The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

TANMOY SEN

Classics

5.0  

TANMOY SEN

Classics

জন্মদিন

জন্মদিন

3 mins
812


আজ ১০ ই সেপ্টেম্বর, দেবলীনার জন্মদিন। বাবার স্নেহভরা চুমুতে ঘুম ভাঙে দেবলীনার। বাবা-মায়ের একসাথে বলা, “হ্যাপি বার্থডে”।

   বাবা-মা’কে ধন্যবাদ জানিয়ে দেবলীনা মনে মনে ভাবে, “বাবা-মা না সব ব্যাকডেটেড! রাত্রি বারোটার পরে এখন সবাই কেক কেটে জন্মদিন পালন করে, এদিকে ওরা এই ভোর সাতটার সময় এসেছে ‘হ্যাপি বার্থডে’ উইশ করতে! বাবার অফিস আর মায়ের ব্যস্ততা – এই নিয়েই প্রতি বছর সারাটা দিন কাটে। সন্ধ্যায় দিদির সাথে পরিবারের মানুষগুলোর উপস্থিতিতে কেক কাটা- এই তো জন্মদিন। এবার দিদিও নেই, সে তো উচ্চশিক্ষার জন্য চেন্নাইতে। তাই সন্ধ্যার আনন্দটুকুও পাওয়া যাবে না! বাবার কেবল পড়া আর পড়া!” দেবলীনার ভাবনার তাল কাটে সম্পূর্ণার ফোন।

- কী রে! তুই আজ একা একাই সব খাবি? আমাকে ডাকবি না?

- না, না, পরীক্ষার পড়া আছে।

- দিন দিন তুই কিপটে হয়ে যাচ্ছিস। আঙ্কেলের কত টাকা বাঁচাচ্ছিস! বিয়েতে বুঝি হেব্বি খাওয়াবি?

- আরে, না, না, তা নয়। আমার জন্মদিন সেভাবে পালন করা হয় না। আর তাছাড়া দিদিও তো নেই।

- এইসব ধানাইপানাই রাখ। সন্ধ্যায় আসছি, পার্টি রেডি কর।

  ফোনটা কেটে গেল। দেবলীনা সমস্ত ঘটনা মা’কে জানালো। মাও ভাবলেন, “বড়মুখ করে আসবেই যখন বলেছে, তখন নিমন্ত্রণ করে ভদ্রতাটা রক্ষা করেই ফেলি।“ সঙ্গে অন্বেষার বাড়িতেও ফোন গেল। কারণ, ছোটবেলা থেকেই দেবলীনা, অন্বেষা আর সম্পূর্ণা ঠিক যেন বেলপাতার তিন পাতা।

  নিমন্ত্রণ তো করা গেল, কিন্তু খাওয়া! এই রে! আবেগের বেগে তো নিমন্ত্রণ করে ফেলেছি, কিন্তু খরচের কথা! দেবলীনার বাবা বিয়ের তেইশ বছর পর এই প্রথম বলেছিল, “এ মাসটা একটু বুঝে খরচ কর। চেন্নাই MSE তে বড় মেয়ের অ্যাডমিশনে অনেক টাকা নিয়েছে, পুজোর কেনাকাটার খরচ, স্কুলের মাইনে, ইলেকট্রিক বিল, পুজোর চাঁদা, এল.আই.সি প্রিমিয়াম – সব এ মাসেই পড়েছে। হাতটান চলছে। তাই অতিরিক্ত খরচ বন্ধ।“

  কিন্তু মায়ের মন তো সব ভুলে গেছে। দেবলীনার মা ওর বাবাকে ফোন করে মনের বাসনার কথা জানালেন এবং রাতের খাবারের আয়োজন।

 পাথরে পাথরে ঘষা লাগলে যেমন আগুনের ফুলকি উৎপন্ন হয় আর সেই আগুন খড়কুটোর গাদায় পড়লে যেমন দাউদাউ জ্বলে ওঠে, তেমনই দেবলীনার বাবার বুকের শুকনো খড়ের গাদায় আগুন ধরে গেল। যে মানুষটা মেয়েদের ভবিষ্যতের আনন্দের জন্য নিজের ইচ্ছেগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন, সে আজ আর্তনাদ করে উঠল, “তোমাকে তো বলেছিলাম, এ মাসে বুঝে খরচ করতে! তুমি আমাকে সেই বিপদেই ফেললে!”

- মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি ‘না’ করতে পারিনি। বেশি কিছু না, মটন বিরিয়ানি, চিকেন কষা, কোল্ড ড্রিঙ্কস আর আইসক্রিম...

- যা করার তুমি করো, আমি পারব না।

ফোন কেটে দিলেন দেবলীনার বাবা।

     ওনার পরিকল্পনা ছিল, বিকেলে মা-মেয়েকে নিয়ে কেক কেটে ভিডিও কল করবেন বড় মেয়েকে। সুদূর চেন্নাই এর টক খাবার, জলের অভাব, মশার কামড়, প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ড – সবকিছু ভেবে বড় মেয়ের জন্য খুব চিন্তা হয় ওনার। বড় মেয়ে যে ভালো নেই, তা তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন। তাই তিনি ছোট মেয়ের জন্মদিন সাড়ম্বরে পালন করতে চাননি। কিন্তু তাঁর ভাবনার সাথে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের ভাবনার অমিলেই যত বিপত্তি।

 যাইহোক, সন্ধ্যাবেলায় সবাই হাজির। কেক কাটা হবে, সবাই অপেক্ষা করছে দেবলীনার বাবার জন্য। দেবলীনাও অপেক্ষায় আছে বাবা কখন ‘বাবান’ বলে ডাক দেবে! অবশেষে সেই ডাক পড়ল বাবারই, অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপস্থিতি দিতে হল। কিন্তু তিনি মুখ ফুটে বলতে পারলেন না, ‘হ্যাপি বার্থডে টু দেবলীনা’, যা তিনি সকালে বলতে পেরেছিলেন হৃদয়ের গভীর স্পন্দন থেকে। কেক কাটার সময় সম্পূর্ণার কেক মুখে মাখানো কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল ঝাঁকুনি দিয়ে খুলে বার্স্ট করার ইচ্ছে - দেবলীনার বাবার মনকে আরও ভারাক্রান্ত করে তোলে। বাবার আচরণে দেবলীনাও খুশি হতে পারছে না। মাও ভীষণ অস্বস্তিতে। অদ্ভূত এক থমথমে পরিস্থিতি.....

  কিন্তু এমনটা তো কেউ চায়নি! তবে কেন এই পরিবেশ? কে দায়ী? বাবা? মা? দেবলীনা? নাকি ওর বন্ধুরা? নাকি সমাজের ইঁদুরদৌড়, শিক্ষাব্যবস্থা আর বেকারত্ব? জলটা কেবল ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। আপনারাই বরং এই ঘোলা জলে মাছ ধরুন। আমি যাই......


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics