Debdutta Banerjee

Inspirational

4  

Debdutta Banerjee

Inspirational

হার-জিত

হার-জিত

4 mins
1.7K


আজ লোরেটোর ভর্তির লিস্ট বেরিয়েছে। ল‍্যপটপের স্কিনে নিজের মেয়ের নম্বরটা খুঁজে চলেছে বন্দনা, তিন বার লিস্টটা চেক করেও পরিচিত নম্বরটা দেখতে পায় না। হতাশ হয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে পরে সে। হোয়াটস আপে ম‍্যাসাজ ঢুকছে টুং টুং করে।যাদের মেয়েরা সুযোগ পেল তাদের সুখবর বোধহয়। ফোনটা হাতে নিতেও ইচ্ছা করে না। ভালই তো ইন্টারভিউ দিয়েছিল রাই!! সাড়ে তিন বছরের রাইয়ের অবশ্য এ সবে ভ্রুক্ষেপ নেই। ঘর ময় নিজের সংসার পেতে নিজের মেয়েকে খাওয়াতে ব্যস্ত সে।


কাল ক্যালকাটা গার্লসের রেজাল্ট। ওখানেও আশা কম। বাকি থাকল প্রেট আর লেডি কুইন। বাকি তিনটে আগেই বেরিয়েছিল। কোথাও রাই চান্স পায় নি। অথচ মেয়ে তার ভীষণ চটপটে । একটা নামী দামী প্লে স্কুলে যায় দু বছর থেকেই। সব প্রশ্নের ইংরাজিতে উত্তর দিতে পারে। কত কি জানে যা এই বয়সের অনেকেই জানে না। কিন্তু কেন যে মেয়েটা ভাল কোথাও চান্স পাচ্ছে না কে জানে !!


রাজা ফিরে সব শুনে বলল -"আমি প্রথম থেকেই বলছি বাড়ির কাছাকাছি কোনো স্কুলে দাও, তুমি তো শুনবে না !! ভাল স্কুল ভাল স্কুল করে মেয়েটাকে কত দূরে নিয়ে যেতে চাইছ!!"


-"বাড়ির কাছের দুটো ভাল স্কুলে তো চান্স পেল না মেয়ে !! আমরা নিজেরা ভাল স্কুলে পড়িনি বলে আজ ওর এই অবস্থা। যারা এ সব ভাল স্কুলের স্টুডেন্ট তাদের বাচ্চারা সব চান্স পাচ্ছে আগে।" বন্দনা উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলে -"ঐ সল্টলেকের স্কুলটায় একলাখ দিলে হয়ে যাবে বনিদি বলছিল। তবে ভর্তির টাকাটা আলাদা লাগবে।"


-"আমি তো আগেই বলেছি টাকা দিয়ে মেয়ে ভর্তি করবো না। এ নিয়ে কিছু বলবে না, এখন পর্যন্ত বারোটা স্কুলে ফর্ম ভরেছ। তাতে তো বাধা দিইনি। এ বার দেখো। কোথাও না কোথাও ঠিক হবে।"


আজ আরেকটা স্কুলের রেজাল্ট। না, এবারেও হল না। রাগটা গিয়ে পড়ে মেয়েটার উপর। ওর হাত থেকে পুতুলটা ছুঁড়ে ফেলে বন্দনা বলে -" সারাদিন শুধু পুতুল খেলা!! একটু রাইমস শুনতে পারো তো টিভিতে?"

টিভিতে রাইমস চালিয়ে রান্না ঘরে ঢোকে সে। মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে।


কিন্তু একটু পরেই ভেসে আসে গানের আওয়াজ। মেয়ে একটা মিউজিক চ্যানেল চালিয়ে নেচে চলেছে আপন মনে। মাথাটা গরম হয়ে যায়, ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মেরে মেয়েকে টানতে টানতে বেড রুমে নিয়ে যায় বন্দনা। বই খাতা ছুড়ে দিয়ে বলে,

-"এ বি লেখা প্র্যাক্টিস করো আর ব্যাক ওয়ার্ড কাউন্টিং কর। ছোট্ট রাই কেঁদে ফেলে। পড়তে তার ভালোই লাগে, সকাল সন্ধ্যা নিজেই বসে বই নিয়ে, তবে এই সময়টা একটু নাচ করতে ইচ্ছা করছিল। বালিশে মুখ গুঁজে ফুলে ফুলে কাঁদে ছোট্ট বাচ্চাটা।


বন্দনার হাতটা জ্বালা করে ওঠে। চড়টা বেশ জোরেই হয়ে গেছে। আসলে সবার বাচ্চা কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গেছে। রাই কোথাও ভর্তি হতে পারে নি এখনো এটা মেনে নিতে পারে না সে। নিজের উপর রাগ হয়। ইংরাজিটা গরগর করে যদি বলতে পারতো !!


আজ শেষ সুযোগ। সকাল সকাল পূজা সেরে ল্যাপটপ অন করে, নির্দিষ্ট সাইটে গিয়ে মেয়ের রেজিস্ট্রেশন নম্বর , ফর্ম নম্বর পুট করে। ব্লিঙ্ক করতে থাকে লাল বক্সটা, কয়েক সেকেন্ডেই ফুটে ওঠে "সরি"।


কি করবে বুঝে পায় না বন্দনা। রাজা রেডি হয়ে অফিস যাচ্ছিল। এ ঘরে ঢুকেই বুঝতে পারে আবহাওয়া গরম। বেরিয়ে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায়, রাই এক মনে ছবি আঁকছে। নিপুণ ভাবে রঙ দিয়ে ফুটিয়ে তুলছে নিজের কল্পনাকে। সাড়ে তিন বছরেই এতো পাকা হাত!!


আস্তে আস্তে রাজা এসে বসে বন্দনার পাশে। ওকে বুকে টেনে নেয়। বন্দনাও একটা অবলম্বন খুঁজছিল । চোখ দিয়ে দুঃখ কান্না হয়ে গলে পড়ে।


রাজা বলে -"মেয়েটার মধ্যে অনেক ট্যালেন্ট আছে, ওকে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে নামিয়ে দিও না । এই বারোটা স্কুল হয়তো ওর ট্যালেন্টকে চিনল না, তাই বলে ও হারিয়ে যাবে?"


-"আমি জানি। কিন্তু কি করবো বল? ভাল স্কুলে না দিলে......."


ওর কথা শেষ করতে দেয় না রাজা। বলে -" আচ্ছা তোমার এই ভালো স্কুল গুলোর বাইরেও তো এতো স্কুল রয়েছে। হাজার হাজার বাচ্চা যাচ্ছে সে সব স্কুলে। তারাও পয়সা দিয়েই পড়ছে। কিছুই কি শিখছে না ?"


-"কিন্তু একটা নাম করা স্কুলে না পড়লে ......."


-"কোনো কিন্তু নেই। নামকরা স্কুলের বাচ্চারা সবাই কি ভালো রেজাল্ট করেই? তাদের টিচার লাগে না ? কলেজে ভর্তি হতে আর সবার সাথে লাইন দিতে হয় না? এই যে এবার যে বাচ্চাটা বোর্ডে দ্বিতীয় হল, সে তো সাধারণ স্কুলের। স্কুলটাকেই লোকে এবার চিনল। মেয়ে আমাদের। আমরা যে ভাবে মানুষ করবো ও সে ভাবেই বড় হবে। ও নাচে বা আঁকায় বা খেলার নাম করলে ক্ষতি কি?"


আজ বন্দনার বড় আনন্দের দিন। রাই দাবা খেলায় স্টেটকে রিপ্রেজেন্ট করছে ছোটদের বিভাগে। সবাই ওর ইন্টারভিউ নিচ্ছে। বাড়ির পাশের একটা সদ্য গজিয়ে ওঠা ইংরাজি মাধ্যমে ক্লাস টু তে পড়ছে ও। পড়াতেও খুব ভাল। হোয়াটস আপে ওর জন্য শুভকামনার বন্যা বইছে। চেনা অচেনা সবাই আজ রাই কে চেনে।চেনে রাইয়ের স্কুল কে!


রাজার কথা শুনে সেদিন ঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিল বন্দনা। আনন্দে আজ বার বার চোখের কোন ভিজে উঠছে।

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational