Manasi Ganguli

Inspirational

4.9  

Manasi Ganguli

Inspirational

ইন্টারভিউ

ইন্টারভিউ

3 mins
421


   আজ অর্কর ইন্টারভিউ। জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ, ভিতরে ভিতরে তাই খুবই উত্তেজনা। ইকনোমিক্স-এ M.A পাশ করে এই প্রথম একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাবে সে, তার জন্য ক'দিন ধরে চলছে তোড়জোড়। জামা-জুতো সব কি পড়বে সে সব রেডি করা, ইস্ত্রী,পালিশ,ওদিকে রাত জেগে পড়াশুনা,কোনোভাবে যাতে না ফসকায়। লাগাতে পারলে খুব ভাল স্টার্ট হবে। অনেকদিনের স্বপ্ন অর্কর এরকম নামী কোম্পানিতে চাকরী করবে। ঘুরে ফিরে মাকে বলছে সে,"মা,আমার জন্য প্রে কর,তুমি প্রে করলে ঠিক লেগে যাবে"।মা আদর করে বলেন,"ওরে তোর জন্য যে আমি সবসময় ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি,তুই ছাড়া আর কে আছে আমাদের বল?" তবু অর্ক বলে,"না মা, আজ একটু বিশেষ করে প্রে কর"। মা বলেন,"পাগল ছেলে তাই হবে"।

   খেতে বসে ভাল করে খেতে পারল না অর্ক,ভেতরে ভেতরে টেনশন হচ্ছে তার। মা কপালে আলতো করে একটা দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে দিলেন। বাইক নিয়ে স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছেছে,দেখে ছোটখাটো একটা জটলা,না তাকিয়ে চলে যাচ্ছিল,যা হচ্ছে হোক,তার যে আজ বিশেষ দিন। কিন্তু ভিড়ের ফাঁক দিয়ে তার চোখে পড়ল,তার বাবারই বয়সী এক ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন,মাথা ফেটে গেছে,রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা,কিন্তু কোনো মানুষজন তাকে তুলছে না,কেবল ভিড় করে দেখছে। অর্ক আর স্থির থাকতে পারল না,বাইকটা সাইড করে এগিয়ে এসে ভিড় সরিয়ে ভিতরে গিয়ে ভদ্রলোককে তুলে ধরল,সবার উদ্দেশ্যে বলল,"আপনারা মজা দেখছেন?ওনার মাথা থেকে এত রক্ত পড়ছে,হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে,ওনার বাড়ীতে খবর দিতে হবে,এভাবে ফেলে রাখলে হবে?" অর্ক দেখল আস্তে আস্তে ভিড় হাল্কা হতে লাগল। দু'একজন ছাড়া আর সবাই চলে গেছে,কিন্তু অর্ক যে পারছে না। পাশের দোকান থেকে একটু জল চেয়ে সে ওনার মাথার রক্ত একটু জলহাত করে মুছিয়ে দিয়ে একটা টোটোতে বসাল,পাশে দু'জন যারা ছিল তাদের অনুরোধ করে উঠতে বলল আর নিজে বাইক নিয়ে চলল পিছন পিছন। ভদ্রলোক নেতিয়ে পড়েছেন,রাস্তা পার হচ্ছিলেন,সেসময় একটা ট্রেকারের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে ওনার এই অবস্থা। ট্রেকারটি ধাক্কা মেরে স্পিডে পালিয়েছে কেউ কিছু বোঝার আগেই।

  হাসপাতালে এমার্জেন্সীতে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা করে ডাক্তার ভর্তি করে নিলেন,মাথায় ভাল রকম আঘাত পেয়ে ভদ্রলোক প্রায় অচৈতন্য তাই। ইন্টারভিউয়ের কথা তখন আর মাথায় নেই অর্কর। ভদ্রলোকের পকেট থেকে তার মোবাইল বার করে সে তখন আন্দাজে কিছু কিছু নম্বরে ফোন করে। কিন্তু বাড়ীর অন্য কারো নম্বর ও পেল না। এরপর একজনকে ফোন করলে তিনি ওনার স্ত্রীর নম্বর দিলেন।অর্ক ফোন করে তাঁকে জানাতে,ফোনের ওপারে প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। অর্ক তাঁকে আশ্বাস দিয়ে ধীরেসুস্থে আসতে বলে,ততক্ষণ সে থাকবে দায়িত্বে। অর্কর এবার মনে পড়ে ইন্টারভিউয়ের কথা,ভাবে ভদ্রমহিলা এসে পড়লে ওনার কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ও রওনা দেবে। যদিও অনেক দেরী হয়ে গেছে,সময়মত পৌঁছানো আর হয়ত সম্ভব হবে না। মনটা খারাপ হয় অর্কর,নতুন জীবনের প্রথম ধাপেই বাধা! তারপর ভাবে একেবারে মার্জিনাল টাইম,পৌঁছালে পৌঁছাতেও পারে হয়তো,কিন্তু ভদ্রমহিলার আসতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল। অর্ক অস্থির ভাবে পায়চারী করছে তখন। এরপর ভদ্রমহিলা এসে তাকেই আঁকড়ে ধরেন। তিনি একেবারেই অনভিজ্ঞ এসব ব্যাপারে আর ছেলেমেয়েরা কাছে থাকে না,মেয়ে শ্বশুরবাড়ি আমেদাবাদে আর ছেলে চাকরীসূত্রে দিল্লী। তিনি বলেন,"বাবা,ছেলের মত এতটাই যখন করলে,আর একটু পাশে থেকে ওনার সব ব্যবস্থা করে ডাক্তারদের সাথে যা কথা বলার বল,আমার ছেলে এসে পৌঁছানো পর্যন্ত তুমি একটু পাশে থাকো বাবা"। এরপর আর কোনো কথা বলতে পারে না অর্ক। অসহায় ভদ্রমহিলার পাশে থাকে সে,বুঝতে পারে ইন্টারভিউ দেওয়া আর তার হল না এযাত্রা। মনটা খারাপ হল আশাভঙ্গ হওয়ায়। নিজেকে নিজেই সে সান্ত্বনা দেয়,ভাবে,জীবনে আরো ইন্টারভিউ দেবার সুযোগ সে পাবে কিন্তু একজন অসুস্থ অসহায় মানুষকে ছেড়ে কি করে যাবে সে, এমন অমানবিক কাজ যে সে করতে পারবে না। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational