SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Crime

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Crime

এও পেরেম...

এও পেরেম...

4 mins
203



(যারা মোবাইল ফোনে দুষ্টুমি করেন, প্লীজ রাগ করবেন না।)


সোনালির সঙ্গে সন্তুর বিয়েটা দিয়েই দিলো বাড়ি থেকে, ওর অমতেই। মেয়েটা ভালো, ওর বাবার বেস্টফ্রেণ্ডের একমাত্র কন্যা, আবার আইটি প্রফেশনালও! সন্তুও সরকারী চাকরি করে, তবে এমন কিছু হাই ফাই জব প্রোফাইল নয় - কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট। 


কিন্তু সন্তুর গার্লফ্রেণ্ড আছে অনেকগুলো। বিয়ের পর, কিভাবে তাদের সাথে রীলেশন মেনটেন করবে সে - এই দ্বন্দ্বেই ও এখন বিয়ে করতে চাইছিলো না, তাও আবার অ্যারেঞ্জ্ড ম্যারেজ! আর রিয়া জানতে পারলে, তার যে কি হাল করবে কে জানে? খুব চিন্তায় আছে সে!


সোনালিও কোন কচি খুকী নয় যদিও। যথেষ্ট স্মার্ট আর সুন্দরী সে - চাইলে, বয়ফ্রেণ্ড তার একাধিক হতেই পারতো, কিন্তু সে ওয়ান-ম্যান গার্ল। তার প্রেমিক পীযূষের প্রতি সে সবসময়ই লয়্যাল থেকেছে। 


বাড়ি থেকে স্থির করা এই বিয়েতে তারও মত যে ছিল না, সে তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই তার প্রেমিক পীযুষের জন্যই, 'বাবার দেওয়া কথার সম্মান রাখতে' এই বিয়েতে রাজী হয় সে। 


দুটো ভিন্ন নীতির, ভিন্ন জগৎ থেকে আসা মানুষ, হঠাৎ একসাথে সংসার করবো বললে কি আর অত সহজে তা' হয়? হলো না তাদেরও, বাড়ির চাপে বিয়ে তো করলো, কিন্তু না পীযূষের অস্তিত্ব ভুলতে পারলো সোনালি, না রিয়ার ক্রোধের ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো সন্তু।


এখন দুজনের যত রাগ দুজনেই একে অপরের ওপর প্রকাশ করতে শুরু করলো - কি দরকার ছিলো রাজী হবার এই বিয়েতে? তাকে বিয়ে না করলেই কি অন্যের চলছিলো না? দুনিয়ায় কি ছেলে/মেয়ে এতই কম পড়েছে - আর কেউ তার জুটলো না? 


যা হয় আর কি, এরপর ছোট খাটো বিষয় নিয়েও তাদের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকতো। ক্রমে ক্রমে, একদিন একে অপরের অন্য কারোর প্রতি অনুরক্ত থাকার খবরও জেনে যায় দুজনেই। আর সেটা নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি তো সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।


মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দু'জন দু'দিকে গিয়ে শুয়ে পড়ে - একজন খাটে, অন্যজন সোফায়! সেই বিনিদ্র রাতে হঠাৎ ফোন করে সোনালি পীযূষকে, কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে তাকে। বিয়ের পরেও রিয়ার সঙ্গে সন্তুর সম্পর্কের কথা, এমনকি তার যে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছে এখন, এমনটাও জানায় তাকে!


এই সুযোগের অপেক্ষাতেই যেন ছিলো সন্তু। সোনালি ফোনটা কাটতেই, সোফায় তাকে চেপে ধরে, মোবাইল ধরে রাখা তার ঐ হাতের কব্জির শিরাটাই কেটে দেয় ব্লেড চালিয়ে! গলগল করে রক্তের স্রোত বইতে থাকে হাত থেকে। ছটফট করেও একবিন্দু নড়তে পারে না সোনালি - ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে! 


সন্তু ওখান থেকে উঠে, ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায় নদীর ধারে। সারারাত সেখানে বসে কাটিয়ে দেয়। সামনে প্রহরারত পুলিশের একজন এসে একবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। সে জানায় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে, বাড়ি থেকে চলে আসার কথা - এমনকি, সুইসাইড করতে চাওয়ার নামে তাকে থ্রেট দেওয়ায়, স্ত্রীর বিরুদ্ধে ডায়রীও করে সে থানায়!


কোর্টে কাজ করার সুবাদে, পুলিশের অনেকের সাথেই তার ভারি দোস্তি ছিলো আগে থেকেই। তাই, সোনালির 'আত্মহত্যা'র দায় নিজের গা থেকে ধুয়ে ফেলতে, খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি সন্তুকে! সে এখন আবার কুমারত্ব ফিরে পেলো যেন। রিয়া, রিধি, টিনা, মিনা-দের নিয়ে আবার মজে উঠলো আগের মত! 


এইরকমই, একদিন লেট নাইট কলিং চ্যাটে ব্যস্ত সন্তু - তার নতুন গার্লফ্রেণ্ড গোল্ডির সাথে। এই মেয়েটার সাথে তার ফেসবুকে আলাপ, বাঙালী কিন্তু কি অদ্ভুত নাম! ওর সাথে এই ক'দিনেই খুব ক্লোজ হয়ে উঠেছে সে - ওর সবকিছুই কি করে যেন খুব সহজেই বুঝে যায় মেয়েটা! এমনকি ওর যে আরও গার্লফ্রেণ্ড আছে সেটাও জানে!


ক্রমে তাদের রীলেশনটা এত ক্লোজ হয়ে ওঠে যে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই দিনই ঐ লেট নাইট কলে, হঠাৎ গোল্ডি বলে - আমায় ধোঁকা দেবে না তো তুমি? মিথ্যা কোন অজুহাতে, ছেড়ে চলে যাবে না তো আমায়? আমি কিন্তু তাহলে মরেই যাবো... 


সন্তু - না গো, কথা দিচ্ছি - কোনোদিন ছেড়ে যাবো না তোমায়। আর সেই রকম দিন কখনও আসার হলে, আগে আমিই মরে যাবো। তুমি শুধু আমার, আর আমি শুধুই তোমার।


গোল্ডি - সত্যি?


সন্তু - হ্যাঁ, এই তোমার দিব্যি বলছি।


গোল্ডি - আচ্ছা, একটা কথা বলো তো - আমার নামটা কখনও বাংলায় ভেবে দেখেছো? আরে, আরে, ঐ দেখো - তোমার হাতের মোবাইলটার নিচে ওটা কি? 


মোবাইলের ভয়েস কলিং-এও তাকে যেন সে দেখতে পাচ্ছে, এমনভাবে মেয়েটা কথাগুলো বলায় হেসে ফেলে সন্তু। তবুও, তার কথা মত ডানহাতে ধরা মোবাইলের নিচেটা ছুঁতেই, দেখে - গলগল করে রক্তের স্রোত নেমে আসছে তার ঐ হাতের কব্জি বেয়ে! মোবাইলটাও যেন আটকে বসে গেছে তার হাতের মুঠোয় - সে চাইলেও আলগা হচ্ছে না তার মুঠি! এমমকি কান থেকে সরাতেও পারছে না সে মোবাইলটাকে!


বাম হাত দিয়ে রক্তক্ষরণের জায়গাটা চেপে ধরার চেষ্টা করে সন্তু, পারে না! সোফা থেকে উঠে আসার চেষ্টা করে, কিন্তু হঠাৎই যেন প্রচণ্ড ভারী হয়ে আসা নিজের শরীরটাকে সে ওঠাতেই পারে না! সে চিৎকার করে উঠতে যেতেই, যেন এক অদৃশ্য হাত এসে মুখটা চেপে ধরে তার!


জোড় করে তার কানে ধরে রাখা মোবাইলে সে এবার শুনতে পায়, ওপার থেকে গোল্ডি বলছে - কি গো চিনতে পারলে না আমায়? আমি গোল্ডি, মানে বাংলায় সোনালি গো সোনালি, শুধুই তোমার সোনালি, হি হি হি...


মোবাইলের আওয়াজটা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে, আস্তে আস্তে চেতনা হারাতে হারাতে সন্তু ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama