ভালোবাসার স্পর্শ
ভালোবাসার স্পর্শ
রিয়ার ছোটবেলায় মা মারা যায়। পরিবার বলতে রিয়া ও তার বাবা। তাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। তার আর্থিক কষ্ট না থাকলেও মানসিক কষ্ট আছে। ছোটবেলা থেকে সবকিছু পেলেও তার কাছে মায়ের ভালোবাসা অধরা থেকে গেছে। সে জানেনা মায়ের ভালোবাসা কি। ছোটবেলায় দেখতো তার বন্ধুদেরকে তাদের মা সব সময় যত্ন করেন। তারও মনে হতো আমারও যদি মা থাকতো। হায়! তার বাবা ভাবেন এই জন্মে অভাগিনী রিয়ার কপালে আর মায়ের ভালোবাসা জুটল না। এখন সে কলেজ ছাত্রী। নিজেকে অনেকটাই শক্ত করেছে। কিন্তু প্রতিদিন রাতে শুয়ে মায়ের ছবি নিয়ে একা একা কাঁদে। রিয়া সেই ছোট্ট মেয়েটির মতো মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,"তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? তোমার মন কাঁদলো না তোমার মেয়ের জন্য?" রিয়া কলেজের সব বন্ধুদের সাথে মিশলেও মাঝে মাঝে মনমরা হয়ে থাকে। রিয়ার বন্ধু রিনা তাকে বলে,"ওই রিয়া এখন কলেজে পড়িস প্রেম-টেম কর। আর কবে করবি?" শুনে রিয়া শুধু মৃদু হাসে। তারপরও রিনা বলে,"কিরে হাসছিস যে? এতো ভালো ভালো ছেলে আছে। তোর কাকে পছন্দ বল। আমি সব সেট করে দেবো।" শুনে রিয়া বলে উঠে,"নারে রিনা। আমি একাই ঠিক আছি।" "ধুস! কিচ্ছু ঠিক নেই। তুই আমার উপর ছেড়ে দে"- বলল রিনা। "নারে। ভয় লাগে রে আমার কাউকে ভালবাসতে। সে যদি আমাকে ছেড়ে...................."- বলেই কেঁদে ফেলল রিয়া। রিনা ওর কষ্ট বুঝতে পেরে ওকে সান্ত্বনা দিলো। এই পুরো ঘটনাটি দেখছিল রূপঙ্কর। রিয়ারই সহপাঠী। রুপঙ্করের রিয়াকে অনেকদিন ধরেই পছন্দ। কিন্তু রিয়াকে কিছু বলতে পারে না। রূপঙ্কর শান্ত, ভদ্র, মেধাসম্পন্ন ছাত্র। অসাধারণ তার বাগ্মিতার ও লেখনীর ক্ষমতা। মাথার চুলগুলো সুন্দরভাবে ছাঁটা, চোখে চশমা, পরনে বুদ্ধিজীবীসুলভ পোশ
াক, দেখতেও বুদ্ধিজীবীসুলভ। অন্যান্য ছেলেদের থেকে অনেকটাই আলাদা। রুপঙ্কর রিয়ার কষ্টে ব্যতীত হলো। রুপঙ্কর ভাবতে লাগল কোন উপায় রিয়ার কষ্ট লাঘব করা যায়। রিয়া খুব সুন্দর গান গায়। কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান গেয়েছে।
রুপঙ্করও সংস্কৃতিবান ছেলে। সেও গান ভালোবাসে। কিন্তু অতটা গান গাইতে পারে না। একদিন রিয়ার খুব মন খারাপ চুপচাপ বসে আছে কলেজে। রুপঙ্কর দেখেই বুঝতে পেরেছে তার মন খারাপ। হঠাৎ রিয়ার কানে ভেসে এলো তার সবচেয়ে পছন্দের গানটা। শুনে কৌতুহলী হয়ে রিয়া এদিক ওদিক তাকাতে দেখল রূপঙ্কর গান গাইছে। এই দৃশ্য দেখে ক্লাসের অন্যান্য সহপাঠীরাও অবাক এই ভেবে যে, রূপঙ্কর এত সুন্দর গান গাইতে পারে? রিয়ার মনটাও ভালো হয়ে গেল। রূপঙ্কর নিজের চেষ্টায় রিয়ার জন্য গান শিখেছে। আর সে রিয়ার পছন্দের গানটা রিয়ার বন্ধুদের থেকে জেনেছে। তারপর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হতে লাগল। রিয়া কখন রূপঙ্করকে ভালোবেসেছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি। একদিন রিয়া রূপঙ্করকে বলল,"একটা কথা বলবো তোকে?" রুপঙ্কর বলতে বলল। রিয়া ইতস্তত করছে।
রিয়া তারপর বলল,"তুই অনেক ভালো ছেলে। আমার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত, বিচক্ষণ, পড়াশোনায়ও ভালো। তাও তোকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।" বলেই রিয়া একদৃষ্টে রুপঙ্করের দিকে তাকিয়ে আছে। রুপঙ্করের যেন মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে। রূপঙ্কর জড়িয়ে ধরল রিয়াকে। দুজনের ভালোবাসা ক্রমে গভীরতর হয়ে উঠলো। রিয়ার জীবনে যেন নতুন রং এল। তাদের ভালোবাসা পরিণতি পেল। রিয়া ছোটবেলা থেকে মা না থাকার যে কষ্ট পেয়ে এসেছে, রুপঙ্করের পরিবারকে পেয়ে সেই কষ্টের অবসান হলো তার। রুপঙ্করের মা হয়ে উঠলেন রিয়ার নিজের মা।