বৃষ্টিমুখর এক বিকেলে
বৃষ্টিমুখর এক বিকেলে
শ্রাবনের প্রায় মাঝামাঝি। অঝড়ে বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে মুখােরিত চারপাশ।এমনই এক বিকেলে আমি জানালার পাশে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছি আর বৃষ্টির সেই ঝমঝম আওয়াজ উপভােগ করছি। ঠিক এমন সময় বাবা এসে চমকে দিয়ে বললেন- " চলাে ঘুরে আসি।"আমি আকুল আগ্রহে তাকিয়ে বললাম-"চলাে"বৃষ্টি যেন কমছে, কমছে যেন তার ঝমঝম শব্দ। বাবা আর আমি হাঁটছি পিচঢালা রাস্তায়। রাস্তাটা যেন আজ সেজে উঠেছে। নতুন রূপে, কোথাও যেন কোনাে ধুলাে নেই। বৃষ্টির পানি যেমন রাস্তার সমস্ত ধুলােদূর করে দিয়েছে, তেমনি প্রকৃতির সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়েছে।নবরূপে প্রকৃতি সেজে উঠেছে আজ নতুন করে।আমাদের সাথে অনেকেই হাঁটছে এ রাস্তা ধরে, সকলের গন্তব্য ভিন্ন, কর্মব্যস্ত এই শহরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবার যেন কোনাে সুযােগই নেই! তবুও আজ বৃষ্টিতে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে প্রকৃতির মাঝে এসেছে অনেকেই,আমরাও এসেছি। বৃষ্টি যেন আজ সুযােগ করে দিয়েছে প্রকৃতিকে ভালােবাসার, প্রকৃতির মাঝে বাঁচার।হঠাৎ বৃষ্টি থেমে, ঘন কালাে মেঘ সরে গিয়ে দূর পশ্চিমে ঝলমলে রােদের আভা দেখা দিল।সেই ঝলমলে রােদ পিচে পড়তেই, পিচ যে রুপাের মত চকচকে হয়ে উঠলাে। চিকচিক করছে চারিধার, মনে হচ্ছে পিচের উপর যেন রুপাে ছড়ানাে আছে।গােধূলির এমন সময়ে বাবা আমার হাতটি ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন- "রংধনু!" ঠিক তােমার মতােই বিস্তৃত, প্রসারিত হয়ে উঠেছে পুরাে আকাশ জুড়ে। আমি কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বললাম-"আমার মতাে?" শুনে বাবা বললেন- "তােমার হাসি বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই গােধূলি বেলায়। এ হাঁসির যেন কোনাে তুলনা নেই।"আমি দেখছি বাবাকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি।বাবার চোখদুটো যেন ছল ছল করছে আনন্দের উচ্ছলতায় আর গভীর বিয়ােগ ব্যথায়। কিসের যেন শূন্যতা বাবার চোখে, নিস্তব্ধ হাহাকারে বুক ফেটে যায় কিন্তু কিছু বলার নেই, সুযােগ নেই কিছু প্রকাশের।পিচঢালা এই রাস্তায় যেন আর কেউ নেই শুধু "আমি আর বাবা"!!!!