STORYMIRROR

Arka Basak

Tragedy Thriller

4  

Arka Basak

Tragedy Thriller

কামিনী

কামিনী

4 mins
284

“তোমার বউ কত বোকা!” শরীরে তোয়ালেটা পেঁচিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল কামিনী।সুজয়- “হ্যাঁ, না হলে কি আর আমাকে এমন অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। বাড়ি যাওয়ার সময় দুটো লাল গোলাপ নিয়ে গিয়ে বলব- হানি সরি। আজ অফিসে বস অনেক কাজ দিয়েছিল। তাই বের হতে একটু দেরী হয়ে গেছে।“তারপর সে আহ্লাদে আটখানা হয়ে আমাকে শরবত খাইয়ে দিতে দিতে বলবে– “আহা রে! আমার সোনাটা আমাদের সংসারের জন্য কত কষ্ট করে।“কামিনী হাসতে হাসতে বলল- “এরকম বোকা স্ত্রী পেলে কোথায়?”এই বলে কামিনী স্নান করতে চলে গেল। সুজয় শুয়ে রইল। আজ শরীরের ওপর অনেক ধকল গিয়েছে আর বেশ ক্লান্তও লাগছে। চোখ বন্ধ করতেই তার বোকা স্ত্রীর কথা মনে পড়ল।“মেয়েটা কত বোকা। আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে আর আমি মেয়েটাকে এভাবে ঠকাচ্ছি”- মোবাইলের ভাইব্রেশনে সুজয়ের সেই ভাবনায় ছেদ পড়ল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল। নাহ, তার মোবাইলে ভাইব্রেশন করেনি। বালিশের পাশে হাত দিতেই কামিনীর মোবাইলটায় হাত লাগল।স্ক্রিন জ্বলে আছে- কামিনীর মোবাইলেই মেসেজ এসেছে। হাবি নামে সেভ করা- “ময়না! অফিসের কাজে আমার আজ শহরের বাইরে যেতে হবে। রাতে ফিরব না।“ ততক্ষণে কামিনী স্নান করে বের হয়ে এসেছে।সুজয়- “তোমার স্বামী মেসেজ দিয়েছে।“কামিনী- ”কি মেসেজ?”সুজয়- “আজ নাকি ফিরবে না।”কামিনী- “তাহলে তুমি থেকে যাও!”সুজয়- ”নাহ, তা কি করে হয়। আমার বোকা বউটা যে চিন্তা করবে।”কামিনী- “তুমি তাকে মেসেজ করে দাও যে তোমাকে আজ অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে।“সুজয়- ”ভেরী গুড আইডিয়া!”স্ত্রীকে মেসেজ করে দিল সে- “হানি! অফিসের কাজে আমার শহরের বাইরে যেতে হবে। হয়ত আজ বাড়িতে ফিরতে পারব না। তুমি খেয়ে নিও।“”মেসেজ করে দিয়েছি“ মোবাইলটা খাটের উপর রেখে সুজয় বলল। কামিনী শরীর থেকে তোয়ালেটা ফেলে দিয়ে সুজয়ের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলল- “গুড। এখন যাও স্নান করে নাও। আমি খাবার রেডি করছি।“কামিনীর সাথে সুজয়ের পরিচয় একমাস আগে। অফিসের এক পার্টিতে পরিচয় হয়েছে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে মেয়েটার খুব কাছে চলে এসেছে সে। এসেছে বললে ভুল হবে- কামিনী তাকে তার কাছে নিয়ে এসেছে। সুজয় দ্বিতীয়বারের মতন তার বাসায় এসে সময় কাটাচ্ছিল। স্নান করে বের হতেই কামিনী খাবার খেতে ডাকল।সে আজ রাতে ক্যান্ডল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে। খাবারের মেনু হিসেবে আছে- কষা মাংস, মুগডাল আর ভাত। খাবার খেতে খেতে সুজয় জিজ্ঞাসা করল- “তোমার স্বামী কি প্রায় অফিসের কাজে বাইরে থাকে?”কামিনী- “নাহ, এখন প্রতিরাতেই বাইরে থাকে। আগে মাঝেমধ্যে বাইরে থাকতো।”“প্রতিরাতেই বাইরে থাকে?” সুজয় অবাক হয়ে বলল।কামিনী এক গ্লাস জল খেয়ে বলল- “‘আসলে ও এখন আর বেঁচে নেই। বেঁচে থাকতে প্রায় রাতে এই মেসেজ দিত। তার স্মৃতি ভুলতে না পেরে আমি তার নম্বর থেকে অটোমেসেজ সেভ করে রেখেছি। প্রতিরাতে এই সময়ে এই মেসেজটা আমার নম্বরে চলে আসে।”সুজয়- “ওহ সরি। আমি বুঝতে পারিনি।“খাওয়া শেষ করে ওরা বেডরুমে চলে গেল। বুকশেল্ফ থেকে বিভিন্ন বই নিয়ে দেখতে লাগল সুজয়। বই দেখতে গিয়ে একটা ডায়েরি হাতে পড়ল। বিভিন্ন রোমান্টিক কোটেশন লেখা। সুজয় পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একের পর এক কোটেশন পড়তে লাগল। কারও পায়ের শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখল যে কামিনী দাঁড়িয়ে আছে। ড্রেস চেঞ্জ করেছে কামিনী। কালো ব্লাউজ আর কালো পেটিকোটের উপরে পাতলা সিল্কের কালো শাড়ি। তার ফাঁক দিয়ে চিকন নাভিটা দেখা যাচ্ছে। সুজয় কামিনীর থেকে চোখ ফিরাতে পারছিল না, এতটাই তার রূপের ছটা। কামিনী তার কাছে এসে চোখের উপর হাত রেখে বলল- “এভাবে তাকিয়ে থেকো না। চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।“এই বলে কামিনী হাত সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। সুজয় আবার ডায়েরির পৃষ্ঠা ওল্টানো শুরু করল। কয়েক পাতা পরেই একটা ছবি চোখে পড়ল- “এটাই কি তোমার স্বামীর ছবি?” পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে জিজ্ঞাসা করল সুজয়।“নাহ!”- কামিনী ঠোঁটে কালো লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলল। সুজয় আরও পাতা ওল্টাতে লাগল। একের পর এক ছবির দেখা মিলতে লাগল। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল- “এতগুলো ছবি কাদের কামিনী?”কামিনীর দিকে তাকাল সুজয়- কপালে লাল টিপ আর ঠোঁটে কালো লিপস্টিকে তাকে মোহময়ী লাগছে। সুজয় আর বসে থাকতে পারল না।

উঠে গিয়ে পিছন থেকে কামিনীকে জড়িয়ে দিয়ে বলল- “এত সাজগোজ কার জন্য?”কামিনী- “কেন? তোমার জন্য।“কামিনীকে ঘুরিয়ে সামনাসামনি জড়িয়ে ধরে সুজয় জিজ্ঞাসা করল- “বললে না তো ছবিগুলো কার?”কামিনী- “তোমার মতো পুরুষদের।”সুজয়- “মানে?”কামিনী- “ওদের বউ ও তোমার বউয়ের মতই বোকা ছিল। তারাও আমার সাথে তোমার মতই সময় কাটাতে আসত। এখন আসে না। আসা ছেড়ে দিয়েছে এখানে।“সুজয়- ”তোমাকেও তো কেউ ছেড়ে দিতে পারে।“কামিনী- “এমন পুরুষ পৃথিবীতে আছে কি? আসলে ছেড়ে দেয় না। ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। যেমন তুমিও আজকের পর আমাকে ছেড়ে দেবে।“সুজয় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল- “আমি তোমাকে কখনই ছাড়ব না কামিনী।“কামিনী- ”উহু, তুমি না ছেড়ে গেলে আমি পরবর্তীজনকে হৃদপিণ্ডটা খাওয়াব কিভাবে?”সুজয় কামিনীকে ছেড়ে দিয়ে একহাত দূরে গিয়ে বলল- “মানে? তুমি কি বলতে চাইছো?”কামিনী খাটের উপর থেকে ডায়েরী নিয়ে একটা ছবি বের করে বলল- “এই যে তুমি একটু আগে একজন পুরুষের হৃদপিণ্ড দিয়ে ডিনার করেছ, সেটা জানতে কি? তোমার পরের পুরুষ তোমার হৃদপিণ্ড দিয়ে ডিনার করবে।“ভয়ে সুজয়ের কপাল থেকে ঘাম ছুটতে লাগল- “এসবের মানে কি কামিনী? তুমি কি যত আজগুবি কথাবার্তা বলছ! হৃদপিণ্ড দিয়ে ডিনার, পরের পুরুষ- এসবের মানে তো ঠিক বুঝলাম না।”কামিনী ডায়েরীটা খাটের উপর রেখে ডায়েরীতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল- “আজগুবি কথা নয় এগুলো। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। যেদিন থেকে আমার স্বামীকে মেরে লাশ লুকানোর জায়গা না পেয়ে মাংস রান্না করে খেয়ে ফেলেছি, সেদিন থেকে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। মানুষের মাংস ছাড়া এখন আমার একটা দিনও চলে না। ফ্রিজের মাংস শেষ। কাল থেকে আবার ফ্রিজ ভরে উঠবে। আমি আবার মানুষের মাংস খাব আর হৃদপিণ্ডটা রেখে দেব কোনও বোকা বউয়ের স্বামীর জন্য।“এই বলে কামিনী সুজয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল চোখের নিমেষে। দেখতে দেখতে সুজয়ের শরীরের হৃদপিণ্ডটা প্রবল আক্রোশে বের করে নিল সেই নরখাদক। রক্তে ভেসে যেতে লাগল পুরো মেঝেটা। মারা যাওয়ার আগে সুজয়ের মনে পড়ল ওর বোকা স্ত্রীর মুখটা। আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সে- তারপর সব শেষ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy