বন্ধু তোর জন্য
বন্ধু তোর জন্য
প্রিয় বন্ধু,
আজ তোকে চিঠি লিখতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু কি লিখবো ভেবেই পাচ্ছিনা!! তখন থেকে শুধু লিখছি আর পাতা গুলো ছিঁড়ে ফেলছি। আসলে কোন কথাটা দিয়ে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছিনা!!! আসলে তোর সাথে আমার কত রঙিন স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেই গুলো আজও যখন মনে পড়ে তখন তোর মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আর সবথেকে বেশি মনে পড়ে তোর বাদামি চোখ দুটো। অনেকদিন হল তোর সাথে দেখা হয়নি!! আর কোনদিনও হবে কিনা জানিনা!!! আর তুই তো আধুনিকা হবিনা!! তাই সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তোর সাথে যোগাযোগের কোন সম্ভাবনা নেই!!! তবে আমি চাই তুই যেমন ছিলিস সেই রকম থাক। তোকে আমি ঐ ভাবেই ভালোবাসি।
তোর মনে আছে আমি যখন যেতাম মামারবাড়ি যে.... কদিন থাকতাম তুই সবসময় আমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতিস!! আমি তোকে অনেক সময় পড়া বুঝিয়ে দিতাম। তুই সংসারের কত কাজ করতিস, অথচ কাজের একটু দেরী হলে তোর বাবা কি... ভাবে তোকে বকতো আমার তখন খুব রাগ হত, তোর বাবার ওপর। আর মনে মনে বলতাম কই আমার বাবাতো আমাকে বকেনা। আর আমাকে কোন কাজও করতে হয় না তাহলে তোকে কেন করতে হবে!!! তোর বাবা খুব বাজে। আসলে তখন ছোট ছিলাম তাই অত বুঝতে পাড়তামনা! থাক ঐ সব কথা!!! মনে পড়ে আমরা দুজন গঙ্গার বাঁধে পুরনো অশ্বত্থ গাছের তলায় বিকেলে গিয়ে বসতাম, গঙ্গার হাওয়া গায়ে মাখতাম। কুমিরডাঙ্গা, রান্নাবাটি, কিতকিত কত কি খেলতাম। আবার কুল, পাকা তেতুল লুকিয়ে লুকিয়ে খেতাম। ছাগলের বাচ্ছা কোলে করে নিয়ে বেড়াতাম। তুই কি সুন্দর গাছে উঠে পাড়তিস। একবার আমি তোর সাথে গাছে চড়বো বলে জেদ ধরেছিলাম, তুই বলেছিলিস এইসব তুই পাড়বিনা ছেড়েদে... কিন্তু আমি শুনিনি কিছুটা উঠেই পড়ে গিয়ে ছিলাম ধপাস করে, পাটা কেটে গেছিল কতটা কত কেঁদেছিলাম।
তার পর বুড়ি ঠাম্মার বাড়ির জানলার ফাক দিয়ে দেওয়ালে রাখা বাঘের মুখটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম, আর পেয়ারা চুরি করতাম, যেই বুড়ি ঠাম্মা চিৎকার করত কে....রে... তখনি ছুটে পালাতাম। সেইসব দিন গুলো কত সুন্দর ছিল বল। জানিস তোকে চিঠি লিখতে লিখতে আমার চোখে জল ভরে এসেছে সাথে ঠোঁটের ডগায় আলতো হাসি। সবথেকে বেশি মনে পড়ে তোর একটা কথা তুই করুন মুখে বলতিস তুই কত সুন্দর দেখতে, পড়াশোনায় কত ভালো, তোরা কত বড়লোক তুই আমার সাথে কেন মিশিস বলতো? আর আমি হেসে বলতাম কারন তুই আমার বন্ধু আর আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
আর একটা কথা খুব মনে পড়ে আমার থেকে থেকে, আর একা একাই পাগলের মত হাসি ছোটবেলায় যখন আমরা বর বউ খেলতাম তখন তোর দাদা আমাকে কারোর বউ হতে দিত না....। সব সময় বলত ও.... আমার বউ হবে, না হলে বর বউ খেলা বাদ। আর তখন তুই আমকে কেমন বৌদি বৌদি করে ডাকতিস। আজও যখন ভাবি তখন খুব হাসি পায়। আবার যখন আমি দিদিমনি হতাম তোরা কি..... সুন্দর পড়তে শুরু করতিস আমার কাছে।
মামারবাড়ি মাধবিলতা গাছ থেকে ফুল পেড়ে মালা গেথে তোকে বউ সাজাতাম, আর তুই চুপ করে বসে বসে সাজতিস। আমি তোকে বলতাম দেখবি তোর আগে বিয়ে হবে, হলোও তাই তবে তোর বিয়েতে যেতে পারলামনা কারন তার কিছুদিন পড়েই ছিল আমার উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা। তারপর যখন গেলাম তখন আর তুই ছিলিসনা। তখন কিছুতেই মন বসতোনা মামারবাড়িতে কারন আমার খেলার সাথী গল্প করার সাথী তখন যে.... আর আমার সাথে ছিলনা!!! কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগত। আরও অনেকে ছিল কিন্তু তোর বাইরে আমি সেইভাবে কারোর সঙ্গেই মিশিনি কোনদিন, তুই ছিলিস আমার একমাত্র সঙ্গী।
তারপর গেছিলাম দু বছর পর তখন তোকে দেখেছিলাম পুরো গিন্নি রূপে, আর তোর কোলে তখন তোর ছেলে। তোর বরের সাথেও পরিচয় হয়ে ছিল। তোর ছেলে পুরো তোর মতই দেখতে, শুধু তোর বাদামি চোখটা পায়নি। তারপর আর দেখা হয়নি তোর সাথে!!! আমার বিয়ের পর যখন গেলাম মামারবাড়ি তখন গ্রামের সবাই এসেছিল দেখা করতে। তখন শুনেছিলাম তোর নাকি আর একটা মেয়ে হয়েছে। ব্যাস আর যাওয়া হয়নি মামারবাড়ি। আর এখনতো যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই কারন মামার বাড়ি আর নেই। আমার তো মামা নেই দিদুন এখন মাসির কাছে থাকে, আর দাদু তো কবেই চলেগেছে না ফেরার দেশে। তবে আমার মনে সমস্ত বন্ধুদের মত তোরও একটা জায়গা আছে যেটা কেউ কোনদিন নিতে পাড়বেনা। তুই খুব ভালো থাক তোর জীবনের সমস্ত চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হোক এটাই আমি চাই!!! আর যদি কোনদিন বন্ধুত্বের টানে তোর সাথে আমার আবার দেখা হয়!!! তাহলে একসাথে আনন্দ করে একটা দিন কাটাবো দুজন মিলে, আর বিকেলের সূর্য অস্ত দেখব গঙ্গানদীর বাঁধে বসে। আজ লেখা এইখানে শেষ করলাম আই... লাভ.... ইউ.... অ্যান্ড মিস... ইউ... বন্ধু।
ইতি,তোর বন্ধু।