STORYMIRROR

Ashraful islam

Abstract Romance Classics

4  

Ashraful islam

Abstract Romance Classics

হলুদ সন্ধ্যা

হলুদ সন্ধ্যা

3 mins
24

 হলুদ সন্ধ্যা

 (A Long Emotional Fiction Story)


 বুধবার রাত। শহরটা তখন প্রায় নিস্তব্ধ। আশ্রাফ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল বেশ আগেই—আজ সারাদিন অফিসে দৌড়ঝাঁপ, মাথা ভার লাগছিল।

কিন্তু শান্ত ঘুমের মাঝেই হঠাৎ তার বুকটা কেঁপে উঠল—
 মুঠোফোনের বিরক্তিকর রিংটোন যেন অন্ধকার ঘরে বজ্রের মতো আছড়ে পড়ল।
 ফোন ধরতেই অচেনা গলায় এসে পড়ল এক দুঃসংবাদ।
 শব্দগুলো কানে ঢুকল ঠিকই, কিন্তু মস্তিষ্ক গ্রহণ করতে পারল না।
 তার মাথা ঝিমঝিম করছিল, বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা চাপ।
তবুও সে কিছু না-শোনার ভান করল,
 দুঃসংবাদটাকে বালিশের নিচে গুঁজে আবার ঘুমিয়ে পড়ল—
 যেন না স্বীকার করলেই সত্যিটা বদলে যাবে। 

 ভোরবেলার কর্কশ এলার্মে ঘুম ভাঙতেই গত রাতের সব কথা হঠাৎ আবার ফিরে এল। আশ্রাফ আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখল—চোখ দুটো লালচে।
 মনে হলো দুঃসংবাদের রক্তিম আভা যেন চোখের গভীরেই জমে আছে।
 ফ্রেশ হয়ে অফিসে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসতেই বুকের বাঁ পাশে টান ধরে উঠল।
এটা গ্যাস্টিক নয়—
এ যেন সেই রাতের দুঃসংবাদ সরাসরি বুকে ঢুকে ধমনী-শিরায় বসে গেছে।


 ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফাইল সাজানো, মিটিং, ইমেইল… সবকিছু ঠিকঠাক চলছে,
কিন্তু আশ্রাফের ভিতরে যেন কেউ নীরবে হেঁটে বেড়াচ্ছে—
 পায়ের ছাপ দিচ্ছে ব্যথার।
 
সহকর্মীরা হাসছে, গল্প করছে, কেউ একজন জিজ্ঞেস করল— “ভাই, আজকে একটু চুপচাপ মনে হচ্ছে আপনার!” আশ্রাফ মুচকি হাসল। কিন্তু সেই হাসিটাও কেমন যেন ভাঙা, ফাঁপা।

অফিস শেষে বাসায় ফিরে দরজা লাগাতেই মনে পড়ল
গত সপ্তাহে পরিচিত হওয়া সেই দুঃখী যুবকের কথা।
একটা পার্কে ধূমপান করতে করতে যার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।
ভদ্র, একটু এলোমেলো, চোখদুটো ক্লান্ত—
 কিন্তু কথা বলতে গেলে মনে হয় যেন বুকের মাঝে একটা গোপন ঝড় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

 সে বারবার ফোন দিচ্ছিল—

“ভাই, আসেন কাল… শুক্রবার ছুটি। একটু বসি, কথা বলি।”

শুক্রবার বিকেলে আশ্রাফ তার কাছে গেল। একটি পুরনো চায়ের দোকানের পাশে বেঞ্চে বসে দু’জনে সিগারেট ধরাল।
 কুয়াশার মতো ধোঁয়া ভেসে উঠছিল, তার সঙ্গে ভেসে উঠছিল মানুষ দু’জনের অজানা দুঃখ।

 যুবকটি হাসছিল,

 কিন্তু সেই হাসির ভেতরে অদ্ভুত এক ফাঁপা ভাব।
অল্পক্ষণ পর সে বলতে শুরু করল—
জীবনের ভুল পথে হাঁটার গল্প,
অন্ধকার অধ্যায়ের কথা,
যেখানে সম্পর্ক ছিল,মানুষ ছিল,
কিন্তু সবকিছুই ছিল অস্থির,
 ভেঙেচুরে যাওয়া, পথ হারানো।


 তার শব্দগুলোতে ছিল লজ্জা নয়, বরং ক্লান্তি— একটা মানুষ জীবনের ভুলগুলোকে মেনে নিয়েছে, তবুও সেই ভুলগুলোকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এমন একটা ক্লান্তি।
হঠাৎ যুবকের চোখ দুটো ভিজে উঠল। নাকের পানি-চোখের পানি মিশে গিয়ে সে বলতে লাগল তার প্রথম আর শেষ ভালোবাসার কথা—

যে তাকে ছেড়ে চলে গেছে যেদিন তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।

আশ্রাফ স্তব্ধ হয়ে শুনছিল। কিছু মানুষ নিজেদের নষ্ট করতে করতে এতটাই ভেঙে পড়ে যে ভিতরের ভালোবাসাগুলোও ধুলোয় মিশে যায়। সে অনুভব করল—

এই ছেলেটা, এত এলোমেলো, এত অস্থির— সেও শেষ পর্যন্ত তার ভালোবাসা হারিয়েছে।

 “দুনিয়াতে নাই শব্দটা যেন মিশে গেছে সবেতেই”—

যুবকের বলা এই কথাটা আশ্রাফের বুকের মধ্যে কেমন যেন অপরিচিত শীতলতা ছড়িয়ে দিল।


 যুবক একটু হাল্কা হল কাঁদার পর, কিন্তু আশ্রাফের ব্যথা? তা কমল না, বরং আরো জমাট বাঁধল।


 ফেরার পথে আশ্রাফের মাথায় বারবার ফিরে আসছিল সেই এক নাম—

আরিশফা

 নরম, মৃদু, সংবেদনশীল এক নাম।
 তার জীবনের একমাত্র আলো,
একসময় যার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার রাত কেটে যেত।
ফোনে হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকত অভিমান,
 আর অভিমানের ভেতর লুকিয়ে থাকত শিশির ভেজা ভালোবাসার গন্ধ।

 তাদের পরিচয়ও ছিল অদ্ভুত সরল—
মাঝে মাঝে ‘হ্যালো’ দিয়ে শুরু হওয়া কথোপকথন ধীরে ধীরে ‘আজকে কী খেয়েছ?’
পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
 আর একসময় সেই প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল আশ্রাফের দিনের সবচেয়ে উষ্ণ মুহূর্ত।

 কিন্তু সব ভালোবাসার গল্প যেন এক সময় এসে থেমে যায় অদৃশ্য কোনো দেওয়ালে।
ঠিক তেমনই থেমে গিয়েছিল তাদেরটাও—

 কারণ না-থাকা, ভুল বোঝাবুঝি, দূরত্ব, আর সময়ের নির্মম পরিবর্তন।

 তবুও আশ্রাফের বুকের গভীরে আরিশফার নামটা রয়ে গিয়েছিল নরম তুলোর মতো—
 
যা কখনও পুরোপুরি ফেলে দেওয়া যায় না।

বাসায় ঢুকে আশ্রাফ বিছানায় চুপচাপ বসে রইল।
মুঠোফোন খুলতেই একটি নোটিফিকেশন—

একটি ছবি—
একটি হাসিমাখা মুখ—
আর তার নীচে লেখা—

আরিশফার হলুদ সন্ধ্যা।

 মুহূর্তেই আশ্রাফের সমস্ত বুকের ব্যথা নিরব বজ্রপাতের মতো নেমে এলো।
যুবকের সেই দুঃখের গল্প,
তার কান্না,
সিগারেটের ধোঁয়া—
সব মিলেমিশে যেন
আশ্রাফের নিজের শূন্যতার সঙ্গে একাকার হয়ে গেল।

সে ধীরে চোখ বুজে বলল—
“এই দুঃসংবাদ আমি কাকে গিয়ে বলব?”
কাকে বোঝাবে সে—
যে মেয়েটাকে সে এত ভালোবেসে ছিল, যে নামটা শুনলেই তার ভেতরে আলো জ্বলত, আজ—

আজ তার হলুদ সন্ধ্যা। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract