একটি অঙ্গীকার
একটি অঙ্গীকার


শেষে হলামই আলোর মিস্তিরি; সেই ছোটবেলা থেকে আলো বানাবার বাসনা। ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো, অন্ধকারে কাউকে থাকতে হবে না।
আজকাল ডাক আসে এবাড়ী ওবাড়ী থেকে। বাল্ব, টিউব, কলিং বেল আর এখন তো চীন থেকে এসেছে এল ই ডি। এর ওপরে কত যন্ত্রপাতি। ইস্তিরি, কেটলি, জলের পাম্প শেষ করা যায় না গুণে গুণে। আবার প্রতিটার কত রকম মডেল। কাজ করি আনন্দ পেতে পেতে, এটা আমার উপরি, আমার একেবারে আপনার।
বয়স হয়নি বেশী, তবু সবাই বললো বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে। আমার রোজগারটা সরকারি অফিসের আর্দালির থেকেও বেশি আর এর গ্যারান্টি কিছু কম নয়। বাড়ী তৈরি হচ্ছে চারদিকে, পুরোনো বাড়িগুলোর লাইন নতুন হচ্ছে, তার ওপর পুজোর হিড়িক কি কম? ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রির এখন অনেক বাজার। তাই সকলের কাছে পাত্র হিসেবে আমি বেশ লোভনীয়।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রথম পাত্রী দেখতে গেলাম। দেখেই কেমন ভালো লাগলো। মাথা নীচু করে বসে আছে একটা গোলাপি বাল্বের মতো। সুইচটা দিলেই ঝলমলে হয়ে উঠবে। আমি এমনিতেই কম কথা বলি; সেদিন তো মুখে কোনো ভাষাই নেই। আমার সঙ্গে যাঁরা গেছিলেন তাঁরা কেউই প্রফেশনাল পাত্রী -বিচারক নন। সেই জন্যই বোধহয় সবাই আনন্দ করছিলো। পাত্রী রান্না জানে কি না, সেলাইতে ঊষার ক্লাস করেছে কি না, এই সব প্রয়োজনীয় তথ্য কেউ যোগাড় করলই না। তৃপ্তি করে জলখাবার খেলো দুই বাড়ির লোকেরা। কাকু খাব
ার pre-condition রাখলো পাত্রীকে গান গাইতে হবে খাবার সময়ে background তৈরির জন্যে। দুদলের হুল্লোড়ে পাত্রীর আপত্তি বানের জলে ভেসে গেল।
এবার আমাদের অবাক হবার পালা - এত ভালো গান গায় কেউ ভাবেই নি। নিজের অজান্তে এক দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে থাকলাম গায়িকার মুখের দিকে। মনে হলো আর কেউ নেই আমরা দুজন ছাড়া। গানের সুরের মধ্যেই আমাদের শুভদৃষ্টি।
আমাদের প্রোগ্রাম ছিল আরো এক পাত্রী দেখা - আপত্তি করলাম আমিই। কথাটা ছড়াতে একটুও দেরী হলো না। জানুয়ারীর শেষ দিকে বিয়ের দিন ঠিক হলো।
এলো নতুন বছর। ভাই আর বন্ধুরা ধরলো হবু কণেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠাতে হবে; একটা মাঝারি সাইজের ফুলের তোড়া, এক বাক্স সন্দেশ আর একটা ছাপানো কার্ড পাঠালাম ছোট ভাইয়ের হাতে।
ফিরলো ভাই, সবাই ঘিরে নানা প্রশ্ন। ভীড়টা কমলে চুপি চুপি একটা ছোট খাম আমাকে দিলো। প্রশ্নের দরকার ছিলোনা কে পাঠিয়েছে।
খামের মধ্যে ছোট্ট দুটো গোলাপের কুঁড়ি, লাল -হলুদ মেশানো; সঙ্গে হাতে লেখা একটা চিরকুট।
কতদিন চলে গেছে। এখন আমি একলা।
কুঁড়ি দুটো অনেক আগেই শুখিয়ে ঝরে গেছে, চিরকুটটা হলদে হয়ে গেছে।
চোখ দুটো বন্ধ করলেই দেখতে পাই মনের মধ্যে রূপোর পাতায় জ্বল জ্বল করছে চিরকুটের লেখা :
"তোমার আলো আর আমার গানে সবাইকে আনন্দে রাখবো। ".