হাঞ্চিলতার গোদা - নুরুল মোস্তফা কামাল জাফরী
হাঞ্চিলতার গোদা - নুরুল মোস্তফা কামাল জাফরী
লাতুরি বরঅ চরা…
“ইতারা কেন গরি আইবু? লাল বাআনি আইবর ডরে বোলা হালত জেদিজ্ঞিন জেডি আচিল, বেয়াজ্ঞিন আরি ফেলাইয়ে”/”ওরা কেমনে আসবে? লাল বাহিনী (পাক বাহিনী) আসার ভয়ে ভোলা খালের সব জেটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়”, বলছিলেন আমার মা।
১৯৭১ সাল। চারিদিকে যুদ্ধের দামামা। আমার মা তখন যুবতী। মাত্র এক সন্তানের জননী। যুদ্ধ সম্পর্কে যতটুকু জানেন তা কেবল ‘লাতুরি বরঅ চরার খারি/নতুন খননকৃত খাল’ পর্যন্ত। বিষয়টা একদম সহজ। সন্ধ্যা নামার আগেই সব মেয়েছেলে মুখে হাল্কা কালি মেখে এই ‘লাতুরি বরঅ চরার খারি’তে চলে যাবে। এর কারণ হল পাক বাহিনী মেয়েছেলের উপর বেশি নজর দেয়।
তখন আমাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার গোঁয়াখালী গ্রামে।
বাদুরর বদা…
“ইতারা কেন গরি আইবু? হালর দুই চাইডে আদার জঅল। ফুক জুক বাদর আরগিলা উলা বাদুর। উলা বাদুরঅলে বদা দাহাইতু। তার উয়ার যেডী নাই। হালত মাইজে এক কেইল এক কেইল দলদলি।“/”ওরা কেমনে আসবে? খালের দুই পাশে গভীর জঙ্গল। পোকা, জোঁক, হাড়গিলা, বড় বড় বানর। ওরা (পাক বাহিনী) আসলে বানরেরা তাদের পুংলিঙ্গ দেখাত! আবার জেটিও নাই। খালে নামলে কোমর অবধি কাঁদা মাটি।“ প্রশ্ন, হয়ত বানরেরাও পাকবাহিনীকে ঘৃণা করত। ২০২৪ সালে এসে আমরা দেখলাম, কিভাবে সারাদেশের মাটি পানি বায়ু আমাদের ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।
পাক বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আমাদের মায়েরা বলছেন। মাঝখানে একজন স্বৈরাচারিনী এসে আমাদের নিজেদের পরিচয় ভুলতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি গেলেন। এখন আমরা কি পারব আগামী শত বছর পর ২০২৪ বিপ্লবের গল্প পৌঁছে দিতে?
হাঞ্চিলতার গোদা…
তখন এত বাঁধ ছিলনা। ছিলনা কোন বন্যা সুরক্ষা বাঁধ। তখন ছিল ‘চইল্লা হাডী’/’একটা ছাগল হাঁটতে পারে অতটা প্রশস্ত রাস্তা’। সেই চইল্লা হাডী একটু জোয়ার আসলেই জুর জুর করে ভেঙ্গে যেত। আমার মা’কে প্রশ্ন করলাম, কেন এই বাঁধগুলো অল্পতেই ভেঙ্গে যেত? আম্মার উত্তর, তখন বাঁধ বানানো হত মাটি আর হাঞ্চিলতা (একধরণের বুনো লতা) মিক্স করে। আর শুষ্ক মৌসুমে এই হাঞ্চিলতা মিশ্রিত মাটি একদম জুরজুরে হয়ে যেত। ফলে একটু জোয়ার আসলেই অল্পতেই পানিতে গলে যেত বা ভেসে যেত।
দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারিনী এই রকম দুর্বল অনাচারী ভিত্তি রচনা করেছিল, যা ছাত্র-জনতার জোয়ারে ভেসে যায়।
