দীঘা ভ্রমণ
দীঘা ভ্রমণ
আমার মত সবাই বেড়াতে ভালোবাসে।কারণ বেড়াতে গেলে নানারকম অভিজ্ঞতা হয়, অনেক কিছু দেখা যায়, জানা যায়। সেই রকম এক রাত্রির অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বসলাম। বারো তেরো বছর আগের কথা। আমার স্বামী একা বেড়াতে যাওয়া পছন্দ করেনা, তাই বেলুড় থেকে মামাতো দেওর আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলে গল্প করতে করতে হঠাৎ করে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠলো। আমি বললাম মেয়ের পড়াশোনা আছে,বেশিদিনের জন্য কোথাও যাওয়া যাবে না। তাই একদিনের জন্য বেড়ানোর জায়গা ঠিক হলো, সেটা হলো দীঘা। একরাত্রি র জন্য জামা কাপড় গোছগাছ করে নিলাম। ঠিক হলো বাসে যেতে হবে। বাসের টিকিট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কাটতে হবে। কাকুরগাছির কাছে দূরপাল্লার বাসষ্ট্যান্ড ছিল। সকালে উঠে হাত মুখ ধুয়ে চা খেয়ে সকাল সকাল রওয়ানা হলাম।বাসষ্ট্যান্ড গিয়ে টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম, মনে খুবই আনন্দ। সমুদ্র দেখবো। বাস যথা সময়ে ছেড়ে দিল।গল্প করতে করতে মজা করে চললাম।দীঘার কাছাকাছি গিয়ে বাস দাড়িয়ে পড়লো, জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে কাছেই বিশাল অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে,বাস আর যাবে না। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা বাস যেখানে দাড়িয়ে পড়েছে সেখান থেকে দীঘা হাঁটা পথে কম করে ৩০ মিনিট।
সামনে এগিয়ে গেলাম , গিয়ে দেখি একটা মাছের লরি উল্টে গেছে, সেই লরির উপরে ৩ জন লোক ছিল সবাই সবাই চাপা পড়ে মারা গেছে, ডেডবডিগুলো রাস্তায় পড়ে আছে। এই দৃশ্য দেখবোi ভাবতেই পারিনি। দেখে গলা শুকিয়ে এলো। সামনেই একটা বাড়ি ছিল, সেখান থেকে চেয়ে আমরা সবাই এক গ্লাস করে জল খেলাম।তারপর একটু স্বস্তি পেয়ে হাঁটা লাগালাম। বাচ্চা মেয়ে ২টোকে দীঘা আর একটু দূরে এই বলতে বলতে হাঁটতে লাগলাম। বাচ্চা দুটো ও খুব বোঝদার ছিল। না হলে সমস্যা আরো বাড়ত। ৪৫ মিনিট হাঁটবার পর আমরা দীঘা পৌঁছলাম। দীঘা পৌঁছে আমরা সামান্য কিছু মুখে দিয়ে হোটেল খুঁজতে বেরোলাম। সমুদ্রের কাছেই একটা হোটেল পেয়েও গেলাম। দু রুমের দুটো ঘরও পেয়ে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে হোটেল থেকে আমরা সমুদ্রে স্নান করবার জন্য বেরোলাম।ব
োল্ডার পেরিয়ে আমরা সমুদ্রের কাছে যাওয়া মাত্র হঠাৎ একটা বড় ঢেউ এলো, সেই ঢেউএ আমার মেয়ে ছিটকে পড়লো। মেয়ের বাবা কাছে থাকায় মেয়ে বাবার পইতাটা ধরে ফেলায় মেয়েটা প্রাণে বেঁচে গেলো। ভয়ে বুক কাঁপতে লাগলো। এত বিভৎস বেড়ানো হয়তো কারোর হয়না।
ভগবানের আশীর্বাদের ফলে এক একটা বিপদ কাটছে হয়তো। মেয়েকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে এলাম।। যতক্ষণ ছিলাম ঘটনাগুলো ভেবে ভেবে মনের সমস্ত আনন্দ যেন মলিন হয়ে গেলো। কিছুই তখন ভালো লাগছিল না কত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবো সেই খালি ভাবনা হতে থাকলো। কেনাকাটা করার ইচ্ছাই হলনা। সন্ধ্যাবেলায় সমুদ্রের ধারে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলাম তারপর হোটেলে ফিরে এলাম কিন্তু মন এতই ভেঙেছিল যে তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পরলাম। রাত যখন ১২ টা, শরীর ক্লান্ত,চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হঠাৎ শুনতে পেলাম পাশের ঘরে চেয়ার টেবিলের নড়া চড়ার আওয়াজ। লাফিয়ে আমরা দুজনেই উঠে পড়লাম, মেয়ে তখন ঘুমিয়ে পড়েছে,একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছি তুমি কিছু শুনেছ,দুজনেই একই কথা বললাম,ওদিকের ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে রাখলাম,কিন্তু পায়ের আওয়াজ টেবিল চেয়ারের আওয়াজ বন্ধ হচ্ছে না, কিছুই দেখা যাচ্ছেনা, গলা খালি শুকিয়ে যাচ্ছে, কথাও বন্ধ। ঠাকুরের নাম জপতে থাকলাম, সারারাত জাগা,পরদিন সকাল সকাল উঠে জামা কাপড়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দেয়রদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দেওরদেরকে সব কথা বাইরে এসে বললাম। এত অভিজ্ঞতা পর পর হবে ভাবতে পারিনি। আমরা বাস ধরবো। তাই বাস স্ট্যান্ডে এলাম।কোনো বিপদের সামনে না পড়ি,ভগবানের কাছে বলতে বলতে, নাম জপ করতে করতে বাসে উঠলাম। অবশ্য আসার সময় ভালই এলাম। বাড়ি এসে ঠাকুর প্রনাম করে বললাম আর যেন এরকম বেড়ানো না হয়। অন্য কারোর যেন এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হতে হয়। তারপর অবশ্য অনেকবার দীঘা গেছি। ভালই লেগেছে, অনেক কেনাকাটাও করেছি। তাই এখনও ভাবি আগের দীঘার থেকে এখনকার দীঘার চেহারার কত পরিবর্তন, কত উন্নত কত সুন্দর পরিবেশ, কাছেই নিউ দীঘা,সেইখানেও গেছি, আনন্দ করেছি।এখন অবশ্য ছোট টুর ভাবতে দিঘাকেই ভাবি।