aatin mazum

Abstract Classics

3  

aatin mazum

Abstract Classics

দহনের স্বরলিপি

দহনের স্বরলিপি

3 mins
362



শোনো চুপকথা আমি ভালো আছি 

তুমিও ভালো থেকো 

না বলা যত কথা গুলো সব 

কবিতার ফাঁকে রেখো .....


বাতাসে যেই তার গন্ধ ভেসে আসে , মন পাখিটা শিস দিয়ে ￰গেয়ে ওঠে I পলাশ গাছের মাথায় এক ফোটা , দু ফোটা রক্তের দাগ লেগেছে কি লাগেনি শুরু হয় তার অস্থিরতা I বছরের বাকি সময় গুলো লোকটা দিব্ব্যি ভালো মানুষ I দিন নেই রাত নেই লোকের পরোপকারে মেতে থাকে I আর বছরের এই সময়টা এলেই সে প্রায় উন্মাদ I হাওয়ায় ভেসে আসে নেশার রসদ I নাওয়া খাওয়া ভুলে লালের নেশায় সে তখন মশগুল I রক্তে লাগে পাশের টান I শরীর ছেড়ে মাটির টানে নেমে আসা পলাশ ফুলের খোঁজে লোকটা পাড়ি দেয় গ্রামের পর গ্রামে , নির্জন জঙ্গলে , নিঃসঙ্গ কোন ডোবার ধারে I খুঁজে পাওয়া সন্তানের মত পরম আদরে তাদের নিজের ছেঁড়া গামার ভিতর ভরে জড়ো করে বাড়ির পিছনে I ভাঙা হেলে পড়া বাড়িটার পিছনে তখন আগুন লেগে যায় I বড়োই বেমানান সে দৃশ্য I স্তূপাকার পলাশ ফুলের মাঝে বসে লোকটা বিড়বিড় করে চলে I কি যে বলে লোকটা ! মানুষের দুর্বোধ্য সে ভাষা I যেন কত অভিমান স্বরলিপি বুনে চলেছে I যেন কেউ একটা মায়া জড়ানো সুরে কেঁদে চলেছে অবিরাম I সে কান্নায় ভালোবাসা , যন্ত্রনা , অনুতাপ মিলে মিশে একাকার I ￰পাথর ভেঙে সম্বৎসর দিন গুজরান হয় আর বসন্ত এলেই সে হাত হাতুড়ি ছেড়ে পলাশ ফুল খোঁজে ! কখনও সময়ের তোয়াক্কা না করে দৃষ্টি ছড়িয়ে দেয় লাল পাপড়ি গুলোর ওপর , এক দৃষ্টে I চোখদুটি যেন তখন রক্ত জমাট সোহাগ I তারপর , ￰অপলক সে দৃষ্টিতে কখন যেন ঘোলাটে সন্ধ্যার চাদর এসে চাপা পড়ে I তখন লোকটা চোখের পাতা ছেড়ে দেয় I


ভারী সে দুটি পাতা নেমে আসে পৃথিবীর দিকে I দু গাল বেয়ে নেমে আসা চোখের জলে ধুয়ে বেরিয়ে আসে মনের সব ক্লেদ I সন্ন্যাসীর মতো দুই আধবোজা চোখ , লোকটা এসে বসে সেই পলাশের পাহাড়ে I সময় বয়ে চলে অলস ভাবে I কখনো পলাশ ফুলের স্তূপে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য আকুল হয়ে ওঠে I সংসার নেই ,সারাদিন কেউ দুটি খেতে দিলে খায় , তবে না দিলেও কিছু যায় আসে না , খিদের বোধটা লোপ পেয়েছে I মনের খিদে না মিটলে সে কেন শরীর কে প্রশয় দেবে !

শোনা যায় লোকটা একবার পূব খাটতে গিয়ে কোন একটা কিছুর প্রেমে পড়ে ছিল I কেউ বলে সে এক সাঁওতাল মেয়ে ছিল , কেউ বলে সে ছিল এক মেঠো সুর , কারুর বিশ্বাস সেটা ছিল একটা পাহাড়ি অচেনা ফুল I দীর্ঘক্ষণ পলাশের দিকে তাকিয়ে সে বোধহয় সেই মুখটা খোঁজে বা সবুজ ধান ক্ষেতের সেই আলপাড়টা বা পাহাড়ী ঝর্ণার ধারে সেই অচেনা ফুল টা I তবে এই হল্কা বাতাসের আগুন লোকটার ভিতরেও যে আগুন জ্বালায় , তা বেশ বোঝা যায় I শুধু লোকে স্থূল মনে বুঝে পায় না কোন সে দহনের জ্বালা জুড়োবার জন্যে পলাশের প্রেমে ডুবে মরেছে সে I


এক একদিন লোকটা প্রচন্ড হাফিয়ে ওঠে I কিছুটা খাবি খায় I তারপর সটান চড়ে বসে কোনো পলাশ গাছের ডালে I মনে হয় যেন কোন দূষণ থেকে পালাতে চায় I কিসের যে দূষণ ! মনের দূষণ , ইচ্ছের দূষণ , নৈতিকতার দূষণ না আত্মার দূষণ ঠিক ঠাহর হয় না I 

ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে লালের ছটা ফিকে হতে শুরু করে কিন্তু এইবারে লোকটা যেন কিরকম একটা ঘূর্ণি পাকে আটকা পড়ে গেছে I ঝরে যাওয়া প্রতিটা পলাশের সাথে প্রেম যেন আরো বেঁচে ওঠে I আজকাল তার অস্থিরতাতেও যেন গোধূলির ছায়া , বরং এক সুগভীর প্রশান্তি আর উদাসীনতায় ছেয়ে গেছে তার মনন জগৎ I প্রতিটা পলাশের মৃতদেহ যেন তার আত্মজের শবাধার I 


একদিন হঠাৎ লোকটা নিরুদ্দেশ হয়ে যায় I কেউ তেমন বিশেষ খোঁজ করে না তার , যেমন খোঁজ করেনা ঝরে যাওয়া পলাশের I গ্রামের এক প্রান্তে ভাঙা চোরা বাড়িটা তার মতোই উদাসীনতা আর অবহেলার স্মারক হয়ে থাকে I শুধু ঝরে যাওয়া পলাশেরা জানে লোকটা তাদের বুকের মাঝে একটা শান্তির ঘুমে ডুব দিয়েছে I পলাশেরা শোনে মাটিতে মিশে যাওয়ার ডাক I এবার ফেরার পালা I 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract