জিম করা ভিম
জিম করা ভিম


নিজেকে আয়নায় দেখছিল মনিদীপা। অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো। আজকে ওর মনটা একটু খারাপ। আজ বাইরের ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ও শুনলো ওর শাশুড়ি হেসে হেসে পাশের বাড়ীর কাকিমাকে বলছেন,” আমার ছেলে ছোটবেলায় সরস্বতি ঠাকুরের মূর্তিই কোনদিন ছোট কিনতে দিল না, তা সে নিজে পছন্দ করে যে এমন দশাসই বউ আনবে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে বল?”
আসলে মনিদীপা চিরকালই একটু লম্বায় চওড়ায় , ওকে দেখে লোকে পাঞ্জাবী বলে ভুল করে। সে নিয়ে ওর কোনদিন দুঃখ হয়নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ও যদি একটু ছোটখাটো হত তাহলে কি ভালোই না হত।
এই পাঁচদিন হল ওর বিয়ে হয়েছে, ওর চার বছরের পুরনো বয়ফ্রেন্ড অভিরূপের সঙ্গে। কাল ওরা হানিমুনে চলে যাচ্ছে রোমে। অভিরূপ গিয়েছিল কিছু কেনাকাটা করতে। ফিরে দেখল মনিদীপা একরাশ জামাকাপড় আর খোলা সুটকেসের মধ্যে চিত হয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি গো গোছানো হয়নি এখনো?” জিজ্ঞাসা করল অভিরূপ।
“ আমি কি দশাসই? পালোয়ানের মত? “ মনিদীপা কাঁদোকাঁদো।
“ কে বলেছে?” অভিরূপ প্রমাদ গোনে।
“ না বল না। আমি জিম করতাম ঠিকই...... “
“ তুমি আমার সোনা, তুমি আমার মণি, তুমি আমার জিম করা ভিম......”
ওর কথা শুনে হেসে উঠলো মনিদীপা। ওকে হাসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অভিরূপ।
পরের দিন ওরা চলে গেল হনিমুনে।
রোম ইতিহাসে ছাত্রী মনিদীপার কাছে ড্রিম ডেসটিনেশন। সেদিন রোমের ট্রেভি ফাউন্টেন, রোমান ফোরাম, কলোসিয়াম সব দেখে ওরা হেঁটে হেঁটে হোটেলে ফিরছিল। হোটেলের কাছাকাছি এসে মনিদীপা একটু এগিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে দেখে অভিরূপ আপ্রাণ চেঁচাচ্ছে। ওকে ঘিরে ধরেছে একদল মহিলা আর বাচ্ছা। একজন মহিলা ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।
“ পুলিশ ডাকো! পুলিশ ডাকো!” নিজের পকেট দুটো চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো অভিরূপ।
“ হেল্প! প্লিস হেল্প!” বলে মনিদীপা আশপাশের লোকেদের কাছে সাহায্য চাইতে লাগলো।
লোকেরা সবাই হাত তুলে,” নো পোলিস! নো পোলিস!” বলতে বলতে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো, মানে আমরা পুলিশ নই।
এদিকে মহিলারা অভিরূপের পকেটে হাত ঢোকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
মনিদীপা আর সাহায্যের কোন আশা নেই দেখে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে , “হাঁ রে রে রে রে!!” চিৎকার করতে করতে ঐ দলের মধ্যে লাফিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি কিল, চড়, ঘুষি চালাতে লাগলো। এরকম হঠাৎ আক্রমণের জন্য দলটা তৈরি ছিল না। ওরা অভিরূপকে ছেড়ে একটু দূরে সরে গেল।
সেই সুযোগে ওরা ছুটে হোটেলে ঢুকে পড়লো।
একজন লোক এই পুরো ঘটনাটা দেখছিল হোটেলের গেট থেকে। ওরা গেটের ভিতর ঢুকতেই সে বলল,” স্যার , ম্যাডাম আজ আপনাকে খুব বাঁচিয়েছেন। এরা আর্মেনিয়ান রিফিউজির দল। আপনার পকেট থেকে টাকা, পয়সা, পাসপোর্ট, যা পাবে বার করে নেবে। মহিলা আর বাচ্ছারা থাকে বলে কোন লোক সাহায্য করে না।“
ঘরে ঢুকে অভিরূপ মনিদীপাকে জড়িয়ে ধরল, ”উফ আমার জিম করা ভিম! ভাগ্যিস তুমি দশাসই! লক্ষ্মী ঠাকরুনটির মত হলে আজ আমার কি হত বলত?”
মনিদীপার মুখটা হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।