয়ে হাসাহাসি করত।আগে ওর কোনো বান্ধবী ছিল না,সবই ছেলে বন্ধু। কিন্তু এখন ওর মেয়েদের সাথে থাকতেই ভালো লাগে।এখন মেয়েদের মতো সাজতেই ওর ভালো লাগে।এখন ছেলেদের পোশাক ছেড়ে মেয়েদের পোশাক পরে।এখন আর মেয়েদের নিয়ে হাসাহাসি করে না।আগে দেহে মেয়ে হলেও পোশাকে আচরণে মানসিকতায় ও ছেলে হয়ে উঠেছিল।কিন্তু এখন ওর খুব মেয়ে হয়ে উঠতে ইচ্ছা করে। ওদের স্কুলের দশম শ্রেণির পিয়াস কে ওর খুব ভালো লাগে।স্কুলের পরীক্ষার সময় পরিচয় হয়েছে দুজনের।তারপর থেকেই কুয়াশার শুধু পিয়াসের কথা ভাবতে ভালো লাগে।ওর সব খাতা জুড়ে বা বইয়ের শেষ পাতায় বা মলাটের ওপর ওর নামের পাশে পিয়াসের নাম লিখতে ওর খুব ভালো লাগে।এ সব দেখে ওর বাবা-মা খুব বকাবকি করে কিন্তু কেন বকে বুঝতে পারে না কুয়াশা। ফ্রেন্ডস ডে তে কুয়াশা নিজের বান্ধবীদের পাশাপাশি পিয়াসের জন‍্য নিজের টিফিনের টাকা জমিয়ে বেশ দামি চকোলেট কিনে নিয়ে গিয়ে দিল।ওর বান্ধবীরা এমনকি পিয়াসও শুধাল ওর জন‍্য এতো দামি চকোলেট কেন কিনেছে?কুয়াশা কিছু বলতে পারল না,শুধু বলল 'সে দিন স্কুলের অনুষ্ঠানে তুমি খুব সুন্দর নেচেছিলে তাই এটা' বলেই দৌড়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল।।সারা ক্লাস বেঞ্চে মাথা দিয়ে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে সত‍্যিই তো কেন ওকে চকোলেট দিল?এর কোনো উত্তর সে খুঁজে পায় না।


এখন পাগলামিটা আরো বেড়েছে।কুয়াশাদের পাড়াতেই পড়তে আসে পিয়াস। ওদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই পড়তে যেতে হয় পিয়াস কে। ওকে দেখার জন্য প্রতি শুক্র ও রবিবার সকালে পিয়াসের পড়তে যাবার ও বাড়ি ফেরার সময় কুয়াশা তীর্থের কাকের মতো বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে আর আড়াল থেকে দেখে পিয়াস কে।এখন একদিন পিয়াস স্কুলে না এলে বা পড়তে না এলে ওকে দেখতে না পেলে কুয়াশার ভিতরটা কেমন একটা করে।যেন বুকের ভিতর থেকে কিছু একটা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়।কিন্তু তার কারণ সে কিছুই বোঝে না।দিনদিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে সে।বেশীর ভাগ সময় মন মরা হয়ে বসে থাকে।কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে।অল্পতেই রেগে যায়।আগের মতো আর হাসাহাসি করে না।এমনকি বান্ধবীদের সঙ্গেও বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না।আগের মতো আর পড়াশোনা করতে গল্পের বই পড়তে বা লেখালেখি করতেও ভালো লাগে না।এখন সব সময় একা থাকতে ভালো লাগে ওর।আর সব সময় বসে বসে পিয়াসের কথা ভাবতে ভালো লাগে।ও যে দিন দিন বদলে যাচ্ছে তা নিজেই বুঝতে পারে কুশায়া ।কিন্তু কেন এমন হয়ে যাচ্ছে সে তার কোনো উত্তর কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না।


একদিন ক্লাসে স‍্যার তার মতোই একটা মেয়ের গল্প পড়াল। যার অন‍্য একটা মেয়েকে ভালো লাগত।গল্প শুনতে শুনতে কুয়াশা যেন হারিয়ে যাচ্ছিল।ওর মনে হচ্ছিল স‍্যার যেন ওর কথায় বলছে।তবে কী পিয়াসের প্রতি তার যে টান সেটা ভালোবাসা? পড়ানোর সময় যে স‍্যার বললেন পুরুষের প্রতি পুরুষের বা নারীর প্রতি নারীর টান বা ভালোবাসাকে সমকামিতা বলে তার মানে সে সমকামী--কিছুই বুঝতে পারছে না কুয়াশা।তবে এখন সে তার আচরণের অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। আর সে জানে তার এই অনুভূতির মূল্য কেউ বুঝবে না, এমন কি পিয়াসও।আজ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তাটা যেন অনেক লম্বা মনে হচ্ছে তার শেষই হচ্ছে না।আর সারা রাস্তা শুধু ভাবতে ভাবতে আসছে কী করে পিয়াস কে বলবে সব কথা কী করে বাড়ির লোককে বুঝাবে তার মনের কথা।সে চোখে অন্ধকার দেখছে।ওর সারা মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণা তে। কিন্তু কী করবে?এই সব কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে কুয়াশা ।ওর চোখ মুখের অবস্থা দেখে ওর মা অবাক হয়ে 'কী হয়েছে?' জানতে চাইলেও কুয়াশা কোনো উত্তর করে না। জুতোটা কোনো রকমে খুলে ,বইয়ের ব‍্যাগটা নামিয়ে রেখে হাত মুখ না ধুয়েই দোতলায় নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। মা খাবার জন‍্য ডাকাডাকি করলে জানিয়ে দেয় শরীর ভালো না থাকায় পরে খাবে।কী করবে কুয়াশা?কোনো সমাধানের রাস্তা না পেয়ে স্কুলের গল্পটাকে নিজের গল্প মনে করে একই পরিণতি বেছে নিল।রাতে অনেক ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বাড়ির লোক দরজা ভেঙে ঢুকে দেখল ফ‍্যানের থেকে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলছে কুয়াশা।আর খাটের উপর পড়ে আছে তার কবিতা লেখার ডায়রিটা যার একটা পাতায় লেখা ওর সেই কবিতা যার শেষে লেখা


'আমি পুরুষ হতে চাই,

তবেই পাবো আমার ভালোবাসা

যেখানে থাকবে না কোনো আপত্তি কোনো বাধা।'



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics