STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

❤💞বন্ধুত্বের বন্ধন💞❤

❤💞বন্ধুত্বের বন্ধন💞❤

5 mins
264

চারিদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটা নির্জন, সুন্দর বড় বড় গাছ দিয়ে ঢাকা জায়গা, সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। কুয়াশার চাদরে চারিদিক ঢাকা, সূর্য ধীরে ধীরে পাহাড়ের কোল ছেড়ে উঠছে পূর্ব আকাশে। ঠান্ডা একটা বাতাস সারা শরীরে শিহরন জাগিয়ে তুলছে। লীনা, সাম‍্যর হাত ধরে একটা পাহাড়ের উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে দুচোখ ভরে দেখছে।

লীনার জীবনে আজকের সকালটা অন‍্য রকম ভাবে শুরু হল, পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে যে টুকু দুরত্ব এবং ভুল বোঝাবুঝি গড়ে উঠেছিল প্রাচীরের মত ওদের মধ‍্যে সেই সব মিটে গেছে, নতুন করে আবার সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে দুজন মিলে। তাই নিজেদের সবথেকে প্রিয় জায়গায় সুন্দর প্রকৃতির পরিবেশের মধ‍্যে নিজেদেরকে নতুন করে ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধতে চাইছে।

কয়েক মাস ধরে লীনা আর সাম‍্যর ওপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল, এই ঝড়ে ওদের ভালোবাসার খুঁটি নড়ে গেছিল ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে যায় নি তাই নতুন করে সবকিছু শুরু করার আলোর পথের সন্ধান মিলেছে আর ওরা সেই আলোর উৎসকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলার শপথ নিচ্ছে আজ। লীনা আর সাম‍্যর জীবনে এই আলোর উৎস হল ওদের ভালোবাসার সন্তান, যে আসতে চলেছে। যেটা এক সপ্তাহ আগে লীনা আর সাম‍্য দুজনে জানতে পেরেছে। 

ভুল, বোঝাবুঝি যাই হোকনা কেন লীনা আর সাম‍্যর ভালোবাসাটা নিখাদ ছিল সেখানে কোন রকমের খাদ ছিলনা। সেই কোন ছোট্ট বেলায় সাম‍্য বাড়ির সবার সামনে লীনার হাত ধরে বলেছিল তুই আমার বউ হবি লীনা, তাহলে আমি কোনদিনও তোকে বোকবনা, মারবোনা। আমার সমস্ত খেলার জিনিস তোকে দিয়ে দেব।

লীনা বলেছিল সত‍্যি বলছো সাম‍্য দাদা আমি তোমার বউ হলে তোমার খেলার সমস্ত জিনিসে আমাকে হাত দিতে দেবে আর বোকবেনা।

সাম‍্য বলেছিল হ‍্যাঁ সত‍্যি

লীনা আনন্দ সহকারে মাথা নেড়ে বলেছিল হ‍্যাঁ আমি তোমার বউ হব।

ওদের কথা শুনে বাড়ির সবাই খুব হাসাহাসি করেছিল, এবং নিজেদের মধ‍্যে কথা বলে ঠিক করেছিল ভবিষ্যতে সত‍্যি করে এই সম্পর্কের পরিনতি ঘটাতে হবে। তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে সাম‍্য আর লীনার সেইদিনের দেওয়া কথার কোন পরিবর্তন হয় নি কারন দুজন দুজনকে মনে মনে কখন একে অপরের জীবনসঙ্গী বানিয়ে নিয়েছে নিজেরাও বুঝতে পাড়েনি। খুব ধুমধাম করে লীনা আর সাম‍‍্যর বিয়ে হয়েছিল। বাড়ির লোকেরা খুব খুশি ছিল কারন লীনা আর সাম‍্যর বাবার বন্ধুত্বটা ওদের মাধ্যমে নতুন একটা সম্পর্কে পরিনতি লাভ করেছিল।

সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল লীনা আর সাম‍্যর জীবনে কিন্তু এক বছর পার হতেই লীনা কেমন বদলে যেতে লাগল, এবং তার সাথে সাথে সাম‍্যর প্রতি খুব পজেসিভ হয়ে উঠল। যত সময় পার হতে লাগল লীনা ততই সন্দেহ বাতিক হয়ে উঠতে লাগল। সাম‍্যর ফোনে কোন মেয়ের ফোন আসলেই লীনা রিয়াক্ট করত, সাম‍্য লীনাকে বুঝিয়ে উঠতে পাড়তনা যে ওর কাছে কাজের সূত্রে সারাদিন হাজার ফোন আসে এবং সেই ফোনে কখনও ছেলে অথবা কখনও মেয়ে থাকে। কিন্তু লীনা সেই সব কথা মানতে নারাজ।

অবশ‍্য এর পিছনে লীনার খুব বেশি দোষ দেওয়া চলেনা কারন ছোট থেকেই লীনার মানসিক একটা সমস‍্যা আছে এবং সেটার জন‍্য লীনার ট্রিটমেন্ট চলে, আর সাম‍্য আগে লীনাকে যতটা সময় দিত সংসারের চাপে পড়ে সেই সময় টুকুও এখন দিতে পাড়েনা তাই লীনার মনে কোথাও একটা ভয় বাসা বেঁধেছে যে যে সাম‍্য আর আগের মত ওকে ভালোবাসেনা।

তবে সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে লিমিটের বাইরে চলে গেলে সহ‍্য করা কঠিন হয়ে যায়। সাম‍্যর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। সাম‍্য লীনার সমস‍্যার ব‍্যাপারে সব জানে তবুও মাঝে মাঝে রিয়াক্ট করে ফেলে,আসলে মন কি অতসত বুঝতে চাই! সাম‍্য যখন চোখের সামনে দেখে যে ও যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে সেই মানুষটাই ওর ভালোবাসা কে সন্দেহ করছে, এবং ওর দিকে আঙ্গুল তুলছে তখন ভীষণ কষ্ট হয় মনের মধ‍্যে আর সেই কষ্টটা রাগ হয়ে বেড়িয়ে আসে।

এই ভাবেই পার হচ্ছিল ওদের জীবন কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে সাম‍্য আর পেরে উঠছিলনা, কারন ওর চাকরির ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়ে ছিল, সেই মানসিক চাপ আবার বাড়ি এসেও আরেক মানসিক চাপ। সাম‍্য কোথাও একটু মানসিক শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলনা, তাই রাগের মাথায় লীনার গায়ে সেদিন হাত তুলেছিল এবং বলেছিল আমি আর পারছিনা প্লিজ এইবার আমাকে একটু মুক্তি দাও! আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তোমাকে ভালোবাসা। আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই আর তোমার সাথে আমি থাকতে পারছিনা।

সাম‍্যর মুখে এই রকম কথা শুনে লীনা জ্ঞান হারায়। মুহূর্তের মধ‍্যে সাম‍্যর চোখে রাগের জায়গায় ভয় ফুটে ওঠে আর সেই ভয় হল কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয় কারন লীনার ডাক্তার বলেছে লীনা মানসিক ভাবে আঘাত পেলে ওর পক্ষে সেটা খুব বিপদজনক। সাম‍্য চিৎকার করে ডাকতে থাকে লীনা এই লীনা চোখ খোলো প্লিজ, আমার ভুল হয়ে গেছে এই রকম ভুল আর কখনও হবে না, প্লিজ চোখ খোলো।

বহু চেষ্টা করেও লীনার চোখ যখন খুললোনা তখন সাম‍্য লীনাকে নিয়ে ছুটল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার ভালো করে দেখে বলল সেই রকম ভয়ের কিছু নেই মানসিক চাপ এবং দূর্বলতার কারনে জ্ঞান হারিয়েছে। আমি ওষুধ দিয়ে দিয়েছি আর কালকে এই টেস্ট গুলো করিয়ে আমাকে একবার রিপোর্ট গুলো দেখাবেন।

সেইদিন রাতে সাম‍্য দুচোখের পাতা আর এক করতে পাড়েনি, পরেরদিন সকালে সমস্ত টেস্ট করে তখন সাম‍্য জানতে পারে লীনা প‍্রেগন্টেট। এ খবরটা জানার পর সাম‍্য নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা আনন্দে লীনাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। লীনাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে। আস্তে আস্তে সবকিছু আবার ঠিক হতে শুরু করে।

লীনার মন ভালো করার জন‍্য সাম‍্য আজ সকালে লীনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। সাম‍্য লীনাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে..... আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি লীনা, আর সব সময় বাসবো তুমি সব সময় আমার পাশে থেকো কোনদিন আমাকে ছেড়ে দিওনা তাহলে আমি আর বাঁচবনা।

লীনা সাম‍্যর চোখে চোখ রেখে বলে আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। আর কথা দিচ্ছি কোনদিনও তোমাকে সন্দেহ করবনা, আসলে.....

সাম‍্য বলে উঠল থাক না লীনা ওসব পুরনো কথা, আমরা আজ থেকে নতুন করে পথ চলা শুরু করব আমাদের সন্তানের এই পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায়। বলছি অনেকদিন তোমার গলায় গান শুনিনি এই সুন্দর সকাল শুরু হোক তোমার গান দিয়ে। আমার জন‍্য একটু গাইবে প্লিজ.......

লীনা সাম‍্যর বুকে মাথা রেখে গুনগুনিয়ে ওঠে......


"আমি..... তোমার.......প্রেমে হব.....

সবার কলঙ্কভাগী........ ।

আমি.... সকল দাগে.... হব দাগি ॥

তোমার.... পথের কাঁটা করব.... চয়ন ,

যেথা তোমার......ধুলায় শয়নসেথা........ আঁচল....... পাতব আমার –

তোমার..... রাগে....... অনুরাগী ॥"


.সমাপ্ত..





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance