Sanghamitra Roychowdhury

Romance Tragedy Classics

4.6  

Sanghamitra Roychowdhury

Romance Tragedy Classics

গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ...

গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ...

7 mins
813


"অ্যাই মেয়ে, এইযে এইযে, সেকেণ্ড রো থার্ড ডান্সার, হচ্ছেনা হচ্ছেনা, একদম হচ্ছেনা। কী যেন নাম তোমার? এসো, এসো, এদিকে বেরিয়ে এসো, একদম আমার সামনে এসো দেখি...", নূপুর ম্যাডামের গলার আওয়াজে রিহার্সালে ছন্দপতন।

নূপুর ম্যাডাম... মানে নূপুরনিক্কণ সেনগুপ্ত... বিখ্যাত স্বনামধন্য ডান্সার এবং কোরিওগ্রাফার। নিজের হাতে তৈরি নাচের স্কুল এবং অ্যাকাডেমি মিলিয়ে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন নাচের তালিম নেয় নূপুর ম্যাডামের কাছে। চূড়ান্ত পারফেকশনিস্ট বলতে যা বোঝায়, নূপুর ম্যাডাম ঠিক তাই। সামান্য ভুলচুকও বরদাস্ত করেনা। মধ্যত্রিশের ভদ্রমহিলা যে শুধুমাত্র নাচেই পারদর্শী তাই নয়, রীতিমতো গান ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রেও সমান ব্যুৎপত্তির অধিকারিণী। বিশেষতঃ তবলা ও পাখোয়াজে। সেদিন তবলচি অনুপস্থিত, তাই নূপুর ম্যাডাম নিজে তবলায়, তা স্বত্বেও প্রখর নজর সবাই ঠিকঠাক তাল ফলো করে পা মেলাতে পারছে কিনা। অতজনের মধ্যেও ঠিক বুঝে নেয় কে বিট মিস্ করছে... তালে মিলছেনা। নৃত্যশিক্ষিকা হিসেবে এই শেখানোর সুনামটির জন্যই দিনেদিনে কলেবরে ও সংখ্যায় বাড়ছে নূপুরনিক্কণ ম্যাডামের স্কুল-অ্যাকাডেমি-ছাত্রছাত্রী এবং অবশ্যই পরিচিতি।


রিহার্সাল থেমে গেছে। নিজের জায়গা ছেড়ে রোগা পাতলা মেয়েটি এসে মাথা নীচু করে নূপুর ম্যাডামের সামনে দাঁড়িয়েছে। বছর উনিশ-কুড়ির সদ্যতরুণী, হাত-পাগুলো যেন কাঠিকাঠি, ঈষৎ কোলকুঁজো, বেশ একটু আড়ষ্টভাব, কমনীয়তার যথেষ্ট অভাব। অথচ নাচে এই কমনীয় ভাবটা মানে ফ্লেক্সিবিলিটি ভীষণ জরুরি। নূপুর ম্যাডামের মনে হলো, "আচ্ছা, আমার এখানে যারা আসে তাদেরতো প্রাথমিক একটা ইন্টারভিউ এবং নাচের নমুনা দেখিয়েই আসতে হয়। তারপর বেশ কিছুদিন তালিমের পরেইতো নৃত্যনাট্যের জন্য সিলেক্টেড হয়। তাহলে? বাছাইতে এমন ভুল হলো কীকরে?" নূপুর ম্যাডাম স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। কবে থেকে আছে মেয়েটি অ্যাকাডেমিতে? হঠাৎই নূপুর ম্যাডামের মনে হলো মেয়েটি সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিরতির করে কাঁপছে। "নাম কি তোমার? এদিকে তাকাও, এই মেয়ে...", নূপুর ম্যাডামের কথায় মেয়েটি একঝলক তাকিয়েই আবার চোখ নামিয়ে নিলো। "ম্যাম, আমি অলকানন্দা, স্যরি ম্যাম, আমার প্র্যাকটিস ঠিকমতো করা হয়নি বাড়িতে...", কাঁপাকাঁপা গলায় বললো মেয়েটি। যদি খুব ভুল না দেখে থাকে, তবে নূপুর ম্যাডামের চোখ এড়ায়নি... মেয়েটির দু'চোখের কোণ ভিজে, টলটল করছিলো দুফোঁটা জল ঝরে পড়ার অপেক্ষায়। নূপুর ম্যাডামের মনটাও কেমন ভিজে উঠলো, "ওকে, ওকে, ঠিক আছে নিজের জায়গায় যাও। বিট খেয়াল করবে কেমন?"


নূপুর ম্যাডামের গলা শোনা গেলো আবার, "সিঙ্গার্স, ক্যারি অন প্লিজ...!" গান শুরু হলো আবার। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের প্রথম-গান... নূপুর ম্যাডাম তবলায়... "গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ গরজে, পর্বতশিখরে অরণ্যে তমশ্ছায়া...", প্রথমলাইন শেষ হতেনা হতেই আবার নূপুর ম্যাডাম থামালেন, "এই, স্টপ স্টপ...!" ডান্সার্স ও সিঙ্গার্স... সবাইই থেমে গেছে ওদের ম্যামের কথায়। মিউজিসিয়ান টিমও থেমে গেছে। নূপুর ম্যাডাম তবলা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে, "শোনো, শোনো সবাই মন দিয়ে, আগে আমরা একটু তালটা নিয়ে আলোচনা করবো, কেমন? শোনো। গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ... এটা কাহারবা তালে আছে। আটমাত্রার দুইভাগের সমপদী তাল। খালি এক তালি এক... বুঝেছো সবাই। সবাই এবার আমার সাথেসাথে বোল প্র্যাকটিস করো। খেয়াল রাখবে সবাই, ভুল হয়না যেন... ধা গে তে টে । না গে ধি না । আবার... ধা গে তে টে । না গে ধি না । ধা গে তে টে । না গে ধি না । এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাচ আট । এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট । নিজেরনিজের হাঁটুতে হাতের তাল দাও সবাই... এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট... ধা গে তে টে । না গে ধি না । ধা গে তে টে । না গে ধি না । ধা গে তে টে । না গে ধি না । এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট... আবার এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট। ধা গে তে..." শেষ হওয়ার আগেই একটা হৈচৈ। নূপুর ম্যাডাম মগ্ন হয়ে বোল শেখাচ্ছিলো... সচকিত হয়ে উঠলো গোলমালে। কয়েকজনের গলা একসাথে, "ম্যাম, অলকানন্দা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে!" বেধে গেছে হুলুস্থূল কাণ্ড। অলকানন্দা কি অসুস্থ ছিলো? কেউ বলতে পারলোনা। জানেইনা কেউ কিছু। সপ্তাহে দু'দিন ক্লাস... পুরোটা জুড়েই আপাতত চিত্রাঙ্গদার প্র্যাকটিস চলছে। গল্পগাছার সময় নেই ছেলেমেয়েগুলোর। সেদিনের মতো রিহার্সাল বন্ধ। অলকানন্দার বাড়িতে ফোন করে খবর দেওয়া হয়েছে। নূপুর ম্যাডাম নিজেই অলকানন্দার চোখেমুখে জলের ছিটে দিচ্ছে। একবার চোখ মেলে তাকিয়েছিলো মেয়েটা। পরক্ষণেই আবার চোখ বুজে ফেলেছে। কথাবার্তা কিচ্ছু বলেনি। নূপুর ম্যাডাম জানতে চেয়েছে কী অসুবিধা! তাও বলেনি। তবে নূপুর ম্যাডামের মনে হয়েছে, তখনো মেয়েটা তিরতির করে কাঁপছে। ওর চোখদুটো জলে ছলছল। চোখের ভুল কি? নাকি সত্যিই? কী হয়েছে অলকানন্দার? কোনো সমস্যা?


তারপর দিন থেকে অলকানন্দা আর আসেনি। ওর জায়গায় অন্য একজনকে নেওয়া হয়েছে। রিহার্সাল আর কাজের চাপে আর অলকানন্দার খবর নেওয়া হয়নি। যথাসময়ে চিত্রাঙ্গদার স্টেজ রিহার্সাল শুরু হয়েছে। পার্থপ্রতিম স্টেজ রিহার্সালের দিনেও এসেছিলো প্রোগ্রামের ভিডিওগ্রাফির জন্য ক্যামেরার সেটআপ ইত্যাদির অ্যাঙ্গেল পজিশন এইসব ঠিকঠাক ফিক্স করতে। নূপুরনিক্কণ সেনগুপ্ত আবার নিজের শিল্পের বাইরে আর সবকিছুতেই অজ্ঞ উদাসীন। পার্থপ্রতিম মিত্রকে দায়িত্ব দিয়েই খালাস। রিহার্সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি বিরতিতে নূপুর ম্যাডামের কানে এলো দুটি মেয়ের ফিসফিসানি, "অলকানন্দা প্রেগন্যান্ট!" শুনেই নূপুর ম্যাডামের মাথাটা ঘুরে গেলো, ব্যাকস্টেজে পড়েই যাচ্ছিলো, পার্থপ্রতিম কোনোরকমে ধরে ফেলেছে। নয়তো বিপজ্জনক হতো। প্রোগ্রামের আর মাত্র চারদিন বাকি। এইসময়ে ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে পড়লো? কী হবে? চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের সাথে জড়িত সবাই দুশ্চিন্তায়। তবে নূপুর ম্যাডাম একটাদিন কোনোরকমে নার্সিংহোমে থেকেই বাড়িতে চলে এলো। তারপর নির্বিঘ্নেই চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ হলো, রেকর্ডেড ভিডিও টেলিকাস্ট হলো লোকাল চ্যানেলে। ম্যাডাম একদিন গিয়ে অলকানন্দার বাড়িতে দেখা করেও এলো। প্রোগ্রাম শেষে ক'দিনের ছুটি সবারই। তাছাড়া নূপুরনিক্কণ ম্যাডাম নিজেও কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে গেলো ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। তবে একেবারেই নিখাদ ছুটি নয়। নাচের কিছুটা ফটোশ্যুটও হবে প্রাকৃতিক পরিবেশে, তাই সঙ্গী হলো ফোটোগ্রাফার পার্থপ্রতিম মিত্র। দিন সাতেকের প্ল্যানিঙে।


ফটোশ্যুট খুব সুন্দরভাবে হয়েছে। নূপুর ম্যাডাম আর পার্থবাবু দু'জনেই নিজের নিজের কাজে খুব খুশি। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের শেষদিন। বাংলোর বারান্দায় পাতা বেতের চেয়ারে বসে ল্যাপটপে সব ভিডিও দেখালো পার্থপ্রতিম নূপুরনিক্কনকে। বিকেল ঘন হয়ে বাংলোর সামনের ছড়ানো মালভূমি ও বনের রং তখন যেন কেমন একটা মায়াবী গাঢ় নীল। আকাশেও চলছে রঙের বিচিত্র মেঘ-ছায়ার খেলা। কেয়ারটেকার ও তার বৌ যত্ন করে ট্রেতে সাজিয়ে দু'জনের জন্য এনেছে কফি আর নানানরকম পকোড়া। খাসা রান্নার হাত কেয়ারটেকারের বৌটির। টেবিলে ট্রেটা নামাতে না নামাতেই শুরু হলো মেঘের গুড়গুড়, দূর আকাশে বিদ্যুৎ চমকানি। নূপুর কাশ্মীরী সিল্কের দোপাট্টাটা কোমরে জড়িয়ে নেমে গেছে বাংলোর হাতায়। টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ... বৃষ্টিফোঁটা নূপুরের গুঁড়োচুলের ওপরে হীরে কুচির মতো ঝরছে। নূপুর গলা ছাড়লো... সর্বাঙ্গে নাচের হিল্লোল,

"গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ গরজে পর্বতশিখরে,

অরণ্যে তমশ্ছায়া।

মুখর নির্ঝরকলকল্লোলে, ব্যাধের চরণধ্বনি শুনিতে না পায় ভীরু হরিণদম্পতি।

চিত্রব্যাঘ্র পদ-নখচিহ্ন-রেখাশ্রেণী

রেখে গেছে ওই পথপঙ্ক-'পরে, দিয়ে গেছে পদেপদে গুহার সন্ধান।

গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ গরজে..."


পার্থর ক্যামেরাও অন হয়ে গেছে কখন... "অসামান্য!" অস্ফুটে বলে পার্থ... ফোটোগ্রাফার পার্থপ্রতিম মিত্র। নূপুরনিক্কণের নাচ গান থেমেছে, তবে বৃষ্টিভেজা থামেনি। পার্থপ্রতিম ক্যামেরা অফ করে নেমে এসেছে বাংলোর হাতায় ভিজে ঘাস মাটিতে। নূপুরের সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে পার্থ। নূপুরের ডানহাত আলতো ছুঁয়ে পার্থ কাঁপাগলায় বলে, "উইল ইউ ম্যারি মি? আই লাভ ইউ নূপুর...!" আবেগঘন মুহূর্ত নিঃসন্দেহে। কিন্তু হা-হা-হা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নূপুর, "তুমি আমার থেকে সাড়ে পাঁচবছরের ছোট পার্থ।" হাতটা পার্থর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় নূপুর। আধভেজা পার্থ চুপচাপ বসে থাকে বারান্দার চেয়ারে। সামনে ট্রেতে ঠাণ্ডা কফি আর নেতানো পকোড়া।


কিছুক্ষণ পরে যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে এসে নূপুর বসলো আবার বারান্দার চেয়ারে। একটা মুগারঙা শাড়ি পরেছে, চুলগুলো খোলা, ভেজা ঠাণ্ডা হাওয়ায় এলোমেলো উড়ছে, কোনো প্রসাধন নেই। বসেই পার্থর হাতে চাপ দিলো নূপুর, "আমাকে পুরো না জেনেই বিয়ের সিদ্ধান্ত?" কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকায় পার্থ। নূপুর ধীরেধীরে বলতে থাকে, "একুশবছর আগে, তখন আমি পঞ্চদশী কিশোরী, আমার স্কুলে চিত্রাঙ্গদার রিহার্সাল চলছে। টিভিখ্যাত এক ডান্সস্যার এসেছে স্কুলে কোরিওগ্রাফি শেখাতে। আমি কুরূপা চিত্রাঙ্গদা। তালে ভুল হচ্ছিলো বারবার। ডান্সস্যার স্পেশাল কেয়ার নিয়ে শেখাতে শুরু করলো। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে। নিজের বাড়িতে আলাদা ডেকে, ছুটির পরে লেডিস টয়লেটে। খুব বৃষ্টি ছিলো সেদিন। সবাই চলে গেছে। আমি আটকে গেছি কারণ আমার ভাড়াকড়া রিক্সাকাকু আসতে পারেনি বৃষ্টিতে। প্রায় ঘন্টাখানেক দেরি। ঘন্টাখানেক অনেক সময় ধর্ষিতা হওয়ার জন্য, ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখানোর জন্য, চাপ দিয়ে জবরদস্তি দ্বিতীয়বার সঙ্গমের জন্য। কাউকে কিছু বলা হয়ে ওঠেনি। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছিলাম। নাচ বন্ধ করেছিলাম। বাড়িতে খোঁজ নিতে এসেছিলো ডান্সস্যার। আমি পায়ের শিরায় টান ধরার এক অদ্ভুত ছুতো দিয়েছিলাম। চিকিৎসা শুরু হলো। পায়ের কোনো সমস্যা ধরা পড়লোনা বটে, তবে আমি পাঁচমাসের প্রেগন্যান্ট সেটা ধরা পড়লো অচিরেই। তারপরের গল্পটা উহ্যই থাক। বাড়ি থেকে আমাকে পাঠানো হলো এই ম্যাকলাস্কিগঞ্জের এক বাংলোয়। আমার একটা মেয়ে হলো। সে রয়ে গেলো এখানকারই কোনো এক অনাথ-আশ্রমের জিম্মায়। আমি ফেরত গেলাম কলকাতায়। আবার অন্য স্কুলে ভর্তি, আবার পড়াশোনা, নাচ - গান - বাজনা... সব শুরু হলো আগের ছন্দে। শুধু মনটা তালকাটা হয়ে রইলো। তারপর এতগুলো বছর পেরিয়েছে। পুরুষ, পরিবার এবং সম্পর্কে অনাস্থা জন্মেছে জগদ্দল পাথর হয়ে। তবে এবার আমিও ছন্দে ফিরতে চাই, সঙ্গে আমার মেয়ে অলকানন্দাকে নিয়ে। একলা। আর কাউকে চাইনা মাঝখানে। অনেকবছর আলাদা থেকেছি কিনা। অলকানন্দার বাচ্চাটাও এখানেই হবে... তাই এসেছিলাম সেই বাংলোটা বুক করতে। সামনের মাসেই চলে আসবো এখানে। অলকানন্দার পালক বাবা-মায়ের কথাতেই জেনেছিলাম ওদের দত্তক নেওয়ার কথা। তারপর পরিচয় বেরিয়েই পড়লো। আসলে সত্য তো আলোর মতো, প্রকাশ হবেই। তবে অলকানন্দা একটু ভুল করে ফেলেছে। ছেলেমানুষ তো! বয়সের ভুল। ছেলেটিও নেহাতই ছাত্র... চেনাজানা, সবে থার্ড-ইয়ারে পড়ছে। নিজের পায়ে দাঁড়াক আগে দু'জনেই। হা-হা-হা... ওরা বিয়ে করতে চায়। কথা বলেছি ওদের সাথে। তাহলে বুঝতে পারছো তো... কতটা দায়িত্ব আমার হাতে এখন? ঐ ডান্সস্যারের অন্যায়ের শাস্তি আমার অলকানন্দা পাবে কেন বলো তো? কি? চুপ কেন? স্টিল কুড ইউ লাভ মি? সব শুনলে তো!" পার্থপ্রতিম হাতটা বাড়িয়ে চেয়ারের হাতলে রাখা নূপুরনিক্কণের হাতে উষ্ণ আলতো চাপ দেয়, "হ্যাটস্ অফ, এতো শক্তি পাও কোথায়? সামনের মাস থেকেই সবক'টা উইকেণ্ডে নাহলেও মাঝেমধ্যেই চলে আসতে পারবো। আর হ্যাঁ, শোনো, একবারও আর বলবে না... স্টিল কুড ইউ লাভ মি? ইয়েস, স্টিল আই লাভ ইউ... আগের থেকে অনেক বেশি। তোমার অনেস্টি, তোমার সৎ চিন্তাভাবনায় মুগ্ধ আমি। সবাই একসাথেই থাকি না? সেটাই বরং সবথেকে ভালো।"


আবার মেঘ গুড়গুড় করে উঠলো, দূরে বনের মধ্যে কোথাও অচেনা পাখিরা টিট্টি-টিট্টি-টিট্টি করে উঠলো, মেঘের চাদরের আড়াল থেকে উঁকি দিয়েই লাজুক মুখ লুকোলো ত্রয়োদশীর চাঁদ। বৌকে নিয়ে কেয়ারটেকার আবার এনেছে ধোঁয়াওড়া গরম কফির মগ, পুরোনো ট্রেটা তুলে নিয়ে গেছে। আর পার্থপ্রতিম চালিয়েছে কিছুক্ষণ আগের ভিডিওটা...

"গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ গরজে পর্বতশিখরে অরণ্যে তমশ্ছায়া...", ল্যাপটপের স্ক্রিন জুড়ে শুধুই নূপুর... নূপুরনিক্কণ সেনগুপ্ত... এক অসামান্যা নারী।


 

 

 

 

 

     



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance