Pomi Mukherjee

Classics Inspirational Others

4.0  

Pomi Mukherjee

Classics Inspirational Others

ভারতীয় মননে রবীন্দ্র সাহিত্য

ভারতীয় মননে রবীন্দ্র সাহিত্য

3 mins
713


ভারতীয় মননে রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রভাব বিষয়বস্তুটি ভারতবাসীর চিন্তার ক্ষেত্রে, আচরণের ক্ষেত্রে, এবং আগ্রহের দিক দিয়ে এক বিশাল মাত্রা ধারণ করে। 


পন্ডিত নেহেরু একবার এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে -' পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষ হলো সেই দেশ, যে দেশে মানব জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ ঘোষিত হয়েছে। '


এই মানব জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ পরিণতি লাভ করেছে রবীন্দ্র সাহিত্যের একান্ত সংস্পর্শে। ধীরে ধীরে পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষকে এক উপলব্ধি থেকে আর এক উপলব্ধিতে নিয়ে এসেছে। বিশ্বের সকল প্রকার প্রাণে ঘটেছে প্রাচুর্যের বৈচিত্র্য।


ভারতীয় সংস্কৃতি রবীন্দ্র ভাবনার দ্বারা আচ্ছন্ন হবার জন্য অনন্ত সন্ধানী মানুষ পেয়েছে বিশ্ব বোধের সুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি হলেও কেবলমাত্র বঙ্গদেশেই নয়, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষাভাষীর মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনেন এবং তাঁর অমর সৃষ্টি কে চিরজীবন মনে রেখেছেন এবং রাখবেন।


বঙ্গদেশের সাথে ইংরেজ সম্পর্কের কালে শিক্ষিত জীবনের জ্ঞান বিচারের ছবিটি স্পষ্ট। স্থানে স্থানে বহু সভার আয়োজন করে বঙ্গদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কবি। ইংরেজ শাসনের বেড়াজাল ছিন্ন করে, স্বদেশী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে তোলার ব্যাপারে কবিগুরুর ভুমিকা অনস্বীকার্য। 


কবির কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে -' আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি,....... ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে। '


বঙ্গদেশ ছাড়িয়ে সমগ্র ভারতীয় মননে কবিগুরু জায়গা করে নিয়েছিলেন তাঁর কবিতা ও জয় ধ্বনির মাধ্যমে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, রবীন্দ্রনাথের সকল চিন্তা ও বানীর মধ্যে রয়েছে বিশ্বজনীনতার সুর। ভারতবর্ষকে তিনি মিলন ধর্মের সঙ্গম স্থল হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। 


রবীন্দ্রনাথের মতে -' পৃথিবীর ইতিহাসে ভারতবর্ষ নানা কে এক করিবার আদর্শ রূপে বিরাজমান। ' কবি উপলব্ধি করেছিলেন যে,' এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে' এইরূপ এক পূন্য তীর্থ। 


ঘটনাটি বহুলাংশে সত্যি কেননা, যুগে যুগে বহু জাতীর আগমন ঘটেছে আমাদের এই ভারতবর্ষে। সকলেই শেষ পর্যন্ত কিছু না কিছু সম্পদ নিয়ে তবে নিজেদের দেশে ফিরেছেন। কেউ কেউ আবার এদেশেই রয়ে গেলেন এবং রচিত হলো -' নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দ্যাখো মিলন মহান'। সকলে একমত হলেন -' India Unity and diversity' এইরূপ মন্ত্রনায়। 


বিংশ শতাব্দীর ভারত ভূমিতে দাঁড়িয়ে কবি উপলব্ধি করেছিলেন আর্য সত্যকে। সহস্র ব্যাপি ভাবনার মধ্যে দিয়ে কবি রচনা করলেন ভারত তীর্থ কবিতা। সেখান থেকেই বুঝি মানবজীবনের চিন্তার সূত্রপাত ঘটেছিল। মানুষ এগিয়ে যেতে শিখলো এক উপলব্ধি থেকে অন্য আরেকটি উপলব্ধির দিকে। পরিবর্তন এলো চিন্তার মাধ্যমের। বিবর্তন ঘটলো সমাজ জীবনের। 


কিন্তু মজার কথা এই যে, ভারতবাসী চিরকাল তাঁদের জীবন যাত্রার সামাজিক জীবনের অথবা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উপলব্ধির মর্যাদাকে চিরকাল একইভাবে অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছেন তা কখনওই নয়। তবে একথা সত্যি যে, ভারতীয় মানুষ কোনো দিনও পরদেশ আক্রমণে প্রলুব্ধ হয়নি অথবা পররাজ্য পীড়নেও মননিবেশ করেনি। কিন্তু পশ্চিমী সভ্যতাকে অবিকল নকল করে তাকে সভ্যতার ব্যঞ্জনার দ্বারা ভরিয়ে তুলে চলেছে আজও। এখানেই কেমন জানিনা মনে হয় অসহায় ভারতবর্ষ। এত কিছু পেয়েও তুমি কোথায় যেন নিজেকে নষ্ট করে ফেললে। 


রবীন্দ্র সত্ত্বার যুগ শেষ। তাকে সুকঠিন বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে সরলতায় ভরাতে গিয়ে দেখা যায় যে তাতে কদর্যের পরিমাণ অনেক বেশি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বকবির পরিচিতি আজ অনেকের কাছে প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই, কেননা বড় বড় পন্ডিতেরাই হিমশিম খাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য কে বর্ণনা করতে গিয়ে, তবে আর সাধারণ মানুষের দোষ কোথায়? 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শনের মূল কথা হলো ঈশ্বরে বিশ্বাস। কোনো বক্তা যদি নিজে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী হন, তবে প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেও নাস্তিক হিসাবে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন দর্শন সেকথা বলেনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ' মানব সত্য' নামক যে বিশিষ্ট ধারণাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে, তার প্রতিটি ছত্রে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রতি প্রেম। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা অনেক খানি ঈশ্বরের ভক্তির দিকে এগিয়ে চলে এবং মিলন ঘটায় জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার সাক্ষাৎ পরিচয়ের। 


 



   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics