দ্যা হাউস অফ ডেভিল স্প্রিট
দ্যা হাউস অফ ডেভিল স্প্রিট
অভিরূপ ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় একদমই ভালো ছিলো না | অভিরূপ পড়াশোনার থেকে লিখতে বেশি ভালবাসত | বাড়ি থেকে স্কুলে যাবার নাম করে ও লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ত | ও যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত তখন ওর প্রথম লেখা ছোটগল্প স্থানীয় একটি খবরের কাগজে বেরিয়েছিল | তারপর অভিরূপ যখন কলেজে পড়ত তখন ওর লেখা একটি রহস্য উপন্যাস স্থানীয় সংবাদপত্রের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল | অভিরূপের এই লেখাটাই ওর ভাগ্য বদলে দিয়েছিলো | ধীরে ধীরে ওর লেখা সাধারণ মানুষ পছন্দ করতে শুরু করলো | আর ... এই ভাবেই অভিরুপের সাহিত্য জগতে পথ চলা শুরু হলো | এখন অভিরূপ একজন বিখ্যাত লেখক | ওর লেখা গল্প পড়ার জন্য জনতা অধীর আগ্রহে বসে থাকে | সোশ্যাল মিডিয়াতে ওর ফলোয়ারের সংখ্যাও বেশ ভালো |
অভিরূপের আসন্ন একটি গল্প ২৫ ডিসেম্বর এ প্রকাশিত হবে | ওর হাতে মাত্র দু মাস সময় | কিন্তু এখনো পর্যন্ত গল্প সম্পর্কিত কোন ধারণানাই ওর মাথায় আসছে না | এইরকম ঘটনা ওর সাথে আগে কখনো ঘটেনি | তাই অভিরূপ একটু মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে | অভিরূপ অনেকবার লেখার চেস্টা করেছে কিন্তু পারেনি | তাই বাধ্য হয়েই অভিরূপ ম্যাগাজিনের সম্পাদক কে ফোন করলো |
হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে অতিশ হাজার বলল , তোমার লেখা কতদূর ? তোমার লেখার অপেক্ষায় আছি।
অভিরূপ একটু বিমূর্ষভাবেই জবাব দিল , এইবার আপনার ম্যাগাজিন আমার গল্প ছাড়াই প্রকাশিত হোক ।
অতিশ হাজরা বললো , কি বলছ অভিরূপ ? এই রকম বলছ কেন ? কি হয়েছে ?
অভিরূপ বলল , এইবার গল্প সম্পর্কে আমার মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না | হঠাৎ করে এরকম আইডিয়া ব্লক সমস্যাটাকে নিয়ে আমি প্রচন্ড মানসিক অস্থিরতায় ভুগছি |
অতিশ হাজরা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিলো , তোমার সমস্যাটা আমি বুঝতে পেরেছি | আমার কাছে তোমার সমস্যার একটা সমাধান আছে।
অভিরূপ বললো , কি স্যার ?
অতিশ হাজরা বলল , শহরের এই কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে একটি নির্জন ও শান্ত জায়গায় গিয়ে লেখালেখি শুরু কর |
অভিরূপ অতিশ হাজরা কে জিজ্ঞাসা করলো , এই জন কোলাহল পূর্ণ শহুরে জায়গায় এইরকম শান্ত জায়গা পাবো কোথায় ?
অতিশ হাজরা বলল , কলকাতা শহর থেকে মাত্র দুশো কিলোমিটার দূরে আমাদের কোম্পানির একটি গেস্ট হাউস আছে | এই সবে মাত্র সাত দিন হয়ছে আমি ওই গেস্ট হাউস টা কিনেছি | ওটা একটা স্পেশাল গেস্ট হাউস যেখানে আমরা সচরাচর কাউকে থাকতে দিই না । তুমি আমার মাগাজিন এর সাথে প্রথম থেকে যুক্ত তাই তোমাকে অফারটা দিলাম | তুমি যদি চাও তাহলে ওই গেস্ট হাউস এ থাকতে পারো | ওখানে তোমাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না | লেখালেখির জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ |
অভিরূপ এক নিঃশ্বাসে অফারটা লুফে নিল তারপর বললো , নিশ্চয়ই..... স্যার |
অতিশ হাজরা বলল , ওকে ........ কাল সকালে আমি তোমাকে গেস্ট হাউসের চাবিটা তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো |
অভিরূপ বললো , ঠিক আছে স্যার |
পরের দিন সকালে সঠিক সময় অতিশ হাজরার লোক এসে গেস্ট হাউসের চাবিটা অভিরূপ কে দিয়ে গেল | তারপর আর কি অভিরূপ নিজের সমস্ত যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ওর গন্তব্যস্থলে |
প্রায় তখন দুপুর দেড়টা বাজে। অভিরূপ রাস্তার পাশে একটা হোটেলের কাছে নামলো। গাড়িটাকে রাস্তার এক প্রান্তে রাখল | তারপর হোটেলে এসে খাবারের অর্ডার দিল এবং রাত্রের জন্য কিছু খাবার প্যাক করার নির্দেশ দিল | হোটেলের মালিক অভিরুপকে একটু বসতে বলল |
অভিরূপ হোটেলের একটা নিরিবিলি ও ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে বসলো | তারপর অভিরূপ পকেটে রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বার করে ধরালো | সিগারেট খেতে খেতে অভিরুপ দেখলো দুরের একটি গাছ তলায় একজন সাধু বসে আছে | সাধুটা একভাবে অভিরুপের দিকেই তাকিয়ে আছে | প্রথমে অভিরূপের মনে হলো সে হয়তো এখানে নতুন এসেছে তাই হয়তো তাকে দেখছে | কিন্তু না সাধুটার অনেকক্ষণ ধরে এই একভাবে তাকিয়ে থাকা এবার অভিরূপের একেবারেই ভালো লাগছে না | মনের মধ্যে বারবার এক প্রকারের চাপা বিরক্তি সৃষ্টি হচ্ছে | অভিরূপ আর থাকতে পারলো না এবং এগিয়ে গিয়ে
অভিরূপ সাধুটাকে একটু ধমক দিয়েই বলল , কি মশাই আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছেন | আপনি আগে কখনো নতুন লোক দেখেননি | আপনি এখানে লোক দেখতে এসেছেন নাকি ধ্যান করতে এসেছেন |
সাধুটা অভিরুপের কথা শুনে একটু না রেগে বলল , তুমি সাবধানে থাকবে | তোমার মাথার উপর অনেক বড় বিপদ বিদ্যমান | ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক |
অভিরূপ বলল , মানে ....... আপনি কি বলতে চাইছেন ? আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না |
সাধুটা কিছু বলতে যাবে এমন সময় হোটেলের একজন কর্মচারী অভিরূপকে ডাকল | অভিরূপ পিছন ফিরে জবাব দিল , যাচ্ছি ......
তারপর অভিরূপ যখন সামনের দিকে তাকালো তখন সে একেবারে চমকে উঠলো | সেই সাধুটা এখন আর সেখানে নেই | যেন মুহূর্তের মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে গেল । অভিরূপ এদিক ওদিক সাধুটাকে খুঁজলো কিন্তু সাধুটাকে কোথাও দেখতে পেল না |
অভিরূপ মনে মনে বলল , একেবারে সাধুটা কোথায় চলে গেল আর ও কি বলছিলো ! কি যে বললো কিছু বুঝতে পারলাম না |
খাবারের বিল মিটিয়ে দিয়ে অভিরূপ ওই হোটেলের একজন লোককে জিজ্ঞাসা করল , আচ্ছা ওই যে সাধুটা ওখানে বসে ছিল সে কোথায় গেল ? আপনি কি তাকে দেখেছেন ?
সেই লোকটা বলল , কে সাধু ? আপনি কার কথা বলছেন ? আর এখানে সাধু আসবে কোথা থেকে | আপনার বোধ হয় কোন ভুল হচ্ছে | আমি কোন সাধু দেখিনি |
অভিরূপ বলল , আরে ........ ওই গাছটার তলায় তো সাধুটা বসেছিল | আমার সাথে কথা বললো | আর আপনি বলছেন দেখেননি |
সেই লোকটা আবার একই জবাব দিল | এই কথা শুনে অভিরূপ বেশ খানিকটা ভয় পেলো | তাহলে কি আমি ভুল দেখলাম | অভিরূপ কিছুই বুঝতে পারছিল না | এমন সময় অভিরুপের ফোনটা বেজে উঠলো | ফোনটা হাতে নিয়ে অভিরূপ দেখলো অতিশ হাজরা ফোন করেছে |
অভিরূপ হ্যালো বলতেই অতিশ হাজরা অভিরুপকে জিজ্ঞাসা করলো , তুমি গেস্ট হাউসে পৌঁছে গেছো ?
অভিরূপ বলল , না স্যার রাস্তা তে আছি আর কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাব।
অতিশ হাজরা বলল , ঠিক আছে ...... সন্ধ্যের আগে গেস্ট হাউসে পৌঁছে যাবে দেরি করবে না | আরেকটা কথা আমি তোমার জন্য পুরো গেস্ট হাউস টা কে লোক দিয়ে পরিষ্কার করে রেখেছি ওখানে তোমার কোন অসুবিধা হবে না |
এরপর অভিরূপ ধন্যবাদের বন্যা বইয়ে ফোনটা রেখে দিল |
তখন প্রায় বিকাল পাঁচটা বাজে | অভিরূপ গেস্ট হাউসে এসে পৌঁছেছে | সূর্য তখন পশ্চিম দিকে অস্ত যাবার তোড়জোড় করছে | গেস্ট হাউসটা জন বসতি থেকে অনেক দুরে | গেস্ট হাউসে এর পরিবেশ টা অভিরুপের খুবই পছন্দ হলো | চারিদিক নিঃস্তব্ধ এবং শান্তি | এইরকম পরিবেশই অভিরূপ এতদিন ধরে চাইছিলো | অভিরুপের মনে হল যেন গেস্ট হাউস টা তাকে ইশারা করে ডাকছে | অভিরূপ আর দেরি না করে পকেট থেকে গেস্ট হাউসের চাবিটা বার করে তালাটা খুলে ঘরের ভেতর ঢুকলো | ঘরের সব লাইট জ্বালিয়ে দিল |
ঘর গুলো বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝক-ঝক তক-তক করছে | গেস্ট হাউস এর ঘর গুলো বেশ বড়-বড় | অভিরুপের প্রচন্ড ক্লান্তি লাগছিল | গেস্ট হাউসের একটা ঘর বেছে নিয়ে সেখানে ফ্রেশ হয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিল |
তিন
অফিসের সমস্ত কাজ শেষ করে যখন অতিশ হাজরা অফিস টাকে বন্ধ করার জন্য কী-ডেস্ক থেকে চাবিটা আনতে গেল তখন সেখানকার টেবিলে রাখা একটা সাদা খামে মোড়া চিঠি দেখতে পেলো | অতিশ হাজরা চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলো | খামের উপরে অতিশ হাজরা নাম লেখা আছে |
অতিশ হাজরা মনে মনে বললো , আমার জন্য চিঠি ! ....... কে পাঠিয়েছে ?
চিঠিটার প্রথম ভাজ খুলতেই তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে সাবধান .......... চিঠিটা পড়বেন না | অতিশ হাজরা প্রথমে মনে করলো হয়তো তাকে কেউ ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছে | অতিশ হাজরা সাবধানতা বাণী উপেক্ষা করে চিঠিটা দ্বিতীয় ভাজটা খুলে ফেলল | চিঠিটার মধ্যে একটি কবিতা লেখা ছিলো |
অতিশ হাজরা মনে মনে একটু হেসে বললো , এই সাধারণ একটা কবিতার জন্য সাবধানতা বাণী !
অতিশ হাজরা জোরে জোরে কবিতাটি পড়তে লাগলো | কবিতাটি পড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই কেমন যেন একটা অজানা ভয় অতিশ হাজরার মনে জমাট বাঁধতে লাগলো | অতিশ হাজরার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠলো | এবার ধীরে ধীরে অতিশ হাজরার সারা শরীর আরষ্ট হতে শুরু করলো | রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম পুঁছতে-পুঁছতে যখন অফিস থেকে বাইরে বেরোতে যাবে এমন সময় অফিসের দরজা বন্ধ হয়ে গেল এবং অফিস এর সমস্ত লাইটগুলো নিভতে-জ্বলতে শুরু করল। এবার অতিশ হাজার একটু ভয় পেতে শুরু করলো | আলো গুলো জ্বলা নেভা করতে করতে একসময় সব আলো নিভে গেল | পুরো অফিসটা একেবারে গাড় অন্ধকারে ঢেকে গেল এবং সেই অন্ধকার এর মধ্যে থেকে একটা ভয়ংকর হাড় হিম করা দানবীয় হাসি শুনতে পাওয়া গেল | অতিশ হাজার এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল |
অতিশ হাজার ভয়ার্ত কন্ঠে বললো , কে ...... ?
কোনো উত্তর নেই | সব চুপচাপ |
অতিশ হাজার কাঁপা-কাঁপা হাতে পকেট থেকে ফোনটা বার করে টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করল কিন্তু ফোনের চার্জ না থাকার কারণে টর্চ জ্বললো না | নিস্তব্ধ ঘরে অতিশ হাজরার হৃদপিন্ডের ধুকপুকুনি শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাওয়া গেল না | তারপর যা ঘটলো তা অত্যন্ত ভয়ংকর | সেই অন্ধকারের মধ্যে অতিশ হাজার একটি লাল গনগনে চোখ দেখতে পেলো | মনে হচ্ছে যেন সেই চোখে দাউ-দাউ করে আগুন জলছে | অতিশ হাজারর মনে হলো যেন সেই চোখ দুটো তাকেই দেখছে | তারপর অফিসের সমস্ত আলো জ্বলে উঠলো এবং অতিশ হাজার যা দেখলো তাতে তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেল | সামনে আধা মানুষ এবং আধা জন্তুর সমন্বয় এ তৈরী একটা ভয়ানক দানব দাড়িয়ে আছে | দানবটার চোখে একটি হিংস্র চাওনি |
সেই দানবটার হাত থেকে বাঁচার জন্য অতিশ হাজরা পালানোর চেষ্টা করল | কিন্তু পারল না | সেই দানবটা তার লক লকে সরু জিভ দিয়ে অতিশ হাজারর পুরো শরীরটাকে জড়িয়ে ধরল | তারপর অতিশ হাজারর শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে দিয়ে সজোরে মেঝেতে আছার মারলো | অতিশ হাজার একটা প্রচন্ড আর্তনাদ করে উঠল | অতিশ হাজার কপাল ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করলো | তারপর আবার অতিশ হাজার শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে অফিসের দেওয়ালে প্রচন্ড জোরে আছাড় মারতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত আরও একবার অতিশ হাজারর শরীরটাকে সজোরে মেঝেতে আছার মারলো | অতিশ হাজারর মাথা ফেটে ঘিলু গুলো মেঝের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল | অতিশ হাজারর শরীর থেকে রক্তের প্রবাহমান ধারা বইতে শুরু করল | কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ঘরটা রক্তের স্রোতে ভেসে যেতে শুরু করলো |
বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যে অভিরুপের চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল অভিরূপের মনে নেই | প্রায় রাত ন টার সময় অভিরূপের যখন ঘুম ভাঙলো | অভিরূপ বাইরের আকাশের দিকে তাকালো আকাশে বেশ কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে | মনে হচ্ছে এক্ষুনি যেন বৃষ্টি হবে | অভিরূপ ঘরের সমস্ত জানলা বন্ধ দিল | রাত্রিরের খাবার খেয়ে অভিরূপ ল্যাপটপ চালিয়ে লেখালেখি শুরু করল | লিখতে লিখতে প্রায় অনেকটাই রাত হয়ে গেল | বাইরে তখন ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে | লেখার কিছুটা অংশ স্যাম্পল হিসাবে অতিশ হাজরা কে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিল | তারপর ল্যাপটপ বন্ধ করে অভিরূপ শুয়ে পড়ল |
পরের দিন সকালবেলায় নিউজ চ্যানেলে অতিশ হাজারার রহস্য মৃত্যুর খবর শুনে অভিরুপের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল | অভিরূপ নিজের কান ও চোখকে যেন কিছুতেই বিশ্বাসই করতে পারল না । পুলিশ এই মৃত্যুটাকে খুনের রূপ দিয়েছে | কিন্তু পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে কোনো প্রমান না থাকায় পুলিশ কেস টাকে ক্লোজ করে দিয়ছে | খবরটা শুনে অভিরূপের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল |
অভিরূপ মনে মনে বললো , এই তো কাল দুপুরেই আমার সাথে কথা হল আর রাত্রিবেলায় এরকম ঘটনা ঘটলো |
এইসব কথাই ভাবছিল এমন সময় গেস্ট হাউসের কলিং বেল টা বেজে উঠলো | অভিরূপ গিয়ে দরজাটা খুলল | দরজার ওপাশে একজন বছর ৩৫ এর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে |
অভিরূপ মেয়েটা কে জিজ্ঞাসা করল , আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না ? কে আপনি ?
মেয়েটা বলল , আমার নাম মায়া। আমাকে অতীশ বাবু পাঠিয়েছেন আপনার খেয়াল রাখার জন্য | যাতে আপনার কোনো অসুবিধা না হয় | আমি ওনার অফিসেই কাজ করি |
অভিরূপ বলল , আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি |
মেয়েটা বলল , আমি কালকেই জয়েন করেছি |
আমি বললাম , ও ........... ভেতরে আসুন |
অতিশ হাজরার ব্যবহারে অভিরূপ বেশ খুশি হলো | কিন্তু
তারপর অভিরূপ মনে মনে বলল , উনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে ওনাকে ধন্যবাদ জানাতাম | অভিরূপের মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল | সারাদিন এই ভাবেই চলল | দুপুরের খাওয়া সেরে অনুরূপ একটু বিশ্রাম নিল।
ঘুম ভাঙলো মায়ার কণ্ঠস্বরে |
মায়া বলল , স্যার বিকেল হয়ে গেছে | তারপর
মায়া জিজ্ঞাসা করল , আপনি চা খাবেন ?
অভিরূপ বলল , হ্যাঁ ।
খানিকক্ষণ পর মায়া গরম গরম চা নিয়ে এলো | চা খেয়ে অভিরূপ একটু বাইরে বেরোলো | বাইরে যাবার সময় সে মায়াকে বলে গেল আমি বাইরে যাচ্ছি ফিরতে একটু রাত হবে |
রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগল অভিরূপের | লোকটা অভিরূপকে একবার দেখেই চিনে ফেলল |
লোকটা বললো , আপনি তো বিখ্যাত লেখক অনুরূপ হালদার ? তাইতো .....?
অভিরূপ হাসিমুখে বলল , হ্যাঁ, আমি অভিরূপ হালদার |
লোকটা বলল , আমার নাম নীতিন ঘোষ | আমি এখানেই থাকি | আমি আপনার সমস্ত গল্প পড়েছি, আপনার গল্প আমার খুব ভালো লাগে।
অভিরূপ বলল , ধন্যবাদ | আমাকে এতটা ভালোবাসা দেবার জন্য |
নিতিন জিজ্ঞাসা করল , তা আপনি এখানে ?
অভিরূপ বলল , গল্প লেখার জন্য একটা নিরিবিলি ও শান্ত জায়গা খুঁজেছিলাম | এখানকার খবর পেলাম তাই এখানে চলে এলাম।
নিতিন জিজ্ঞাসা করল , আপনি এখানে কোথায় আছেন ?
অভিরূপ বলল , এই শহরের বাইরে যে গেস্ট হাউস আছে আমি ওখানেই থাকি ।
গেস্ট হাউসের কথা শুনতেই নিতিন ঘামতে শুরু করল | কেমন যেন একটা অজানা ভয়ে ওর মুখটা শুকিয়ে গেল |
রুমাল দিয়ে ঘাম পুঁছতে-পুঁছতে নিতিন বললো , ওই গেস্ট হাউস ছেড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্য কোথাও চলে যান | ওই গেস্ট হাউসটা কোনো সাধারণ মানুষের থাকার জন্য একেবারে উপযুক্ত নয় | ওটা একটা শয়তানের ঘর | এর আগে ওই বাড়িতে আপনার মতো যারা থাকতে এসেছিলো তাদের খোঁজ কোনো দিনও কেউ পায়নি |
অভিরূপ নিতিনের কথা শুনে একটু হেসে ফেলল |
তারপর বললো তুমি এইসব কি বলছ ? শয়তানের ঘর ........ ওই বাড়িতে যারা থাকতে আসে তাদের খোঁজ কোনো দিনও পাওয়া যায় না .... |
নিতিন বললো , না স্যার .... বিশ্বাস করুন , এটা কোনো মিথ্যা কথা নয় | পৃথিবীতে এমন কিছু জিনিস আছে যা আমার বা আপনার পক্ষে ধরা ছোওয়ার বাইরে | যার কোনো যুক্তি বা ব্যাখা দেওয়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয় |
ওই গেস্ট হাউস এর একটা ভয়ানক ইতিহাস আছে |
১৯৭৫ সালে একজন বাঙালি অধ্যাপক ওই গেস্ট হাউসটা বানিয়েছিলেন | উনি অধ্যাপকের পাশাপাশি একজন লেখক ছিলেন | উনি বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বই লিখতেন | তখনকার সময়ে ওনার লেখা বই সবাই খুব পছন্দ করতো |
একবার উনি ভারতের প্রাচীন তন্ত্রবিদ্যার উপর রিসার্চ করছিলেন | রিসার্চ করার জন্য উনি লাইব্রেরি থেকে একটি বই এনেছিলেন | কিন্তু সেই বইয়ের ভাষা ওনার বোধগম্য না হওয়ার কারণে উনি এখানকার একজন স্থানীয় মেয়েকে যে ওই ভাষা জানে তাকে সেই বইয়ের ভাষা অনুবাদ করার জন্য রেখেছিলেন |
একদিন বইটাকে উল্টে-পাল্টে দেখতে দেখতে অধ্যাপকের নজরে একটি ছয় লাইনের কবিতা চোখে পড়ল | ওই কবিতাটি অধ্যাপক এর দৃষ্টি এমন ভাবে আকর্ষণ করল যেন মনে হলো অধ্যাপককে কেউ সম্মোহন করেছে | অধ্যাপক মেয়েটাকে ততক্ষনাত ওই কবিতাটি অনুবাদ করার জন্য নির্দেশ দিলেন |
কবিতাটি পড়ার পরের দিন থেকেই অধ্যাপক অজানা রোগে আক্রান্ত হলেন | অধ্যাপক অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখান কিন্তু কোন ডাক্তারই রোগ ভালো করতে পারেনি । ধীরে ধীরে অধ্যাপক শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন | ওনার শরীর ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যায় | তারপর ছয়দিন পর অধ্যাপক মারা যান |
মারা যাবার আগে অধ্যাপক ওই মেয়েটা বলে যায় , ওটা কোনো সাধারণ কবিতা নয় | ওটা মৃত্যুর দূত কে জাগানোর মন্ত্র | ওই মন্ত্রটা যেই পরবে তার মৃত্যু অবধারিত | উনি আরও বলেন ওই বইটা আর ওই কাগজ টা যাতে ওই মন্ত্রটা অনুবাদ করে লেখা হয়ছে সেই কাগজ টা পুড়িয়ে দেবার জন্য বলেন |
ওই মেয়েটা অধ্যাপকের কোনো কথাই শোনেনি | তারপর থেকে শুরু হয় পৈশাচিক কান্ড | ওই মেয়েটা সেই অশুভ শক্তি সেই মৃত্যুর দূতকে জাগানোর জন্য গ্রামের অনেক ছোটো-ছোটো ছেলেকে বলি দেয় | এখানকার গ্রামের লোকেরা যখন ওই মেয়েটার পৈশাচিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারে তখন রাগে গ্রামের সমস্ত লোক মিলে মেয়েটাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে | কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো | সেই অশুভ শক্তি , সেই মৃত্যুর দূত তখন জেগে উঠছিলো |
তারপর ধীরে ধীরে গ্রামের লোকজন এক অজানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে শুরু করল | দেখতে দেখতে গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে গেল | এইসব দেখে এই গ্রামের জমিদার একজন তন্ত্রসিদ্ধ সাধুকে এই গ্রামে আমন্ত্রণ জানান | গ্রামের সীমানায় পা দিতেই সেই সাধু বুঝতে পারেন এই গ্রামের উপর এক অশুভ শক্তি বিরাজ করছে | সেই সাধু এই কথাটা জমিদারকে বলেন |
তারপর একদিন আমাবস্যার রাতে শুরু হয় প্রচন্ড যাজ্ঞ যজ্ঞ | সেই সাধুটা ওনার সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সেই অশুভ শক্তিকে নিজের বশীভূত করলেন এবং উনি জমিদারকে নির্দেশ দিলেন ওই কবিতাটি যেন কেউ না পড়ে | যদি কেউ পুনরায় কবিতাটি পড়ে তাহলে আবার মৃতের দূত জেগে উঠবে | উনি আরও বলেন সেই অশুভ শক্তি প্রচন্ড শক্তিশালী হওয়ায় আমি ওর প্রভাব থেকে শুধু এই গ্রামটাকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু ওই বাড়িটার উপর ওর প্রভাব চিরকালই থেকে যাবে | যদি কেউ কোনোভাবে ওই বাড়ির সঙ্গে যুক্ত হয় অথবা যদি কেউ ওই বাড়িতে থাকতে আসে তাহলে সে সাত দিনের মধ্যেই মারা যাবে। সাধুটা র কথামতো এই গ্রামের জমিদার সেই বইটা ও চিঠিটা কে পুড়িয়ে দেন | ওই গেস্ট হাউস টাকে চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেন | ওই গেস্ট হাউস এ যাবার রাস্তাও বন্ধ করে দেন এবং সমস্ত গ্রাম বাসীকে ওই গেস্ট হাউস এর আশেপাশে যেতে বারণ করেন এবং যারা তার এই নিয়ম উলঙ্ঘন করবে তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার হুকুম জারি করেন |
এই সব কথা গুলো শুনতে শুনতে অভিরূপ এর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল |
নিতিন আরও বলে চললো
তারপর খবর পাওয়া গেল সেই সাধুটা একটি অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন | লোকমুখে প্রচলিত যারা ওই গেস্ট হাউস এর সাথে জড়িত থাকে তাদেরকে এখনো ওই সাধুর আত্মা দেখা দেয় | তাদেরকে সাবধান করে ওই গেস্ট হাউস থেকে দূরে থাকার জন্য |
অভিরূপ বলল , আমি সাধুটার আত্মা কে আমি দেখেছি | এখানে যখন আসছিলাম তখন উনি আমাকে সাবধান করেছিলেন |
তখন নিতিন বলল , তাহলে তো আপনার ওই বাড়ি তে থাকা একদমই উচিত হবে না | আপনার ওই বাড়ি ছেড়ে এক্ষুনি অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত |
অভিরূপ বললো , তারপর কি হল বলো ?
তারপর অনেক লোকে ওই গেস্ট হাউসটা কিনেছিল , অনেকেই ওই গেস্ট হাউস এ থাকার জন্য এসেছিল | কিন্তু তারা সকলেই সাত দিনের মধ্যেই কোনো না কোনো ভাবে মারা যায় | তারপর এইসব ঘটনা ঘটার পর সবাই ওই গেস্ট হাউস টাকে ভুতুড়ে বলে আখ্যা দেয় |
সাম্প্রতিক অতিশ হাজরা নামে একজন ওই গেস্ট হাউসটা কেনেন |
অভিরূপ বলল, আমি ওনার ম্যাগাজিন এই লেখালেখি করি | উনি কাল রাতে ওনার অফিসেই রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন |
নিতিন বলল , উনি কিভাবে মারা গেছেন একটু বলতে পারবেন ?
অভিরূপ বলল , উনি ওনার অফিসেই রহস্যজনকভাবে মারা যান | পুলিশের অনুমান ওনাকে কেউ খুন করেছে | পুলিশের কাছে কোনো পর্যাপ্ত প্রমান না থাকায় পুলিশ এই কেস টাকে ক্লোস করে দিয়েছে |
নিতিন বলল , খুবই সাংঘাতিক !
নিতিন এর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে অভিরূপ বুঝতেই পারিনি | হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ন টা বাজে |
অভিরূপ নীতিন কে বলল , আজ আসি ..... অনেক দেরি হয়ে গেছে |
নিতিন বললো , ঠিক আছে স্যার.... আসুন |
যাওয়ার সময় নীতিন আবারও অভিরূপকে সতর্ক করে বলল , ওই বাড়ি ছেড়ে এক্ষুনি অন্যত্র কোথাও চলে যান। আপনার যদি কোন অসুবিধা না হয় তাহলে আজ রাত্রে আপনি আমার বাড়িতে থাকতে পারেন। এই কাছেই আমার বাড়ি |
অভিরূপ বললো , ঠিক আছে। আমি ম্যানেজ করে নেব | আজ রাতের ব্যাপার তো |
চারিদিক শুনশান | গেস্ট হাউস এ যাবার রাস্তাটা বেশ অন্ধকার | অভিরূপ একা ওই রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে | এমন সময় পিছন থেকে অভিরূপ কে ওর নাম ধরে কেউ যেন ডাকল | অভিরূপ পিছন ফিরে দেখল সেই স্বাদ ওটা ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে, অভিরূপ সাধুটাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে এমন সময়
সেই সাধুটা অভিরূপ কে বলল , আজকের রাতটা তোমার জন্য খুবই ভয়ংকর হতে চলেছে | সাবধানে থাকবে আর যখনই তুমি কোন বিপদে পড়বে তখনই এই শাঁখটা কে বাজাবে | সেই সাধুটা অভিরূপ কে একটা শাঁখ দিলো | তারপর সাধুটা হওয়ার মতো বাতাসে মিলিয়ে গেল |
অভিরূপ যখন গেস্ট হাউসে পৌঁছালো তখন গেস্ট হাউসটা পুরো গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা | অভিরূপের মাথার উপর দিয়ে কয়েকটি রাতচরা পাখি উড়ে গেল | আজকে অভিরূপ এর এই গেস্ট হাউস টাকে অন্যদিনের তুলনায় আলাদা রকম লাগছে | অভিরূপ ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে গেস্ট হাউসের সদর দরজা খুলে ভিতর ঢুকলো | ভিতরে ঢুকে
অভিরূপ মায়াকে ডাকল , মায়া ...... মায়া ...... মায়া ..... |
অভিরূপ মায়া কে বার তিনেক ডাকলো কিন্তু মায়ার কোনো সাড়া পেলো না | অভিরূপ গেস্ট হাউস এর আলোটা জ্বালাতে যাবে এমন সময়ে দোতলার ঘর থেকে একটা মন্ত্র পড়ার আওয়াজ শুনতে পেল। অভিরূপ সিঁড়ি দিয়ে দোতলার উঠে গেল | দোতলার একটা ঘরে অভিরূপ একটি লাল আলো দেখতে পেল | ওই ঘরের দরজাটা ভেজানো ছিল | দরজাটা খুলতেই অভিভাবক যা দেখল তাতে ওর হৃদস্পন্দন কয়েক মুহুর্তের জন্য যেন থেমে গেল | ঘরের মেঝেতে বেশ কয়েকটা পচাগলা লাশ পড়ে রয়েছে | লাশগুলোতে পোকা কিলবিল করছে | সে যে কি গা ঘিন-ঘিনে দৃশ্য বলে বোঝানো যাবে না | অভিরূপ এই সব দেখে হড়হড় করে বমি করে ফেলল |
তারপর অভিরূপ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে নিজের মনেই বলল , ঘরের মাঝখানে ওটা কি ঝুলছে |
কাছে যেতেই অভিরূপ চমকে উঠল এ তো .........মায়া | তবে ও এখন কোনো সাধারণ মানুষ নয়, ও এখন ভয়ানক পিশাচ এ পরিণত হয়েছে | মায়া লম্বা লম্বা পা দিয়ে ঘরের সিলিং এর সঙ্গে উল্টো হয়ে ঝুলছে | আর একটা লাশের শরীর থেকে পরম তৃপ্তিতে মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
হঠাৎ লাশগুলোকে দেখতে দেখতে একটা জায়গায় চোখ আটকে যায় অভিরূপের | একটা লাশ অভিরূপের খুবই চেনা | কাছে গিয়ে দেখতেই অভিরূপে হুঁশ উড়ে গেল | ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছিল না।
অভিরূপ কোনো রকমে তোতলাতে তোতলাতে বলল , অতিশ হাজরা | এতো অতিশ হাজারর লাশ |
তারপর অভিরূপের আর বুঝতে দেরি হলো না অতিশ হাজরার আসল খুনি কে |
অভিরূপ চিৎকার করে বলল , মায়া .... ইউ বাস্টার্ড ! ......... তোকে যদি আগে আমি চিনতে পারতাম !
এই বলে ঘরের মধ্যে থাকা একটা লাঠি নিয়ে মায়া কে অভিরূপ মারতে যাবে কিন্তু পারলো না | অভিরূপ ছিটকে মেঝেতে পড়ল মনে হল যেন কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে আগে যেতে বাধা দিলো | অভিরূপের এরকম অবস্থা দেখে মায়ার ঠোঁটে একটা হাড়হিম করা হাসি খেলে গেল |
তারপর মায়া হাসতে হাসতে বলল , এই বাড়ির সঙ্গে যারা যুক্ত হয়েছে আমি তাদের সবাইকে মেরে ফেলেছি | এবার তোমার পালা ........ |
এবার মায়া ধীরে ধীরে অভিরূপ এর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো | অভিরূপ কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ঘরের সদর দরজার দিকে গেল | কিন্তু ঘরের সদর দরজা কিছুতেই খুলতে পারলো না | অভিরূপ অনেক বার চেষ্টা করলো কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ হলো |
অভিরূপ হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরের একটা কোনে গিয়ে বসলো | তারপর অভিরুপের মনে পড়ে গেল সাধুটার দেওয়া সেই শাঁখটার কথা | অভিরূপ তৎক্ষণাৎ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে সেই শাঁখটাকে বার করে নিজের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে শাঁখটা বাজালো | তারপর যা ঘটলো তা বলে বোঝানো যাবে না | ঘরের মধ্যেকার নেগেটিভ ও পজেটিভ শক্তির মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হল আর সেই সংঘর্ষের ফলে ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল | দেয়াল এ ফাটল ধরতে শুরু করল | দেখতে দেখতে সেই ফাটল গুলো বিরাট আকার ধারণ করল | এবার ঘরের মাঝ বরাবর ফাটাল ধরতে শুরু করলো | অভিরূপ প্রানপনে গেস্ট হাউস এর সদর দরজা খোলার চেষ্টা করছে | এমন সময় অভিরূপ মায়া র একটা প্রচন্ড হাড় হিম করা চিৎকার শুনতে পেলো | অভিরূপ পিছন ফিরে দেখল ঘরের ভেতরের বাতাসের চাপে মায়ার শরীর টা দুমড়ে-মুচড়ে শত খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেল বাতাসে মিলিয়ে গেল | অভিরূপ এই সব মন্ত্র মুগ্ধ এর মতো দেখছিল হঠাৎ তার সামনে গেস্ট হাউসের ছাদটা ভেঙে মেঝেতে পড়ল |
অভিরূপ ভয়ে প্রায় আঁতকে উঠল | অভিরূপ আবার প্রাণপণে গেস্ট হাউসের সদর দরজাটা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু এবার আর ওকে বেশি কষ্ট করতে হলো না | একটানে দরজাটা খুলে গেল | অভিরূপ দরজা খুলে গেস্ট হাউস এর সামনের রাস্তা দিয়ে ছুটতে লাগলো | অভিরূপ অনেক দূর থেকে দেখল গেস্ট হাউসটা মাঝখান থেকে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে একটা প্রচন্ড আর্তনাদ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো আর সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গেস্ট হাউসের সেই ভয়ংকর ইতিহাস চিরকালের জন্য সেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পরে গেলো |
পরের দিন সকালে অভিরূপ ওর নিজের বাড়িতে এসে পৌঁছালো | রামু এসে দরজা খুলে দিল | রামু অভিরূপের বাড়িতে কাজ করে | অভিরূপ রামুকে এক কাপ চা করে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিল | রামু যথারীতি ঘাড় নেড়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল |
অভিরূপ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুম এর সোফায় গিয়ে বসলো আর টেবিলে থাকা খবরের কাগজটা পড়তে লাগলো | খানিকক্ষণ পর রামু চা নিয়ে এলো | অভিরূপ চায়ের কাপে চুমুক দিল |
তারপর রামু অভিরূপ কে একটা সাদা খামে মোড়া চিঠি দিলো আর বলল ,
বাবু আপনার জন্য চিঠি |
অভিরূপ জিজ্ঞাসা করল , আমার জন্য চিঠি ? কে পাঠিয়েছে ?
রামু বলল , কাল সকালে গেটের তলায় এই চিঠিটা পড়েছিল আমি মনে করলাম এটা হয়তো আপনার দরকারি চিঠি তাই রেখে দিয়েছিলাম |
অভিরূপ চিঠি টাকে উল্টেপাল্টে দেখে নিয়ে চিঠির প্রথম ভাষা খুলল |
চিঠিটার প্রথম ভাজে লেখা আছে একটা সতর্কবাণী “ সাবধান ........ চিঠিটা পড়বেন না” |
অভিরূপ প্রথমে মনে করলো তাকে হয়তো কেউ ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে | তার পর চিঠিটার দ্বিতীয় ভাগটা খুলে ফেলল এবং তাতে লেখা আছে ছয় লাইনের একটি কবিতা | অভিরূপ সেই কবিতাটি পড়লো | কবিতাটি পড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নীতিনের বলা সেই সেই ছয় লাইনের কবিতাটির কথা মনে পড়ে গেল | অভিরূপ হাত-পা থর-থর করে কাঁপতে লাগলো |
অভিরূপ বুঝতে পারল সে নিজের অজান্তেই মৃত্যুর দূতকে জাগিয়েছে এবং অভিরূপ এটাও বুঝতে পারল যে সাত দিন পর ও মারা যাবে |
তারপর সাত দিন পর স্থানীয় সংবাদপত্রে বিখ্যাত লেখক অভিরূপ হালদারের গাড়ির খুব গুরুতর অ্যাক্সিডেন্ট এবং সেই অ্যাক্সিডেন্ট এ লেখক অভিরূপ হালদারের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলো |

