দশমী
দশমী
"আস্তে আস্তে এগিয়ে চলুন, কেউ ছবি তুলবেন না। ও দাদা, ও দাদাআআ, আরে শুনবেন তো নাকি ছবি তুলতেই ব্যস্ত! ওদিক দিয়ে যাবেন না। জল আছে ওদিকটায়, ভিজতে চান নাকি?"
নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের মণ্ডপ। সন্ধে ৮টা, নবমী, ২০৩৫। স্বেচ্ছাসেবকের চিৎকারে সম্বিৎ ফিরলো দেবর্ষির। ডিএসএলআরে চোখ রেখে ঠাকুরের ছবি তুলতে তুলতে খেয়ালই করেনি কখন প্যান্ডেলের ভেতর ঢুকে আসা জলে পা দিয়ে দিয়েছে।
"কিরকম ঢেউ হচ্ছে দেখেছ!" পাশে একজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা বললেন তার পাশে দাঁড়ানো স্বামীকে। "বৃষ্টি নেই, বাদলা নেই, তাও এত জল!"
"আরে বাবা এটা বৃষ্টির জল থোড়ি! সমুদ্রের জল। ঢেউ হবেনা! সমুদ্র চলে এসেছে কলকাতায়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বুঝলে? এবার ঠাকুর ভাসান দিতে আলাদা করে যেতে হবেনা, গোটা শহরের সাথেই ভাসান হয়ে যাবে, হে হে!" ভদ্রলোক নিজের জ্ঞান জাহির করলেন তার স্বল্পবুদ্ধি স্ত্রীর কাছে।
"এটাই লাস্ট ঠাকুর, বুঝলি! এরপর সোজা বাড়ি। কাল সকালে ফ্লাইট আছে। তবে যেভাবে জল বাড়ছে, কালকের মধ্যে দমদম এয়ারপোর্টটা না জলের তলায় চলে যায়!", ঋদ্ধিমা বলল সপ্তর্ষিকে। গলায় স্পষ্ট উদ্বেগের সুর। "তোরা কবে যাচ্ছিস যেন?"
ম্লান গলায় সপ্তর্ষি জবাব দিলো, "এখনো টিকিট কনফার্ম হয়নি রে। বাবা চেষ্টা তো করছে। ফ্লাইট, জাহাজ কিছু না পেলে শেষ অব্দি আর্মির হেলিকপ্টারই ভরসা।"
মণ্ডপের বাইরে রাস্তা দিয়ে একটা বিএমডব্লিউ যাচ্ছে এয়ারপোর্টের দিকে। বেশি জোরে যেতে পারছেনা, সুরুচির লাইনের জন্য। কালো কাঁচের ভিতর থেকে দেখতে দেখতে রাশভারী কণ্ঠে বিরক্তি ধ্বনিত হলো, "লোকজনের রস দেখ! আজ বাদে কাল শহরটাই ডুবে যাবে, এখনো বাঙালির লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা শেষ হলোনা!"