Shilpi Dutta

Inspirational

2  

Shilpi Dutta

Inspirational

ভালোবাসার রং

ভালোবাসার রং

3 mins
803


অহনা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ওর সাথে ঋজুর ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠা সর্ম্পকের বাঁধনটা কেমন যেন আলগা হতে শুরু করল।

       পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের তারতম্যের জন্যই দুজনকে আলাদা আলাদা কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে।

       ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে, একই স্কুলে গিয়েছে। দুজনের দুজনকে ছাড়া অন্যকোন বন্ধুর তেমন প্রয়োজন হয়নি কখনো। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দুজনের বেশ কিছু বন্ধু হয়েছে।

       একদিন অহনাকে ডেকে ঋজু বলল ‘তোকে মাঝে মাঝে তোর কলেজের ছেলেটা যে বাইকে করে ছেড়ে দিয়ে যায়, আমার এই ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ নয়।’ অহনা একটু রাগ দেখিয়ে বলল ‘তোর পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী আমাকে চলতে হবে? তুই আমার কে রে?’ এই বলে অহনা চলে গেল নিজের বাড়ি।

      ঋজু বাড়ির সামনের পার্কটাতে অনেকক্ষণ একা বসে রইল আর মনে মনে ভাবতে লাগল অহনার জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর। সে নিজের মনে মনে বলতে লাগল ‘সত্যিই তো অহনার সাথে তার সর্ম্পকটা যদি শুধু বন্ধুত্বের হয় তবে তার এত রাগ বা অভিমান হচ্ছে কেন? তাহলে কি সে অহনাকে ভালোবাসে? আর যদি তাই হয় তাতে ক্ষতি কি? কিন্তু অহনাও কি তাকে ভালোবাসে?’ কোন প্রশ্নের উত্তরই সে খুঁজে পেলোনা। মনে একটা অস্থিরতা নিয়ে ফিরে গেল বাড়িতে।

      কিন্তু অহনা বেশ খুশি মনে আজ বাড়ি ফিরল। অনেকদিন ধরে ঋজুর অনেক ব্যবহারে তার মনে হয়েছে যে ঋজু তাকে ভালোবাসে যদিও মুখ ফুটে কোনদিন কিছু বলেনি আর বলতেও যে পারবেনা মুখচোরা ছেলেটা সেটা অহনা জানে। কিন্তু আজকে তার ব্যাপারে ঋজুর এই ইনসিকিউরিটি বোধ থেকেই সে বুঝতে পারে তাকে ঋজু ভালবাসে। আর অহনা তো যেদিন থেকে ভালোবাসা কি বুঝতে পেরেছে সেদিন থেকে ঋজুকেই ভালোবেসে এসেছে।

     অহনা নিজের মনে মনে বলল ‘হাঁদারাম তোর দ্বারা কিচ্ছু হবেনা। যা করার আমাকেই করতে হবে।’

     দুদিন পরেই দোল। বসন্তের রঙে রঙিন হয়েছে প্রকৃতি আর প্রেমের রঙে রঙিন অহনার মন।

     দোলের দিন সকালে অহনা প্রতিবারের মত ঋজুদের বাড়িতে গেল। ঋজুর বাবা ও মাকে আবির দিল। ঋজুর খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারল সে নাকি সকাল থেকেই চিলেকোঠার ঘরে মনমরা হয়ে একা একা বসে আছে। এই কথা শুনে অহনা বলল ‘কাকীমা আমি ঋজু কে ডেকে আনছি।’ এই বলে সে প্রায় ছুটে গেল চিলেকোঠার ঘরে।

       ঋজুর মা হেসে ঋজুর বাবাকে বললেন ‘ছেলের মুড এবার যদি ঠিক হয়। ছেলেটা ঠিক তোমার মতোই ভীতু হয়েছে। অহনা কে ভালোবাসে সেটা তো মেয়েটাকে বলতেই পারে। বোকা ছেলে কোথাকার।’

    এদিকে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে অহনা দেখল ঋজু জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। সে এতটাই অন্যমনস্ক যে অহনা যে ঘরে প্রবেশ করেছে সেটাও বুঝতে পারল না।           

অহনা আস্তে আস্তে গিয়ে পিছন থেকে ঋজুর মুখে আবির মাখিয়ে দিয়ে বলল ‘এই হাঁদারাম এবার আমাকে আবির টা দে, সেই ছোটবেলা থেকেই আমাকে তুই সবার প্রথম রং দিয়ে এসেছিস। এই নে এই প্যাকেট টা থেকে লাল আবিরটা নে।’ এই বলে অহনা প্যাকেটটা ঋজুর দিকে এগিয়ে দিল আর ঋজু যেই ওর কপালে লাল আবিরটা দিয়ে টিপ পরাতে গেল অমনি অহনা তার হাতটা ধরে কপাল থেকে সিঁথি অবধি টেনে নিয়ে গেল। ঋজু হতচকিত হয়ে গেল। অহনা বলল ‘তোকে কানে কানে একটা কথা বলছি শোন তুই আমাকে আর ভুল বুঝিস না, আজকে তুই যেটা পরিয়ে দিলি ওটা আবির ছিল না, আমার মায়ের কৌটো থেকে লুকিয়ে নিয়ে আসা সিঁদুর ছিল। আমি সেই ছোটোবেলা থেকে তোকেই ভালোবাসি। আর জানি তুইও আমাকেই ভালোবাসিস। অনেকদিন অপেক্ষা করেছি তুই আমাকে প্রপোজ করবি এই আশাায়, কিন্তু তুই সত্যিই হাঁদারাম। নে এবার চল রং খেলবি। আর একটা কথা শোন কাকু, কাকীমাকে কথাটা কিন্তু তোকেই বলতে হবে। ঐ দায়িত্বটা আবার আমাকে দিসনা।’

     ঋজু নিজের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল অহনাকে। রঙিন বসন্তে রঙের উৎসব আরো রঙিন হয়ে উঠল অহনা আর ঋজুর ভালোবাসার রঙে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational