Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

1.0  

Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

বিসর্জনের আগে

বিসর্জনের আগে

9 mins
757


দোতলার নড়বড়ে রেলিংটা ধরে একবার নীচের দিকে তাকাল মীরা। রাস্তাটা আজ ফাঁকা, অন্যদিনের বিচিত্র কোলাহল সব যেন এক লহমায় শুষে নিচ্ছে অপর প্রান্তে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকা ওই লাল আলোটা। লাল… রংটা দেখলেই আজকাল গা গুলিয়ে ওঠে বমি পায় মীরার।

সেই অনেক বছর আগে যখন বাবাকে দেখেছিল মুখ থেকে বমির মতো দলা দলা লাল রক্ত তুলতে তুলতে মরে যেতে, সেই তখন থেকে রং'টা দেখলেই বমি পেতো মীরার। তারপর অবশ্য সময়ের সাথে পরিস্থিতি পাল্টে ছিল খানিক, মনের অজান্তেই লাল রংটাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ফেলেছিল নিজের পরতে পরতে; কিন্তু তারপর আবার ছন্দপতন…

  আজকে এই পাড়াটা অদ্ভুত রকমের নিস্তব্ধ। ওরা সব বলাবলি করছিল আজ নাকি নবমী। তাই তো ওরা আজ রাতে দল বেঁধে সব বেরিয়ে পড়েছে ঠাকুর দেখতে। মীরাই বোধহয় শুধু পড়ে রয়ে গেছে একলা। অবশ্য শুধু মীরা নয়, আরও কেউ আছে নিশ্চয়, ওপাশের কুঠরিটা থেকে ভেসে আসছে একটা গান, সস্তা দামের মোবাইল থেকে একটা যান্ত্রিক শব্দ এসে মিশে যাচ্ছে তার সুরে… "পিয়া তো সে নয়না লাগে রে/ নয়না লাগে রে…"

উফফ অসহ্য! এপাশে ঘুরে দাঁড়াতেই গান ছাপিয়ে নীচ থেকে একটা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মীরা। মায়ের বিসর্জনের আগেই কার আবার নারী শরীরের খোঁজ পড়ল! তড়িঘড়ি নিজের ছোটো খুপরিটায় ঢুকে খিল লাগিয়ে দিলো মীরা।

বুকটা হাপরের মতো ওঠানামা করছে তার। নিশ্চয় কোনো কাস্টমার এসেছে, কিন্তু আজ তো কেউ নেই এখানে। হয়তো নীচের ঘরে বসে থাকা মুশকো লোকদুটো সেই কথা জানাতেই যে এসেছে সে চিৎকার করছে, নাছোড়বান্দা একেকজন আসে এরকম, শরীরের খিদে তাদের বড্ড বেশি। 

  তেল চিটচিটে বেড কভারটার ওপর গিয়ে বসল মীরা, ক্যাঁচ করে আর্তনাদ করে উঠল খাটটা। এই খাটটাও নিশ্চয় কম অত্যাচার সহ্য করেনি, আজ হয়তো বিপদ আঁচ করে প্রতিবাদ করল সেও। আচ্ছা আজ কি বার! মীরা এখানে আসার এক সপ্তাহ হয়ে যাবে কি! কাল দুর্গা মায়ের বিসর্জন, মীরার বিসর্জন তো এক সপ্তাহ আগেই হয়ে গিয়েছে। হাতের চেটোটা পুড়ে গিয়ে যে কালো দাগটা হয়েছিল সেটা বাদামী হয়ে উঠেছে আস্তে আস্তে। দাগটার ওপর আলতো করে হাত বোলাল মীরা। সেদিনও মা ওটায় মলমটা লাগিয়ে দিয়েছিল। মায়ের নিজের হাতে তো এরকম কত শত পোড়া দাগ আছে, মা নিজে কোনোদিনও ওষুধ লাগায়নি তাতে। পুড়ে গেলেই হাতটা জলে একটুক্ষণ রাখত তারপর হাসিমুখে বলতো ঠিক হয়ে গেছে সব। অথচ সেদিন মীরার হাতটা পুড়ে যেতে মা কেমন পাগলের মতো ছুটেছিলেন ওষুধ দোকানে, কিনে এনেছিলেন দামী একটা মলম। 

মা… মাগো… চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে শুরু করলো মীরার। বুকের ভেতরটায় কেমন যেন উথালপাথাল হচ্ছে তার, মনের মধ্যে একটা অজানা আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠছে। আচমকা একটা খটখট শব্দ হতেই কেঁপে উঠল মীরা, পরক্ষণেই টের পেল ওটা একটা ছোটো ইঁদুর মাত্র। স্বস্তির নিশ্বাসটা ফেলতে না ফেলতেই আবার একটা খটখট শব্দ। নাহ, এবার আর কোনো ভুল নেই। কেউ এসেছে… কেউ সত্যিই এসেছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছে সে। ভয়ে দু'হাত দিয়ে বিছানার চাদরটা মুঠো করে ধরে ফেলল মীরা। দরজার বাইরে ক্রমাগত কড়া নেড়ে যাচ্ছে কেউ, মীরা খুলছে না দেখে ক্রমে অধৈর্য হয়ে পড়ছে সে। মনে হচ্ছে যেন দরজাটা ভেঙে ফেলবে সে।

"বলি ও ছুঁড়ি মরে পড়ে আছিস নাকি ভিতরে?" শাবানা মাসির গলাটা কানে লাগতেই আরেকবার চমকে উঠল মীরা। কি করবে এখন সে, শাবানা মাসির মুখটা মনে পড়লেই যে তার বুকের রক্ত জল হয়ে যায়। এখন দরজা না খুললে মাসি তুলকালাম বাধাবে। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে দরজার ছিটকিনিটা নামাতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল মাসি। বাম হাত তুলে মীরাকে একটা চড় মারতে উদ্যত হল সে, পরক্ষণেই আবার কি মনে হতে নামিয়েও নিলো হাতটা। 

"বলি মরে গেছিলি নাকি! কখন থেকে কড়া নাড়ছি তাও খোলার নাম নেই মুখপুড়ি কোথাকার…" এই বলে মীরাকে ঠেলে এগিয়ে গেল মাসি। ঘরের একপাশে রাখা কাঠের রংচটা আলমারীটার পাল্লা খুলে কি যেন খুঁজতে লাগলো। 

ধুরর… মুখে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে খাটের উপর কি যেন একটা ছুঁড়ে ফেলল মাসি। আরেকবার চমকে উঠল মীরা; খাটের ওপর বিক্ষিপ্ত ভাবে শুয়ে একটা বেনারসি, বিশ্বাসভঙ্গের লাল রং যার শরীরে। ব্লাউজটা নিয়ে মীরার দিকে ছুঁড়ে মারল মাসি। মীরার মুখ ছুঁয়ে সেটা পড়ে গেল মেঝেতে।

"আ মোলো যা বলি এতো রস বেরাচ্ছিল কিসে!" এতক্ষণে মাসির নজর পড়েছে মীরার চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া জলে। উত্তর দিলো না মীরা। মুখ বাঁকিয়ে মাসি আবার বলল, "শুন পনেরো মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নে, এই শাড়ি বেলাউজটাই পর আর কি করবি। তোর যা চেহারা আমাদের কারুর বেলাউজ তো তোর হবেনি। তার আগে শুন ভালো করে মুখ ধুয়ে মেকআপ করে নিবি।"

"কেন?"

"উঁহ ন্যাকা…! শুন খুব বড় কাস্টমার পাওয়া গেছে, সারারাতের বায়না। নেহাত আজ কেউ নাই তাই তোকে এতো সাধাসাধি, নয়তো এমন কাস্টমারকে কেউ তোর হাতে ছাড়ে!"

"আমি এসব পারব না।"

"ও হো হো হো আমার কালিন্দি কি বলচে শুন…! এই ছুঁড়ি তুই কি ভাবলি আমি তোকে জিগেস কত্তে এসচি, আমি তোকে সুদু জানাতে এলাম।"

"আমি বলছি তো আমি এসব করতে পারব না, আমি বাড়ি যাবো।"

"মরণ দশা আমার। এতদিনেও ছুঁড়ির শখ মিটল না। বলি তোর কি মনে হয় তোকে আর তোর গেরামে ফিরিয়ে নিবে? শুন, যারা একবার এখানে আসে তাদের আর তাদের মা বাপও চিনতে পারেনা। অশুচি মেয়েদের কেউ ঘরে তুলে না।"

"আমি বিশ্বাস করিনা। আমার মা…"

"তোর বিশ্বাস করা না করায় তো আর সত্যি পাল্টাবে না। শুন, অনেকদিন তো এলি। আর ক'দিন বসে বসে খাবি? অন্য জায়গায় তো পোথম দিন থিকেই কাজে লাগি দেয়। আমি তাও তোকে এত সময় দিলাম।"

"আমি…"

"আর একটাও কথা লয়, নে তাড়াতাড়ি সেজে নে, ঠিক দশ মিনিট পর এসে দেখবো আমি। যদি কোনো বেগড়বাই দেখি তাইলে মনে আছে তো…?"

  এই বলে দরজাটা ঠেলে মাসি চলে যায়। মীরার মনে পড়ে এখানে আসার পরের দিনই দেখেছিল একটা মেয়ে কাস্টমারের কাছে যেতে রাজি হয়নি বলে তার পেছনে মাসি গরমের শিকের ছেঁকা দিয়েছিল, মেয়েটার আর্তনাদে কেঁপে উঠছিল প্রত্যেকটা কুঠরি। 


  আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল মীরা। সবাই বলতো মীরা নাকি হুবহু ওর মায়ের মত। ভীষণ রাগ উঠত মীরার। ওর বাবা ছিলেন দেখতে খুব সুন্দর, কিন্তু মায়ের গায়ের রং ছিল কালো। মায়ের থেকেই রং পেয়েছিল মীরা। কেউ ওকে কালো বললেই যত রাগ গিয়ে পড়ত মায়ের ওপর, মনে মনে এক মা'কে অভিযোগ জানাতো আর আরেক মা'কে মুখের ওপরেই বলে দিতে তোমার জন্য যত দুর্দশা আমার। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটার দিকে তাকাতেই আচমকা মীরার মনে হল যেন মা দাঁড়িয়ে সামনে। মা যেন ওর চোখে চোখ রেখে বলছেন, "তোকে বলেছিলাম না ছেলেটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না, শুনলি না তো মায়ের কথা!" 

হাউহাউ করে কেঁদে উঠল মীরা, মা… মাগো…

  লাল বেনারসিটা পড়ে আছে খাটে; স্বপ্ন দেখা স্বপ্ন ভাঙা সবকিছুর সাক্ষী ওই শাড়িটা। মাধ্যমিকটা পাশ করতে না করতেই মায়ের কাছে বায়না করে কিনেছিল মোবাইলটা। নতুন ফোনের আনন্দে বিভোর মীরার ফোনে একদিন ভোরবেলা আচমকাই একটা মিসড কল ঢোকে। ঘুম ভাঙতেই মীরা কল ব্যাক করে ওই নম্বরে। সেই শুরু, তারপর থেকে রোজ কথা হতে থাকে সাগরের সঙ্গে। মা দেখলে বকাবকি করবে বলে বন্ধুদের বাড়ি পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফোন করত সাগরকে। সাগর বলতো মীরার গলার স্বরটা নাকি পরীর মতো, সে বলতো মীরা দেখতেও নিশ্চয় পরীর মতো হবে। ভয় করতো মীরার, পাছে ওর গায়ের রং দেখে ওকে অপছন্দ করে বসে সাগর। সাগর বলেছিল ও নাকি পুলিশের চাকরি করে, অনেক টাকা মাইনে। মীরার জীবনে কোনো অভাব থাকতে দেবে না সে।


  মীরা যখন এইসব রঙিন স্বপ্নে মশগুল, তখন মা বারবার করে বলতো পড়াশুনো কর মন দিয়ে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অসহ্য লাগত মীরার। সাগর বলতো ও এতো টাকা বেতন পায় যখন তখন মীরা শুধু শুধু কেন চাকরি করতে যাবে! মীরার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওদের গ্রামে এসেছিল সাগর। ভয়ে ভয়ে দনাই খালের পাড়ে সাগরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মীরা, পাছে সাগর ওকে অপছন্দ করে বসে সেই আশঙ্কায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে। থুতনি ধরে ওর মুখটা তুলে সাগর বলেছিল মীরার মত সৌন্দর্য সে নাকি আর কারুর চোখে দেখেনি কোনোদিন। এই বলে মীরার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়েছিল সে। লজ্জায় লাল হয়েছিল মীরা। আর এদিকে ওদের এই গোপন অভিসারের খবর মায়ের কানে পৌঁছাতে বিশেষ সময় লাগেনি। রাগে ফেটে পড়েছিলেন মা। একদিন মীরা সাগরের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরতেই গর্জে উঠেছিলেন তিনি। রাগে পাল্টা দু কথা শুনিয়ে দিয়েছিল মীরাও।

মা বলেছিলেন যতদিন না সাগরের সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন ততদিন মীরা ওর সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে পারবে না। মোবাইলটাও কাড়িয়ে নিয়েছিলেন মা। মায়ের আচরণে শিউরে উঠেছিল মীরা; সাগরের সাথে কথা না বলে সে কেমন করে থাকবে! ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিল মায়ের চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ নেই। সেদিন হেন কোনো অপমানজনক কথা ছিলোনা যা ও মাকে বলেনি। কিন্তু মা ছিলেন নির্বিকার। মা অনেক যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন, কিন্তু মীরা তো তখন সাগরের গভীর জলে তলিয়ে, মায়ের কোনো কথাই কানে ঢোকেনি তার। মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে পালিয়ে এসেছিল সাগরের কাছে। এই লাল বেনারসিটা পরিয়ে তার সিঁথি রাঙিয়ে দিয়েছিল সাগর, তারপর প্রথম রাতটা স্বপ্নের মত কেটেছিল। কিন্তু তারপরেই নেমে এলো বিভীষিকা…


  "মা… তুমিও কি আর ফিরিয়ে নেবে না আমায়!" হাউহাউ করে কেঁদে উঠল মীরা, "আমি ভুল করেছি মা, প্লিজ আমায় ক্ষমা, আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো মা। মাগো…" 

শেষ কবে মায়ের কথা এতো মনে পড়েছে ঠিক মনে পড়ল না মীরার। মীরা যখনই মাকে রাগ দেখাতো মা হেসে বলতেন, "এখন আমাকে এমন করছিস তো, দেখবি যখন কাছে থাকবো না তখন কেমন মনে পড়ে মায়ের কথা।"

"তুমি ঠিকই বলতে মা, তুমি কাছে ছিলে বলে তোমার মূল্য কোনোদিনও বুঝতেই পারিনি। কিন্তু বিপদে পড়লে সবার আগে যে তোমার কথাই মনে পড়ে মা…" বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে উঠল মীরা, ভুলেই গেল যে ওর কথা শোনার জন্য মা আর নেই।


  দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল আবার। আতঙ্কে সারা শরীর কেঁপে উঠল মীরার। কোনোমতে টলোমলো পায়ে গিয়ে দরজাটা খুলতেই একটা লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ঘরে। মীরা ছিটকে সরে গেল ঘরের এক কোণে। লোকটা দরজাটা লাগিয়েই সোজা হয়ে দাঁড়াল মীরার সামনে, "তোমার নাম মীরা? বাড়ি কুশপুর গ্রামে?"

চমকে উঠল মীরা, লোকটা কি করে জানলো তার বাড়ির ঠিকানা!


                  ★★★★★


মীরাকে নিয়ে পুলিশের গাড়িটা যখন এসে থামলো তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে, দু একটা পাখিও জেগে গিয়েছে ইতিমধ্যে। কোনোমতে টলোমলো পায়ে জিপ থেকে নামলো মীরা। ভীষণ দুর্বল লাগছে তার। পুলিশ স্টেশনের ভেতর পা রাখা মাত্রই ওপাশের বেঞ্চে বসে ঝিমোতে থাকা মহিলা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন মীরাকে। চমকে উঠল মীরা, "মা…!"

"হ্যাঁ, তোমার মা। আজ উনি না থাকলে তোমাকে আমরা কখনোই উদ্ধার করতে পারতাম না। আজ এক সপ্তাহ ধরে তোমার মা তোমাকে উদ্ধার করার জন্য কত যে ছোটাছুটি করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। উনি যদি নিজের নার্ভ ঠিক রেখে আমাদেরকে সব রকম ডিটেল দিয়ে সাহায্য না করতেন তাহলে তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি কখনোই উদ্ধার করা যেত না।" দৃঢ় গলায় কথাগুলো বললেন একজন পুলিশ অফিসার, যিনি কাল রাতে কাস্টমার সেজে মীরার রুমে হাজির হয়েছিলেন। 

পাশ থেকে আরেকজন পুলিশ অফিসার বলে উঠলেন, "মা দুর্গাও আমাদের সহায় ছিলেন বলো। তাই তো নবমীর রাতে ওখানের সবাই দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিল যা আমাদের কাজটা অনেক সহজ করে দেয়।"

মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল মীরা, "আমি জানতাম মা তুমি আমাকে ঠিক উদ্ধার করবে, আমি যখনই বিপদে পড়েছি সব সময় তুমি আমাকে রক্ষা করেছো। ওখানে বসেও আমার রোজ তোমার কথা মনে পড়ত ভীষণ, আমি রোজ অপেক্ষা করতাম তুমি কখন আসবে…"

মা মুখে কোনো জবাব না দিলেও মীরা টের পেল ওর কাঁধটা ভিজে উঠছে। 

"আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দাও মা, তোমার কথা না শুনে আমি খুব বড় ভুল করেছি।"

"ধুরর পাগলী…" কান্না ভেজা গলায় বাকিটা আর বলতে পারলেন না মা।

কিন্তু আচমকা মীরা বলে উঠল, "মা আমি যে অশুচি হয়ে গেছি, গ্রামে আর ঢুকতে দেবে আমায়?"

মীরার কাঁধ থেকে মুখ সরিয়ে ওর চোখে চোখ রাখলেন মা, "লোকের চোখে তুই অশুচি হতে পারিস, কিন্তু মায়ের চোখে নয়। যদি ওরা গ্রামে থাকতে না দেয় তাহলে আমরা চলে আসবো এই শহরে, মা মেয়েতে মিলে শহরের ভীড়ে মিশে গিয়ে আবার নতুন করে জীবন শুরু করব। তোকে এসব নিয়ে কিচ্ছু ভাবতে হবেনা। শুধু মনে রাখবি, যাইহোক হয়ে যাক, তোর মা সবসময় তোর সঙ্গে আছে।" এই বলে ওর চোখ দুটো মুছিয়ে দিলেন মা, "এখন কান্না বন্ধ করে চল দেখি দুটি কিছু খাবি, এই কদিনেই কি অবস্থা হয়েছে চেহারার!" 

মায়ের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আবার শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরল মীরা। আজ দুর্গা মায়ের বিসর্জনের দিনে মীরার কানে নতুন করে বেজে উঠল আগমনীর গান। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational