জীবন দান
জীবন দান
নাম তার রাকেশ। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম তার। চাওয়ার আগেই তার কাছে সবকিছু হাজির হতো ছোটবেলা থেকে। ছোটবেলা থেকেই অর্থ, বৈভব তার সঙ্গী। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার প্রাচুর্যের প্রতি কোনো আকাঙ্ক্ষা গড়ে ওঠেনি। এখন কলেজ ছাত্র। এতদিন পর্যন্ত তার যতটুকু দরকার জীবনধারণের জন্য ততটুকু নিয়ে খুশি ছিল। তার পরিবার তাকে তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছে কিন্তু সেগুলির অপচয় রাকেশ করেনি। তার পরিবার উচ্চবিত্ত হওয়ায় সমাজের সব স্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন না। কিন্তু রাকেশ তার পরিবারের থেকে ব্যতিক্রম। সে সবার সাথে মিশতে চাইতো কিন্তু ছোটবেলায় তা পারেনি। সে এখন যে কলেজে পড়ে তার সহপাঠীরাও উচ্চবিত্ত পরিবারের। রাকেশ তাদের সাথে যেমন প্রাণখুলে মেশে। কলেজ শেষ হওয়ার পর একা একা চলে যেত শহরের খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে। তাদের সাথে নিজের পরিবারের মতো মেলামেশা করে। একদিন তার মা তাকে গাড়িতে যেতে যেতে তাকে দেখতে পায় রাস্তার ধারে বসে খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে কথা বলছে। তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে এসে বলেন,"রাকেশ এটা কি করছো? তুমি কাদের সাথে কথা বলছো? এরা তোমার স্ট্যাটাসের মানুষ নয়। চলো এক্ষুনি।"
শুনে রাকেশ বলল,"আজ তুমি স্ট্যাটাসের কথা বলতে পারছো এইসব মানুষের জন্য। আজ এরা দিনরাত পরিশ্রম করছে বলে আমাদের মতো মানুষদের স্ট্যাটাস বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। এদের কথা একবার ভাবো।" এইসব কথাবার্তা শুনে একজন বৃদ্ধা বলেন রাকেশকে,"বাবা মায়ের মুখে তর্ক করো না। উনি ঠিকই তো বলছেন। তোমাদের সাথে আমাদের তুলনা হয়না। আমাদের চালচুলো নেই, কিছুই নেই। আর তুমি বিশাল পরিবারের সন্তান। তুমি আর এখানে এসো না বাবা।"
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা। রাকেশ বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা দিয়ে সেদিনের মতো বিদায় গ্রহণ করে। কিন্তু রাকেশ প্রতিদিন তার পরিবারের কথা অমান্য করে তার এই দ্বিতীয় পরিবারের কাছে আসতো। তাদের দুঃখ-কষ্ট নিবারণের জন্য ব্যবস্থা করেছিল। বেশ কয়েকদিন হলো রাকেশ আর আসে না তার দ্বিতীয় পরিবারের কাছে। সেই বৃদ্ধা একজনকে বলেন,"আজ রাকেশ এলো?" ব্যক্তি উত্তর করেন,"না।" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃদ্ধা বলেন,"রাকেশকে তাদের পরিবার হয়তো আর আসতে দেয় না।" তারপরই তারা জানতে পারে রাকেশের খুব শরীর খারাপ। রাকেশ হাসপাতলে ভর্তি। এতটাই তার শরীর খারাপ তার রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু তার পরিবার রক্ত পারছে না কোথাও। খবরটি শোনামাত্র এই দ্বিতীয় পরিবারের সকল সদস্যরা রাকেশ যে হাসপাতালে ভর্তি ছিল সেখানে উপস্থিত হয়। আর ডাক্তারদের বলে তারা রক্ত দেবে। তাদের রক্তে রাকেশ বেঁচে যায়। তাদের আনন্দের সীমা নেই। রাকেশও অনেকদিন পর তাদের দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত হয়ে ওঠে। রাকেশ তার মাকে মৃদু কন্ঠে বলে,"দেখলে মা তোমার এই রাকেশকে জীবন দান করল এই খেটে খাওয়া মানুষেরাই।"