SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

ডাকিনীর মায়াজালে - শেষ পর্ব

ডাকিনীর মায়াজালে - শেষ পর্ব

5 mins
256



তন্দ্রা জানতো না তখনও, যে তার তন্ত্রসাধনার খবর আছে জয়ের কাছে। সে একেবারে সরল সাধাসিধে, গৃহবধূটি সেজে, শ্বশুরবাড়িতে ফিরলো কয়দিন পরেই।

আর এসেই, প্রথমে নিজের ঘরে গিয়ে, ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে রেখে, তারপর জয়ের সামনে এলো। মাধবী সরবৎ খেতে দিলো। কিন্তু, জয়ও অনেক পরিশ্রম করার পর, গরমে বাড়ি ফিরেছে - এই কারণ দেখিয়ে, সেটা তাকেই খাইয়ে দেয়।

ব্যাপারটা জয়ের একটু অস্বাভাবিক লাগলেও, তখন কিছু বলে না। এরপর, তন্দ্রা স্নানে ঢুকলে, জয় তার ব্যাগটা খোলে। দেখে - ব্যাগের ওপরের দিকে, বিছিয়ে রাখা শাড়িটার তলায়, বাকিটা ভর্তি শুধু তার তাকতুকের জিনিসপত্রে!

জয় ব্যাগটা নিয়ে আসে তার মা বাবার সামনে। দেখায় সেগুলো। এইসময়, স্নান সেড়ে বের হয় তন্দ্রা। দেখতে পায় - শ্বশুর, শ্বাশুরি, স্বামী সবাই মিলে তার ব্যাগের জিনিসপত্র সব ঘেঁটে দেখছে।

প্রচণ্ড রেগে যায় সে, তাদের ওপর। রেগে যায় ওদিকে জয় নিজেও। বেশ কথা কাটাকাটি হয় তাদের মধ্যে। জয়, জোর করে জিনিসপত্রগুলো নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয় পুকুরের জলে।

তন্দ্রা ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে, তার ঘরে গিয়ে দোর দেয়। সকাল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়, তন্দ্রা না বাইরে আসে, না সাড়া দেয়। মাধবীরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে।

ওদিকে, জয়ের ক্রোধও সংবরণ হয়নি দেখে, অগত্যা মাধবীই গিয়ে ডাকাডাকি করে, জয়ের হয়ে তার কাছে, ক্ষমা টমা চেয়ে সেবারের মতো, তন্দ্রাকে ঘর থেকে বাইরে আনে।

ঘরে দ্বাররুদ্ধ হয়ে থাকাকালীন, সেদিন তন্দ্রা জয়ের ফোন থেকেই কল করে, নিজের মা, তথা তার তন্ত্রসাধনায় গুরুমা - সরমার কাছে সেদিনের ঘটনার সমস্ত কিছু জানায়।

সরমা তো, কোনমতেই এমন সুবর্ণ সুযোগ - হাতছাড়া করার পাত্রী ছিলেন না। বরং এমন সুযোগই তিনি চাইছিলেন। তাহলেই, এই সুযোগে, মাধবীদের বাড়ির সকলকে বশে আনতে পারবেন।

আর সেটা করতে পারলে, তার নিজের শেষ তন্ত্র সাধনাটাও, এখানে আরামেই করতে পারবেন তিনি। আর, তন্দ্রাও তাঁর মতই, শ্বশুরবাড়িতে একচেটিয়া ছড়ি ঘুরিয়ে যেতে পারবে আজীবন।

তো, সেইমতই তাঁর পরামর্শে, এর পর থেকেই, তন্দ্রার আচার, আচরণ, কথা বার্তা, চালচলন সবই বদলে যেতে থাকলো। মিষ্টি, নম্র স্বভাবের বদলে, উগ্রতা প্রকাশ পেতে শুরু করলো - তার সব আচরণে।

শ্বশুর, শ্বাশুরির এতদিনের ভীষণ প্রিয়, কন্যাসমা তন্দ্রা, বাড়ির সকলের চোখেই, ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে লাগলো। তাঁদের অবস্থা হয়ে দাঁড়ালো এমন, যেন পারলে বলেন - বৌমা, তোমার পায়ে নমস্কার।

জয়ের কানে, মাধবীর সেদিন তন্দ্রার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টা, একটু দেরীতে হলেও এসে পৌঁছায়। অকারণে, মায়ের এই অপমানিত হওয়াটা, তার পক্ষে সহ্য করা বেশ কঠিন হয়।

এর কিছুদিন পর, সরমা তাদের বাড়িতে আসেন। মেয়ে জামাইয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন, সমস্যা সব কিছুর সমাধান করবেন বলে!

আলোচনার মাঝে, কথা প্রসঙ্গে সেদিনের জড়ি, বুটি, তুক তাক করার জিনিসপত্র পাওয়ার বিষয়টা ওঠে। জয় সরমাকেই তন্দ্রার এই সব পরিবর্তনের জন্য, দায়ী করে।

সরমা, জয়ের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তায় অপমানিত বোধ করে, রক্তচক্ষু ধারণ করে, ক্রোধে কাঁপতে থাকেন। শৈশবের পর তাঁকে, সবাই শুধু সমীহই করেছে - উঁচু গলায় কেউ কথা বলেনি।

তিনি তৎক্ষণাৎ, মাধবীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যান। তন্দ্রাও তার মায়ের অপমানে ক্রুদ্ধ হয়ে, ঘরে গিয়ে দোর দেয়, আগের দিনের মত।

জয় সেদিন মাধবীকে বারণ করে দেয় - তন্দ্রার কাছে মাথানত না করতে। সে নিজে না চাইলে, তাকে ঘর থেকে বের হবার জন্য, জোরাজুরি না করতেও বলে।

ওদিকে, তন্দ্রা ঘর থেকে যথারীতি, তার মাকে ফোন করে। সরমা তাকে পরামর্শ দেন, কিছু একটা করে দেখাতেই হবে তাকে - যাতে জয়দের সবাই, তার তন্ত্রবল দেখে, তাকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়।

ক্রোধান্বিত তন্দ্রার মাথায় আসে - তার মায়ের সেই কৈশোরে, বাড়িতে করা তুকের ঘটনাটা। সে নিজেও এখন, ওসব শিখে গেছে। চাইলেই সেও, ঐরকম ঘটনা ঘটিয়ে, দেখাতে পারে তার ক্ষমতা।

এর পর একদিন - ভর সন্ধ্যে বেলা, জয় সেদিন কর্মসূত্রে বাইরে। মাধবী রান্নার কাজে ব্যস্ত, জয়ের বাবা গেছেন গোয়ালবাড়ি। তন্দ্রা এই সময়টাকেই বেছে নিলো - তার ক্ষমতা দেখাবার জন্য।

তার মেয়ে তখন, অন্য এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে খেলছিলো। তন্দ্রার তুকের প্রভাবে, সে হঠাৎ খেলতে খেলতেই, নেতিয়ে পড়লো। সবাই দৌড়ে গেলো তার কি হয়েছে দেখতে।

তন্দ্রা তার তুক কাজ করেছে দেখে, তার সাধনার জিনিসপত্র সব গুছিয়ে, তুলে লুকিয়ে রাখে তার গোপন জায়গায়। তারপর দ্রুত নিজের সমস্ত সাজ ধুয়ে, স্নান সেড়ে বের হয়ে, দৌড়ে যায় মেয়ের কাছে।

চারিদিকে তখন লোকজন জমে গেছে। তাকে নিয়ে দৌড়ালো ডাক্তারের কাছে। তন্দ্রা নিজের অজান্তেই, একটা বড় ভুল করে ফেলেছিলো - তুক করার আগে, সরমা সেদিন যেটা করেছিলেন, সেটা সে করেনি।

আর তা ছিলো - তুক করার আগে, মেয়েকে রক্ষা মন্ত্রে বাঁধা। যাতে, যত বিপদই হোক, তার প্রাণ না যায়। কোনো অপশক্তি, তার নিস্তেজতার সুযোগে, ক্ষতি না করতে পারে। আর সেই ভুলটাই, নিজের অজান্তেই, করে বসলো সে।

তুকের বশে নিস্তেজ, তার শিশুকন্যা যখন শুয়ে - ঐ প্রতিবেশীর বাড়িতে, রুনু আর বিশুর প্রেতাত্মা তখন সেখানে গিয়ে হাজির হলো!

দীর্ঘদিন ধরে, তাদের মুক্তির আবেদন - নাকচ করে এসেছিলো সবাই। তারাও তাই, প্রতিশোধ নিতে, ঐ নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা, শিশুটিকেই বেছে নিলো!

দূর্গামন্দিরের চৌহদ্দির বাইরে হওয়ায়, তাদের কোন বাধাও ছিলো না, অপকর্ম করতে। ঘাড় মটকে, বেচারী শিশুটির প্রাণ নিলো তারা।

ডাক্তার যখন শিশুটিকে দেখলো - তখন তার দেহে আর প্রাণ নেই। বাড়ি ফেরার আগেই রিগর মর্টিস সেট ইন করে বডিতে। তন্দ্রা বুঝতে পারে, কতবড় ভুল সে করে ফেলেছে।

নিজের অপকর্মের ফলে, তার এতবড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ায়, সে ভেঙে পড়ে মারাত্মক। কাউকেই সে বলে উঠতেও পারে না, তার কষ্টের কথা। এমনকি সরমাকেও না।

মর্মে মরে যায় তন্দ্রা। তন্ত্রসাধনার ভূত নেমে যায় তার মাথা থেকে। বাড়ির সকলের যে কষ্ট, যন্ত্রণা - তার পাশে তন্দ্রার বেদনার তুলনাই চলে না।

এরই মধ্যে, ঐ বাড়িতে তার সামনে আসতে শুরু করে দিলো - তার শিশুকন্যার আত্মাও। নিষ্পাপ ঐ শিশুর আত্মার, ঐ বাড়িতে প্রবেশ আটকাতে পারলো না - স্বয়ং দূর্গা মায়ের অধিষ্টানও!

তার মেয়ে, শুধু তার চোখের সামনেই এসে, হাজির হয় - আমায় কেন মেরে ফেললে, মা? ফলে, তন্দ্রার বাড়িতে থাকা, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো।

অগত্যা জয়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করে, ঐ বাড়ি ত্যাগ করে চলে গেলো সে। জয়ের বাবার এক গুণীন বন্ধু সব শুনে, নিজের থেকে এসে, একদিন - সমস্ত কার্য, কারণ, সম্বন্ধ বিচার করে, সব ঘটনা প্রকাশ করলেন তাঁদের কাছে।

জয় নিজে গয়া গিয়ে পিণ্ডদান করে, বিশু রুনু ও তার নিজ শিশুকন্যার, আত্মার মুক্তি করিয়ে এলো। তাদের বাড়ির কাউকেই আর কখনও, কোন অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় নি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama