এযুগের জাতিস্মর
এযুগের জাতিস্মর


(১)
চালতা বাগানের ঠাকুর দেখার পর, ঐশিকা আর ইন্দ্রজিৎ হাঁটতে হাঁটতে বিবেকানন্দ রোডের দিকে এগিয়ে গেলো। বেলা দুটো বাজলো। সপ্তমীর দুপুর তখন ঢাক, ধুনোর গন্ধ মন্ত্রে মশগুল। ঐশিকা বললো , "বসন্ত কেবিনে খাবে দুপুরে?"। ইন্দ্র একটু শিউরে উঠলো, "না না, ওখানে না।" ঐশি বুঝলো কিছু একটা গোলমাল আছে। চেপে ধরলো। "এই তুমি আমায় লুকোবে? বলো, বলে ফেলো।" ইন্দ্র বললো, "ঐশি, ওটা খুব অপয়া জায়গা আমার জন্যে। ভয় করে, ভয়, আবার যদি।"
(২)
রিলিনার সাথে সম্পর্কটা হটাৎ করেই ইন্দ্রর হয়েছিল। তখন ওরা একসাথে কোচিংএ পড়ত। ইন্দ্র খুব ভালো কবিতা লিখতো। রিলিনা ওর লেখার খুব ফ্যান ছিল। তারপর বন্ধুত্ব, মেসেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, অবশেষে প্রোপোজ ও সম্পর্ক। সেটা ছিল ওদের সম্পর্কের প্রথম দুর্গাপুজোর ( শেষ ও) একসাথে বেরোনো। দুজনে হাতিবাগান ঘুরে বসন্ত কেবিনে দুপুরে চিলি চিকেন ও এগ চাউমিন খেয়েছিল। খুব সুন্দর ঘোরাঘুরি করেছিল। জীবনের অন্যতম সেরা পুজো ছিল সেটা। ডিসেম্বরের শেষ দিকে সম্পর্কে চিড় ধরে। প্রথমে ইন্দ্র বুঝতনা হটাৎ করে কেনো রিলিনার ব্যবহারে এত পরিবর্তন। তারপর একদিন রিলিনা সরাসরি ওকে জানিয়ে দিল ওকে আর পছন্দ না। শিউরে উঠেছিল ইন্দ্র। জিজ্ঞেস করেছিল হটাৎ কি হলো। উত্তর পেয়েছিল প্রথম থেকেই নাকি রিলিনার ওকে ভালো লাগতোনা, জোর করে সম্পর্কে এসেছিল। সর্বৈব মিথ্যা, সেটা ইন্দ্র বুঝতে পেরেছিল। কিছু বলেনি, চুপ করে গেছিলো। এত প্রতিশ্রুতি , এত ভালো কথা সব যে মিথ্যে বুঝেছিল। একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে ঘেন্না জন্মেছে জীবনের প্রতি, সেই বছরটার প্রতি, সেই বছরের পুজো ও বসন্ত কেবিনের প্রতি। কিছুদিন বাদে জানতে পেরেছিল রিলিনা ওর জিমের ইন্সট্রাক্টর সম্রাটের সঙ্গে সম্পর্কে গেছে। অনেকদিন ধরেই ডেট করেছিল, কিন্তু ইন্দ্র কিছুই জানতোনা। এগুলো শোনার পর জীবনের প্রতি ইন্দ্রর ঘেন্না জন্মায়। মানুষকে বিশ্বাস করা বন্ধ করে দেয়। নিজের উপর বিশ্বাস টা উবে গেছিল। সেইসময় ওকে সাহস যুগিয়েছিল ওর পাড়ার পুরনো বান্ধবী ঐশি। পরে ধীরে ধীরে ঐশির সাথে বন্ধুত্ব ও প্রেম, মেয়েটা ওকে অনেক পালটে দিয়েছে, হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। তাও মাঝে মাঝে পুরনো কথা ভাবলে ইন্দ্র বড্ডো অজানা আতঙ্কে ভোগে। আজ যেমন বসন্ত কেবিন শুনেই মনের মধ্যে চিন্তা এলো ওখানে কত সুন্দর স্মৃতি ছিল, ওখানে রিলিনার সাথে খেয়েছিলাম, আর তারপর পুরনো যন্ত্রণা গুলোও মনে পড়ে গেছিলো।
(৩)
"এসব আগে বলনি কেন? তুমি পাগল আছো", বসন্ত কেবিনে বসে বিরিয়ানি খেতে খেতে বলল ঐশি।
"আরে ভাবলাম এসব বলে কি হবে" নির্লিপ্ত জবাব ইন্দ্রের।
"উফফ", ঝাঁঝিয়ে উঠল ঐশি,
"শোনো , গত সম্পর্ক গত জন্মের মতো, ওটা মনে করে বসে থেকো না, এগিয়ে চলো, আমি আছি না? আর কাউকে দরকার? ওই স্মৃতি গুলো বিসর্জন দাও, আমরা একসাথে খুব ভালো করে বাঁচবো, দুজন দুজনের জন্যে, খুশি?"
খাওয়ার পর দুজনে হাত ধরে বেরিয়ে গেলো হাতিবাগান এর উদ্দেশ্যে, ইন্দ্রর সেই পুরনো "অপয়া" ( ?) জায়গাটা আজ সম্ভবত সবথেকে পয়া, আলো ঝলমলে, আনন্দে পরিপূর্ণ, ,আবার এখানে আসতে হবে, আসতেই হবে।