SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Thriller

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Thriller

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ১০

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ১০

3 mins
125



যাই হোক, এরপর আসল বিষয়টা বুঝবার জন্য আমরাও স্বপ্নাকে নজরে রাখতে শুরু করি। ঘটনাক্রমে কিছুদিন পরই টিউশনির পর ওদের সঙ্গে লঞ্চঘাটে যাবার সময়, রত্না আমাকে ইশারায় চিনিয়ে দেয় সেই ছেলেটিকে। তখন থেকেই ছেলেটিকে সুযোগ পেলেই ফলো করতাম আমি। সেও ঐ লঞ্চঘাট দিয়েই যাতায়াত করত।


তাকে দেখতে পেলেই, আমিও তার পিছুপিছু হাজির হয়ে যেতাম দক্ষিণেশ্বরে। তাকে টেলিফোন বুথে ঢুকতে দেখলেই, আমিও রত্নাকে এসএমএস করে দিতাম বা কল করে জানিয়ে দিতাম। বেশিরভাগ দিনই তারপরেই তারা দেখা করতো। 


আমি লুকিয়ে দু'একবার তাদের কথাবার্তা, আলোচনা শুনেছিলাম। একবার তো আমারই এক খুবই কাছের বন্ধুর টেলিফোন বুথ থেকে ওদের ফোনের সমস্ত কথা আমি নিজের কানে শুনেছিলাম। সেদিনই আমি বুঝতে পারলাম যে, স্বপ্নাও তার বাবার মতই ধ্বংসের পথেই চলতে শুরু করেছে এবং সেই একই মতাদর্শে বিশ্বাস রেখে, নিরপরাধ মানুষদের খুন করার পথকেই তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য সঠিক বলে বেছে নিয়েছে!


বিশ্বাস করুন, তার পরেও আমি চেয়েছিলাম একটা শেষ চেষ্টা করতে, যাতে ওকে ফিরিয়ে আনতে পারি। তাই আমাদের বিয়ের কথা তুলেছিলাম একদিন ওর কাছে। সে'দিন দেখেছিলাম তার আসল রূপ, তার আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন! উদ্ধত ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল আমায় সেদিন সে - শুধু আমাকে না, কাউকেই বিয়ে করতে চায়না সে, তার লক্ষ্য অন্য, এটাই তার সিদ্ধান্ত।


এই পরিস্থিতিতে, আমি আর কি করতে পারতাম বলুন? অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি করতে চলা সেই বিপথগামিনীকে থামানোর চেষ্টা করাটাকে, নিশ্চয়ই আপনি আমার ভুল বলবেন না। আপনি আমায় কোর্ট-কাছারীর ভয় দেখাচ্ছিলেন, তাতে আমি ভীত হইনি। কিন্তু আপনি আমায় নীরব-অপরাধী বললেন, ঐ কথাটা সহ্য করতে পারলাম না। সেই কারণেই, যে কথাটা কখনও কাউকেই জানাবো না ভেবেছিলাম, সেটাই বলতে বাধ্য হলাম। ওহো, আসল কথাটা আরও একবার মনে করাই, স্বপ্নাকে খুনটা আমিও করিনি, রত্নাও করেনি। আমরা তো শুধু ওর ঐ ভয়ঙ্কর মিশনের কথাটুকু যেখানে জানানো দরকার সেই উপযুক্ত স্থানে জানিয়ে দিয়েছিলাম....


আমি চমকে উঠে তাঁর মুখের দিকে চাইলাম। তিনি স্মিতমুখে তার কাঁচের টিপয়টার নীচে রাখা একটা পুরানো সংবাদ পত্রের পেপার কাটিংয়ের দিকে ইশারা করলেন। আমি কাঁচের ওপর থেকেই সেটা পড়লাম আর বুঝলাম, রাষ্ট্রদ্রোহী এক কার্যকলাপ থামানোর উদ্দেশ্যে তাঁর মতে যা করণীয় মনে হয়েছে, কিভাবে সেই মোক্ষম কাজটিই করেছিলেন অভিরূপবাবু। এও বুঝতে পারলাম, তাঁর বক্তব্যের সত্যতা উপলব্ধি করে রাষ্ট্র তার নিরপরাধ অসংখ্য নাগরিকদের বেঘোরে প্রাণ হারানোর হাত থেকে রক্ষা করতে ঠিক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।


এই ঘটনার পুরো তদন্তটাই দাঁড়িয়েছিল আমার নিজের স্যাটিসফেকশনের উপর। অভিরূপ রায় এবং রত্না রায় নিজেদের বিবেচনায় যা সঠিক মনে করেছেন এবং যা কিছু করেছেন তার ফলস্বরূপ, একটি তরুণী হয়তো প্রাণ হারিয়েছিল, এটা সত্য। কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁদের ঐ কাজের জন্য অসংখ্য অভিরূপ, রত্না এবং স্বপ্না, হ্যাঁ স্বপ্নার মতও অসংখ্য নিরপরাধ শিশু নিশ্চিত অনাথ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। 


এই জন্যই কোনো রকম অনুশোচনা নেই অভিরূপ এবং রত্নার। আর সেই একই কারণে, প্রকৃত ঘটনাটা কি ছিল, আততায়ীর পরিচয় কি, আসল ঘটনাস্থল সবকিছু জেনেও আমি এই কাহিনীর সেই রহস্যটুকু উন্মোচন করার চেয়ে তাকে অবগুণ্ঠনে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করছি। মতাদর্শের ভেদ থাকতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে নিরপরাধ সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে প্রকৃতই কোনো অধিকার অর্জিত হতে পারে না, যা স্থায়ী হবে। তাই রাষ্ট্র ও আমার চোখে এই রায় দম্পতি সম্পূর্ণ বেকসুর বরং তাঁদের ঐ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই আমি।


খুব সঙ্গত কারণেই বুঝতে পারছেন, খুনির পরিচয় বা অন্য কোন তথ্য আমি প্রকাশ করতে পারলাম না এবং তার জন্য মোটেই দুঃখিতও নই। তবে আপনাদের অবগতির জন্য শুধু এ'টুকু আপনাদের বলে রাখি যে পরোক্ষভাবে তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করলেও, না, প্রত্যক্ষভাবে স্বপ্নার খুনি কিন্তু অভিরূপ রায় কিংবা রত্না রায় নন। আমি ভরসা রাখি, বুদ্ধিমান/বুদ্ধিমতি পাঠকগণ ঠিকই বুঝে নেবেন ঘটনায় আসল রহস্য কি।


।।সমাপ্ত।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama