Asif Emon

Inspirational Others

4.9  

Asif Emon

Inspirational Others

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

4 mins
487


ডায়েরী থেকে সাদা কাগজটা ছিড়ে কলম দিয়ে বেশ বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে লিখে ফেলল তন্নি,‘আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়।’কাগজটা ভাঁজ করে টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের নিচে রেখে দিল সে। হ্যা, প্রস্তুতি শেষ। এবার শুধু নতুন ব্লেডটা খোলার পালা। নতুন চকচকে ব্লেডটা দেখছে আর ভাবছে একটু পরই হাতের শিরা কাটবে সে এই ব্লেডটা দিয়ে। কি মনে করে ব্লেডটা টেবিলের উপর রেখে জানালা দিয়ে শেষবারের মত জোছনা দেখতে লাগল তনু। আনমনে ফিরে গেল পুরনো স্মৃতিতে।অরণ্যের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল ভার্সিটিতে।


প্রথম প্রথম অরণ্যকে ভালো না লাগলেও অরণ্য ছিল খুব জেদি। সে তার পাগলামো দিয়ে ঠিকই তনুর মন জয় করে নিয়েছিল। তারপর শুরু হল এ জুটির সম্পর্ক। ভার্সিটিতে এ জুটির সুনামের কোন শেষ ছিল না। এভাবে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি আর একটু ঝগড়া নিয়েই চলছিল দিনগুলো।দেখতে দেখতে তিনটি বসন্ত একে অপরের হাত ধরে যে কখন কিভাবে কাটিয়ে দিয়েছে তারা নিজেরাও জানে না। কিন্তু অরণ্য হঠাৎ কেন জানি বদলে যেতে শুরু করল। যে অরণ্য তনুর সাথে কথা বলার জন্যে অপেক্ষায় থাকত, আজকাল তাকে কল দিয়েই ওয়েটিং এ পায়।প্রথম প্রথম ব্যাপারটা কে সিরিয়াসলি না নিলেও একসময় তনু খুন কষ্ট পেত অরণ্যের ব্যাবহারে।অরণ্য বলতে গেলে একরকম যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়। আর এ যোগাযোগের চির সমাপ্তি হয় আজ বিকেলে,-


তুমি এমন হয়ে গেলে কেন?-এমন হয়ে গেছি মানে? কি বলতে চাও ক্লিয়ার করে বল-তুমি আমাকে এভয়েড ্করছ। ফোন দিলে ওয়েটিং এ থাক। কল ব্যাকও করো না। তুমিত আগে এমন ছিলে না অরণ্য।-শুন তন্নি, মানুষ সবসময় এক থাকে না। সময় আর পারিপার্শ্বিকতার সাথে সাথে মানুষকে বদলাতে হয়। এতে তো কোন অপরাধ থাকার কথা নয় তন্নি।-হ্যাঁ আসলেই তো এখানে কোন অপরাধ নেই!-আমি আর তোমাকে নিতে পারছি না তন্নি। আই থিংক আমাদের আর রিলেশন কন্টিনিউ করা উচিৎ নয়। সো,-না! অরণ্য, প্লিজ, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি যেমন আছ তেমনি থাক, তবুও আমাকে ছেড়ে যেওনা।-লিসেন তন্নি, আমার পক্ষে আর রিলেশন রাখা পসিবল না। কারণ আমি আর এখন তোমাকে ভালোবাসি না।আই এম এক্সট্রিমলি সরি।-মানে!


কি বলছ এসব। মাথা ঠিক আছে তো তোমার?-ইয়াপ, কারণ ভেবে দেখলাম তোমার সাথে আমার যায়না। কোথায় আমার ফ্যামিলি আর কোথায় তোমার,

-্থামো অরণ্য। রিলেশন করার আগে মাথায় আসেনি এসব?

-দেখ, মানছি যে আমার ভুল ছিল। বাট, সিরিয়াসলি আমি আর এই পেইন নিতে পারছি না।

-প্লিজ অরণ্য, এমন কর না, শুনে যাও।সেদিন অনেক ডাকার পরেও অরণ্য ফিরে আসে নি।খুব কেঁদেছিল তন্নি কিন্তু লাভ হয়নি।বাসায় আসার পর সোজা নিজের রুমে চলে গেল। মা অবশ্য কিছুক্ষণ ডাকলেন। তাতে সে কান দেয়নি।সিদ্ধান্ত ফাইনাল। আজই পৃথিবীর মায়া ছাড়বে সে। এ দুনিয়াতে ভালোবাসার মত যে কেউ নেই আর।হঠাৎ মায়ের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হল তন্নি। কি মনে করে ভাবল শেষবারের মত মা বাবার সাথে দেখা করা উচিৎ তার। সেই ভেবেই দরজা খুলতেই মা বলল,দেখত মা ড্রেসটা তোর পছন্দ হয় কি না?


-হুম, খুব হয়েছে মা।

-সেদিন ্মার্কেটে দেখছিলি বার বার। তখন আমার হাতে টাকা ছিল না। তাই কিছু জমানো টাকা আর তোর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাজার করতে গিয়ে নিয়ে আসলাম।

-তুমি না মা, কি যে কর!-নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে রে মা। আজ সামর্থ্য নেই বলে তেমন কিছুই কিনে দিতে পারি নে।এমন সময় তনুর বাবা বাসায় আসলেন। হাতে মনে হচ্ছে মাছের ব্যাগ। ব্যাগটা তনুর মায়ের হাতে দিয়ে বললেন,

-মেয়েটা সেদিন বলেছিল চিংড়ি মাছ খাবে। তাই ভাবলাম আজ বেতন পেয়েছি। কিছু চিঙ্গড়ি নিয়ে যাই।মজা ্করে রান্না করবে তন্নির মা। তন্নি যেমনটা পছন্দ করে।তনু এসব দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।কিছু না বলেই নিজের ঘরে এসে বালিশ চেপে খুব কান্না করলো। এমন সময় ছোট ভাইটা এসে জিজ্ঞেস করল,

-আপু কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ?

-নারে, ভাই। তেমন কিছু হয়নি আমার।-কি হয়েছে আপু বলনারে। ও বুঝেছি আমি তোর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়েছিলাম সেজন্যে। আচ্ছা আমি কাল টিফিনের টাকা রেখে দিব। সেখান তোকে তোকে দিয়ে দিব। প্লিজ আর কাদিস না। বিশ্বাস কর আমি আর এমন করব না।তনু আর সহ্য করতে পারল না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কান্নার আওয়াজ শুনে বা-মা দুজনেই তনুর রুমে আসল। তনু তার মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।তনুর রুম থেকে যখন সবাই চলে গেল তখন সে ভাবতে লাগল, ‘ভালোবাসা তো আমার ঘরেই আছে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর আমি কি মরতে যাচ্ছিলাম এক প্রতারকের জন্যে। আনি মরলে তো তার কোন কিছু আসত যেত না। বরং আমার বাবা-মাই কষ্ট পেত।আমি না থাকলে তারা কাকে এভাবে ভালোবাসত!’গ্লাসের নিচে থাকা কাগজটা ছিড়ে ফেলল তন্নি। জোছনার আলোয় অন্ধকার ঘরটা আলোকিত হয়ে গেল। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে সবকিছু। জীবনটাকে অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে তন্নির। কাগজের টুকরোর সাথে সবকিছু টুকরো টুকরো হয়ে গেল। শুরু হল তন্নির জীবনের এক নতুন অধ্যায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational