Jeet Patitundi

Abstract

2  

Jeet Patitundi

Abstract

ঝড়ের দাপট

ঝড়ের দাপট

3 mins
4.3K


কড় কড় করে মেঘ ডেকে উঠলো হঠাৎ, আকাশে বিকেল থেকেই বেশ খানিকটা করে মেঘ জমেছিল, সন্ধ্যে হতে না হতেই বেশ জাঁকিয়ে বসল মেঘটা। চারিদিক অন্ধকার করে বেশ একটা থমথমে ভাব ছিল এতক্ষন, তবে সেই স্থায়িত্ব ভাঙল ওই গর্জনে। জয় অফিস থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে টানছিল। থমথমে পরিবেশে ধোঁয়ার রিং গুলো বেশ সুন্দর হচ্ছিল, ওই দেখতে দেখতেই কেমন হারিয়ে গেছিল সে, হঠাৎ এই গর্জন খানিকটা যেন বাস্তবে ফেরাল তাকে। ঝড় উঠবে খুব জোরে, এ তারই সংকেত। 

জয়ের অবশ্য ঝড় খুব ভালো লাগে, কেমন যেন সকল স্থায়িত্বের অবসান ঘটিয়ে নতুন করে শুরু হয় সবটা। ভেঙে তছনছ করে , আবার গড়ে তোলার খেলায় যে আলাদা রকম নেশা আছে, সেটা যে বোঝে সে আর স্থাপত্য চায় না। ঝড়ের মধ্যে এক আলাদা গাম্ভীর্য আছে, একটা আলাদা রকম স্বাধীনতা, যেন অপার সম্ভ্রমের সাথে বেঁচে থাকার রসদ। অনেকটা স্কুলের প্রিন্সিপালের মতো, যিনি এক নিমেষেই সব পাল্টে ফেলার ক্ষমতা নিয়ে বিরাজমান। 

আসলে যাদের মধ্যে সর্বদা একটা স্তব্ধতা, একটা অপার বন্ধকতা বিরাজ করছে, তারা তো ভাঙন চাইবেই। শিকল ভেঙে বেরোতে চাইছে যে , সে তো ধ্বংসের প্রার্থনা করবেই। মহাদেবের তান্ডব নৃত্যই যে পারে একমাত্র এই মহাভাঙন ঘটাতে। 

ঝড়ের সময় জয় বাইরে থাকতেই ভালোবাসে, নিজের মধ্যে অনুভব করে সে এই শক্তিকে, এই ভাঙনের ক্ষমতাকে। বড় বড় গাছগুলো যখন নুইয়ে পরে মাটির দিকে, ঠিক তখনই বোঝা যায় সর্বশক্তির আঁধার কোথায়, কে প্রকৃত মালিক । 

তবে এই ভাঙনের পরেই আসে অঝোর বৃষ্টি, যা সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে যায়। ভাঙনের সব টুকরোগুলো ধুয়ে নিয়ে যায় , পরিষ্কার করে দেয় এই জগতের সকল কালিমা, সকল বন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে দিয়ে যায় নতুন করে শুরু করার এরমই এক ঝড়ের রাত্রে নীরার সাথে দেখা হয়েছিল জয়ের। নীরা কে? আসলে এই প্রশ্নের উত্তরটা বোধহয় জয় নিজেও জানে না। বহুবার উত্তর খুঁজেও খুঁজে পায়নি সে। তাই এখন আর খোঁজে না সে, অবশ্য খোঁজার দরকারটাই ফুরিয়ে গেছে যে। এক ঝড়ের রাত থেকে পরের ঝড়ের মধ্যে যতটুকু ব্যবধান, সেই সময়টুকুই তারা একে অপরকে পেয়েছে, ঝড়ের পরের স্নিগ্ধতা যতটা ক্ষণস্থায়ী, তেমনই তাদের সম্পর্কটাও ছিল বোধহয়। হঠাৎ নিজে থেকেই শুরু, তাদের ছিল না কোনোরকম পাওয়ার আশা, না ছিল কোন স্থায়িত্বের আকাঙ্খা। শুধু ছিল এক অদ্ভুত স্নিগ্ধ ভালোলাগা, এক অন্যরকম মায়াবী স্পর্শ। একদমই প্রেম বলা যায়না তাকে, আবার বন্ধুত্ব বললেও খুব ভুল বলা হবে। আসলে কি বলুন তো, এই সম্পর্কটা অনেকটা হলো বহুদিন পর শিকলমুক্ত হওয়ার যে অনুভব, অনেকটা ওরম। শিকলের অভ্যেস রয়ে গেছে তাই বাঁধন আলগা হলেও রেশটা থেকে গেছে, আবার হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতার স্বাদের ঠিক মাঝামাঝি একটা অনুভূতি। নীরা ও জয় এরমই এক ঝড়ের রাত্রে একে অন্যের সংস্পর্শে এসেছিল, বাইরের অঝোর বর্ষণ আর তান্ডবের মাঝে তারা নিজেদের খুঁজে পেয়েছিল একে অপরের মধ্যে। তবে ওই, জয়ের যে ঝড় পছন্দ আর নীরার বৃষ্টি। যেমন এক ভয়ঙ্কর ভাঙনের পরেই আসে বর্ষণের লালিমা, সেরম ভাবেই তারা আজও একে অপরের পরিপূরক হয়েই থেকে গেছে। সহাবস্থান তাদের শোভা পায়না, কারণ তা রোনোর সাহস জুগাতো, আরেকটা পাহাড়

হঠাৎ ফোনটা হাতে কেঁপে উঠতে, জয় দেখলো স্ক্রিনে নীরার নামটা জ্বলে আছে, নীচে ছোট্ট একটি লাইন,

"ভাঙন শেষে এবার তো বর্ষণেরই পালা..হঠাৎ জয়ের হাতে কয়েক ফোটা জল পরল, আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝলো ধ্বংসের শেষে এবার যে সত্যি নীড়ে ফেরার পালা....যে সর্বদাই সৃষ্টিবিরুদ্ধ....

য়েই যে তার আপতকালীন নিরসন ঘটে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Jeet Patitundi

Similar bengali story from Abstract