STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Thriller

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Thriller

কাপালিকের কবলে - ৫

কাপালিকের কবলে - ৫

4 mins
182


অন্ধকারে হাওয়ায় ভাসমান কয়েকটা মূর্তি এবার এগিয়ে এসে, নাকি সুরে উত্তর দিলো - প্রঁভুঁ, ঐঁ বাঁচ্চাঁ ছেঁলেঁটাঁ হঁলেঁ তোঁ খুঁবঁ ভাঁলোঁ হঁতো। কিঁন্তুঁ ঐঁ বঁদঁমাঁইঁশঁ লোঁকঁটাঁ ওঁকেঁ মেঁরেঁ মাঁথাঁ ফাঁটিঁয়েঁ দিঁয়েঁছেঁ। ওঁকেঁ তোঁ আঁরঁ বঁলিঁ দেঁওঁয়াঁ যাঁবেঁ নাঁ - এঁইঁ ক্ষঁতঁ অঁবঁস্থাঁয়ঁ।


বঁরং ঐঁ দুঁষ্টু লোঁকঁটাঁকেঁইঁ বঁলিঁ দিঁনঁ। ওঁ বেঁটাঁ ভাঁলোঁ লঁগ্নেঁ জঁন্মেঁছিঁলোঁ, অঁনেঁকঁ ক্ষঁমঁতাঁওঁ জঁন্মঁসূঁত্রেঁইঁ ওঁ পেঁয়েঁছিঁলোঁ। কিঁন্তুঁ লোঁকেঁরঁ ভাঁলোঁ নাঁ কঁরেঁ সেঁইঁ সঁবঁ ক্ষঁমঁতাঁ নিঁজেঁরঁ স্বাঁর্থেঁ অঁপঁব্যঁবঁহাঁরঁ কঁরেঁছেঁ। 


ঐঁ ছেঁলেঁটাঁর মাঁয়েঁরঁ শঁরীঁরেঁওঁ ওঁ রোঁজঁ সাঁপেঁরঁ বিঁষঁ ঢুঁকিঁয়েঁ দিঁয়েঁ দিঁয়েঁ, তাঁকেঁ মেঁরেঁইঁ ফেঁলেঁছেঁ প্রাঁয়ঁ। ঐঁ তোঁ সেঁইঁ পাঁপীঁ নাঁগঁমিঁত্রঁ ওঁঝাঁ।


কাপালিক বাবা আর কথা না বাড়িয়ে, তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাঁড়িকাঠে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর, জয় মা - বলে খাঁড়ার এক চোটে, তার ধর মুণ্ডু আলাদা করে দিলেন। তারপর তার ঐ কাটা মুণ্ডুটা নিয়ে গিয়ে, মায়ের পায়ে রেখে তাঁর পুজোর বাকি কাজ শেষ করতে মগ্ন হলেন!


নাগমিত্রর ধরটা ছটপট করতে করতে, গড়িয়ে আমার পাশে চলে এলো। হোমাগ্নির আলোয় দেখতে পেলাম - তার পরনের ধুতির করোজে (কোমরের ভাঁজে), গোঁজা আছে তখনও সেই শিকড়টা!


তাই আমিও গড়িয়ে তার কোমড়ের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে, দাঁত দিয়ে সেই কাপড়ের ভাঁজ থেকে টেনে বের করে নিলাম শিকড়টা! ঠিক তখনই সেই কাপালিকটা বজ্রগম্ভীর কন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন - শ্বাপদের মত শবদেহে মুখ দিয়ে, নিজের কি পরিচয় দিতে চাস তুই মূর্খ? 


আমার পুজো শেষ হওয়া অবধি ধৈর্য ধরতে পারলি না? আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি - যেমন শ্বাপদ সুলভ আচরণ তুই এই মায়ের থানে করেছিস, সেইরকম শ্বাপদেই তুই পরিণত হ'। ওরে, ওর বাঁধন গুলো খুলে দে এবার। তাঁর অদৃশ্য সেবকরা এসে আমায় বাঁধন মুক্ত করল।


আমি ছাড়া পেয়েই দৌড়ে তাঁর পায়ে গিয়ে পড়লাম - বাবা, আমার অপরাধ মাপ করো। আমি আমার মাকে বাঁচাবো বলে, ঐ শিকড় খুঁজতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম আজ। ঐ লোকটা সেটাই নিয়ে পালাচ্ছিলো। আমি তার থেকে অন্তত একটা টুকরো দেবার জন্য, ওর কাছে দয়া ভিক্ষা করতে করতে, ওর পিছন পিছন দৌড়াচ্ছিলাম। 


তুমি তো অন্তর্যামী, তুমি তো জানো - আমি মিথ্যে কথা বলছি না। মা ছাড়া আর তো কেউ নেই আমার, আর সেই মাও রোগশয্যায়। মাকে আমায় বাঁচাতেই হবে, তাই খুব উদ্বেগে আছি প্রভু। তাই এই ভুল করে ফেলেছি, আমায় ক্ষমা করে দিন প্রভু। আপনার অভিশাপ থেকে দয়া করে আমায় রেহাই দিন।


কাপালিক বাবা চোখ বুজে ওখানে ই তখন বেশ কিছুক্ষণ ধ্যান করলেন। তারপর চোখ খুলে বললেন - হুম্ম, তুই সত্যই বলছিস বেটা। আমি দিব্যদৃষ্টিতে সব দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আমি প্রায় দেড়শ' বছর সাধনা করে, বাকসিদ্ধি লাভ করেছি বেটা। আমার দেওয়া শাপ তো কোন মতেই বিফলে যাবে না। 


তবে তোর মাতৃভক্তি দেখে খুশী হয়েছি। তাই তোকে আমার এই শাপ থেকে মুক্তি লাভের উপায় বলে দিয়ে যাচ্ছি - আজ তোর নিজের মঙ্গলের জন্য, মানে তোর মাকে বাঁচাতে মুখ দিয়ে যেমন শবদেহ থেকে কিছু বের করে নিলি, ঠিক তেমনি করে যেদিন অন্য কারোর মঙ্গলের জন্য এই একই কাজ করবি, সেদিনই তুই আমার এই শাপ থেকে মুক্ত হবি।


ততদিন তোর বাড়ি ঘর আর তোর মায়ের সেবা শুশ্রুষা সব আমার চেলারাই করবে। কই রে, তোরা কোথায় গেলি। এই দেখ, এই শিকড়টা আমি এই গঙ্গাজলে ধুয়ে শোধন করে ওকে দিয়ে দিচ্ছি। ও এখন বাড়ি যাবে, কিন্তু মানুষ রূপে তো আর বাড়ি অবধি পৌঁছাবে না। তাই তোরা সারা রাস্তা ওর খেয়াল রাখবি। 


আর যতদিন না ও আবার মানুষ হচ্ছে, ততদিন ওর মা'র, ওদের বাড়ি ঘরদোরের আর ওর খেয়াল রাখার দায়িত্বও তোদেরকেই দিয়ে যাচ্ছি। আমি কাল সকালেই আবার হিমালয়ে ফিরে যাবো, বুঝলি? হাওয়ায় ভাসতে থাকা তাঁর সেই অদৃশ্য সেবকরা উত্তর দিলো - যেঁ আঁজ্ঞাঁ প্রঁভুঁ।


তারপর, উনি গঙ্গাজলে ধুয়ে, একটা লাল সুতোয় শিকড়টা বেঁধে, আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলেন। আমি তাঁর চরণে মাথানত করে প্রণাম করতেই, তীনি আশীর্বাদ করলেন - কল্যাণ হোক। 


তারপর উঠে আমি তাঁর ঐ পুজোর জায়গা ছেড়ে বেড়োতেই, আমার হাত পা মুখ, গোটা শরীরটাই কুকুরের মত হয়ে গেলো। আমি দেখতে দেখতে একটা বড়সড় কালো কুকুরে পরিণত হলাম। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই দৌড় দিলাম বাড়ি পানে। কাপালিকের সেই অদৃশ্য চেলারাও আমার সঙ্গে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে আমাদের বাড়িতে এল। 


বাড়ি পৌঁছাতেই, মামা আমায় দেখতে পেয়েই এগিয়ে এলেন। আমার গলায় ঝোলানো সুতো থেকে শিকড়টা খুলে নিয়ে, বললেন - দুঃখ করিস না। ঐ কাপালিক যা যা বলেছেন, তার কথামতই চলতে হবে তোকে। ভেঙে পড়িস না, তিনি তো আমারও গুরু। তাঁর কথার হের ফের হবে না। 


দিদিকে সুস্থ করে তুলতে তাঁর আশীর্বাদ খুব দরকার ছিল। তাই, আগে থেকেই সব জেনেও তোকে তাঁর কাছে যাওয়া থেকে আমি আটকাইনি। আমি জানতাম, তোর মাতৃভক্তি দেখলে তিনি নিশ্চয়ই তোর মাকে সুস্থতার জন্য আশীর্বাদ করে যাবেন। তোর মা ঠিক আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে এবার, দেখিস। আর ওরা তো আছেই তার খেয়াল রাখার জন্য।


তুই বরং তোদের গ্রামের ঐ শ্মশানে গিয়ে থাক। তোর মুক্তি পেতে এখন দেরী আছে, কিন্তু সেটা তুই ওখানেই পাবি - আমিও নিজে সব কিছু জেনে বুঝে দেখে নিয়েছি তাঁর কাছে গিয়ে।


সেই থেকে আমি এই শ্মশানেই ছিলাম। কাল রাতে মামা এসে বলে গেলেন - তোর মুক্তি হতে চলেছে কাল। আজ আপনার বন্ধুর কান থেকে দুলটা খুলে নিয়ে, আপনাকে দেবার কথাটাও বলে দিয়েছিলেন তিনিই।


আমিও তাইই করেছি, এতে আপনাদের কি মঙ্গল হলো তা তো জানিনা। কিন্তু হলো তো নিশ্চয়ই, নয়তো আমি আবার মানুষ হলাম কি করে, তাই না? 

চলবে 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama