লেখিকা
লেখিকা
আজ একাডেমিতে কণিকার বই প্রকাশিত হল। দীর্ঘ তপস্যা, অবেক, ও অনুশীলনে জড়ানো ধর্যের বাঁধ ছাড়িয়ে কণিকার জিৎ হল।
ডায়াসের ওপর দাঁড়িয়ের কণিকা তার কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে বলছে-....."আমার ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল একজন সার্থক লেখিকা হওয়ার। আজ আমার উন্নচল্লিশ বছর বয়স। আজ আমি একজন সার্থক লেখিকা আপনাদের কাছে ,কিন্তু আমি নিজের কাছে সেদিনই সার্থক হয়েছিলাম যেদিন আমি বাংলায় 'একটি বৃষ্টির দিন '- এই রচনাটি লিখে, রচনায় সবার সেরা নম্বর পেয়েছিলাম। বাংলার দিদিমণি আমায় খুশি হয়ে একটা কলম উপহার দিয়েছিল। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পরি। সেদিন আমি এই লেখার প্রতিভার সঙ্গে প্রথম বার পরিচিত হলাম। তারপর বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা আমার গ্রামের স্কুল ছাড়িয়ে শহরে মেজো মামার কাছে পড়তে পাঠায়। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এমনি যে মামার কাছে এসে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। মামিমার ফাইফর্মাস খাটতে খাটতে আমার দিনর মধ্যে একটা মুহূর্তও ফাঁকা যেত না। কিন্তু আমি তখন লিখতাম। ক্যালেন্ডারের পেছনের পাতায় কখনো দাদাদের পুরোনো ফেলে দেওয়া খাতায়।.....লোকে বলে ভালো লিখতে গেলে নাকি পড়তে হয়। কিন্তু আমি পড়তাম না পড়বার সময়ও পেতাম না। আর সেই অভ্যাসটা এখনো আমার থেকে গেছে। আমি অবেক
দিয়ে লিখি ভাষাকে অবলম্বন করে। ......... আমার লেখায় তথ্য সমগ্রহ কম থাকতো বলে আমার লেখা কেও গ্রহণ করত না। আমি একটু বড় হলে অনেক জায়গায় নিজের একটু স্থানের জন্য ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু এই প্রতিযোগ্গিতার দুনিয়ায় আমাকে বার বার হতাশ হতে হয়েছে। অনেকে আমায় সেলাইয়ের কাজ , রান্নার কাজ করে রুজিরোজকার করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি আমার আদর্শ থেকে একচুলও নোরিনি। আমি আমার ছেলেমানুষ বুদ্ধি দিয়ে একটা বাংলা ম্যাগাজিনের কোম্পানিতে নিজের সাক্ষাৎকার দিতে গেলে সেখান থেকেও আমি বিতাড়িত হই । ওরা বলে আমি বাংলা লিখতে পারলেও আমার তো বাংলায় কোনো এম.এ বা বি.এ ডিগ্রি নেই। কি করে আমি চাকরি করবো ? আমি বাস্তবে যা অনুভব করতাম , সমাজে চলার পথে যেগুলোকে খুব সুক্ষ বিষয় অথচ লোকের চোখে পরে না সে সব বিষয়কে কেন্দ্র করেই আমার পেন চলতো। আজও আমি তাই লিখি। এর জন্য আমার বাংলায় এম.এ বা বি.এর দরকার হয় না। তাই এই আটতিরিশ বছরের দীর্ঘ লেখিকা হিসেবে অসফলতার পর আজ আমার বই বেরোচ্ছে। বইয়ের মলাটের ওপর আমার নাম 'কণিকা পাত্র' জ্বল জ্বল করছে । আর তাই এই মঞ্চে বসে আমি এখনো ভাবছি যে আমি কি আজ কে লেখিকা হলাম নাকি লেখিকা ছিলামি নিজের কাছে, শুধু সামাজিক স্বীকৃতিটা আজ পেলাম।........ধন্যবাদ।"