ছল
ছল


সাদা মার্বেলের মেঝেতে কেও যেন এক বালতি গাঢ় আলতা ঢেলে দিয়েছে। গুড়িয়ার মুখটা থম থমে, ফ্যাকাশে, বিবর্ণ। এখনো ওর হাতের তাজা রক্তের দাগ শুকায়নি। পাশে একটা ছেড়া নোংড়া পুতুল ছিটকে পড়েছে মেঝের ওপর।
কিছুদিন আগে অবধি সব ঠিক ই ছিল। ভাস্কর, ডাক্তার হিসেবে গুড়িয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল। গুড়িয়া মানসিক ভারসাম্য হলেও গুড়িয়ার অনেক প্রীতিভা ছিল । গুড়িয়া ভালো ছবি আঁকতে পারতো। খুব সুন্দর হাথের কাজ জনতো। কিন্তু ওর সব থেকে বড় দোষ ছিল ও বড্ডো বেশি আবেকপ্রবন। আর সব দিক থেকে বড্ডো বেশি শিশুসলভ। তেমনি শিশুর মতো সরল মন। ও মানতে চাইতো না যে ওর বয়স এখন ২০+ ।
মেয়েটির বাড়ি থেকে মেয়েটি কে হাসপাতালেই ফেলে রেখে চলে যায়।
তারপর হাসপাতালে মেন্টাল ওয়ার্ড ওর জায়গা হয়। মাঝে মাঝে রেগে গেলে খুব চিৎকার করে কাঁদত। এখন কিছু দিন হলো ডক্টর ভাস্করের ট্রিটমেন্টে থেকে অনেকটা ভালো আছে। ডাক্তার ভাস্কর একজন উঠতি প্রতিভাবান ডাক্তার আর তেমনি তার চাকচিক্য। অথচ খুব সমীহ করে সকলকে। ডক্টর ভাস্কর জানত গুড়িয়া ঠিক মতো চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে যাবে। ওকে শুধু ওর নিজেকে চেনাতে হবে। আর এই চিনতে গিয়েই কখন ডক্টর তার রুগীর আকর্ষণের বেড়াজালে পরে গেছে সে নিজেও জানে না।
এই ধরণের রোগীদের অন্যতম বৈশিষ্টই হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি তাদের আখাঙ্কিত কেও হলেই তাকে মন দিয়ে ফেলা। আর সেখানে তো গুড়িয়ার আপনজন বলতে কেও ছিলও না। তাই এখন ডক্টর ভাস্করই তার একমাত্র সম্বল। ডাক্তার ভাস্করকে সে মনে মনে অনেকদিন আগেই ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই এখন সে তার জন্য গোটা জীবনের সঙ্গে বাজি ধরতে পারে।
গুড়িয়া এতদিন ওর পুতুল 'গুড়িয়ার' বিয়ে দিয়েছে,
এখন ওর নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এ স্বপ্ন যে কোনোদিন ও সত্যি হওয়ার নয় তা গুড়িয়ার ভাবনার বাইরে। একদিন হাস্পাতাল প্রায় ফাঁকা। ডক্টর নার্স অনেকেই ছুটি নিয়েছে। কেবল ক-একজন ওয়ার্ড বয় ও আয়া ঘোড়া ফেরা করছিল।
সেদিন ছিল ডক্টর ভাস্কররের বিয়ে। ঘটনা টা গুড়িয়ার কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই গুড়িয়ার মুখটা বিবর্ণ রূপ ধারণ করলো। এর পর গুড়িয়া নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে গেল বাথরুমের দিকে আর সেখান থেকে কোনোরকমের জানলা টপকে এসে পরে করফিডরে সেখানে বেহুঁশের মতো ছুটতে ছুটতে রান্না ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সে, তার পর হাত থেকে পুতুলটাকে ফেলে একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজেকে প্রহার করে। তারপরে সব রক্তে ভেসে যায়, আর গুড়িয়ার নিষ্পাপ শিথিল দেহ মেঝেতে পরে লুটোপুটি খায়।
গুড়িয়ার স্তব্দ হৃদপিন্ড থেকে যেন একটাই শব্দ শোনা যাচ্ছে , "গুড়িয়া যেন কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলছে , আমাদের মতো মেয়েদের কি সত্যি ভালোবাসার অধিকার নেই? আমাদের কাছে গোটা পৃথিবীটাই কি ছল, একটা আকর্ষণ মাত্র?"