Mirza Ruman

Horror Others

3  

Mirza Ruman

Horror Others

গল্প- ভিখারি_জ্বীন

গল্প- ভিখারি_জ্বীন

11 mins
387


ভর- দুপুরে কখনো জ্বীনের খপ্পরে পড়েছেন? 

শুনতে একটু অদ্ভুত তাইনা?

কিন্তু এই অদ্ভুত কান্ডই ঘটে গেলো কদিন আগে।তাও আমার সাথেই। 

চাঁদপুর থেকে শরীয়তপুর, ভেদরগঞ্জে যাচ্ছিলাম। আমার শশুর বাড়িতে। তখন সময় সকাল ৯ টা। হাজিগঞ্জ তিন-রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলাম। যারা চাঁদপুর থাকেন।তারা এই মোড় চিনবেন। ঠিক সেই মুহুর্তে একজন ভিখারি এসে আমাকে নরম এবং গম্ভীর স্বরে বলল," বাবা,কিছু টাকা দিবি?"। আমি বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখি,উনার চেহারা'টা অনেক সুন্দর। মনে মনে আপসেট'ও হয়েছি। এমন সুন্দর চেহারার একজন লোক,পেটের দায়ে রাস্তায় নামলো। এরপর মানিব্যাগ বের করে,যেই টাকা নিবো। দেখি,খুচরা কোনো টাকা নেই। আমি উনাকে বললাম," চাচা,আপনার কাছে ভাঙতি টাকা হবে"?। লোকটা মাথা নাডিয়ে " না " সূচক ইঙ্গিত দেয়। এবং সেই মুহুর্তে স্টেশনে বাসও চলে আসে। আমি মানিব্যাগ পকেটে নিয়ে বাসে উঠে আসি। উনাকেও আর কিছু বলিনি। যেহেতু আমার কাছে ভাঙতি টাকা নেই,তাই উনি হয়তো বুঝবে ভেবে। ব্যাপারটা আমার আমলে নেইনি আর। 


কিন্তু বিশ্বাস করুন,এরপর আমার সাথে যা হয়েছে। তা কোনোদিন আমার সাথেই হবে,এইটা আমি কল্পনা করিনি। বাস নেমেছে সোজা চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ডে। আমি বাস থেকে নেমে একটা সি এন জি তে উঠে,চলে গেলাম ব্রিজের ওপাড়ে। যারা চাঁদপুর বা লক্ষীপুর থাকেন। এই স্থানগুলো সম্মন্ধে আপনাদের ধারণা থাকবে। কারণ,আমি একমাত্র এখানেই হরিণা ফেরি ঘাটের ট্রলার পাবো। আর এরপর শরীয়তপুর যেতে হবে আমার। 

তো যখন আমি ব্রিজিরের ওপাড়ে গিয়ে সি এন জি তে উঠেছি। খেয়াল করলাম,একটু দূরে রেললাইনের রাস্তায় সেই বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছে। এবং তিনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। এই cng স্ট্যান্ড রেল লাইনের পাশেই,তাই আমি স্পষ্ট উনাকে দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আমি এই ভেবে অবাক হলাম,উনাকে তো হাজিগঞ্জ ফেলে এসেছি। এতোদূর আমার আগে উনি কিভাবে আসবেন। এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে,লোকটি আমার কাছে এসে সেই নরম এবং গম্ভীর স্বরে বললেন," বাবা,কিছু টাকা দিবি?"। আমি অবাক হয়ে উনার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলাম। এতোদূর আসতে আসতে,আমার কাছে খুচরা টাকাও হয়েছে। আমি ঘোর থেকে বেরিয়ে, তড়িঘড়ি করে উনাকে একটা ১০ টাকার নোট দিলাম। উনি টাকা'টা নিয়ে দেখলাম অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। 


এদিকে গাড়িতে লোক হয়ে যাওয়ায়,ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। এবং রওনা করে হরিণা ঘাটের উদ্দেশ্যে। ব্রিজের এপাড় থেকে হরিণা ঘাট অব্দি,পুরো রাস্তায় আমি শুধু সেই বৃদ্ধ লোকটার কথাই ভেবেছি। উনি আমার মস্তিষ্কে যেনো জড়িয়ে গেলো। কিন্তু তখনো আমি বুঝিনি,সামনে আমার জন্য আরো অনেক বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে। 


হরিণা ঘাটে নেমে আমি ট্রলার পাইনি।এদিকে দেখলাম,ফেরি ছাড়ার সময় হয়েছে। যেহেতু আমাকে আজকে গিয়ে,আবার আজকের মধ্যেই ব্যাক করা লাগবে। তাই আর সময় ব্যায় না করে আমি,সেই ফেরিতেই উঠে গেলাম। আপনারা যারা ফেরিতে চলাচল করেছেন বা দেখেছেন। তাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে,ফেরির ২য় অথবা ৩য় তলায় একটা ভাতের দোকান নয়তো চায়ের দোকান থাকে। যেহেতু ৩০-৪০ মিনিটের জার্নি। তাই আমি ২য় তলায় সেই চায়ের দোকানে বসলাম। এবং দোকানিকে বললাম একটা রঙ চা দেওয়ার জন্য। এদিকে সিগারেট খাওয়ার বদ অভ্যাস থাকায়,আমি একটা সিগারেট ধরাই। এবং নিজের ফোন বের করে,আমার স্ত্রী কে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিচ্ছি। চ্যাটিং করার মাঝে,দোকানি এসে আমাকে চা নিতে বললেন।আমি ফোনের স্ক্রিন থেকে মাথা তুলে তাকাতেই দেখি,আমার ঠিক সামনের চেয়ারে সেই বৃদ্ধ লোকটা বসে আছেন। 


উনাকে দেখেই আমার গা শিউরে উঠে। এইবার আমার হাত এবং পায়ের গোড়ালি কাপাকাপি শুরু করে। নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই বৃদ্ধ লোক কিভাবে আবার এখানে চলে এসেছে। একবার আমি ভাবছি,উনিও হয়তো শরীয়তপুর যাচ্ছে,তাই বার বার অলৌকিক ভাবে আমার সাথেই দেখা হয়ে যাচ্ছে। আবার ভাবছি জ্বীন ভূত কিনা। কিন্তু জ্বীন যদিও হয়। তবে এই ভর-দুপুরে এইভাবে আমার পিছু কেনো নিলো। সত্য-মিথ্যে এবং অদ্ভূত সব ভাবনার মাঝে আমি যেনো ঢুবে যাচ্ছিলাম। তখনি দোকানি আমার ঘোর ভাঙ্গিয়ে আবার বলল, ভাই,চা কি খাইবেন না নাকি"। 


হটাৎ উনার গলার স্বর শুনে আমি দোকানির দিকে তাকালাম। ফোন পকেটে রেখে চায়ের কাপ হাতে নিতেই দেখি,বৃদ্ধ লোকটা এইবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কিছু বলার নেই,কিন্তু কেনো যেনো উনার চোখ থেকে আমি চোখ সরাতে পারছিনা। তবে এইবারও উনি হাত বাড়িয়ে সেই গম্ভীর এবং নরম স্বরে আমাকে বললেন," বাবা,কিছু টাকা দিবি?"। 


উনার এই কণ্ঠটি যদি আপনারা কেও শুনেন। তবে আমি নিশ্চিত, এই স্বর আপনারা কখনো ভুলতে পারবেন না। যেহেতু পরপর ৩ বার শুনেছি আমি। তাই উনার এই স্বর এবং টাকা চাওয়ার ধরন'টি আমার মগজে গজগজ করছিলো। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে,চায়ের কাপ টেবিলে রাখি। এবং পকেটে থেকে মানিব্যাগ বের করতে গেলে,দোকানি এসে সেই ভিখারিকে রেগে বলল," এই চাচা। এখানেও ভিক্ষা করা লাগেনি। কাস্টমার নষ্ট না করলে আপনাগো শান্তি লাগেনা?"। আমি খেয়াল করলাম, দোকানির এমন কথা শুনেও বৃদ্ধ লোকটা আমার দিকেই চেয়ে আছেন। এবং তার ডান হাতটি আমার দিকেই বাড়িয়ে দেওয়া।কিন্তু আমি এইবার আমার পাশে দোকানিকে পেয়ে,সাহস করেই কৌতুহল বশত বলে বসললাম,

" চাচা, আপনাকে তো আমি হাজিগঞ্জ দেখেছিলাম। এরপর ভাঙতি নাই তাই টাকা দেইনি। এরপর ব্রিজের ওপাড়েও আপনাকে দেখলাম। আর ১০ টাকাও দিলাম। আপনি আবার কেনো টাকা চেয়েছেন। নাকি ভুলে গেছেন যে টাকা আমিই দিয়েছিলাম"। 


আমার কথা শুনে দোকানিও দেখলাম এইবার অবাক হলেন। এদিকে বৃদ্ধ লোকটা আমার কথা শুনে এইবার হাত নামিয়ে নেন। আর বসা থেকে উঠে,সোজা ২য় তলা থেকে নেমে যেতে লাগলেন। হটাৎ মনে হলো উনি খুব রেগে গেছেন। আমি তো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। এদিকে দোকানিও অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন," কি ব্যাপার। এই লোক আপনার পিছু নিচ্ছে নাকি"। দোকানির কথা শুনে আমি যেনো এইবার একটু সাহস পেয়েছি। যদিও এই বৃদ্ধ লোককে আমি ভয় পাচ্ছি,নাকি তার কর্মকাণ্ড আমাকে ভয় লাগিয়ে দিচ্ছে আমি বুঝতে পারছিনা। তবে এইটা নিশ্চিত, আমি ভয় অনুভব করছিলাম তখন। এরপর আমি চা খেতে খেতে, দোকানিকে বৃদ্ধ লোকটার ব্যাপারে সবটা বললাম। দোকানি আমার কথা শুনে বললেন," আজকাল ধান্দাবাজ বেড়ে গেছে। এই ব্যাডায় আপনারে ফলো করতেছে মনে হয়। আহেন,জিজ্ঞেস করি"। 


খেয়াল করেছি,আমার সাথে,দোকানিও এই রহস্যের সমাধান খুজছে। দোকানির বয়স তেমন বেশি না। বয়স ২৬-৩০ এর মতো হবে। এরপর আমি এবং দোকানি ২য় তলা থেকে নেমে এলাম নিচে। 

আমি এর আগেও কয়েকবার ফেরিতে চলাচল করেছি। সবসময় মানুষজন কম হলেও ১০-১২ জন থাকতো। কিন্তু এইবার শুধু দুইটা ছেলেকে দেখলাম। ওদের বাইক আছে,সেই বাইক নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি এবং দোকানি নিচে এসে খুজতে লাগলাম সেই বৃদ্ধ লোককে। কিন্তু আশেপাশে নেই। এদিকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছেলেদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন," কই, অনেক্ষণ যাবদ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এখানে। কোনো বৃদ্ধ লোককে তো নামতে দেখিনি"। 


ছেলে দুইটার কথা শুনে, দোকানি এবং আমি দুজনেই অবাক হলাম বেশ। এইবার আমার মাঝে জ্বীন জ্বীন ভাবটা চেপে বসে। দোকানি আমাকে বললেন," ভাই,ট্রাকের চিপাচাপায় আছে মনে হয়। হয়তো লোকটা যখন নামছে,তখন ভাইরা খেয়াল করেনি"। দোকানি আমাকে কথাটা বলায়,সেই ছেলে দুইটা অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমিও দোকানির কথায় হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে,ফেরিতে থাকা ট্রাকগুলোর কিনারা চেক করতে লাগলাম। 

এদিকে,ফেরির নিচের সব অংশ চেক করে যখন উনাকে পাইনি,তখন বাথরুমেও গেলাম। দেখলাম,ওয়াশরুমের দরজা খোলা। ভিতরে কেও নেই। আমার সাথে এখন যেনো দোকানিও পাগল হয়ে যাচ্ছিলো। বেশকিছু সময় নিচে খুজে আমরা উপরে যাই,এবং ২য় তলা আর ৩য় তলায় ভালোভাবে চেক করি। কিন্তু সেই বৃদ্ধ লোকের দেখা পাইনি। 


নিরাশ হয়ে দুজনেই ফিরে যাই আবার ২য় তলায়। অর্থাৎ দোকানির দোকানে। দোকানির চেহারা দেখে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি,উনি ভয় পাচ্ছে। কারণ বৃদ্ধ লোকের সাথে দোকানি খারাপ ব্যাবহার করেছে। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি অন্য বিষয়ে। যদিও আমি খারাপ কোনো ব্যাবহার করিনি,কিন্তু ঐ বৃদ্ধ তো আমার পিছুই এসেছিলো। এইটা ভেবেই আমি ভয় পাচ্ছিলাম। 


ঘটনা এখানে শেষ হয়ে গেলেই হয়তো ভালো হতো। ঘটনা মাত্র শুরু হয়েছে। আমার জীবনের কালো অধ্যায়, নেমে এসেছিলো সেদিন থেকেই। 


আমি দোকানিকে বিদায় দিয়ে,ফেরি থেকে নেমে যাই। এরপর ফেরিঘাট থেকে সোজা রওনা করি ভেদরগঞ্জ। এই অব্দি সবটাই ঠিক ছিলো। কিন্তু ভেদরগঞ্জ বাজারে নেমে,উপজেলা হয়ে যখন আমি এগুচ্ছিলাম। তখন রাস্তার পাশে,অর্থাৎ আমার বাম পাশে সেই বৃদ্ধ লোককে আমি দেখতে পাই। হাত দুইটা হাটুর মাঝে রেখে উনি বসে আছেন। হটাৎ আবার উনাকে দেখেই, আমার বুকের বাম পাশটা চিৎ করে উঠেছে। দিনে দুপুরে, এতো শত লোকের মাঝেও আমি ভয়ে থরথর করে কাপছিলাম। কিন্তু এখন তো আশেপাশে পরিচিত কোনো লোকজনও নেই। মনে মনে ভাবছিলাম দোকানি সাথে থাকলে এখন উনাকে ধরতে পারতাম। এইভাবে আজগুবি কিছু ভাবনার মাঝে বৃদ্ধ লোকটা বসা থেকে উঠে যায়। এবং আমাকে এড়িয়ে, আমি যেদিক থেকে এসেছিলাম। সেদিকে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু এইবার অনেকটা পার্থক্য ছিলো।


গত ৩বার উনাকে খুব কষ্ট করে হাটতে দেখেছি। মানে একজন বয়স্ক মানুষ হাটুর ব্যাথা নিয়ে যেভাবে গুজে গুজে চলে। ওইভাবে দেখেছিলাম। কিন্তু এইবার তার ঠিক উল্টো। একজন যুবক যেভাবে হুট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়াবে। উনি ঠিক সেইভাবে দাড়িয়েছে। এবং একজন যুবক যেভাবে হেটে যাবে, তাও অনেক দ্রুত। তিনিও ওমনভাবে হেটে চলে যাচ্ছে।যাওয়ার সময়,উনার ময়লা মিশ্রিত সেই পাঞ্জাবির একটা আলাদা ঘ্রাণ, আমার নাকে বেধে যায়। সেই মুহুর্তটায় আমার কি হয়েছিলো আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বোকার মতো উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এবং উনি হাটতে হাটতে,কখন লোকজনের ভিড়ে হারিয়ে যায়। আমি খেয়াল করতে পারিনি। 


এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি যখন আমার শশুর বাড়ি যাই। তখন আমার সম্পুর্ন ভাবনা জুড়ে এই বৃদ্ধ লোকটা ছিলো। বার বার কানে ভাসছিলো সেই শব্দটা," বাবা,কিছু টাকা দিবি?"। 


কোনোভাবে সেদিন, শশুর বাড়িতে যে কাজে গিয়েছিলাম। তা শেষ করে আবার বিকেলেই রওনা করেছি আমি। এবং ভেদরগঞ্জ ছেড়ে ফেরিতে উঠতে উঠতে,সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো। আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে,আমি যখন ফেরিতে উঠেছি,তখন ৫ঃ৫৫ বা ৬ টা বাজে। একটু এদিক সেদিক হবে সময়। অন্যদিকে যেহেতু ৩০-৪০ মিনিটের জার্নি হবে ফেরিতে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ওপাশে নামার পর ৬ঃ৩৭ বেজেছিলো। আমি হরিণা ঘাটে নামতেই আমার সিমে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ করতেই আমার ছোট ভাই ভয় এবং কান্না মিশ্রিত স্বরে বলে উঠে," ভাইয়া? তুই গত ৪ দিন ফোন অফ করে রাখলি কেন? জানোস? আমরা কত চিন্তা করেছি? বাসায় আসবি কখন"। 


ছোট ভাইয়ের এমন কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। আমি আজ সকালেই রাছেলকে বিদায় দিয়ে এসেছি। আর সে এখন কল দিয়ে বলে আমি ৪ দিন ফোন অফ করে রেখেছি। চিন্তার মাঝে আরো একটা চিন্তা ঢুকে যায় আমার মাথায়।এইবার আমি প্রচুর ভয় পাই। কি যেনো মনে করে, আমি ফোনের ডাটা চালু করলাম। আমি তৎক্ষনাৎ আমার মেসেঞ্জারে অনেকগুলো মেসেজ আসে। সেখানে আমার স্ত্রী নিজেই মেসেজ করেছে অনেকগুলো। এবং সেই মেসেজগুলো এমন ছিলো,আমি নাকি ৪ দিন ধরে নিখোঁজ। 


যার বাসা থেকে আমি মাত্রই আসলাম।এখনো ৪ ঘন্টা হয়নি। সে মেসেজ দিচ্ছে আমি ৪ দিন নিখোঁজ ছিলাম? সময়টা যেনো আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছিলো তখন। আমি একটু মাথা খাটিয়ে মেসেজের তারিখ চেক করতে লাগলাম। যদিও তখন মাথা খাটিয়ে কিছু করার মতো অবস্থা ছিলো না আমার। তবুও আমি তারিখ চেক করে দেখি,আজ দুপুরে আমি আমার স্ত্রীর সাথে যে মেসেজ করেছি। তা অক্টোবরের ২৯ তারিখের মেসেজ। এরপর যখন ফোনের শর্ট ক্যালেন্ডারে তাকাই আমি,দেখি আজ নভেম্বরের ৩ তারিখ। 

মাথায় আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। কিভাবে ৪ দিন কেটে গেলো,তাও ৪ ঘন্টার মধ্যেই। একবার ভাবছি আমার ক্যালেন্ডারে সমস্যা,আবার ভাবছি রাছেল কেনো কল দিয়ে বলল আমি ৪ দিন যাবত নিখোঁজ। আবার ভাবনায় আসে সব কিছু আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো..? এতো এতো ভাবনার মাঝে ফোনে কল আসে আমার। দেখি,আমার স্ত্রী কল করেছে। আমি ফোন রিসিভ করতেই,ওপাশ থেকে সে প্রচন্ড অভিমান, রাগ এবং মায়া ভরা স্বরে বলতে লাগলো," শয়তান? স্বার্থপর। গত ৪ দিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন। আমরা পাগলের মতো খুজছিলাম আপনাকে। আপনার আব্বু থানায়ও গিয়েছেন।আপনার ফোন কেনো অফ ছিলো, একটা কল দিয়েও তো বলতে পারতেন কোন কাজে ছিলেন। এখান থেকে তো ভালোভাবেই বিদায় দিছিলেন,বাড়ি গিয়ে কল দেওয়ার কথা ছিলো। অথচ আপনি গত ৪ দিন পুরো নিখোঁজ হয়েই গেছেন। কোথায় ছিলেন এই ৪ দিন আপনি?"। 


বউয়ের কথাগুলো শুনে যেনো আমার পায়ের নিচে মাটি সরে গেলো। ভুলভাল কি আমি শুনছি,নাকি তারা ভুলভাল বলছে। তা আমি বুঝে উঠতে পারছিনা। কেমন একটা ঘোরের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি বার বার। আতঙ্ক এবং হতাশের মাঝে আমি আমার স্ত্রী কে বললাম," কিছু না। আমি তোমাকে সব জানাবো। আগে সব ক্লিয়ার করি"। কথাটা বলে,আমি ফোন কেটে দিয়েছি। 


হরিণা ঘাট থেকে যখন আমি একটা CNG তে করে আবার ব্রিজের এপাড়ে এলাম। পুরো রাস্তায় শুধু এই ঘটনাগুলো আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কে সেই বৃদ্ধ লোক,হুট করে কেনো আমার জীবনে এলেন তিনি। ফেরি থেকে কিভাবে উনি গায়েব হয়ে গেলেন।মাঝ নদীতে তিনি এইভাবে যাবেনও বা কোথায়। সবচেয়ে বেশি ভয় লেগেছে এই কারণে যে, ফেরি পার হতে হতে যেখানে আমার কাছে ৪০ মিনিট লেগেছে,সেখানে ৪ দিন কিভাবে কেটে গেলো। এমন একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে গেলাম আমি,যার উত্তর খোজা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। উত্তর বা খুজবো কি ,এই প্রশ্নটাই যেনো উত্তর গিলে খেয়ে নিলো। 


সেদিন পুরো রাস্তায় আমি এই ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে অবশেষে বাড়ি এলাম। সবাই কল দিচ্ছিলো আমাকে। এবং রিসিভ করলে একটা কথাই শুনতে হচ্ছে আমাকে," এই ৪ দিন কোথায় ছিলি?"। 


বাড়িতে এসে কাওকে কিছু না বলে,আমি সোজা গোসল করতে চলে যাই। বলে রাখি, আমাদের বাড়ির পুরুষ'রা যে পুকুরে গোসল করে,সেটি মসজিদের সামনে। এবং এই মসজিদ আমাদের বাড়ির গেটের সামনেই। পুকুরে নেমে, গোসল সেরে যখন আমি কাপড় বদলাচ্ছিলাম। সেই মুহুর্তে আমার নাকে ঐ ঘ্রাণ এসে আটকে যায়। অর্থাৎ, শরীয়তপুর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সামনে, বৃদ্ধ লোকের থেকে যে ঘ্রাণ পেয়েছিলাম। ঠিক সেই ঘ্রাণ আমি এখন পাচ্ছি। রাত তখন প্রায় ৯ টা বাজে। আমি ঘ্রাণ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এদিক-সেদিক তাকাই। কিন্তু আশেপাশে কেও ছিলো না। এইবারও আমার মাঝে ভয়টা আরো বেশি বেড়ে যায়। আমার বুঝা হয়ে গেছে,আমি কোনো জ্বীন ভূতের খপ্পরে পড়েছি। কিন্তু এই অশরীরী আমার পিছু কেনো নিলো। তা আমার জানা নেই। তাড়াহুড়ো করে আমি জামা বদলে ফেলি,এবং সাবান নিয়ে সোজা বাসায় এসে পড়ি। পরিবারের সবাই আমার দিকে দুইটা নজরে তাকাচ্ছিলো। একটা হচ্ছে,৪ দিন কিছু না বলে কোথায় ছিলাম তাও এখন চুপচাপ তাই রাগ। আরেকটি হচ্ছে ৪ দিন পর আমাকে খুজে পেয়ে আনন্দ। সবার মুখের অবস্থা দেখে বিষয়টা আমি জানতে পারলেও,সত্যটা কাওকে বলছিলাম না। কারণ,এই বিজ্ঞান যুগে এইসব জ্বীন ভূতের ঘটনা মানুষ হাসাহাসির অংশ হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু সে হাসেনা,যার সাথে ঘটে।


মা আমাকে খেতে ডাকে,আমি খাবোনা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। কারণ বেশি দেরি করলে যদি কোনো বড়সড় ক্ষতি হয়। তাই তখনি একটা হুজুরের সাথে, সাক্ষাৎকার করা সঠিক মনে হয়েছে আমার। রামগঞ্জের নামকরা সৈকত কবিরাজকে আশাকরি অনেকে চিনবেন। উনার বাড়ি হাপানিয়া গ্রামে। যা আমাদের বাড়ি থেকে হেটে গেলে ১৫ মিনিটের রাস্তা। 

আমি রাত ৯ঃ৩০ মিনিটে, একটা রিক্সা ভাড়া করে,সৈকত কবিরাজের চেম্বারে যাই। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায়,শেষমেশ আমাকে উনার বাসায় যেতে হয়। উনার বাসার সামনে গিয়ে যখন আমি ডাক দিতেই যাবো,সেই মুহুর্তে উনি ঘর থেকে বেরিয়ে আমাকে বললেন," তুই তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি ছেড়ে বের হ। কোনো প্রশ্ন করবি না। এই মুহুর্তে আমার বাড়ি ত্যাগ কর"। 


কথাগুলো শুনে আমি নিজেকে অনেক অসহায় ভাবতে লাগলাম। উনার কথায় প্রচুর রাগ আর ভয় ছিলো। আমি আসার আগেই,হয়তো উনি উনার জ্বীনদের দিয়ে সব জেনে নিয়েছেন। কারণ লোকমুখে শুনেছি উনার কাছে অনেক জ্বীন আছে। কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো,এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া আমার আর কোনো শক্তি নেই। কোনোদিকে কোনো উপায় না পেয়ে,সেদিন রাতে বাসায় গিয়ে আমি নামাজের বিছানায় পড়ে যাই। কারণ আমি খুবি ভয় পাচ্ছিলাম। ভাবতেও পারছিনা ৪০ মিনিটে আমি ৪ দিন কিভাবে পার করে দিলাম। শুনতে হয়তো কারো ভয় লাগবেনা,কিন্তু যার সাথে ঘটে। একমাত্র সেই বুঝে কতটা ভয় লাগে এখানে।


চলবে....?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror