ব্যানার্জী বাড়ি
ব্যানার্জী বাড়ি
ব্যানার্জীরা নির্বংশ হয়ে গেছে। অভিশাপ মুক্ত হয়ে গেছে তবু গ্রামের লোকজন ওদিকে ঘেঁসে না। ব্যানার্জী বাড়ি সাথে এক সময় বেশ ঘনিষ্ঠা ছিলো। ও বাড়ী ভাগ্নি ছিলো শ্রাবন্তী, এক সময় ও সাথেই এই বাড়িতে গিয়ে ছিলাম অনেক বার। অভিশাপে হাত থেকে রেহাই পেতে ওর দিদি দা এ বাড়ি থেকে ওদের খামার বাড়িতে চলে গিয়েছিল, বংশের একটা ছেলে ই বেঁচে ছিলো, ওর মামাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কোলকাতায় । কিন্তু ঘটনা চক্রে উনি এসে পড়েন একদিন গ্রামে , আর সেই দিন সন্ধ্যায় রক্ত বোমি হয়ে মারা যায় , উনি। লোকজন বলেছিলো, ঐ দিন ব্যানাজী বাড়ির নাচ ঘরে শেষ আসা বসিয়ে ছিলো কমলা বাই। তারপর আর কোন দিন গভীর রাতে গানের নাচের শব্দ পাওয়া যায় নি ব্যানাজি বাড়ি থেকে।
অভিশাপ মুক্ত হয়ে এক প্রকার আমার জীবনে এনেছিলো অভিশাপ। এই অভিশাপ কথা আগে পাত্তা দিতো না আমার বাড়ি লোকজন। এ বাড়ি নিয়ে লোক কথা ছিলো ভয়াবহ। এবাড়ির মেয়েদের ও কোন দিন নাকি ছেলে হবে না। ওর মামার মৃত্যুর পর তাই আমার শ্রাবন্তীর বিয়ে ভেঙে দিলো মা। বারো বছর কেটে গেছে , এখনো ব্যানার্জী বাড়ি ভুতের বাড়ি মতো ই পরে আমি। সেই দিন লিটল ম্যাগাজিন মেলায় ওর মাসতুতো দিদি মামুনি সাথে দেখা হতেই বললাম ওটা যদি ওরা বিক্রি করে। ওরা রাজি হয়ে গেল।
প্রায় জলের দরে ঐ বাড়িটা কিনে নিলো, প্রসন্জিতরা। প্রসন্জিত বাবা অনেক বছর ধরে এ বাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন স্যুটিং স্পট করবে ওটা। শ্রাবন্তী কে অনেক বার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উনি, সেটা আবশ্য দশ পোনেরো বছর আগের কথা।
জমি টা কেনার একসপ্তাহ হয়নি ভোর আমার বাড়ি প্রসন্জিত আর ওর বাবা এসে হাজির । পুরো টিম নিচে অপেক্ষা করছে। একটা ভুতের ওয়েব সিনেমা বানিয়ে ফেলবে আজ ওরা। গল্পটা রেডি, স্ক্রিপ্ট বানানোর জন্য আমাকে চাই। ও কানে কানে বললো আজ " সম্পূর্ণার কাজ নেই তাই চল just একটা picnic করে আসি কাজের বাহানায়।"
শহর থেকে এটা বেশি দূরে নয়, ঘন্টা খানেকের মধ্যে জায়গা টা আমার খুব প্রিয় , বিশুদ্ধ গ্রাম। সবুজ ঘেরা একটা নরম সকাল বেলায় হাজির হলাম ব্যানার্জী বাড়িতে। হয়তো বাচ্চা ছেলে মেয়ে এখানে এখন খেলা ধুলা করে। নয়তো এতো বড় উঠানে একটি গাছে পাতা পড়ে নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খুব বাড়িটা এ বাড়িতে লোক বাস করে না কেউ বলতে পারে না। শুধু মাত্র কয়েকটা বট গাছ আঁকড়ে ধরে আছে বাড়িটাকে।
শুটিং করতে এসি দেখে কিছু ছেলে মেয়ে হাজির হলো এখানে। একটা মেয়ে বেশে সুন্দরী, শারীরিক ভাবে যথেষ্ট পরিপূর্ণ। প্রসেনজিৎ এর বাবা কাছে হাজির, হয়ে বললো " আমাকে তোর সিনেমায় নায়িকা করবি। আজ তোদের সব কাজ আমি করে দেবো রান্না বান্না, ঘর গুছানো সব। আমাকে তোর গল্পের নায়িকা কর না। " আমরা হাসাহাসি করছি দেখে । সবাইকে অবাক করে আমার দিকে এসে, সম্পূর্ণার দিক তাকিয়ে ও বললো " লেখক বাবু ও বুঝি, তোদের নায়িকা , তা এ বাড়ি নিয়ে বই করতে গেলে তো, দুই টো নায়িকা লাগবে ব্যানাজী বাড়ির গিন্নি সাবিত্রী পারিয়াল, আর কমলা সুন্দরী। কিন্তু কে রূপচাঁদ আর মামা বাবু হবে।"
প্রসন্জিতের বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলো , দর দর করে ঘাম শুরু করলো উনার। আমি মেয়েটাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইতাম সুযোগ হলো না। মেয়েটার জন্য হয়তো ওর বাবা বেঁচে গেলেন। উনাকে কোলে তুলে একটা ঘর শুয়ে দিলো মেয়েটাই। অদ্ভুত ভাবে ঘরটা যেনো কেউ রেডি করে রেখছিলো আমাদের জন্য। শ্রাবন্তীর দিদার ছিলো পারিয়াল এ কথা কারো জানা কথা নয় , বিশেষ করে মামা বাবু বা রূপচাঁদ কথাও কারো জানার কথা নয়।"
সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে প্রসন্জিতের বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করল " মেয়ে টা কে বললো তো". উনার কন্ঠে ভয় জরিয়ে আছে ভয়।
প্রসন্জিতটা বদলানো বাবা অসুস্থ অথচ ও বলছে , আজ রাতে হবে ডবোল ধামাল। ভুতের কান্ড গুলো নাহয় বাদ দিলাম, ওই মেয়েটি কোন ভাবে জানে এ বাড়ি আসল ইতিহাস। ও আপনাদের বলে নিই এ বাড়ির আসল কাহিনী। লোকে জানে কমলা বাইজির খুন করেছিলেন সতীস ব্যানার্জী পিতা বঙ্গবন্ধু ব্যানার্জী। যেহুতু অন্তসত্ব হয়ে গিয়েছিল সে। আর বঙ্গবন্ধু আত্মহত্যা করে লজ্জা আর অনুশোচনায়। আর কমলা সুন্দরী অভিশাপ দেন ওর বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে।
কিন্তু আসল গল্প ছিলো , যাকে মামা বাবু বলা হয়েছে সে হলো প্রদীপ পারিয়াল , সতীশের সাথে। বন্ধুত্ব এর সুবাদে ব্যানার্জী বাড়িতে ওর আসা যাওয়া হলো। সে সময় থিয়াটার, সিনেমা সাথে ও যুক্ত ছিলো প্রদীপ। কমলা সুন্দরী কে বঙ্গবন্ধুর রক্ষিতা হিসেবে উপহার দিয়ে নিজের বোন সাবিত্র বিয়ে দেয় ও সতীশের সাথে। কোন একদিন হিসাবে নিকাশের গন্ডগোলে হওয়ায় সতিশ ওর বাবা বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করেন। কমলা বাই সে খুন দেখে ফেলে এদিকে সতীশ নাকি কমলা সুন্দরী অন্তঃসত্ত্বা করে ছিলো। তাই ওকে রক্ষা করতে নাকি মামা খুনে দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়।
যদিও দিদা মানে সাবিত্রী দেবী সব সময় বলতো আমায় কমলা সুন্দরী ভালো। ও কারো ক্ষতি করতে পারে না, মামা বাবু নাকি সিনেমা কাজ দেবে বলে এসেছে ছিলো ওকে। মামা বাবু এ বাড়ি অভিশাপ মুক্ত হবে।
বেশ দিন টা ভালো ই কাটলো সবার শীতকাল ঝুপ করে সন্ধা নেম এলো। যাইহোক ওরা দিনের বেলায় ইলেকট্রিক লাইন টা নিয়ে এনে নিয়েছিলো তাই এ যাত্রায় বাঁচোয়া। খাওয়া প্রায় শেষ এর পথে, সম্পূর্ণাকে একটা নোংরা ইসারা করলো। উওরে সম্পূর্ণা বলো " একদম দুষ্টুমি নয় , আমি এখনি শুয়ে পরবো। "
কথা শুনে ই ওই সন্দেহজনক মেয়েটার মাথাটি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে গেলো। " ওরা কেউ আজ শোবেনা আজ গভীর রাতে এখানে জলসা বসবে । কমলা সুন্দরী আজ শেষ বারের মতো নাচবে। "হঠাৎ মেয়েটির হাত টা ফুট ত্রিশকের মতো লম্বা হয়ে গেল। প্রসন্জিতএর বাবা গলা টিপে ধরে বললো" কিরে রূপচাঁদ, তুই সেই দিন না নিয়ে যেতে পারা গয়ণা গুলো খুঁজবি না রাতের বেলায়। আমি তোকে দেবো সব গয়ণা। তোর বাবা আমাকে নায়িকা করবে বলে এনেছিলো কিন্তু করে নি, তুই অন্তত আমাকে নায়িকা কর।"
হঠাৎ সব ব্লাব গুলো নিভে গেল স শব্দে। জোড়ে আওয়াজ করে ফেটে গেলো গাড়ির টায়ার গুলো। কুলঙ্গী তে জলে উঠলো প্রদীপ। আমি প্রায় অর্ধেক অজ্ঞান হয়ে গেলাম ভয়ে। অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলাম। ও বলল " রূপচাঁদ তোর তখন কত বয়স, খুব বেশি হলে ষোলো সাতেরো, তোকে আমি ছেলের মতো ই দেখতাম। অথচ তুই আর তোর বাবা মিলে মেরে ফেললি আমাদের তিন জনকে, আর ব্যানাজী বাড়িকে বদনাম করে গল্প রাটালে। ছেলে বাবা কে খুন করছে, একটা রক্ষিতার জন্য।"
তখন বেশ গভীর রাতে চোখ খুলে দেখি, মাথায় একটা চেনা হাত। জ্বর পরীক্ষা করছে , এক জোড়া চোখ। মামুনি বললো "আর জ্বর নেই, জ্ঞান ফিরেছে। আমি চললাম রে। "
বেড়াবার আগে সেই আগের মতো শাসন করে বলে গেলো।" মামুনি উনাকে বলে দে, ভুতের গল্প লিখতে একা রাতে ভিতে ভুতে বাড়ি থাকতে হয় না। ভুত না থাকুক অন্য বিপদ থাকতে পারে।"
সকালে চা জল খাওয়া সাথে পেপার দেখে অবাক। প্রসন্জিত আর সম্পূর্ণা পথ দূর্ঘটনায় মারা গেছে। সেই শোকে ওর বাবা হার্ড অ্যটাকে মারা গেছে।"
আর সব ক্র মেম্বারদের খবর জানতে আমি ফোন করলাম বিশ্বজিৎ দাকে। ওপার থেকে বললো" কমলা সুন্দরী মহিলা খুব ভালো আমাদের রাতের বেলায় ছেড়ে দিয়ে ছিলো। শুধু তোকে রেখে দিলো বললো" এতো দূর এসেছে, একবার ও ওর ভালো বাসার সাথে দেখা করে যাক।"