Ajanta Basu

Abstract Classics Others

2  

Ajanta Basu

Abstract Classics Others

গন্তব্য ছিল অস্ট্রিয়া

গন্তব্য ছিল অস্ট্রিয়া

10 mins
128



সবে এক মাস হয়েছে তখন বেলজিয়াম এ এসে | হাওড়ার সেই জহরালয়ের চৌকাঠ পেড়িয়ে প্রথম ভিনদেশে পারি | দয়া করে, জহরালয় কে কোনো প্রাসাদ ভেবে ভুল করবেন না| ওটা একটা বহু প্রাচীন বাড়ির নাম | না না , ভুল করছেন আরও, এটি কোনো রাজা রানীর ও গল্প নয় | এটি একটি সহজ সরল ভ্রমণ গাঁথা | সেই অজপাড়াগাঁয়ের চশমা চোখের মেয়ের প্রথম বিশ্বের (নেহাত ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি না বলে একটু বেশি ই বাংলা বল্লাম, ভুলত্রুটি মার্জনা করিবেন) দেশে পদার্পন| তার জেদ অদম্য, ভীতসন্ত্রতো মনের মধ্যেও আলোর বেগে ছোটার ইচ্ছে | অগত্যা কাজের ফাঁকে সে শুরু করে দিলো তার ইউরোপ মহাদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা | সালটা ছিল ২০১৮| তাই প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের আগে থেকেই বলে রাখি মুখমণ্ডলের ওপর এখনকার সব থেকে জরুরি অলংকার 'ফেস মাস্ক' টা তখন কিন্তু দরকার হতো না |


একা এর আগে কখনো কোথাও সে ঘুরতে যায়নি| হাওড়া তে থাকাকালীন শুধু গঙ্গার ওপারে মহানগরী তে যাতায়াত ছিল কর্মসূত্রে| অগত্যা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার ব্যাপার টা তার কাছে মোটেই সহজ ছিল না | উপরন্তু, তার কলিকাতার সহকর্মীদের কারোর ই এখনো অবধি ভাগ্যচক্রে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়ে ওঠেনি | একজন দাদা মাস দুয়েক আগে বেলজিয়াম এ পদার্পন করেছেন কিন্তু তার ও কিনা বৌ বাচ্চা নিয়ে বিদেশ বিভুঁই এ থাকা | সুতরাং, তার কাছে এ মুহূর্তে বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপার টা খরচা সাপেক্ষ | অগত্যা, মেয়েটি স্থির করলো একা ই যাওয়ার|


আপাতত, বেলজিয়াম এ তার আস্তানা একটি সার্ভিস আপার্টমেন্ট| আগেই বলে দি, যারা বিদেশে থাকা টা কে খুব রাজকীয় ব্যাপার মনে করেন, সেটি কিন্তু খুব একটা সত্যি না | এখানে, বিশেষত, ইউরোপের দেশ গুলিতে বাড়ির মাস কাবাড়ির ভাড়া যা তাতে আপনি দু তিনটে ইউরোপিয়ান দেশ ঘুরে আসতে পারবেন | বাকিটা আর বিস্তারিত ভাবে বললাম না | তাহলে আর ভ্রমন গাঁথা টা আর লেখা হবে না মশাই | যাই হোক, তো মেয়েটি তার রুমমেটের কাছ থেকে জানতে পারলো যে এখানে একটি ভারতীয় সংস্থা আছে যারা আপনার ভ্রমণের থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে আপনার পরিভ্রমনে সহায়তা করবে | এবার একটু ইংরিজি বলি, সংক্ষেপে মশাই এই সংস্থা টি হলো একটি টুর অর্গানাইজার | ব্যাস! আর দেরি করে কে| আল্হাদে আটখানা হয়ে মেয়েটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে কয়েকটা ট্রিপ দেখে ফেললো| তার চোখ পড়লো নভেম্বর এর একটি ট্রিপ এ | "অস্ট্রিয়া" | আর যাই হোক এই মেয়েটির কিন্তু অন্যদের মতো 'প্যারিস' আর 'সুইজারল্যান্ড'এর প্রতি অতটা মোহ ছিল না | হ্যাঁ, বলতে পারেন, গতানুগতিক ভারতীয় ধারার থেকে একটু ব্যাতিক্রম |


গুগল এ কিছুদিন অস্ট্রিয়া নিয়ে ঘাটাঘাটি চলতো তার কাজের অবসরে | সে জানতে পারলো যে অস্ট্রিয়া বেড়াতে যাওয়ার জন্য নভেম্বর মাসটি একদম আদর্শ সময় | এই সময় অস্ট্রিয়ার গড় তাপমাত্রা থাকে তিন ডিগ্রী থেকে সাড়ে আট ডিগ্রির মধ্যে | তাই আর দেরি না করে সে ট্রিপ টির বুকিং করে নিলো | এখন দরকার একটি উইন্টার জ্যাকেটের | কলকাতা র পচা গরমএ অভস্ত্য মেয়েটির এটি একটি অত্যাবশ্যক হাতিয়ার এখানে হিমশীতল জলবায়ু তে টিকে থাকার | তাই আর দেরি না করে সার্ভিস আপার্টমেন্ট এর পিছনের শপিং স্ট্রিট থেকে তড়িঘড়ি করে একটি জ্যাকেট কিনে আনলো সে | এই শপিং স্ট্রিট এর ব্যাপার টা বেশ মজার | ইউরোপের প্রতিটি শহরে আপনি একটি রাস্তা খুঁজে পাবেন যেখানে রাস্তার দু পাশে ছোট বড়ো নামকরা ব্র্যান্ডের দোকান | আরে হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আমাদের ধর্মতলার একপ্রকারের রাজকীয় রূপ |


নভেম্বর মাসের সকাল | কনকনে ঠান্ডা | রাতে ঘুম আসেনি তার | সকালে উঠে একটু সাজুগুজু করার জন্য মেকআপ বাক্স টা ঠিক করতে আর কি কি কাপড় জামা নিয়ে যাবে সেসবের ব্যাপারে ভাবতে ভাবতেই রাত কাবার | কন্ট্যাক্ট লেন্স ও পড়ার চিন্তা ছিল সকালে উঠে | তাই ঘুম আর কি হবে ! ভালো ভাবে রেডি হয়ে দু একটা সেলফি তুলে রওনা দিলো সে বাস স্ট্যান্ড এর দিকে | এই টুর অরগ্যানিসের আয়োজন দেখে সে তো বেশ খুশি | একটি ডাবল ডেকার বাস আর তার মধ্যে ছোট খাটো একটা প্যান্ট্রির আয়োজন আছে, যেখানে আপনি রেডি টু ইট খাবার পেয়ে যাবেন আর সব থেকে জরুরি কাজের জন্য একটি ইমার্জেন্সি টয়লেট | এখানে সবাই টয়লেট কে WC বলে| যাই হোক, তার মানে হলো যে, জল বেশি খেলেও আপনার এ যাত্রা এ চাপ নেই| কিন্তু বাসে উঠে সে জানতে পারলো যে সবার শেষের বুকিং টি ছিল তার | তাই বাস এর একেবারে শেষের দিকের সিট টি তে তার স্থান | যদিও কলকাতার ভিড় বাস এ যাতায়াত করে অভস্ত্য মেয়েটির কাছে এটি নেহাত ই রাজকীয় আয়োজন | দিনটি ছিল শুক্রবার | বয়স হয়েছে, তাই তারিখ টা তার মনে নেই | দয়া করে রেগে যাবেন না | বাস ছাড়লো ব্রাসেলস থেকে | গন্তব্য হলো অস্ট্রিয়ার সালজবার্গ শহর |


এবার একটু অস্ট্রিয়া দেশটির ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে বলি | মধ্য ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই দেশটি, আল্পস পর্বতমালার পূর্ব প্রান্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত | যারা আল্পস এর ব্যাপারে আগে শোনেননি , তাদের জন্য বলি, আল্পস হলো ইউরোপের বৃহত্তম পর্বতমালা যেটি বিরাজ করছে আটটি ইউরোপের দেশের উপর - ফ্রান্স, সুইৎজারল্যান্ড, মোনাকো, ইতালি , লিচটেনস্টাইন , অস্ট্রিয়া , জার্মানি এবং স্লোভেনিয়া | সুতরাং, অস্ট্রিয়া ও হলো এমনি একটি আলপাইন দেশ | যদিও অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা তবুও সালজবার্গ হলো ইউরোপ ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম একটি আকর্ষণ | সালজবার্গ এর অন্যতম আকর্ষণ হলো আল্পস এর স্বর্গীয় সৌন্দর্য | সালজাক নদী শহর টিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে | এর বাঁদিক টা আমাদের উত্তর কলকাতার মতন ই প্রাচীন এবং ডানদিকে দক্ষিণ কলকাতার মতো আধুনিক |

নদীর বাঁদিকে রয়েছে আল্টস্টাড বলে একটি বহু প্রাচীন জায়গা, যেটি নাকি বিখ্যাত মিউজিসিয়ান মোজার্ট এর জন্মস্থান |


যাই হোক ব্রাসেলস থেকে সালসবার্গ বাস এ করে যেতে সময় লাগে মোটামুটি ১৪ ঘন্টা | তাই, মেয়েটির কাছে মোটামুটি এই সময়টা পর্যাপ্ত ছিল কিছু নতুন বন্ধু বানানোর জন্য | 


ব্যাস আর কি, বেশ কয়েকটা নতুন বন্ধু ও হয়ে গেলো | বাসটিতে তার আশেপাশে যারা বসে ছিল, তারা মোটামুটি সবাই তার সমবয়সী | বেশ, আড্ডাও জমে গেলো | রাতটা এই ভাবে, কেটে গেলো| লাক্সেমবার্গ এ রাতের দিকে বাস টা কিছুক্ষনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল | তারপর একেবারে বাস ছুটলো গন্তব্যের দিকে | গল্প করেই অর্ধেক টা রাত কেটে গেলো, সকালে যখন চোখ খুললো তার, টুর গাইড মিস্টার আনসারী, তখন সবাইকে জলখাবারের জন্য কেক এবং ফলের রস বিতরণ করছিলেন এবং সালজবার্গে গিয়ে ওখানের আকর্ষণীয় স্থান গুলি দেখার জন্য খরচ পাতির কথা বিস্তারিত ভাবে বোঝাচ্ছিলেন | জানা গেলো যে, সালজবার্গ এ ভ্রমণকারীদের জন্য সালজবার্গ কার্ড থাকে | এই সালজবার্গ কার্ডটি যদি আপনি কিনে নেন, তবে এটির সৌজন্যে, আপনি সালজবার্গের যেকোনো পরিবাহনের সুযোগ নিতে পারেন | এই কার্ডটি কিনতে আপনার পকেট থেকে আপনাকে নূন্যতম তিরিশ টা ইউরো দখিনা দিতে হবেই | তারপর যত বেশি দিন আপনি এটিকে ব্যবহার করবেন, তার উপর ও আপনার কার্ডটির মূল্য নির্ভর করবে | অগত্যা, এই বহুমূল্য কার্ডটি কে দয়া করে হারাবেন না |


যাই হোক, সকাল তখন ৯ টা হবে, বাস এসে পৌঁছলো সালজবার্গ শহরে | বাস থেকে নামতেই, আল্পসের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য দেখে মেয়েটিতো আশ্চর্যনিত্য হয়ে গেলো | চারিদিকে ছোট বড়ো সূর্যস্নাত গাছের সারি আর তার মাঝে উঁকি দিচ্ছে সালজকাম্মেরগুত পর্বতমালা | কলকাতায় থাকতে মেয়েটির কোনোদিন দার্জিলিং এই যাওয়া হয়নি| সেখানে সে যখন, প্রথম চাক্ষুষ আল্পস দেখছিলো, তার মনে পড়ছিলো ছোটবেলায় ক্যালেন্ডার এ দেখা সেই ছবি গুলি অথবা সে হয়তো ভাবছিলো তার মোবাইল অথবা ল্যাপটপ এর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ওয়ালপেপার গুলির কথা | এটা স্বপ্ন না সত্যি সেটা বোঝার জন্য একবার নিজেই নিজেকে চিমটি কেটে পরখ করলো সে | ইতিমধ্যে তার কানে এলো, বাঙালি কণ্ঠ্যস্বর | দুটি ছেলে বাস থেকে নেমে একে ওপরের সাথে বাংলায় কথা বলছিলো | এতক্ষন পর্যন্ত মেয়েটি যেসব বন্ধু পাতিয়েছিলো, তাদের কেউ ই বাঙালি ছিল না | সুতরাং এতদিন পর, বিদেশ বিভুঁই এ, বাংলা কণ্ঠস্বর শুনে, সে লাফাতে লাফাতে তাদের সাথে আলাপ করতে গেলো | ইতিমধ্যে মিস্টার আনসারী, হোটেলের রুমের আয়োজন করে ফেলেছেন | সবাইকে তিনি জানিয়ে দিলেন যে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আমরা সবাই রওনা দেব সালজবার্গ পরিভ্রমণের জন্য | সেটা শুনে সবাই যে যার হোটেল রুমের চাবি নিয়ে, তড়িঘড়ি করে জিনিসপত্র রাখতে চলে গেলো | 


প্রথম গন্তব্য ছিল মিরাবেল প্যালেস | প্রিন্স আর্চবিশপ এই সুন্দর প্রাসাদটি বানিয়েছিলেন ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তার ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে | প্যালেসের ভেতরে একটি খুব প্রাচীন সুন্দর উদ্যান আছে যেটি প্রথম ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে বানানো হয়েছিল | এখনো বাগান টির শান্ত শীতল পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে | বাগান টিতে চারটি ভিন্ন প্রাচীন মূর্তি আছে যেগুলি অগ্নি, বায়ু, পৃথী এবং জলের প্রতীক | এই বাগানটি ফটোগ্রাফারদের জন্য অন্যতম সেরা আকর্ষণ |


মিরাবেল প্যালেসর পর পরবর্তী গন্তব্য ছিল হেলব্রুন প্যালেস এবং ট্রিক ফাউন্টেন | ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে বারোক শিল্পকার্য খুব বিখ্যাত ছিল | এই বারোক শিল্পকার্যের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো হেলব্রুন প্যালেস | হেলাব্রুন প্যালেসের পর দলটির ওই দিনের শেষ দুটি গন্তব্য ছিল - উন্টারসবার্গ (এটিকে ঠিক পর্বত বলা ভুল হবে | এটি অনেকটা পাহাড় বা মালভূমির মতো যেটি জার্মানির বাভারিয়া আর অস্ট্রিয়ার সালজবার্গের মাঝে অবস্থিত | উন্টারসবার্গের মার্বেল ইউরোপে তথা বিশ্বে বহুমূল্যের মানা হয় |)


মিরাবেল প্যালেসর পর পরবর্তী গন্তব্য ছিল হেলব্রূন প্যালেস এবং ট্রিক ফাউন্টেন | ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে বারোক শিল্পকার্য খুব বিখ্যাত ছিল | এই বারোক শিল্পকার্যের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলো হেলব্রূন প্যালেস | হেলাব্রূন প্যালেসের পর দলটির ওই দিনের শেষ দুটি গন্তব্য ছিল - উন্টারসবার্গ (এটিকে ঠিক পর্বত বলা ভুল হবে | এটি অনেকটা পাহাড় বা মালভূমির মতো যেটি জার্মানির বাভারিয়া আর অস্ট্রিয়ার সালজবার্গের মাঝে অবস্থিত | উন্টারসবার্গের মার্বেল ইউরোপে তথা বিশ্বে বহুমূল্যের মানা হয় |), হোহেনসালজবার্গ দুর্গ (এই দুর্গটি তৈরী হয়েছিল ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি মিলিটারি ব্যারাক আর কারাগার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো |) | হোহেনসালজবার্গ দুর্গের উপর থেকে দেখা সালজবার্গের সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায়না | মেয়েটি যখন দুর্গের চূড়া থেকে দূরের পর্বতমালার মাঝে সূর্য টিকে ডুবতে দেখছিলো, চোখের কোনায় তখন তার মুক্তের মতো অশ্রু গুলি তাকে মনে করাচ্ছিল তার এতগুলি বছরের কঠোর পরিশ্রমের সার্থকতা | এর সাথেই প্রথম দিনের পরিভ্রমণ শেষ | আর একটি মাত্র দিন বাকি | তারপর ফিরে যেতে হবে আবার কর্মজীবনের ব্যস্ততায় | 


দুর্গ থেকে ফেরার পথে , দলটি রাতের নৈশভোজ সারার জন্য ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গেলো | মেয়েটি তার নতুন বন্ধুদের সাথে একটি ভারতীয় রেস্তোরায় গেলো নৈশভোজ সারতে | তারপর কিছুটা সময় বাঁচিয়ে লকব্রিজের উপর ঘোরাফেরা করলো এবং কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দি করলো | ও হ্যা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম তাদের দিনের শেষের আরেকটি গন্তব্য ছিল মোজার্ট এর জন্মস্থান | এই বাড়িটি তেই জন্মেছিলেন বিখ্যাত মিউজিসিয়ান মোজার্ট ( ২৭ জানুয়ারী, ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ) | ছোটবেলার সেই টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল ষ্টার গানটি মনে পরে ? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ওটার আসল গান তার রচয়িতা ছিলেন এই বিখ্যাত সুরকার | পুরো বাড়িটি জুড়ে তার সমস্ত অনবদ্য সৃষ্টি র স্মৃতিচারণা | মেয়েটি ভাবতেই পারেনি কোনোদিন মোজার্টের বাড়িতে বসে তার লেখা সুর গুলির রেকর্ডিং শুনবে | 


পরের দিন সকাল ১১ টার দিকে জলখাবার সেরে সবাই সালজবার্গ থেকে রওনা দিলো | বিদায় সালজবার্গ | পরের গন্তব্য হলস্টেট |


এবার একটি হলস্টেট জায়গাটির ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে বলি | হলস্টেট হলো হলস্টেট লেকের পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম | ষোড়শ শতাব্দীর সুন্দর আলপাইন ঘর গুলি আর এখানে প্রত্যেকটি গলিতে পুরাতন ক্যাফে গুলির সৌন্দর্য সত্যিই নজর কাড়ে | আর হলস্টেট লেকের নিস্তব্ধতা, রাজঁহাস গুলির ডানা ঝাপটানোর শব্দ আর লেকটিতে সালজকম্মেরগুত পর্বতমালার প্রতিচ্ছবি দেখে মেয়েটির যেন সত্যিই মনে হচ্ছিলো, "বিপুলা এ পৃথিবীর কত টুকু জানি.." | এই গ্রামে একটি ফানিকুলার (তারে চালিত) রেলওয়ে আছে যেটিতে করে যাওয়া যায় সালজভেল্টেন | এটি পৃথিবীর অন্যতম একটি বহু প্রাচীন লবণের খনি | আর এখানেই রয়েছে বহুপ্রাচীন একটি ভূগর্ভস্থ লবন হ্রদ | এবং সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু হলো এখানকার স্কাইওয়াক | 


দলটি যখন হলস্টেট পৌঁছলো দুপুর তখন ১২ টা হবে | দলটি ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলো গ্রামটি কে ঘুরে দেখার জন্য | যারা বয়স্ক ছিল, তাদের কে বাদ দিয়ে মোটামুটি যারা যুবক যুবতীর দল ছিল তারা ফানিকুলারে চড়ে চললো স্কাইওয়াক আর ৭০০০ বছরের পুরোনো লবণের খনি দেখার জন্য | লবণের খনি তে প্রবেশের জন্য আলাদা ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছিল সবাইকে | যারা আরেকটু রোমহর্ষক অভিজ্ঞত্যার জন্য অপেক্ষা করছিলো, তাদের কে জানানো হলো খনির ভেতরে একটি ট্রেইল আছে | যেটিতে করে তারা খনির আরো নিচে যেতে পারবে | মেয়েটিও চললো অতি উৎসাহের সাথে তার নতুন পাতানো দুটি বাঙালি বন্ধুর সাথে | লবণের খনি টির ব্যাপারে আর বিস্তারিত ভাবে না হয় পরে বলবো আরেকদিন | তবে মেয়েটির কাছে এটি ছিল সাখ্যাত টাইম ট্রাভেল | লবণের খনিটির ভিতরে বর্ণিত আছে চারটি যুগের মধ্য দিয়ে সময়ের একটি উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রা | অবশেষে দেখা মিললো এচেরন উপত্যকার এবং গ্লেসিয়ার গার্ডেনের (বাংলায় হিমবাহ বাগান বলতে পারেন) | লবন খনির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার পরের আকর্ষণ ছিল স্কাইওয়াক | হলস্ট্যাটের বার্ডস আই ভিউ যদি উপভোগ করতে চান তাহলে এটির দর্শন অতি আবশ্যক | স্কাইওয়াকের প্ল্যাটফর্মটি পাহাড় থেকে ১২ মিটার এবং মাটি থেকে ৩৬০ মিটার উপরে প্রসারিত। এটির অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো মুশকিল | ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যের কমিটি এর ব্যাপারে লিখেছেলো : "... বৈজ্ঞানিক আমদানির সাথে অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রকৃতি যুক্ত হয়েছে ..." |


নভেম্বর মাস | তাই সন্ধ্যাটা একটু তাড়াতাড়ি নামলো | বিকেল তখন ৫টা হবে | এবার ফেরার পালা | হলস্টেট লেকের গায়ে লেগে থাকে ছোট ছোট আলপাইন বাড়িগুলো তে ধীরে ধীরে আলো জ্বলতে শুরু করলো | সেই আলো আধারির রঙে রাঙানো প্রকৃতির অপূর্ব ক্যানভাস দেখে মেয়েটি মনে মনে বললো "আবার আসিব ফিরে..." ||



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract