Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Gopa Ghosh

Inspirational

5.0  

Gopa Ghosh

Inspirational

বন্ধুত্ব

বন্ধুত্ব

7 mins
799


শুভর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেলো আজ। রোজকার মতই হাত পা ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে খাবারের ঢাকা খুললো।

"মা, কি সব রেখেছ আমার জন্য, জানো না রুটি আমি খেতে পারিনা"

কথাটা বলে চুপ করে বসে রইল।

"আজ আর কিছু করতে পারি নি, রাতে চিকেন করবো, তোর বাবা আনবে বলে গেছে"

চিকেনের নাম শুনে শুভর মেজাজ মুহূর্তে বদলে যায়,

ও ঠিক আছে, একটু আচার দাও দেখি"

মা হাসতে হাসতে আচার আনতে যায়।

বাইরে কলিংবেলের আওয়াজ। শুভ উঠে খুলে দিতে যায় দরজা।

"মা বাবা এসেছে" বলেই আবার বসে পড়ে চেয়ারে। বাবার হাতে কোন প্যাকেট না দেখে ও বলে ওঠে

"কিগো বাবা চিকেন আনোনি?"

"না আনিনি,"

বাবার মেজাজটা ঠিক ভালো মনে হয় না শুভর। বাবা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে চলে যায়। শুভর মেজাজটা আবার বিগড়ে যায়। না খেয়েই ঘরে গিয়ে টিভি টা খুলে সোফায় বসতে বসতে নিজের মনে মনেই বলে "কি যে হয় মাঝে মাঝে বোঝা মুশকিল"

না আর মুশকিল হল না,

"কি রে শুভ, আজ আবার ওই রবির সাথে কোথায় গিয়েছিস, তাই এত আসতে দেরী হলো, ভাগ্যিস বাবার চোখে পড়েছে তাই জানতে পারলাম" কণিকা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শুভ চিৎকার করে উঠলো "তোমরা আমাকে কি ভাবো বলতো মা, আমি কি বন্ধুদের সাথে মিশতেও পারবোনা? আর রবি আমার বন্ধু, ব্যাস এর চেয়ে বেশি আর কিছু আমি জানতে চাই না, তোমরা কেনো সবসময় আমাকে বারণ কারো আমি কিছু বুঝতে পারি না"

শুভর কথা শেষ হওয়ার আগেই শঙ্কর এর গলা "তোর মা বাবা যেটা করে তাতে তোর ভালই হবে, তাই রবির সাথে তোকে যেনো ভবিষ্যতে আমি আর বেড়াতে যেতে না দেখি।

"কেন বাবা তোমরা আমাকে রবির সাথে মিশতে বারণ করো? ও আমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু স্কুলের মধ্যে, ওর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না এটা তোমাদের আজকে বলে দিচ্ছি শুনে রাখো"

তোকে বোঝানো মুশকিল আর তোকে বোঝানোর দরকার নেই" বাবার গলায় রাগ উপচে পড়ছে।

শুভ আর কি করবে ঘরে চলে গেল।

শুভ অবশ্য এ ব্যাপারটা জানে না তা নয়। বাবা-মায়ের কথা কয়েকদিন আড়াল থেকে শুনেছে। বাবার মতে রবির মায়ের চরিত্র ভালো নয়। রবির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রবির মা বাইরে খুব খারাপ কাজ করে সংসার চালায়। রবি এখন অনেকটাই বোঝে। তবে এটা ওর বোধগম্য হয় না এর জন্য ওর বাবা-মা রবিকে কেন দায়ী করে? রবি এত অভাবে মধ্যেও পড়াশুনায় কত ভালো। কোনো বার সেকেন্ড হয়না প্রতিবারেই ও ফার্স্ট। পড়াশুনায় রবি কেও ও কত সাহায্য করে। শুভর বাবা মা এটা শুনলে শুভকে হয়তো স্কুলে আর পাঠাবে না। আজ শুভ সত্যি সত্যি রবির বাড়িতে গিয়েছিল। কয়েকদিন ধরে রবি স্কুলে আসছে না। আজ মুকুল এর মুখে শুনল রবির মা খুব অসুস্থ। তাই দেখতে গিয়েছিল ও আর মুকুল। সত্যি কাকিমাকে দেখলে মনেই হয় না যে কাকিমা এরকম কিছু করতে পারে। রবির মনে হয় ও বাবা মাকে এসে বলে এসব তোমরা মিথ্যে ভাবো কাকিমা এরকম নয়।

কিন্তু এটাতো শুভর পক্ষে বলা কখনই সম্ভব নয়। বাবা তো তাহলে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দেবে।

আজও প্রথম রবির বাড়ি গেল। রবি কিন্তু জানেনা যে শুভর বাবা মা ওর সাথে মিশতে বারণ করে। যদি জানতো ,ওতো রবিকে চেনে তাহলে রবি নিজেই শুভর সাথে মিশতো না। রবি অন্য ছেলেদের মত নয়। সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই থাকে। এরপরে যে সময়টুকু বাঁচে ও একটা বাড়িতে খাতা বাঁধাইয়ের কাজ করতে যায়। শুভ ভাবে বাবা মা যে কথাটা বলে তা যদি সত্যি হয় ,ওদের এত কষ্ট করার দরকার কি, তাহলে কি সব মিথ্যে কথা?

এর পর এক সপ্তাহ বাদেই রবির সাথে শুভ কে দেখে শুভর বাবা রাস্তার মধ্যে ওর গালে সপাটে চড় মারল। রুবি কিছু বুঝতে না পেরে ছুটে এসে শুভ কে জড়িয়ে ধরলো। এবার শুভর বাবা আর মাথা ঠিক রাখতে পারল না। রবির সামনে শুভ কে বলে বসলো"তোকে বলেছি না রবির সাথে মিশবি না, তুই ওর মায়ের কথা জানিস না? ও একটা নোংরা পরিবারের ছেলে"

শুভ আর রবির দিকে তাকাতে পারলো না। বাবা একি করলো। রবি তো আর কোনদিন শুভর সাথে মিশবে না সেটা শুভ ভালো করেই জানে। ও দেখল রবি ছুটে বাড়ির দিকে চলে গেলো। ব্যাস আর দুজনের দেখা হয়নি দেখা হলো অনেক বছর পর তখন শুভ একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করে। তবে স্যালারি খুব একটা ভালো না । তাই অন্য চাকরির ইন্টারভিউ এলে মিস করে না খুব একটা।

সেদিন শুভর মনটা বেশ খুশি খুশি ছিল। এতদিন পরে ওর স্বপ্নের কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ র চিঠি এসেছে। এই নিয়ে চারবার ও অ্যাপ্লাই করেছিল কিন্তু এবার ইন্টারভিউটা দিতে যেতে পারবে। মাকে কিছু জানালো না কারণ মা বড় বেশি টেনশন করে আর বাবা তো বিছানা নিয়েছে প্রায় ছ মাস হয়ে গেলো।

"মে আই কম ইন স্যার?"

শুভ আস্তে করে দরজাটা ঠেলে দাঁড়িয়ে থাকলো

"ইয়েস, কামিং"

ঘরে তিনজন। একজন মহিলাও আছেন। কিন্তু মাঝের জনকে দেখে শুভর খুব চেনা লাগলো। না না চেনা নয়, এটা তো রবি, ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। শুভ চিয়ারে বসার অনুমতি নিয়ে বসে পরলো।

ইন্টারভিউতে ওর আগের কোম্পানি সম্বন্ধে কিছু কথা হলো। ও দেখল রবি খুব একটা কথা বলছে না। ভদ্রমহিলা আর রবির পাশে বসা একজনই শুধু ওর সাথে কথা বললেন। শুভ বুঝতে পারলো রবি তাকে চিনতে পারে নি। হতেই পারে ও কোথায় একটা ছোট ফার্মের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আর রবি দেশের প্রায় এক নম্বরে থাকা কোম্পানির এম ডি।


সাতদিন গেলো না শুভ জয়নিং লেটার পেয়ে গেলো। এবার ও মাকে বলল। মা তো খুব খুশি। সামনের মন্দিরে পুজো দিয়ে তার প্রসাদ খাইয়ে তবে শুভকে প্রথম দিন অফিস পাঠালো। শুভ সারাটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে গেলো, যে রবি তাকে চিনতে পারে নি এটা ভালই হয়েছে তার পক্ষে। ওর বাবার করা অপমানটা শুভ এখনও ভুলতে পারে নি। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে ও অনেক রাত ঘুমোতে পর্যন্ত পারে নি। গুমরে গুমরে কেঁদেছে। বাবা মা হয়তো ছেলেকে তার খারাপ বন্ধুর সংসর্গ থেকে দূরে সরিয়ে মনে মনে তৃপ্তি পেয়েছে।

সাত দিন হয়ে গেলো শুভর কাজে যোগ দেওয়া কিন্তু এর মধ্যে রবিকে ও আর দেখে নি। রঞ্জন সেন শুভর পাশের টেবিলে। ওর কাছে রবির কথা কিছু শুনেছে। তবে বন্ধুত্ব র কথাটা জানতে দেয় নি।

সেদিন অফিসে ঢুকেই শুভ শুনলো এম ডি ওকে ডেকেছে। মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও শুভ এমডির ঘরের দরজাটা খুলে বলল"মে আই কাম ইন স্যার?"

এবার শুভকে খুব অবাক করে দিয়ে রবি বলে উঠলো"আয় শুভ আমি তোকে চিনতে পেরেছি"।

তখন শুভর মুখে কোন কথা বের হচ্ছিল না। আবার রবি বলে উঠলো

"কাকা কাকিমা কেমন আছে রে?"

শুভ তখনও তার বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একটু চুপ থেকে উত্তর দিলো

"ভালো নেই বাবা তো অনেকদিন ধরেই শয্যাশায়ী, আর মায়ের তো শরীর ভালো নয়"

এবার রবি কিছু বলতে যাচ্ছিল। ওকে থামিয়ে শুভ বলে উঠলো

"আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে চিনতে পারিস নি, রবি তুই যদি পারিস আমাকে ক্ষমা করে দিস, জানিস সেই ঘটনাটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি, তারপরে অনেকবার তোদের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তোদের বাড়িতে তালা দেখে ফিরে এসেছি।"

এটুকু বলে শুভ থামল। রবি ঘন্টা বাজিয়ে বেয়ারাকে ডাকলো।

"দুকাপ কফি নিয়ে এসো তো"

বেয়ারা চলে যেতেই রবি বলল

"সত্যিই শুভ আমি কিচ্ছু মনে রাখিনি, শুধু কাকুর ওই কথাটা আমার জীবন অনেক পাল্টে দিয়ে ছিল।"

শুভ এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রবির দিকে।

"আমার মা লোকের বাড়ি বাসন মেজে আমাকে মানুষ করেছে, কিন্তু লোকে তাকে কত বদনাম দিয়েছে। আমার জন্য আমার মা সব মাথা পেতে নিয়েছে, কোন কথার প্রতিবাদ করেনি। বাসন মাজার কাজ করে এটা কাউকে বলতে চায়নি, কেননা আমার মা কারো বাড়ি বাসন মাজে এটা জানলে যদি আমার কোন অসুবিধা হয় স্কুলে, লুকিয়ে লুকিয়ে মা খুব ভোরবেলা কাজ করতে যেত আবার কখনো বেশ রাতে কাছাকাছি কিছু বাড়িতে ও কাজ করতে যেত , সবাই ভাবতো মা বোধহয় কোনো খারাপ কাজ করে, আমি তখন এতই ছোট যে মাকে সাহায্য করতে পারতাম না, তাও বই বাঁধাই এর দোকানে কিছু কাজ করে যা পেতাম মাকে এনে দিতাম, যেদিন কাকু রাস্তায় তোকে চড় মারলো আর আমার মাকে খারাপ কথা বললেন আমি সেদিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমাকে বড় হতেই হবে।আমার মায়ের বদনাম আমাকে ঘোচাতেই হবে, তুই মন খারাপ করিস না শুভ ইন্টারভিউর দিন আমি তোকে দেখে কথা বলিনি তার কারণ আমি জানতাম তোর চাকরিটা খুব দরকার , কেউ না ভাবে আমি আমার বন্ধু বলে তোকে চাকরিটা দিলাম।"

শুভ এতক্ষন চুপ করে শুনছিল রবির কথা। এবার বলল "আমার বাবার জন্য আমি খুব লজ্জিত রবি, পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস। "

এবার রবি চেয়ার থেকে উঠে শুভর কাছে এসে দাঁড়ালো। কাঁধে হাত রেখে বলল

"ওসব কথা ছাড় আমরা শুধু দুজন বন্ধু"

মুখে হাসি এনে আবার রবি বলল

"বিয়ে করেছিস"?

শুভ এর উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলল

"তুই করেছিস"?

"না এখনো বিয়ে করিনি, তবে কথা ঠিক হয়ে আছে, মাএত জোর করে আর কি করবো বল"?

এরপর দুজনেই সেই ছোটবেলার স্কুলের কোথায় মেতে উঠলো। কফি খেতে খেতে দুজনে সেই গল্প করতে করতে কখন যে এক ঘন্টা কেটে গেছে কেউ বুঝতে পারেনি। শুভ বুঝলো রবি তার অনেক খবরই রাখতো। যখন রুবি ওকে জিজ্ঞেস করল "শুভ কাকুকে একটা ভালো নার্সিংহোমে ভর্তি কর, যা খরচ হয় তোর অফিস বেয়ার করবে,"

শুভ কথার কোন উত্তর দিতে পারল না, শুধু অপলক দৃষ্টিতে রবির দিকে চেয়ে রইল। রবির সেই অপমানটা ওর চোখে এখনো ভাসছে। হঠাৎ শুভকে অবাক করে দিয়ে রবি বলে উঠলো

"আবার তুই সেই অপমানের কথা ভাবছিস? ও সব ভুলে যা, তুই আমার বন্ধু আমি এর চেয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে চাইনা"

শুভ কিছু বলতে যাচ্ছিল ওকে থামিয়ে রবি আবার বলে উঠলো

"শুভ আমার ওই অপমানের পর আমি জানি তুই অনেক রাত ঘুমোতে পারিস নি, কিন্তু তোর কষ্ট তুই কাউকে বলতে পারিস নি, আমি সব খবর রাখতাম কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞা পূরণ না করে আমি কারো সাথে দেখা করতে চাইনি, আজও তোর চাকরির দরকার না হলে হয়তো আমাদের দেখা হতো না। এটা ভগবানই করেছেন, আমাদের পুরনো বন্ধুত্ব আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি খাঁটি র মর্যাদা দিতে জানেন। "

এবার শুভর চোখের জল আর বাঁধ মানলো না। রবির হাতটা খুব শক্ত করে চেপে ধরলো।


Rate this content
Log in

More bengali story from Gopa Ghosh

Similar bengali story from Inspirational