STORYMIRROR

Asif Iqbal Emon

Tragedy Others

3  

Asif Iqbal Emon

Tragedy Others

ভালোবাসি, অনেক বেশি।

ভালোবাসি, অনেক বেশি।

6 mins
425

দুই বন্ধুর মাঝে সম্পর্কটা হয় হাত আর চোখের মত।হাত ব্যাথা পেলে চোখ কাদে। আনার চোখে জল এলে হাত তা মুছে দেয়। বন্ধু এক দিনের জন্য বা এক মুহুর্তের জন্য না। বন্ধু হয় সারা জীবনের জন্যে। ফটোসেশনের আলোর ছটায় কাধে হাত রাখা নয়। সারা জীবন সেই হাতটা ধরে রাখার নাম বন্ধুত্ব।জীবনে সবসময় এমন একজন বন্ধুকে পাওয়ার চেষ্টা করেছি, যে আমার সব কষ্ট বুঝবে।


শুধু সুখের দিনেই নয়, দুখের দিনেও আমার পাশে থাকবে।ছায়ার মত রাখবে আমাকে। তবে আফসস যে জীবনে এমন কোনো বন্ধু পাইনি। তাই আমার জীবনে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলেন আমার বাবা। আমার বাবার মুখের হাসি আমার কাছে সবচেয়ে দামী। বাবা ছাড়া তো আমার আর কেউ নেই! বাবাই আমার সব।মা হারা মেয়ে আমি ইরা। আমার বয়স যখন ০৮ মাস,সবে একটু একটু বসতে শিখেছি, তখনই আমার মা মারা যান।


বাবার হাত ধরেই আমার পথচলা শুরু। বাবার হাতে হাত রেখেই আমি সামনের দিকে এগোতে শিখেছি। অসহায় জীবনে আমার বাবাই আমার একমাত্র অবলম্বন।পৃথিবীতে সবচেয়ে আপনসবচেয়ে প্রিয় আমার বাবা,যখন তখন আমায় বলেমা তুমি সুন্দর রক্তজবা।বাসায় ফিরতে বাবার যদিহয় কখনো লেট,নিজে নিজেই রেগে যাইখুলব না আর গেইট!ক্ষণিক পরে যখনবাবার পায়ের শব্দ পাই,সবার আগে দৌড়ে আমিগেইট খুলতে যাই।আমি এবার এসএসসি দিলাম।ছোটবেলায় যখন খাবার খাইয়ে দেওয়ার জন্যে, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে, হাত ধরে হাটার জন্যে মাকে দরকার ছিল তখন পাশে পেয়েছি বাবাকে।


বাবার হাত ধরেই হাটতে শিখেছি। বাবার হাতেই খাবার খেয়েছি।বাবার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি। আবার সকাল বেলা ঘুম্ থেকে উঠেই চোখ খুলে বাবার মুখ দেখেছি।আমার সারাটা পৃথিবি জুড়েই আছে বাবা। একটা মেয়ে তার মায়ের সাথে তার সবকিছু শেয়ার করে। তবে আমি করেছি বাবার সাথে।স্কুল জীবনে দরকার ছিল একটা বন্ধুর, তখনো পেয়েছি বাবাকে। বাবা শুধু আমার বাবাই নয়। আমার মা,ভাই,বোন, পরিবার এমনকি আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। আমার আরও দুইজন বড় ভাই আছে। বিয়ে করে তারা বাহিরেই থেকে গেল। অনেক দিন হল তাদের দেখি না। বাবা প্রায়ই তাদের দেখতে চায়। তবে তারা এতটাই বিজি থাকে যে বাবাকে দেখার মত সময় তাদের কাছে নেই! তারা বাবার জন্যে একতাই কাজ করে। মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা পাঠায়। কিন্তু টাকা দিয়েই কি সব কিছু হয়? আর যাই হোক টাকা দিয়ে অন্তত বাবা পাওয়া যায় না।


আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগতে পারি না। আমার বাবার খুব ইচ্ছা আমাকে নিয়ে একদিন মর্নিং ওয়াকে যাবে।কতবার চেষ্টা করেছি। ০৯ টার আগে ঘুমই ভাঙ্গে না।নয়টা বাজলেই বাবা আমার রুমে এসে বলেন,-কিরে তোর মর্নিং ওয়াক কেমন হল?-মর্নিং ওয়াক! কিসের মর্নিং ওয়াক?-তোর স্বপ্নের?-বাবা!-হা!হা! হা! সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানাই। না,না……। প্রতিদিন বাবাই বানায়। আমার যখন ইচ্ছে হয়, তখনি বানাই।প্রতিদিনের নাস্তা তো বাবাই বানান। আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবার সাথে কথা বলি। নাস্তা খাওয়া শেষ হলে আমি আমার কাজে বেরিয়ে পড়ি।আর বাসায় বাবা একা একা থেকে তার মেয়ের ঘরে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে।দুপুরে যখন বাসায় ফিরি তখন বাসার দরজার বেল দেওয়ার আগেই বাবা দরজা খুলে বলবেন,-এসেছিস? কি এনেছিস আমার জন্যে?-কি আবার আনব? তুমি কি ছোট বাচ্চা নাকি?যে তোমার জন্যে চকোলেট,চিপস, এসব আনতে হবে!-তার মানে কিছুই আনিসনি! যা কথা নাই তোর সাথেন!-হা…হা…হা…! এই দেখ কি এনেছি তোমার জন্যে!!প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পর বাবার মুখে ছোট্ট বাচ্চাদের মত যে যে হাসি দেখা যায়, তা দেখে আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।তারপর খাওয়া দাওয়া শেষে বিকেল বেলা আমরা ঘুরতে যাই।


বাবা তাতে খুব আনন্দ পান। তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে আমি পড়তে বসি। আর বাবা আমার পাশে বসে গল্প করতে থাকে। কত বার বলি,-থামো, এবার পড়তে দাও আমাকে।-কেন রে? আমি যখন রান্না করি, তখন তো তুই আমার পাশে দাঁড়িয়ে বকবক করেই যাস।তোর জন্যেই তো আমি ভালোভাবে রান্না করতে পারি না। তারপর ঐ কুখাদ্যগুলো খেতে হয় আমাকে।-তাই না! আমার জন্যে তুমি রান্না করতে পারনা?-না।-আর এইজন্যে তুমি এখন আমাকে পড়তে দিবে না?-দিব নাই তো!-আমি পড়ব, বাবা!-নারে মা, এখন পড়িস না। দেখ তুই ছাড়া আমি কার সাথে কথা বলব বল?চিন্তা করলাম ঠিকই তো। আমার সাথে ছাড়া বাবা আর সাথে কথা বলবে? কার সাথে সময় কাটাবে?পরে বললাম,-আচ্ছা বল, তবে সময় কম। যা বলার বলে বিদেয় হও তাড়াতাড়ি!দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে গেল। আমার পড়াশুনা শেষ হল। সরকারী একটা চাকরিও পেলাম। তবে খুশি হলাম না। এই চাকরিটা হয়ত বাবার কাছ থেকে আমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে, ভাওয়াদের মতো।তবে এটা আমি কোনোদিন ও চাই নি।বাবার সাথে আমার সম্পর্ক আগের মতই রাখতে চাই।আজ ১৩ তারিখ। ১৬ তারিখ তো বাবা দিবস। বাবাকে তাহলে একটা সারপ্রাইজ দেয়া যাক। লেগে পড়লাম প্রস্তুতি নিতে।বের হয়েই গেলাম কার্ডের দোকানে। কার্ড কিনলাম। বাবার জন্যে একটা পারফিউম কিনলাম, একটা ঘড়িও কিনলাম। বাবার পছন্দের সব রান্না ইন্টারনেট থেকে শিখলাম। এবার বাবাকে চমকে দিব।


১৬ তারিখ সকালে বাবা তো বাসায়। তাহলে আমি ঘর সাজাব কি করে? আর রান্নাই বা করব কি করে? বাবা তো সব জেনে ফেলবে। বাবাকে বললাম,-বাবা, ঘুরতে বের হবে?-এখন?-আচ্ছা, চল। আমি রেডি হয়ে আসছি।-না-না!-হুম, আমি যাচ্ছি না।-তুই যাচ্ছিস না! তাহলে আমি কার সাথে যাব?-ওই যে পাশের বাসার নীল ভাইয়ার সাথে।-কিন্তু আমি কেন ওর সাথে যাব?-আর কথা বল না। যাও রেডি হও।বাবাকে বাসা থেকে বের করেই রান্নাঘরে গেলাম।বাবার পছন্দের ইলিশ পোলাও রান্না করলাম। দেখলে খুব খুশি হবেন। তাছাড়াও বাবার জন্যে কালোজাম, রসগোল্লা, বানালাম। রান্না শেষ করে ঘর গুছানোর কাজ শুরু করলাম।


বাবার কার্ডে বড় করে লিখলাম-HAPPY FATHER’S DAY TO MY BONDHU BABA…….বাবা্র পছন্দের কাঠগোলাপ দিয়ে ঘরটা সাজালাম। বাবা সবস্ময় বলতেন মা নাকি কাঠগোলাপ ভীষ্ণ ভালোবাসতেন। ঘর গোছানোর কাজ শেষ করে আমিও রেডি হয়ে নিলাম। বাবার জন্যে আনা কেকটা টেবিলে রাখলাম।রুমে গিয়ে নীল ভাইয়াকে কল দিলাম, বাবাকে নিয়ে আসার জন্যে। ওদের জন্যে ওয়েট করতে করতে বিছানার উপর শুয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি।আমার ঘুম ভাঙ্গলো আযানের শব্দে, এশার আযান। বাবা এখনো এল না কেন? ফোন হাতে নিয়ে দেখি নীল ভাইয়ার ৩৪ টা মিসড কল। জলদি ফোন দিলাম,-ভাইয়া, কোথায় আপনারা?-ইরা-কি হয়েছে-আংকেল হঠাত বুকে ব্যাথা বলে মাটিতে পড়ে যায়। আমি উনাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তাররা এখনো কিছু বলেন নি।-আপনি মিথ্যা বলছেন তাই না?


বাবা আপনাকে শিখিয়ে দিচ্ছে। আমাকে ভয় দেখাতে?আপনি দিন তো, বাবাকে ফোনটা দিন।-ইরা, আমি মিথ্যা বলছিনা।আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে মনে হল।কোনো মতে বললাম,-আমি আসছি।হাসপাতালে গিয়ে বললাম,-কই, বাব কই?-আংকেল আইসিইউ রুমে।-আমার বাবার কিচ্ছু হয় নি। ধ্যাত এরা শুধু শুধু এমন করে।ডাক্তার কই?ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলাম বাব্র কি হয়েছে। উনি বললেন বাবা নাকি স্ট্রোক করেছেন। লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে, তাকে বাঁচানো যাবেন।বাঁচবে না বললেই হল?পাগল নাকি এরা!আমার বাবা বাঁচবে না, বললেই হল! বাবা না থাকলে আমি কি নিয়ে বাচব?আধা ঘন্টা পর রাত ০৯.৩০ মিনিটে খবর এল বাবা মারা গেছেন। আমার বাবা আর নেই। আমার দুনিয়া থমকে দাড়াল। কালো মেঘে আমার আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। রাগে ক্ষোভে আমি আমার বাবার লাশ পর্যন্ত দেখি নি।আমাকে না বলে কিভাবে চলে গেলেন উনি।একবারের জন্যেও কি তার এই অসহায় মেয়েটির কথা মনে পড়ল না? এতটাই নিষ্ঠুর হতে পারলেন?বাসায় গিয়ে সব চুরমার করে ফেললাম। বাবাই যখন নেই তখন কি হবে এসব দিয়ে?জীবনে কোন দিন কোন বন্ধু পাই নি। কিন্তু তাই বলে কোন দিন আফসোস ও করি নি। আমার কাছে আমার বন্ধু বাবার চেয়ে বড় কোন বন্ধু ছিল না।বাবা আমাকে যেভাবে না বলে চলে গেলেন, সেভাবে আমিও স্বার্থপরের মত বাবাকে একদিন ভুলে যাব। যতবারই চিৎকার করে বলতে চাই যে আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না, ঠিক ততবারই চোখের কোণে জল এসে বলে দিয়ে যায়,ভালোবাসি আমি তোমায় বাবা, ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি। আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমায়।বন্ধু ছাড়া জীবনটা এক ধূ ধূ মরুভূমিসমগী আমার, সাথী আমার-বন্ধু আমার তুমি।ছেড়ে চলে গেলে আমায়-কি নিয়ে বাঁচব আমি!একাকী রাজপথে হবে আমার নিঃসঙ্গ পথচলা, পথের অন্তরালে থেক তুমি আর তোমার ছায়া;নিঃস্তব্ধ দ্রোহের মায়াজালে শূন্যতার প্রতিশ্রুতি তুমি -অন্ধকার, চারিদিকে অন্ধকার-এ কেমন নিঠুর খেলা বিধাতার!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy