দেখ কেমন লাগে
দেখ কেমন লাগে
এখন মাঝরাত, বেশ খুশী ত্রিদিববাবু - মেয়ের বিয়ের আর চিন্তা নেই। আজকের অপারেশনটায় পেয়েছেন প্রচুর টাকা। অন্যসময় হলে, কোন মেয়ের অজান্তে এভাবে তার ইউটেরাস অপারেট করতেন না তিনি, কিন্তু এতগুলো টাকা আর সামনেই মেয়ের বিয়ে...
সৎ ডাক্তার ও ভালো সার্জেণ্ট হিসাবে তাঁর পরিচিতি আছে। পয়সার খাই নেই তাঁর - এটাও সবার জানা। কিন্তু পরিস্থিত এখন অন্যরকম, তাঁর পঙ্গু মেয়ের জন্য হঠাৎ একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলেটি নাকি ওকে ভালোবাসে অনেকদিন থেকেই!
তারা বিয়ের পর ব্যাঙ্গালোর চলে যাবে। ওখানে এইমস-এর প্রফেসর সে। সঙ্গে রীসার্চ করছে - কিভাবে মানুষের পঙ্গুত্ব সাড়িয়ে তাকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা যায়। তার বিশ্বাস, সে চিকিৎসা করে সারদাকে (ত্রিদিববাবুর মেয়ে) সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তুলবে!
সমস্যা একটাই - দরকার অনেক টাকার। তার বাবা প্রায় ষাট শতাংশ ব্যবস্থা করেছেন, এখন বাকি চল্লিশ শতাংশ তিনি করতে পারলে... তাঁর মেয়ে সৎপাত্রে পাত্রস্থ হবে, সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে - এই আশায় ত্রিদিববাবু রাজী হয়ে গেলেন। ভাবলেন না - এত টাকা পাবেন কোথায়?
এমন সময় ঐ দূর্ঘটনাগ্রস্ত মেয়েটিকে নিয়ে তাঁর কাছে আসেন ওঁরা। একে তো মেয়েটি নিয়মিত বলাৎকারের শিকার, তায় বারংবার গর্ভপাত করানোয় ইউটেরাসও ড্যামেজ হয়েছে ভয়ঙ্কর। চিকিৎসা করাতে নিয়ে এলেও, ত্রিদিববাবু বুঝতে পারলেন - এঁরা কেউই মেয়েটির শুভাকাঙ্খী নয়।
পরিস্থিতি এমন যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে তাঁদের কোটি অঙ্কের ক্ষতি, তাই তাকে বাঁচাতেই হবে। আবার তার ইউটেরাস অপারেট না করলে তা সম্ভবও নয়! তাই তাঁরা অনেক ভেবে চিন্তে তাতেই রাজী হয়ে গেলেন!
অপারেশনের আগে তাকে সেটা জানানোর কথা উঠলে, তাঁরা বলেন - যেকোন মূল্যে নাকি এই বিষয়টা মেয়েটির থেকে গোপন রাখতেই হবে। ত্রিদিববাবু হঠাৎ তখন ডিম্যাণ্ড করেন তাঁর ভীষণ জরুরী সেই 'চল্লিশ শতাংশ' টাকাটা, আর তাঁরা রাজীও হন!
অপারেশন ঠিকঠাক হয়েছে, মেয়েটি বেঁচেও যাবে আর তাঁর নিজের মেয়েও... এত খুশীর মধ্যেও একটু খুঁতখুঁত করছিলো মনটা - মেয়েটাকে কি জবাব দেবেন তিনি? আজ তাই আগেই পালিয়ে এসেছেন। সিস্টার সুমনাই চুপিচুপি মেয়েটাকে ওর অপারেশনের খবরটা দেবে।
সেই মাঝরাতেই সুমনার কল এল - স্যার, ঐ মেয়েটাকে বুঝিয়ে বললাম, তাকে বাঁচাতে কতটা জরুরী ছিল বলে করতে হয়েছে আপনাকে তার অপারেশনটা। খবরটা শুনে প্রথমে সে খুব ভেঙে পড়লো, তারপর হাসতে লাগলো! তারপর হঠাৎই জানালা টপকে বাইরে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করলো!
খবরটা শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়ে, ফোনটা রেখে মাথা হেঁট করে বসে রইলেন নির্বাক ত্রিদিববাবু। হঠাৎ সেই মাঝরাতেই ডোরবেলের আওয়াজে বিস্মিত হয়ে, দরজাটা খুললেন তিনি - তাঁর মেয়ে সারদা দাঁড়িয়ে!
- এতরাতে তুই এখানে? আয়, ভিতরে আয়।
হঠাৎ তাঁর মাথায় আসে - ক্রাচ ছাড়া কিভাবে তাঁর মেয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে? ভালো করে তাই তার মুখ পানে ফিরে চাইতেই, চক্ষু ছানাবড়া ত্রিদিবের - সারদা নয়তো, এ তো হাসপাতালের সেই মেয়েটা!
সংজ্ঞা হারিয়ে দরজাতেই লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সকালে তাঁর মৃতদেহ যখন উদ্ধার হল তখনও ঐ স্থির হয়ে যাওয়া তাঁর বিস্ফারিত চোখদুটোয় যেন জমা হয়ে আছে একরাশ ভয় আর বিস্ময়!