Sangita Duary

Romance Tragedy

3  

Sangita Duary

Romance Tragedy

ভাঙা আয়না

ভাঙা আয়না

7 mins
241


কলেজে বেরোনোর আগে নিজেকে আর একবার ভালো করে আয়নায় দেখে নিলো হিয়াশা।চোখের কাজল ঠিকঠাক,সরু নিখুঁত,ঠোঁটের লিপস্টিক এতটুকুও অতিরঞ্জিত নয়,চুলের গোছা ছোট্ট কামড়ি ক্লিপে সুবিন্যস্ত।কপালে সযত্নে গুছিয়ে রাখা লগস হিয়ার গৌরবর্ণ সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে।গাঢ় মেরুন কুর্তি আর কালো জিন্সে হিয়ার ব্যক্তিত্ব ঈর্ষণীয়।তিন দাদার কোলে ওই একটিই মাত্র বোন,হৃদয়ের বহুকালের আশা, তাই বাবার অনেক আদরের হিয়াশা।স্বভাবে অভ্যেসে আদর, প্রশয় স্পষ্ট।দেওয়াল ঘড়িটাকে আর একবার দেখে নিলো হিয়া।সাড়ে নটা।


আর দেরী করলে এস এসের ক্লাসটাই মিস হয়ে যাবে,পৃথিবী রসাতলে যাক কিন্তু প্রফেসর সূর্যসারথি ঘোষের ইংরেজি ক্লাস হিয়া একদিনও মিস করবেনা।

পায়ে চটি গলিয়ে ঝোলানো ব্যাগ কাঁধে নিতেই কলিং বেলে শালিকের ঝগড়া,এমন সময় আবার কে?হিয়া দরজা খুলতেই সামনে রজত,ছোট বৌদির মাসতুতো ভাই,দুর্গাপুরে থাকে,দিঘা,উলুবেড়িয়া,হাওড়া,হুগলি ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় সাতটা পেট্রোল পাম্পের মালিক,বাবার একটিই ছেলে,সুপুরুষ,বহুদিন ধরে ঝুলছে হিয়ার পেছনে,সেবার তো হিয়ার জন্য জলপাইগুড়িতে,মামাবাড়ি পর্যন্ত হানা দিয়েছিল ।ছেলেটাকে দেখলেই হিয়ার পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে ওঠে।জুতোয় গটগট শব্দ করে বেরিয়ে গেল হিয়া।উফফ বাঁচা গেল!

হিয়া পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রী।তবু একমাত্র ওই এস এস জির টানে বার বার ষোলো নম্বর ক্লাসরুমে সকাল দশটার মধ্যে সে হাজির হয়ে যায়,সবার পিছনে বসে,এস এস ডানে পড়ান, মারভেল গড়গড় আউড়ে যান,ব্রন্টি সিস্টার্স,এলিয়ট ,সবার কোটেশন ভেদ করে কেবল এস এসের কণ্ঠস্বর হিয়ার ভিতরটা ফালা ফালা করে দেয়,চোখ বুজে,"কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল..."আবহে ভরে ওঠে তার শরীর।

বাবার কাছে একবার শেক্সপিয়ার শুনেছিল হিয়া।ইলিরিয়ার রাজ্যে অর্সিনো বলছে,"ইফ মিউজিক বি দ‍্য ফুড অফ লাভ, প্লে অন..."

হিয়া কল্পলোকে দেখে,অর্সিনো নয় যেন এস এস তার জন্য ব্যাকুল গেয়ে চলেছেন।

অথবা,ওই যে ,যেন ওথেলোর ছদ্মবেশে এস এস বলে চলেছেন,"ইট ইজ দ‍্য কজ,ইট ইজ দ‍্য কজ,মাই সোল..."

হিয়া চোখে ভেসে ওঠে সপ্তপদীর উত্তম সুচিত্রার সেই বিখ্যাত ওথেলো ড্রামাসিন। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।আবিষ্ট হিয়া খেয়ালই করেনি,কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে,ক্লাস শেষও হয়ে গেছে অনেকক্ষণ।

ইস!ক্লাস শেষে এস এসের ওই যে "ইটস অল ফর টুডে, লেটস মিট নেক্সট ডে" কথাটাই যে শোনা হলোনা আর সাথে ওই ভুবন ভোলানো চাহনি,ধুস,আজকের দিনটাই মাঠে মারা গেল,সকালে ওই অনামুখোর মুখটা দেখছেনা?

কী জানি সারাদিনটা কেমন কাটবে?


কলেজ পেরিয়ে একটু গেলেই,বিশাল একটা মল, কাল ছোট বৌদির জন্মদিন,মা একটা শাড়ি কিনতে দিয়েছে। বেশ জমকালো একটা কাঞ্জিভরম পছন্দ করে কাউন্টারে অপেক্ষা করছে হিয়াশা,নিচের ফুডকোর্টটায় বেশ ভিড়,পেটটা অনেক্ষন থেকে চুঁই চুঁই করছে, একবার গেলে হয়,কিন্তু জায়গা নেই যে একটুও,হিয়া আলগা চোখে চারদিক দেখছিল।আরে এস এস না,ওই তো কোণার টেবিলটায়!হিয়ার বুকে দ্রিম দ্রিম,আজ কথা বলতেই হবে।কিন্ত কিভাবে?এতদিন শুধু চোখে দেখে ঝাল মিটেছে,কিন্তু আজ কথা বলার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করবেনা হিয়াশা।ডানহাতের মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুল পরস্পর জাপটে ধরে টুসকি বাজিয়ে দিলো,ইয়েস! কলেজ ম্যাগাজিনের ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই তো হয়।

চটপট শাড়ির প্যাকেটটা কাউন্টার থেকে নিয়ে হিয়া ছুটলো ফুডকোর্টের দিকে।

"এক্সকিউজ মি স্যার!"

"ইয়েস",রসেটি থেকে মুখ তুললেন এস এস।

-আমি স্যার, ইয়ে,মানে, একটু,ম্যা ম্যা ম্যাগাজিনের ব্যাপারে কথা বলতে চাই।

এস এস সামনের চেয়ারটা টানলেন, "ইংরেজি সাহিত্যের মেয়ে না হয়েও,যে মেয়েটা রোজ আমার ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার, আজ হঠাৎ সামনে যে, কী ব্যাপার!"

হিয়া আরো ঘাবড়ে গেল,কপালের ঘাম মুছে বললো, "স্যার আমি একটা আর্টিকেল জমা দেব ম্যাগাজিনের জন্য!"

এস এস হালকা হাসলেন,বেশ কাল লাঞ্চআওয়ারে নিয়ে এস,আমি দেখে নেব,কেমন? সারারাত জেগে অনেক চেষ্টা করেও একটা লাইনও পেট থেকে বের করতে পারলো না হিয়া,কাল এস এসকে কী দেবে তাহলে?আবার এস এসের সাথে একাকী সাক্ষাৎটাও হারাতে ইচ্ছে করছেনা।

হাতের প্রায় ডজনখানেক নখ খেয়ে ঠিক হলো,বললেই তো হলো,আর একটু সময় চাই,আর সাথে একটু গাইডেন্স,যদি উনি করেন!


বাহ! হিয়া নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে বাহবা কুড়োলো।


আজ দশটার ক্লাসটা হলোনা।এস এস আসেননি নাকি?

লাঞ্চব্রেক অবধি স্টাফরুমের সামনে ঘোরাঘুরি করে,হিয়া নিজেই হাঁটা দিলো এসএসের বাড়ির দিকে,শরীর খারাপ হলো নাতো?

সানরাইজ বিল্ডিঙের টেনথ ফ্লোর,হিয়া বহুবার শুনেছে তানিয়াদের কাছ থেকে।

কলেজ থেকে এসএসের বাড়ি প্রায় আধাঘন্টা।

বেরোনোর মুখে হঠাৎ বৃষ্টি। হিয়া ভিজেই গেল।হোক, আজ সে এস এসকে মিট করবেই।

টেনথ ফ্লোরে নেমে বেল বাজালো হিয়া।বেশ কয়েকবার।নেই নাকি?ফিরে যেতে হবে?এভাবে?মাথা নিচু করে হিয়া পিছন ঘুরতেই দরজা খোলার শব্দ,"ইয়েস?"

হিয়া তুতলে গেল,"স্যার আজ আমার আর্টিকেল জমা দেওয়ার কথা ছিলো,আপনি কলেজ গেলেননা, তাই..."

এস এস যেন সম্বিৎ পেলেন,"ও হ্যা হ্যা, আর বলোনা,কাল রাত থেকে জ্বর, এসো,ভেতরে এসো, ইস! তুমি তো ভিজে গেছো একদম,দাড়াও,একটু,আমি আসছি"।


হিয়া কিছু বলার আগেই ভিতরে চলে গেলেন এস এস।

সুন্দর ছিমছাম ড্রইংরুম।একপাশে ছোট্ট ডিভান।দেয়ালে টারনারের ল্যান্ডস্কেপ পেন্টিং।

মনটা ভোরে উঠছিল হিয়ার।একটু এগিয়ে একটা স্পেস,অনেকখানি,ডেস্ক চেয়ার,অনেক বই,বোধয় এস এসের স্টাডি,একটা মহিলার ছবি,অসম্ভব সুন্দরী।


"টেক ইট"- পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন এস এস।হাতে একটা টাওয়েল।বাড়িয়ে দিলেন হিয়ার দিকে।


"তুমি ড্রইং এ এস,তোমার কী আর্টিকেল আছে দেবে বলছিলে!"

হিয়া সোফায় বসলো চুপচাপ,"আমি তো স্যার, সেই অর্থে লেখালেখি করিনা,কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে করে লিখতে,তাই,আপনি যদি একটু গাইড,,"

এস এস কে ক্লান্ত দেখালো হঠাৎ,কপালে আলগা হাত ছুঁইয়ে বললেন, "এইমুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের তো কোনো বই নেই,তুমি বরং..."

একি এস এস সোফায় এভাবে ঢলে পড়ছেন কেন?হিয়া এস এসের কপালে হাতের চেটো ছোঁয়ালো, জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে যে! হিয়া যে এখন কী করে!বাড়ির চাকরটাও নেই নাকি?এসে থেকে একটিবারও তো দেখলো না। না, যা করার তাকেই করতে হবে।রান্নাঘর থেকে বাটি ভরে জল এনে নিজের রুমাল ভিজিয়ে এস এসের কপালে জলপট্টি দিলো,বেডরুমের ড্রয়ার ঘেঁটে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলো একটা,কখন খেয়েছেন কী জানি?একটু গরম দুধ পেলে হতো।হিয়ার যখন জ্বর সর্দি হয়,মা গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে দেয়,আন্টি বায়োটিক টোটকা। হিয়া রান্নাঘরে গেল,ফ্রিজ খুলে দুধ বের করলো,গরম করে হলুদ মিশিয়ে কোনোরকম খাইয়ে দিল একগ্লাস।

এবার তো নিজের একটা চেঞ্জ দরকার,কতক্ষন ভিজে কুর্তিতে থাকবে সে! কিন্তু এসএস তো এখন প্রায় বেহুস।ড্রেসিং টেবিলে একটা শাড়ির প্যাকেট,কাল মলে এসএসের টেবিলে দেখেছিল হিয়া। কার জন্য?


যার জন্যই হোক,এখন না হয় হিয়ারই হোক! প্যাকেট খুলে শাড়িটা বের করে নিল,কিন্তু ব্লাউজ,সায়া?এবার ওয়ার্ডরোবে হাত না দিলেই নয়,কিন্তু না বলে অন্যের ওয়ার্ডরোবে... না না,হিয়া শাড়ির আঁচলে টেনে ঢেকে দিলো তার ডান দিক,কুর্তি নিংড়ে মিলে দিলো চেয়ারে,পাখা খুলে দিলো, আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো একঝলক,এত পরিপাটি কাজ হিয়া করতে পারে,বিশ্বাস হয়না নিজেকে।এস এস তখনও ঘুমোচ্ছেন, কী নিষ্পাপ ওই মুখ!

জলপট্টি পাল্টে হিয়া চারপাশটা দেখলো,যেন তার নিজের সংসার,এখানে যা কিছু সব তার,এ ঘর তার,এই শাড়ি তার,যে মানুষটা ডিভানে শুয়ে আছে সে মানুষটাও তার।


হিয়া এস এসের কাছে এসে বসলো,পরম মমতায় আঙুল বোলালো চুলে...। কখন যে চোখটা লেগে গিয়েছিল হিয়ার,ঘুম ভাঙলো এস এসের ডাকে।দেখছে হিয়াকে নিস্পলক।হিয়া অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো, "না মানে স্যার, আপনি তো ঘুমোচ্ছিলেন আর আমার জামাটাও ভিজে গিয়েছিল...আপনাকে না জানিয়েই ড্রেসিং টেবিলে পরে থাকা শাড়িটা...সরি স্যার..."

 এসএস হাত রাখলেন হিয়ার কাঁধে,"ইটস ওকে, খুব সুন্দর লাগছে তোমায়,তুমি বাড়ি যাবে তো?সন্ধ্যে তো প্রায় নেমেই এলো।"

হিয়া চমকে তাকালো, " হ্যা, কিন্তু আপনাকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে...!"


এসএসের ঠোঁটে সেই ভুবনভোলানো হাসি, "আমি আগের থেকে বেটার, ,ভজহরি এবার এসে পড়বে,দুপুরে ও একটু বেরোয়,নিজের খেয়াল বলতে পারো,আমি বাড়ি থাকিনা,সারাদিন বেচারা একা একা...!"

হিয়া অনিচ্ছাতেও উঠে দাঁড়ালো, "বেশ,আজ তাহলে যাই, তবে কাল কিন্তু আবার আসবো।"

পাশের ঘরে গিয়ে আধভেজা কুর্তিটা গলিয়ে নিলো ,শাড়িটা খুললনা, এসএসের মুগ্ধতা লেগে আছে শাড়িটায়, হিয়া কুর্তির ওপর দিয়েই তার এসএসের প্রশংসাটা জড়িয়ে নিলো।

দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই এসএস পিছু ডাকলো, "হিয়া,যাই বলতে নেই,বল আসি।" একনিমেষে পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে হিয়ার চোখে,যেন সব কিছু নতুন,গন্ধময়,সুন্দর।

হিয়াদের বাড়ির কাছের কদমগাছটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে,হলুদ সাদায় দুচোখ জুড়িয়ে যায়,কৈ এতদিন হিয়া দেখেনি তো!

হিয়াদের বাড়ির বাগানটার নুড়ি বিছানো রাস্তাটার নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট ছোট্ট ঘাসফুল ফুটেছে,বাহ!এতুদি আবার বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে তুলে ফেলবেনা তো ওদের?

না আগে থেকে বলে রাখতে হবে।ওমা পাতাবাহারের খাঁজে কী সুন্দর টুনটুনির বাসা,বৃষ্টির জলে ভিজে যাচ্ছে যে দুটো পুঁচকে ডিম,আর একটা পাতা নিয়ে হিয়া আড়াল করে দিলো বাসাটা।

এতো দিনের বেহিসেবি,এলোমেলো হিয়া হঠাৎ করে কিরকম গোছানো হয়ে গেল!

বাড়ি ফিরে নিজের ঘরটা গোছালো সুন্দর করে,জামাকাপড় আলমারিতে রাখলো পাট করে।যে শাড়িটা পরে এসেছিল,বারান্দায় ভালো করে শুকিয়ে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখলো যত্ন করে;মা জিজ্ঞেস করেছিল,"পরে গেলি কুর্তি,ফিরলি শাড়ি পরে,কী ব্যপার?"

"শ্রাবনীদের বাড়ি গিয়েছিলাম,ভিজে গিয়েছিলাম,তাই ওর মায়ের একটা শাড়ি...!''

মা কটমট তাকিয়েছিল হিয়ার দিকে,প্রশ্নটা যেন,শ্রাবনী থাকতে হঠাৎ তার মায়ের শাড়ি কেন?

প্রশ্নটা করার আগেই হিয়া নিজের ঘরে সুরুৎ।

এসএসের স্টাডিটা বড্ড অগোছালো,হিয়া কাল গিয়ে গুছিয়ে দেবে,ইন্টারনেট ঘেঁটে কয়েকটা ইন্টিরিওর ডিজাইন দেখে নিলো।

ওবাড়ির ব্যালকনিটা দারুণ,কয়েকটা ঝোলানো টব আছে,ফাঁকেফাঁকে যদি উইন্ড চাইম ঝোলানো যেত,হাওয়ার সাথে দুলে সুর তুলতো টুংটাং,বেশ, কাল যাওয়ার পথে কিনে নেবে।

স্বপ্নে বিভোর হিয়া।আর যে তর সয় না !কখন সকাল আসবে,কখন ফিরবে সে তার খেলাঘরে? রাতে হিয়া একটা স্বপ্ন দেখলো,শাড়িটা পরে,ঘোমটা টেনে সারা ঘরে পুতুল সাজিয়ে চলেছে ,আয়নায় চোখ পড়তেই চমকে উঠলো,সিঁথিটা তার সাদা কেন?

*************************


সকালে একপশলা ঝরিয়ে,আকাশে এখন রোদের সমাবেশ।সূর্যর জ্বরটা আর নেই,তবে দুর্বলতা আছে সামান্য,এই সিজন চেন্জ বড্ড ঘায়েল করে সূর্যকে,ভাগ্যিস কাল ওই সময় মেয়েটা এসেছিল!

ভজহরি চা দিয়ে গেছে,সামনের বারান্দায় পাতা আরামকেদারায় বসে নিউজপেপার ওল্টাচ্ছে সূর্য।পড়ছে একমনে।

কিছুক্ষণ পর।ঘরের ভিতর একটা চেঁচামেচি। সূর্য কান পেতে শুনলো একটুক্ষণ।ইন্দিরার গলা না?

সূর্য পায়ে পায়ে ভেতরে গেল,ইন্দিরা এসেছে,সেই স্বভাবসিদ্ধ আঙুল তুলে বকছে ভজহরিকে,"রোজ দুপুরে তোমার বাইরে কী এমন থাকে অ্যাঁ?একটা মানুষ জ্বরে বেহুঁশ পরে রইলো আর তুমি ফিরলে সন্ধ্যেবেলায়?"

ভজহরি হাত কচলে বললো, "কিকরে জানবো বৌদি,আমি তো রোজই...দাদা অন্যদিন কলেজে..."

- চোপ, একদম দূর করে দেব।

এইরে এবার সূর্যর শিবির সমরে প্রবেশ না করলেই নয়,চোখ টিপে ভজহরিকে চলে যেতে ইশারা করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ইন্দিরাকে, "এতই যখন আমাকে নিয়ে চিন্তা,একা ফেলে চলে গেলে কেন?"

ইন্দিরার ঠোঁট ফুলে গেল, "চিন্তা করতে আমার বয়ে গেছে,নেহাত কাল ভজাটা ফোন করলো,নাহলে কে আসতো তোমার কাছে?দিব্বি তো আছো,আমিই শুধু চিন্তায় পাগল,সব কিছু ওই জোচ্চোর ভজাটার জন্য!"

-তাই,সব কিছু ভজার জন্য?আর আমারটা? উমমম?

ইন্দিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সূর্যর ঠোঁট এগিয়ে গেল ইন্দিরার দিকে।

-দাদাবাবু...

উফফফ ভজহরি, জ্বালিয়ে মারলে, সাধে কি ইন্দিরা রেগে যায়,উল্লুকটাকে এক্ষুনি আসতে হল?

সূর্য কটমট তাকালো,ওমা পেছনে হিয়া যে,সূর্য এগিয়ে এলো, "আরে হিয়া,এসো এসো,ইন্দিরা, এই হলো হিয়াশা।আমার স্টুডেন্ট,কাল ও না থাকলে..."

ইন্দিরাও এগিয়ে গেল হিয়ার দিকে, "বাহ,কী মিষ্টি মেয়ে! সত্যি,কাল তুমি তোমার স্যারের জন্য অনেক করেছ,থ্যাংকস দিয়ে তোমায় ছোট করবো না,আজ কিন্তু তুমি আমাদের সাথে লাঞ্চ করবে।"

হিয়া অনেক কষ্টে চোখের জল লুকোল, "না ম্যাডাম ,আজ হবেনা,অন্য একদিন?স্যার কেমন আছেন,দেখতে এসেছিলাম,আপনি চলে এসেছেন...আমি আসি।"

দরজার দিকে ঘুরলো হিয়া,ডান হাতে খামচে ধরলো কাঁধঝোলা ব্যাগ,বাগের ভিতর পলিথিন প্যাকেটে ইন্দিরার শাড়িটা মচ মচ শব্দ করে উঠলো। এ শাড়িটা শুধু হিয়ার,শুধু শাড়ি কেন,কালকের ওই ঘর,ওই কিচেন,ওই ওয়ার্ডরোব,ওই ড্রইং,ডিভান,এমনকি কালকের ওই মানুষটাও শুধু হিয়ার,কাওকে দেবেনা হিয়া কালকের ওগুলো,ওগুলো সব ওর,একান্তই ওর,লম্বা এক চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো হিয়ার বুক থেকে। বাইরে কোথাও মাইকে গান বাজছে,"...তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বাঁধো ঘর"!

গানের কথা বুকে নিয়ে হিয়া পা বাড়ালো রাস্তায়।


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance