এক পশলা বৃষ্টি
এক পশলা বৃষ্টি
আজকের বৃষ্টিটা অনেক পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। আজ এতগুলো বছর পরে শ্রেয়ার কথাই বা এত কেন মনে পড়ছে কে জানে। ওর বলা একটা কথা আমি আজও ভুলি নি।
"কীরে তোর ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে? আমাদের এখানে তো খুব বৃষ্টি হচ্ছে।
হ্যাঁ রে। আকাশ কাঁদলে সবাইকে ভিজতে হয়।"
-কী গো, কী ভাবছ?
-কিছু না। পুরোনো একটা কথা মনে পড়ে গেল আজকের বৃষ্টি দেখে।
-কী কথা গো। আমাকেও বলো।
-আচ্ছা যদি তুমি কখনো আমার থেকে দূরে থাকো আর তখন যদি বৃষ্টি হয় এই আজকের মতো, আর আমি যদি তোমাকে প্রশ্ন করি যে তোমার ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে? তাহলে তুমি কী উত্তর দেবে।
-কী আবার বলব, হ্যাঁ বলব। না তো আর বলব না। কী সব আবোল তাবোল প্রশ্ন করছ বলো তো। অনেক বেলা হলো, খাবে চলো। আমার খুব খিদে পেয়েছে।
-তোর মতো করে কেউ বলে না, কেউ বলতেও পারবে না কোনোদিন। হুম...ম, চলো।
-শোনো না, একটা কথা জিজ্ঞেস করব তোমায়?
-কী জিজ্ঞেস করবে করো।
-তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?
-আজ হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছ। আগে তো কখনো করো নি।
-এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না। বলোই না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। আজ এই সুন্দর মূহুর্তে আমার সাথে একটু মনের কথা বলোই না।
-আমি কাউকে সত্যি ভালোবেসেছি কিনা জানি না তবে কেউ একজন ছিল যে আমাকে সত্যি সত্যিই খুব ভালোবাসত। আমিই কোনোদিন তার ভালোবাসা বুঝতে পারি নি। সেও আমাকে একবার প্রশ্ন করেছিল যে আমি তাকে ভালোবাসি কিনা।
-তাই? তুমি তাকে কী বলেছিলে? বলো না গো, একটু শুনি।
-আমি তাকে একটাই কথা বলেছিলাম,
"যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে যদি আমি এতটা ভালোবাসতে পারি তাহলে যে আমাকে ভালোবাসে তাকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা বলে বোঝাতে পারব না।"
-তোমার ভালোবাসা সে বুঝে ছিল?
-নাহ, বোঝে নি। যদি বুঝত তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে যেত না।
-তোমার সাথে আর কোনোদিন দেখা হয়নি?
-নাহ, আর কোনোদিন দেখা হয়নি। কোনো কথা হয়নি। সারা জীবনের মতো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
-সে হয়তো আজ তোমার সাথে নেই কিন্তু তোমার মনে সে আজও আছে। আর আমার বিশ্বাস সেও তোমাকে আজও মনে রেখেছে। একদিকে ভালোই হয়েছে সে চলে গিয়েছিল।
-মানে?
-সে যদি চলে না যেত তুমি হয়তো কোনোদিন বুঝতেই পারতে না তুমি তাকে কতটা ভালোবাসো।
-আর একটা জিনিস ভালো হয়েছে। ও যদি চলে যেত তাহলে তোমার সাথে আমার কখনো দেখা হত না। তোমার আমার বিয়ে হত না। তুমি আমার বউ হতে না।
-ওরে বাবা রে। এত একটা নয় অনেকগুলো ভালো হয়েছে। হা...হা...হা...
-তাই তো।
-তুমি বসো, আমি তোমার জন্য কফি নিয়ে আসছি।
আজ অনেক দিন বাদে তোর কথা মনে পড়ল। জানি না তুই কেমন আছিস, কোথায় আছিস। যেখানেই থাকিস খুব ভালো থাকিস। শুধু একটাই আপশোস রয়ে গেল, তোকে কতটা ভালোবাসি সেটা নিজে তো বুঝলাম কিন্তু তোকে বোঝাতে পারলাম না।
-যে সামনে আছে তাকে বোঝাও।
হঠাৎ করে নম্রতার গলার আওয়াজ পেয়ে সূর্য চমকে ওঠে। থতমত খেয়ে বলে -কিছু বললে?
-কিছু না। তোমার কফিটা নাও।
-যেটা বলতে চাও সেটা পরিস্কার করে না বললেও আমি কিন্তু শুনতে পেয়েছি। কফির কাপটা টেবিলের ওপর রেখে নম্রতাকে কাছে টেনে নিয়ে সূর্য বলল- বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এতগুলো মাস কেটে গেছে, আজ পযর্ন্ত তোমাকে জিজ্ঞেস করি নি। আজ জিজ্ঞেস করছি -নম্রতা আমাকে ভালোবাসো?
-খুব ভালোবাসি তোমাকে, নিজের থেকেও অনেক বেশী ভালোবাসি।
-আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু কতটা ভালোবাসি কোনোদিন জিজ্ঞেস করো না। আমি বোঝাতে পারব না।
-আমি বুঝতেও চাই না। তুমি সব সময় আমার পাশে থাকলেই হবে।
আজ আবার নতুন করে ভালোবাসলাম কাউকে। এই এক পশলা বৃষ্টি আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী থাকল। তোমাকে কোথাও হারিয়ে যেতে দেব না আমি নম্রতা। আজ বুঝলাম ভালোবাসা শুধু বিয়ের আগে নয় বিয়ের পরেও হয়।
(সমাপ্ত)