কালু সর্দারের সমাজ সেবা
কালু সর্দারের সমাজ সেবা
কালু সর্দারের সমাজ সেবা
মাষ্টার মশাই দেখবেন কেউ যেন আমার নাম না জানতে পারে বলে একটা লাল শালুতে বাঁধা কিছু একটা নামিয়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেল কালু সর্দার।
-- মাষ্টার মশাই পুঁটলি খুলে দেখে আগের মতোই থরে থরে ৫০০ টাকার নোট সাজানো। প্রায় লাখ খানেক টাকা হবে।
-- মাষ্টার মশাই গ্রামে গুটি কয়েক ছেলে মেয়ে টিউশন পড়ায়, যা পায় তাতে দুজনের একবেলা আধপেটা খাওয়া জুটবে কি না সন্দেহ। তার উপর আছে অস্বাভাবিক এক মেয়ের চিকিৎসার খরচ।
--কালু যখন উনার কাছে পড়তে তখন থেকে একই অবস্থা চলে আসছে। এখন মাষ্টার মশাই বৃদ্ধ তার নিজের ও ডাক্তার বদ্যি করতে হয়।
-- কালু সর্দার হলো এই অঞ্চলের কুখ্যাত ডাকাত দলের সর্দার।
-- কালু ডাকাতের লক্ষ্য হলো ডাকাতির টাকা দিয়ে পাশাপাশি অঞ্চলের যতো গরীব ছেলে মেয়ে অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না তাদের পড়াশোনার খরচ পৌঁছে দেওয়া; যারা টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না তাদের চিকিৎসার খরচ পৌঁছে দেওয়া।
-- কালু ডাকাত নিজে দিতে গেলে অনেকেই ডাকাতির টাকা বলে নিতে চাইবে না। তাই মাষ্টার মশাই এর হাত দিয়ে সেইসব মানুষ দের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে কালু সর্দার।
-- কালু সর্দারের বয়স তখন আট বৎসর,গ্রামের স্কুলে ক্লাস টুতে পড়ে। ওদের একটা ছোট্ট কুঁড়ে ঘর ছিল,আর পাশেই এক চিলতে একটা চাষের জমি ছিল।
-- কালুর বাবা ওই জমি চাষ করে ও পাশাপাশি লোকের জমি দিনমজুর খেটে যে টাকা রোজগার করতো তাতে ওদের সংসার ভালোই চলে যেত। কালুর পড়াশোনা বেশ ভালোই চলছিল।
-- মা সারদা দেবী হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে কালুর বাবা প্রথমে ওই এক চিলতে জমি কম দামে গ্রামের জমিদার মজুমদার বাবুকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাতেও না হওয়ায় মজুমদার বাবুর কাছে ওই ছোট্ট কুঁড়ে ঘর বন্ধক রাখে কালুর বাবা।
-- এতো করেও মা সারদা দেবী কে বাঁচাতে পারে নি বাবা। এদিকে টাকা শোধ দিতে না পারায় মজুমদার বাবু কুঁড়ে ঘরের দখল নেয়।
-- কালু ও ওর বাবা রাস্তার ধারে ফুটপাতে থাকতে শুরু করে।
-- কিছুদিনের মধ্যে কালুর চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় বাবা মারা যায়।
-- কালু ধীরে ধীরে পকেটমার দের দলে ভিরে যায়।
-- পকেটমার কালু কিছু টাকা জমিয়ে ফিরে আসে গ্রামে। ওই বস্তিতে এক টুকরো জমি কিনে কুঁড়ে তৈরি করে থাকতে শুরু করে।
-- ওই বস্তির কয়েকজন যুবক কে নিয়ে ডাকাতের দল তৈরি করে।
-- কালু সর্দার ডাকাতি করে ভাগে যা পায় তা থেকে নিজের খাওয়ার খরচ টুকু রেখে বাকিটা ওর ছোট্ট বেলাকার মাষ্টার মশাই এর হাত দিয়ে ওই অঞ্চলে যতো গরীব নিপিড়িত মানুষ আছে তাদের মধ্যে বিলি করে দেয়।
-- কালুর দেওয়া শর্ত অনুযায়ী মাষ্টার মশাই কাউকেই বলতেন না তার সাহায্য দেওয়া টাকা গুলো কালু সর্দারের টাকা।
-- গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে ঠিক তেমনই হটাৎ করে সমাজ থেকে কালু সর্দার ঝরে পড়লো। সকাল বেলায় সবাই দেখে কালু তার কুড়ে ঘরে মরে পড়ে আছে।
-- আজ বস্তির ক্লাবে কয়েকজন ছেলে মিলে কালু সর্দারের স্মরণ সভা করছে। কেননা, ওরা যে ক্লাব ঘর করেছে সেটা করতে কালু সর্দার টাকা দিয়েছিল।
-- কালু সর্দারের স্মরণ সভায় গ্রামের মাষ্টার প্রধান বক্তা।এখানেই মাষ্টার মশাই কালু সর্দারের সাথে তার শর্তের কথা প্রকাশ করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের গরীব মানুষের সেবায় কালু সর্দারের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তার সাহায্যের কতজন সুস্থ হয়েছে,কতজন লেখাপড়া করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে নাম ধরে তা বলতে থাকেন।
-- সবার চোখ জলে ভিজে যায়। একজন অশিক্ষিত মানুষ সমাজের জন্য যা ভাবে শিক্ষিত মানুষ তা ভেবে উঠতে পারে। ভাবতে পারলে সমাজের চেহারা অন্য রকম হতো।
-- অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় সজল নয়নে সকলের মুখে একটাই কথা "বাইরে টা দেখে কাউকে বিচার করা ঠিক নয়।"
