শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance

4.5  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance

গোপনো কথাটি

গোপনো কথাটি

3 mins
329


প্রিয়তমা,   

          অরুনিমা আজ তোমাকে একটা চিঠি লিখতে বড্ড ইচ্ছে করছে, তাই কাঁপা কাঁপা হাতেই লিখতে বসেছি। মনের গোপন কোনে অনেক কথা রয়ে যায় যে..... গুলো শত ইচ্ছা থাকলেও কখনও মুখ ফুটে বলা হয়ে ওঠেনা!!! সেই রকম অনেক অনেক কথা আজ আমি তোমাকে লিখতে চাই, এবং তোমার হাতে আমার এই মনের গোপন কথা গুলো লেখার মাধ্যমে তুলে দিতে চাই, আর চাই এই চিঠিটা তুমি আমার অলক্ষ‍্যে পড়ে আমার জন‍্য একটা চিঠি লেখো, যেখানে তোমার মনের কথা গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠবে।


জানি পড়ার সময় মনে মনে ভাববে যে..,.. আমি মানুষটা বড্ড হিসেবি, চিঠি দিয়ে চিঠি পেতে চাইছি!!!! তবে আমি জানি, আমার আমি কে.... আমার থেকেও... তুমি বেশি বোঝো, তাই আমার মুখ দেখলেই বুঝতে পারো আমার মন ভালো আছে কি... নেই!!! আসলে তুমি আমার মনটা পড়তে পারো। তোমার মত একজন কে... আমি আমার চলার পথে পাশে পেয়েছি বলেই হয়তো আমার চলার এই কঠিন পথটা এত সহজে অতিক্রম করতে পেরেছি। আজ আমার বলতে কোন রকমের দ্বিধা-দ্বন্দ নেই যে.... তোমাকে পেয়ে আমি সম্পূর্ণ হয়েছি, আর তোমাকে ভালোবাসতে পেরে ধন‍্য।


জানোতো অরু তোমাকে যখন প্রথম আমার অর্ধাঙ্গীনি হিসাবে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম তখন আমার বয়স আটাশ ছিল, সেই দিন আমার মনের মধ‍্যে এক অদ্ভুত রকমের ভয় কাজ করছিল এই ভেবে যে.......!! একজনের অমূল‍্য ভালোবাসার সন্তান, আমার হাতে তুলে দিয়েছে র্নিদ্বিধিয়া বিশ্বাস করে, আমি কি তাকে সারা জীবন ভালোবেসে সুখে রাখতে পারবো? এবং বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারবোতো? তবে আজ এই আশি বছর বয়সে পৌঁছে আমি উপলব্ধি করতে পারি প্রত‍্যেক মুহুর্তে, আমি কি.... তোমাকে সুখে রাখব!!!! তুমি আমাকে এবং আমার সমস্ত পরিবারকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে রাখলে সারাটা জীবন, দুঃখ এবং কষ্টের আঁচ পর্যন্ত লাগতে দিলেনা। সেই বাইশ বছরের তরুণী কখন একটু একটু করে পচাত্তর বছরের বৃদ্ধাতে পরিনত হল বুঝতেই পাড়লাম না!!!! তবে আমার অরু আমার কাছে প্রথম দিন যেমন ছিল আজও তেমন আছে। আজও আমার তোমার হাসি মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগে, আজও তুমি অভিমান করলে মান ভাঙ্গাতে ভালো লাগে, আজও তোমার হাত ধরে হাঁটতে ভালোলাগে। অজও তোমাকে ভালোবাসি বলতে ভালো লাগে। জানি যখন এই চিঠিটা পড়বে তখন তোমার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠবে সেই বাইশ বছরের তরুণীর মত। জানো অরু সেই দিন সেই আঠাশ বছরের যুবকের বুকে যে.... ভয় ছিল আজ এই বৃদ্ধের বুকে ভয়ের জায়গায় গর্ববোধ আছে... তার অরুকে নিয়ে।


অরু তোমাকে সেই ভাবে কোনদিন বলাই হয়নি ভালোবাসি, কাজ থেকে ফেরার পথে চকলেট, ফুল, উপহার আনাও হয়নি, এমনকি সংসারের চাপে কোথাও সে.... ভাবে বেড়াতেও নিয়ে যাওয়া হয়নি!!! তবে প্রত‍্যেক বছর বিবাহবার্ষিকির দিন তোমাকে নিয়ে মন্দিরে পূজো দিতে যেতে আমার খুব ভালো লাগত কারন ঐ বিশেষ দিনেই তো আমি তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে নিজের রঙে রাঙিয়ে নিতে পেরেছিলাম। তাই এখনও চেষ্টা করি তোমার হাত ধরে যাওয়ার । আমি যেমন তুমি আমাকে সেইভাবেই ভালোবেসেছো কোনদিনও আমাকে কোনকিছু করতে বাঁধা দাওনি, জোড় করে বেঁধে রাখার চেষ্টাও করনি, অথচ এক অদৃশ্য বন্ধনে আমাকে নিজের করে নিয়েছ, আর সেই অদৃশ‍্য বন্ধন হলো ভালোবাসা।


তুমি হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করতে কি.... চাইলে গো.... ভগবানের কাছে, আমি বলতাম বলা যাবেনা গোপন কথা। আর তুমি হেসে হেসে বলতে তাই বুঝি!!! এত গোপন যে.... আমাকেও বলা যাবেনা!!! আমি বলতাম না.... বলা যাবেনা। তবে আজ বলছি আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতাম প্রত‍্যেক জন্মে আমি যেন তোমাকেই পাই আমার অর্ধাঙ্গীনি হিসাবে, জীবন পথের সঙ্গী হিসেবে। আর আমরা যেন... একসাথে মৃত্যু বরন করতে পারি!!! আর যদি সেটা না..... হয় তাহলে ভগবান যেন আমার আগে তোমাকে নিয়ে নেয় নিজের কাছে, কারন আমি জানি!!! আমার অরু আমাকে ছাড়া এক মূহুর্তও বাঁচতে পারবেনা, আর আমি আমার অরুকে এত কষ্ট দিয়ে মরেও শান্তি পাবনা। জানি এটা যখন পড়বে তখন তোমার চোখ দিয়ে শ্রাবনের ধারা বয়বে তাই আর কিছু বলছিনা, তোমার চোখের জল আমাকে যে... খুব কষ্ট দেয় অরু। তুমি যেমন আমি তোমাকে সেই ভাবেই ভালোবাসি। 


একমুঠো আবেগ রোজ খোঁজে আদুরে, অভিমানে ভরা চিঠি ভর্তি নীল খাম,

একজন্ম নয়, প্রতিটি জন্মেই থাকুক 

তোলা, ভালোবাসার বন্ধনে

তোমার আমার নাম।


ইতি,তোমার অরন‍্য।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance