বন্ধুত্ব
বন্ধুত্ব
"ভুল সবই ভুল
এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা সব ভুল ।
প্রশ্ন করি নিজের কাছে কে আমি
কোথায় ছিলেম কোথায় যাবো এই আমি?
যদি ভাবি এই আমি আর নই একা
সে ভুল।"
গানটা গাইতে গাইতে চন্দ্রিমা চোখ বন্ধ করে নেয়। চন্দ্রিমার চোখের পলক জলে ভিজে যায় ।
একজন মানুষকে চিনতে এতো সময় লাগে? এ যেন চন্দ্রিমার বিশ্বাসে কুলচ্ছিল না।
চন্দ্রিমা দে,,, একজন ডাক্তার।
যে চন্দ্রিমা সব পেশেন্টদের সাথে গল্প করত,, আজ সে ই চুপ করে থাকে । মুখ দিয়ে কোন কথাও বেরোয় না ।
কখনো কখনো হাসপাতালে যেতে একটু দেরি ও হয়ে যাচ্ছে।
সবকিছু দেখে,, হাসপাতালে যারা ওর বন্ধু, জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ।
চন্দ্রিমা " কিছু হয়নি" বলে,, পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
কিন্তু মনের যন্ত্রণা কতোদিন ই বা লুকনো যায়?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল,,,, আয়নার মধ্যে যে মেয়েটা আছে,, ওকে হাসতে হাসতে বলছে--" কিরে?? দেখলি তো,, কাউকে অন্ধবিশ্বাস করলে কেমন ঠকতে হয়। তুই একটা পুরো বোকাহাঁদা ।"
চতুর্দিক দিয়ে যেন চন্দ্রিমা শুনতে পাচ্ছিল কারা যেন চেঁচিয়ে বলছে ওকে " বোকা,,,, বোকা,,, বোকা।"
কানটাকে চন্দ্রিমা দুহাত দিয়ে আটকে নেয়।
একটা ডায়রিতে লিখতে শুরু করে--" আমার সংসারে,,,,, আমি আর আমার স্বামী আদিত্য খুবই ভালো ছিলাম । আর একটা মিষ্টি মেয়ের মুখ আমার চোখের সামনে ভাসে। যেন মনে হয় ও ই আমাদের জীবন।"
লিখতে লিখতে হঠাত্ চন্দ্রিমা ভাবে " এ আমি কি লিখছি? আমার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে?? মেয়ের কথা ভাবছি? আমার সংসার বলেই তো আর কিছু নেই? সবই শেষ হয়ে গেছে ।"
সবকিছু যেন অদ্ভুত লাগছে চন্দ্রিমার ।
যে মানুষটাকে ৫ বছর ধরে চিনত,,, একটুখানি অশান্তিতে একদম পাল্টে গেল?
বিয়ের পর কতো যায়গায় ঘোরাতে নিয়ে গেলো । পুজোর সময়,,, শারি, সালওয়ার কামিজ, পারফিউম, কতো কি কিনে দিত, আনন্দের সঙ্গে।
প্রতি বছর এতো ভালোবেসে বিবাহবার্ষিকী পালন করত,,, যে মনটা আনন্দে ভরে যেত,,, এমনকি জন্মদিনে সোনার দুল ও দিয়েছে ।
কে বলবে এটা এরেঞ্জড ম্যারেজ? মনে হতো প্রেম করে বিয়ে করেছে ।
সেই মানুষটা এতো পাল্টে গেল?? তাহলে কি সব মিথ্যে? নাটক চলছিল?
সবকিছু ভুলে গিয়ে আদিত্য পারছে সংসারটা ভেঙে ফেলতে?
সব মানুষের মুখের ওপর যেন একটা মুখোশ থাকে। মুখোশ দিয়ে মুখটা আর কতদিন ই বা লুকনো সম্ভব? মুখোশ খুলে গিয়ে,, আদিত্যর আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে ।
লর্ড বুদ্ধার একটা কথা আছে--
" তিনটে জিনিস বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখা যায় না ।
সূর্য,, চন্দ্র,, আর সত্য ।"
সব সত্যি আজ বেরিয়ে এসছে।
হঠাত্ই কলিং বেল বেজে ওঠে।
চন্দ্রিমা জানে,,, এখন আদিত্য ই এসছে। দরজা খুলে,, ও ঘরে ঢুকে যায় ।
আদিত্য--" আর কতো নাটক করবে? এবার দয়া করে শান্তি দাও ।"
চন্দ্রিমা--" আমি নাটক করছি? না তুমি করছ?? অকারণে অশান্তি,,, তুমি শুরু করেছ ।"
আদিত্য--" করাটা না স্বাভাবিক যানো । তুমি যেটা করছ,,, সেটা সহ্য শক্তির বাইরে।"
চন্দ্রিমা--" আসলে,, তোমরা,,, পুরুষরা,, মেয়েদেরকে পুতুল ভাবো । খেলা হয়ে গেলেই ফেলে দাও।"
আদিত্য চেঁচিয়ে বলে ওঠে--" তোমার কি দরকার ওখানে যাওয়ার?? প্রশংসা পাওয়ার জন্য?? কতো প্রশংসা চাও?"
চন্দ্রিমা--" তোমরা না,, মানুষ নও,, জানো ।
যে মানুষ গুলো পুরুষ হয়ে একটু শারি, কুর্তি, দুল পরতে চায়,,,, তাদের 'Gay বলে অপমান কর । ওর কি দোষ,,, ওর মন যদি এটা চায়??
ঈশানের একটু শরীর খারাপ হয়েছে বলে,,, ওর পরিবার আমায় একটু ডেকেছে । কোন ডাক্তার তো যেতে চায়না। কিন্তু,,, আমি তো সেল্ফিশ হতে পারিনা। ওর পরিবার আমায় খুব ভালোবাসে । আমি তাই ওর পাশে থাকি । এর জন্য তুমি এতো অশান্তি করছ??"
আদিত্য--" এই শোন,,, আমি, না,, অতো দয়া, মায়া দেখাতে জানি না । কান পচে যাচ্ছে আমার,, লোকের কাছে শুনে,, " তোর বউ Gay দের সাথে মেশে"।
নয়, তুমি এটা বন্ধ কর,,, or otherwise,,,, I want divorce ."
চন্দ্রিমা--" এই ডিভোর্স পেপারে আমি এখন সই করতে পারবো না । তুমি ভালো মতন জানো,, চতুর্দিকে এখন করোনা রোগ ছরিয়ে আছে। আমার বাড়ি এয়ারপোর্টের কাছে,,, যেখানে এখন যাওয়া অসম্ভব।এখন কোথাও বেরোনোই risky। "
আদিত্য--" এই করোনার সমস্যা যে কবে যাবে,, জানি না। বিরক্তিকর।"
চন্দ্রিমার মন ভেঙে গেছিল সব শুনে।
--" এই সমস্যাটা চলে গেলে আমিও শান্তি পাব জানো। তোমায় ডিভোর্স দিয়ে আমি চিরজীবনের মতন চলে যাবো । আর তোমার তখন কান পচবে না।"
এই বলে চন্দ্রিমা নিজের ঘরে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় ।
খাটে চিত হয়ে শুয়ে পরে। চন্দ্রিমার চোখের সামনে যেন, বিয়ের আগের দিনগুলো ভাসছে।
কতো আনন্দ করে বিয়ে করা,, কতো শারি, কতো অতিথি, সোনা গয়না। মনটা খুশিতে ভরে গেছিল।
বিয়ের সময় কতো মানুষের ভালোবাসা।
৭ পাকে ঘুরে বিয়ে করতে কতো ভালো লাগছিল। তারপর আদিত্য যখন মাথায় সিন্দুর পরিয়ে দিয়েছিল, আনন্দের শেষ ছিল না।
কিন্তু,, এখন জীবনে আনন্দ বলে আর কিছু নেই।
৭ পাকে ঘুরে,,, আদিত্য ৭ জন্ম কি,, ১ জন্ম ও পাশে থাকল না। ৫ বছরের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
আসলে,, সবই মায়া জাল। কিছু ই সত্যি নয়।
************************
----------------------------------------------------
ডিভোর্সের কথা হওয়ার পর চন্দ্রিমা আর আদিত্য একে অপরের সাথে কথাই বলত না। কিন্তু একই জায়গায় থাকলে,,, একজন চেনা মানুষকে আর কতো অচেনা করা যায়? আর রেগে ই বা কতোদিন থাকা যায়?
একদিন এতো বৃষ্টি পরছিল,,, যে বাড়ি ফেরার সময় আদিত্য পুরো ভিজে স্নান করে যায় ।
সেটা দেখে চন্দ্রিমা বলে ওঠে--" ইস্,,,, কিভাবে ভিজে গেছ । যাও, বাথরুমে গিয়ে মুখ, হাত ধুয়ে,, এক্ষুনি জামা পাল্টে নাও। ছাতাও নিয়ে যাওনি । তুমি না নিজের কোন খেয়ালই রাখনা।"
পরের দিন চন্দ্রিমা দেখে আদিত্য প্রচন্ড কাসছে।
আদিত্যর একটু শ্বাস কষ্ট ও হচ্ছে।
চন্দ্রিমা প্রচন্ড চিন্তিত হয়ে পরে। চন্দ্রিমার মন উথালপাথাল করতে থাকে,, ভেবে, আদিত্যর কি তাহলে করোনা হয়ে গেলো?
না,, ভগবানের কৃপায় সেরম হয়নি । আদিত্য খাবারের স্বাদ পাচ্ছে।
বাইরে খুব জোর বৃষ্টি পরছে। এখন কোন বড়ো ডাক্তারের কাছে যাওয়াই অসম্ভব।
চন্দ্রিমা নিজেও জানে কোন ওষুধ দেওয়া দরকার আদিত্যকে এখন। কিন্তু কোথা থেকে আনবে ওষুধ চন্দ্রিমা? মুষলধারে বৃষ্টি পরছে। খুব জোড় হাওয়াও বইছে।
চন্দ্রিমা আদিত্যকে গরম জলের শ্বাস নিতে বলে। আদা দিয়ে চা করে দেয়।
পরের দিন চন্দ্রিমা সকালে আদিত্যকে গরম জল দিতে,,, আদিত্য জিজ্ঞেস করে--" এটা কি? "
চন্দ্রিমা--" গরম জলের শ্বাস নাও,, গার্গেল কর। এটাই এখন তোমার খুব দরকার করা।"
আদিত্য দেখে চন্দ্রিমা প্রচন্ড চিন্তিত ।
আদিত্য--" এতো চিন্তা কেন করছ? "
চন্দ্রিমা--" চুপ কর। চিন্তা হবে না তো কি হবে? যা করতে বললাম কর তুমি।"
এইদিন ও খুব বৃষ্টি পরছে,,, খুব জোর হাওয়া দিচ্ছে। জলে ভরে গেছে অনেক যায়গা। চন্দ্রিমার মাথায় আসছে না,, এই অবস্থায় কি করে ও ওষুধ কিনতে বেরোবে । অনলাইনে ওষুধ ওর্ডার দিলে,, সে তো ৫ দিন বাদে আসবে । ততদিন তো আর আদিত্যকে ফেলে রাখা সম্ভব নয় ।
এরই মধ্যে,,, চন্দ্রিমা জোড় করে বেরচ্ছিল দেখে আদিত্য চেঁচিয়ে ওঠে--" চন্দ্রিমা তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে??? এই বৃষ্টিতে বেরোলে তুমি ভিজে কাক স্নান হয়ে যাবে । তুমি জ্বরে অসুস্থ হয়ে পরবে।"
চন্দ্রিমা,,, বাড়ির কাছের দোকানে ফোন করে ওষুধের জন্য। দোকানটা বন্ধ।
চন্দ্রিমার যেন দিশেহারা অবস্থা।
আদিত্যর প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে গেছে,, ওষুধ না খাওয়ালে আরো বেরে যাবে,, সর্দি কাশী। শ্বাস কষ্ট বেরে গেলে তো সাংঘাতিক সমস্যা হবে। হাসপাতালে নিয়ে ছুটতে হবে তাহলে ।
একটু জ্বর জ্বর ভাব ও আছে আদিত্যর। কিন্তু ওষুধ কেনা অসম্ভব। চন্দ্রিমার কিচ্ছু মনে আসছে না ও কি করবে।
কিছুক্ষণ বাদে চন্দ্রিমা দেখে ওর ফোন বাজছে।
ঈশান ফোন করেছে।
--" হ্যালো,, দিদি,, ভালো আছ তো? প্রচন্ড জোর বৃষ্টি পরছে । আজ তুমি কোথাও বেরোবে না । আজ হাসপাতালে যেও না যেন।"
চন্দ্রিমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছেনা দেখে ঈশান বলে ওঠে--" কি হলো দিদি? চুপ করে আছ কেন? "
চন্দ্রিমা--" কিছু না ঈশান।"
ঈশান--" তোমার গলার আওয়াজ শুনে ই বুঝতে পারছি,, তোমার মন একদম ভালো নেই ।
তোমার এই বোনটাকে,, তুমি একটু বলতে পারছ না,,, তোমার মনের কথা??"
চন্দ্রিমা কষ্টে কষ্টে বলে--" ঈশান,,, আদিত্যর খুব শরীর খারাপ,, ওষুধ দরকার,,, কিন্তু এই ঝর, বৃষ্টির মধ্যে বেরোতেই পারছি না। আমি যে কি করবো,, আমি বুঝতে পারছি না।"
ঈশান--" চিন্তা কোরো না । আমি দেখেছি কি করা যায়।"
চন্দ্রিমা--" তুমি ই বা কি করবে?"
ঈশান--" ওষুধের নামটা বল না।"
চন্দ্রিমা--" এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি বেরোবে?? না,, একদম না। কোথাও যাবে না তুমি । শুনে নিয়েছ?"
ঈশান--" আচ্ছা, আমি বেরোব না। কিন্তু আমি একজনকে চিনি,, যে তোমায় নিশ্চয়ই সাহায্য করে পৌছে দেবে ওষুধটা।"
চন্দ্রিমা--" সত্যিই তাই? "
ঈশান--" হ্যা গো দিদি ।"
চন্দ্রিমার যেন মনে হল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। চন্দ্রিমা তারাতারি ওষুধ গুলোর নাম বলে দেয়।
কিন্তু চন্দ্রিমার চিন্তা এখনও কাটেনি । চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ঈশানের সাথে কথা বলার পর চন্দ্রিমা ভাবে,, না জানি কি ভাবছে আদিত্য ওর সম্বন্ধে । যাক গেয়ে,, কাজটা তো আগে দরকার,, তারপর যা হওয়ার হোক।"
১ ঘন্টা পর ও ওষুধ আসেনি দেখে,,,, চন্দ্রিমা বুঝেই গেছিল ঈশানের পক্ষে ও সম্ভব হয়নি এই বৃষ্টির মাঝে ওষুধ কেনা। হবেই বা কি করে,, দোকান ও তো সেরম খোলা নেই । চতুর্দিকে জল জমেছে বৃষ্টিতে,,, বেশিরভাগ দোকান ই তাই বন্ধ।
হঠাত্ কলিং বেল বাজতে,,, চন্দ্রিমা দেখে একজন লোক গাড়ি করে এসছে। এন্টিবায়োটিক,, জ্বরের ওষুধ আর inhaler অন্তত নিয়ে এনেছে,, যেগুলো অত্যন্ত দরকার ছিল। চন্দ্রিমার যেন ওনাকে ধন্যবাদ জানানোর শেষ নেই।
এতো কৃথার্ত চন্দ্রিমা ওনার প্রতি,,, বলার বাইরে। উনি চন্দ্রিমার কাছে প্রায় যেন ভগবান।
চন্দ্রিমা ঈশানকে ফোন করে বলে--" ঈশান,, আমি তোমায় কিভাবে ধন্যবাদ জানাব জানি না । তুমি না থাকলে আজ আমি পাগল হয়ে যেতাম চিন্তায়।"
ঈশান--" আমায় বোন ভাব তো?"
চন্দ্রিমা--" হমম্ । একদম ।"
ঈশান--" বোনকে কখনো ধন্যবাদ জানাতে হয়? তুমি না দিদি,,,, সত্যি ।"
চন্দ্রিমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে ঈশানের কথায়।
ফোন রেখে তারাতারি চন্দ্রিমা ওষুধ খাওয়ায় আদিত্যকে ।
***************************************
ওষুধ খেয়ে পরের দিন আদিত্য অল্প হলেও ঠিক হয়েছে।
চন্দ্রিমা--" কেমন লাগছে এখন তোমার শরীর? Weekness একটু হলেও কমেছে? "
আদিত্য--" হ্যা । এবার একটু ভাল লাগছে।"
চন্দ্রিমা--" যাও,, গরম জলে অল্পকরে স্নান করে নাও। স্নান না করে থাকাও উচিত না।"
আদিত্য বাথরুমে গিয়ে বলে--" চন্দ্রিমা একটা সাবান দাও না ।"
চন্দ্রিমা--" কিচ্ছু নিয়ে যাবে না,, আর চন্দ্রিমা এটা দাও ওটা দাও করে চেচাবে । উফ! এই নাও ধর।"
চন্দ্রিমা দেখে আদিত্য ওর হাত ধরে টেনে বাথরুমে ঢুকিয়ে নিয়ে shower চালিয়ে দিয়েছে । আর এতো কাছে ওকে টেনে নিয়েছে,,, যে দুজনের মধ্যে ১ ইঞ্চির মতন দুরত্ব রয়েছে ।
চন্দ্রিমা অবাক হয়ে যায় । দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ নামিয়ে চন্দ্রিমা বলে --" কি করছ তুমি??"
আদিত্য--" কাগজটা ছিরে ফেলে দিয়েছি। সত্যি আমি তোমার সাথে প্রচন্ড ভুল কাজ করেছি । খুব খারাপ কথা বলেছি তোমায় ।
তোমায় এতো যন্ত্রণা দিয়েছি,, যার কোনো ক্ষমা হয়না। ঈশান যে এতো ভালো মানুষ,, আমি তা না জেনে ই যা নয় তাই বলেছি ওকে।
আমি তোমায় ডিভোর্স পেপার ও দিয়ে দিয়েছি। সত্যি, আমি একটা অমানুষ। আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। আমায় কি ক্ষমা করতে পারবেনা তুমি চন্দ্রিমা?"
চন্দ্রিমা আদিত্যর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আদিত্যর ঠোঁট আটকে বলে--" এসব কি বলছো তুমি? যা হয়ে গেছে,, চলো ভুলে যাই।
লর্ড বুদ্ধার একটা কথা আছে জানো
" don't dwell in past, don't think for future, concentrate your mind in present momment"
কালকের কথাটা মনে করলে তো আর ইতিহাসটা পালটে যাবে না। তুমি যে আজও আমায় ভালোবাসো, তোমার হৃদয়টা যে আজও আমায় চায়,, তাই দেখেই আমি প্রচন্ড খুশি হয়ে গেছি জানো।
তুমি তো এটাও জানো,, যে আমি তোমায় ভালোবাসি।"
দুজনেরই যেন মনে হচ্ছিল বৃষ্টির জলে ভিজছি ।
আদিত্য--" তুমি আমার ওয়াইফ ছিলে,, আছ আর আজীবন থাকবে । ঈশানকে নিয়ে ও আমি আর কোন বাজে কথা এ জীবনে বলবো না। যে এবার যাই বলুক না কেন তোমার সাথে ঈশানের সম্পর্ক নিয়ে,, বলবো আমার ওয়াইফের যেটা ঠিক লাগে সেটাই করে। আর আমার মিষ্টি চন্দ্রিমা,, চাঁদের মতন সুন্দর ও স্বচ্ছ। "
চন্দ্রিমা আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে।
--" কিন্তু যেমন ভাবে আমায় ব্যথা দিয়েছ,, সেরম আমায় আনন্দ ও দিতে হবে ।"
আদিত্য--" Ok,, Ok,, তাই ই হবে ।
একটা কথা বলবো তোমায়? "
চন্দ্রিমা--" বলোনা ।"
আদিত্য-- " May I kiss your lips?"
চন্দ্রিমা একটু লজ্জার সাথে হেসে বলে --" Yes! Sure"
অনেকদিন ধরে পরে থাকা একটা শুকনো গাছ, হঠাত্ যখন জল পায়,, শুষে নেয় জল।
আদিত্য আর চন্দ্রিমার শুকনো মন যেন সেরমই তখন জল পাচ্ছিল মনে হচ্ছিল ।
আদিত্য--" I love you"
আদিত্যর বুকের ওপর মাথা রেখে চন্দ্রিমা বলে-- " I love you too আদিত্য। তোমাকে ছাড়া আমি কি করে থাকতাম? আমি তাই যেতে পারিনি ।"
আদিত্য--" আমি ও তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না চন্দ্রিমা। আমি বুঝতে পারিনি,,, তুমি যে আমার জীবন।।
এক সপ্তাহ বাদে আদিত্য একদম সুস্থ হয়ে যায়।
একদিন চন্দ্রিমা ফোন করে বলছিল--" হ্যাপী বার্থডে ঈশান।"
তারপর চন্দ্রিমা দেখে ওর পেছনে আদিত্য দাড়িয়ে আছে।
চন্দ্রিমা অবাক হয়ে বলে--" তুমি কখন এলে?"
আদিত্য--" লজ্জা করছে না তোমার? এরম তুমি করতে পারছ? "
চন্দ্রিমা ভাবে,, আবার কি হলো আদিত্যর ।
--" কি করেছি আমি?? আজ ঈশানের জন্মদিন তাই wish করছিলাম। এতে খারাপ টা কি?"
আদিত্য--" তুমি সেল্ফিশ হয়ে গেছ। তুমি এরম হবে আমি ভাবিওনি ।"
চন্দ্রিমা--" আমি সেল্ফিশ? বাহ্ । এক এক সময় এক এক রূপ ধর জানো তুমি।"
আদিত্য--" সেল্ফিশ নও তো কি?? যে এতো তোমার জন্য করল,, তাকে তুমি ফোনে হ্যাপী বার্থডে বলে থেমে যাচ্ছ? একটু ও তোমার ইচ্ছা করছে না,, ঈশানকে ওর জন্মদিনে আনন্দ দেওয়ার??"
চন্দ্রিমা আদিত্যর কথায় আনন্দে খুশি হয়ে গিয়ে হেসে ই ওঠে।
আদিত্য--" তুমি ভাবছিলে ঈশানকে নিয়ে আবার আমি খারাপ ভাবব । আমার কথাগুলো কি সব মিথ্যে বলতো??"
চন্দ্রিমা--" না আদিত্য,,, তোমার কথা মিথ্যে হতে পারে না। I am sorry,, আমি তোমায় ভুল ভেবেছি।"
আদিত্য--" আর sorry বলতে হবে না । চল কেক নিয়ে আসি একটা।"
কিছুক্ষণ বাদে চন্দ্রিমা ঈশানকে ফোন করে বলে--"ঈশান তুমি তোমার পুরো পরিবারকে নিয়ে,, এখানে এসো ।"
ঈশান--" কেন দিদি? "
চন্দ্রিমা--" দিদিকে অতো প্রশ্ন করার কি আছে?? চলে এস ।"
ঈশান চন্দ্রিমা আর আদিত্যর ঘরে আসার পর দেখে, চতুর্দিক কি সুন্দর করে সাজানো। হ্যাপী বার্থডে লেখা।
আদিত্য--" হ্যাপী বার্থডে ঈশান । এই নাও তোমার গিফ্ট।"
ঈশান দেখে কি সুন্দর একটা মোবাইল ফোন।
--" দিদি কই??"
চন্দ্রিমা--" এই তো তোমার দিদি ।"
ঈশান--" এতো বড় কেক??"
চন্দ্রিমা--" হমম। এনেছি তোমার জন্মদিনে। কেকটা কাট এবার।"
তারপর সবাই ঈশানকে বার্থডে wish করতে থাকে।
ঈশান চলে যাওয়ার পর চন্দ্রিমা দেখে আদিত্য ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
চন্দ্রিমা--"কি করছ? ছাড় আমায়।"
আদিত্য--" না। আগে বল তোমার মনের ব্যথা গেছে কিনা?"
চন্দ্রিমা--" আমার মনের ব্যথা সেদিন ই চলে গেছিল। আমি তো মজা করছিলাম।"
আদিত্য--" তাই? যাক,, তাহলে আমার চাঁদের পরি এখন খুব খুশি।"
চন্দ্রিমা--" চুপ কর। আমি নাকি চাঁদের পরি।
তুমি থাকবে তো পাশে এইভাবে আদিত্য? "
আদিত্য--" একটা কথা বলবো?"
চন্দ্রিমা--" বলোনা । প্রশ্ন কর কেন এমন? "
আদিত্য--" তুমি নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ,,, তোমার কাছে দুটো হার্ট আছে,,, একটা নয়।"
চন্দ্রিমা হাসি মুখে বলে--" আদিত্য,,, তুমি না সত্যি।"
আদিত্য--" সত্যি আমি তোমায় নিজের হৃদয়টা দিয়ে দিয়েছি।"
চন্দ্রিমা--" Can I kiss your lips?"
আদিত্য--" আমি প্রশ্নের উত্তর একদম দেব না। আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ,, তুমি সেটা একদম ভুলে গেছ। permission চাইছ উল্টে । যেন আমরা শুধু lover."
চন্দ্রিমা--" আচ্ছা? তাহলে এবার আমি কিছু জিজ্ঞেস না করেই কামরে দেব তোমার ঠোঁট.
আদিত্য--" তাই?? তা এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে?? "
চন্দ্রিমা--" এই,, কি করছ?? আর কতো কাছে টানবে??"
আদিত্য--" নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নেব তোমায়।"
কিছু মানুষকে পুরো সোসাইটি ঘৃণা করে। Gay বলে তারিয়ে দেয়। সবই তো ঈশ্বরের সৃষ্টি। কিছু মানুষের মন যদি একটু অন্যরকম হয়,,, তাদের তো কিছু করার নেই । মনকে সামলানো যায় না । এটা কেউ মানতে পারে না ।
সবকিছু যখন পাল্টে যাচ্ছে,,, আমি আশা করব,,, এই ভাবনাটাও একদিন মানুষের মন থেকে নিশ্চয়ই মুছে যাবে,,, ওদের ও একটা শান্তির জীবন হবে । তবে কবে হবে,,, সে তো ঈশ্বর ই জানেন।

